Solitude & Company
অন্য দেখায় মার্কেস
এক অভিনব পদ্ধতিতে বইটি লেখা হয়েছে। আমি অন্তত এমন কোনও বই আগে পড়িনি।
কী সেই পদ্ধতি? একজন ব্যক্তির অবয়ব ধীরে ধীরে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে সেই ব্যক্তির চারপাশের মানুষজনের সঙ্গে কথা বলবার ভিত্তিতে।
কথা শুধু কথা কথা কথা কথা। তাঁরা সবাই ব্যক্তিটি সম্পর্কে বক্তব্য রাখছে, উচ্চস্বরে তর্ক করছে, মিথ্যা কথা বলছে। ওরাল ট্র্যাডিশনের এটাই তো প্রাণভোমরা।
তো আর ব্যক্তিটি যদি গার্সিয়া মার্কেজ বা গাবো হন তবে তো ব্যপারটা মিথের পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ায়।
লেখক নিজেও বইটিকে দু’টো ভাগে সাজিয়েছেন। ‘একশো বছরের নিঃসঙ্গতা’ লেখার আগের পর্ব বি.সি. আর নিঃসঙ্গতা লেখার পরের পর্ব এ.সি.।
B.C. ও A.D.- র আদলে। Before Cien Anos De Soledad আর After Cien Anos De Soledad।
মিথই তো।
কুড়ি বছর ধরে কাজটি করেছেন লেখক সিলবিনা পাতেরনোস্ত্রো। একটিবারের জন্যেও খোদ মার্কেজের সাক্ষাৎকার নেননি। হিমালয় নিয়ে লিখলে আমরা কি হিমালয়ের সাক্ষাৎকার নেই!
কীভাবে একজন মানুষ সবার অলক্ষ্যে লিজেণ্ড হয়ে উঠছেন, পাবে বসে, রক মিউজিক শুনতে শুনতে, সেলুনে বসে, রকে আড্ডা দিতে দিতে বুঝে নিতে চেয়েছেন লেখক।
বইটিতে একটি লাইনও লেখকের নয়। বইটি প্রায় ৭০/৮০ জনের মার্কেজকে নিয়ে শুধুই গুলতানি। এঁরা কারা? এই ৭০/৮০ জন?
লেখক সিলবিনা যদিও অন্য শহরে পরে চলে গিয়েছেন, কিন্তু তাঁর জন্ম ও বড়ো হয়ে ওঠা, কলোম্বিয়ার এমন একটি শহরে যেখান থেকে নিঃসঙ্গতার কল্পিত শহর খুব কাছে। হাতের তালুর মতো অঞ্চলটাকে চেনেন লেখক, চেনেন সেই শহরের মানুষজনকে, যেখানে মার্কেজেরও মার্কেজ হয়ে ওঠা।
এই ৭০/৮০ জনের মধ্যে মার্কেজের ভাইবোন যেমন আছেন আবার লেখক, পরিচালক, সাংবাদিক, ফুলবিক্রেতা থেকে শুরু করে প্রকাশক, এজেন্ট, অর্থনীতিবিদ, বিচারক কেউ বাদ যাননি। মার্কেজ তাঁর ‘একশো বছরের নিঃসঙ্গতা’ উৎসর্গ করেছিলেন যে যুগলকে, তাঁদের খুঁজে বের করতে সারা পৃথিবী চষে বেড়িয়েছেন সিলবিনা।
বইটি সদ্য অনূদিত হয়েছে স্প্যানিশ থেকে। অ্যামাজনে ২৬ জুন থেকে পাওয়া যাবে। বন্ধু দেবতোষ মিত্র গত ২৫ বছর ধরে যা করে আসছেন, এবারও খবরটি জানিয়ে আমাকে ধন্য করেছেন। আর ছেলে ও মেয়েকে অসুস্থতার বাহানায় বইটি উপহার দিতে বলে শেষ অবধি সফল হয়েছি। ছেলে ও মেয়ে তড়িঘড়ি করে গতকাল বইটি এনে দিল।
আহা কি মধুর এই গুলতানি? কেউ বলছেন, কেন যে গাবো কে নোবেল প্রাইজ দেওয়া হল বুঝলাম না, গাবো তো কিছু ইনভেন্ট করেনি। মোরগ নিয়ে যখন কোনও অধ্যায় লিখছেন, গাবো তখন হাভানায়, বন্ধুকে জ্বালিয়ে খাচ্ছেন। মোরগ সম্পর্কে ১০০ টা প্রশ্ন লিখে পাঠাচ্ছেন বন্ধুকে। এই হল গার্সিয়া মার্কেজ।
যেমন মেঘ সরে গেলে ধীরে ধীরে শৈল চূড়া দৃশ্যমান হয়, আমার বিশ্বাস বইটি পড়া শেষ হলে তেমন অভিজ্ঞতা আমার হবে। গাবো যে আমার খুব কাছের। প্রাণের। শ্বাসের।
২৪ জুন ২০১৯