মুক্তগদ্যগুচ্ছ
আজ ফানুস উড়বার রাত
অধিকার
কোঁকড়া হয়ে যাবার আগে তুমি চুল সোজা রাখার কথা ভাবতেই পারতে। চোখের সাজ তুলতে তুলতে রাতের আয়নায় আলতো টেনে নিতে প্রত্নজন্মের আলোড়ন। মসৃণ ভ্রমণে চিরুনির কোমল দাঁত দেখে নিতো গহনের সাদা রেখা। ভুলতেই পারতে কিছু সন তারিখ; এখন কেউ আর নিজেকে চেনে না তেমন। ভুল বাড়ির দরজা থেকে ফিরেও আসে না। ব্যর্থ হলো আদমশুমারি, হাসি দুঃখ শুধু ছড়ানো টিভি সিরিয়ালে।
নখের পিঠে, চাইলে উড়ে আসত সরালীর দল- এ জলাশয়ে ডুবে যেত সাদা চোখ, খসে পড়া রেশম। ঘুড়ি নেমে যেত গলায়, ডেকে উঠতে পারত প্রিয় ভুল নামে। তখন কোন কোন আঙুলের দাগে থমকাত দেখা। গোলাপের কাঁটা, দীর্ঘ বর্ষামৌসুম নিয়ে উঠান বৈঠক আর অর্থনীতির আলাপ হতো। এরপর ঠিকই ফুলের মৃত্যুকে চোখ বুজে ক্ষমা করে দিতে অমরত্বের লোভে।
এসব আর কিছুই হয়নি। শেষমেশ, চুল উড়িয়ে দিচ্ছিলে রাতের পানে। মুখ দেখতে পায়নি নিয়ন; বারান্দা রেলিং টপকে যেটুকু আলোর খেলা ছায়াবাজি, অহেতুক কেঁপে ওঠা- বুকে হাত পেতে বোঝা গেল এই সামান্যেও যেন দায় আর কারো। ঘুরছিল পালা তোমার দিকে, নতুন ছাঁচ গড়ে নেয়া বাকি; তবু তুমি ঘুমিয়ে পড়ছিলে। অধিকার কী- মনে নাই, আর মনে নাই।
স্ক্রিনশট
আত্মতৃপ্তি পেতে হলে আমরা কী কী প্রতিশোধ নিতে পারি? সকালে পত্রিকার পাশে কড়া লাল চা, কাপের কিনারে অনেকের ধুয়ে যাওয়া চুমুর স্মৃতি মেখে আলস্য কাটিয়ে নতুন একঘেঁয়ে দিন বেড়ে উঠছে রোদে। কর্মশালায় বক্তারা বলেছেন, দুঃখ পেতে চাইলে সম্পর্ক ধুয়ে নিয়ে যেসব স্ক্রিনশট টাঙানো হবে বারান্দায়। মৃদুমন্দ ফাল্গুনী আমেজে দুলে সেগুলো শুকিয়ে উঠবে; বাসি খয়েরী গাঁদার মত। মাছি পাশ কাটিয়ে রেলিঙে থিতু হবে, মাটিকে শাপান্ত জেরবার করবে। টবগুলি দেখবে ঝুঁকে, পথচারীরা ঘাড় উঁচু করে দেখে চলে যাচ্ছে সেলুনে। সেখানে গসিপ ও কাঁধের ম্যাসাজ শেষে সবাই বুঝবে- আজ ফানুস উড়বার রাত, অন্যান্য বারের চেয়ে আকাশ নীচু হয়ে নেমে আসতে পারে- প্রথম প্রতিশ্রুতির বেশে। তখনও কি ঘাড়ে মাথায় ব্যথা হতে থাকবে? এ সংক্রান্ত ছবিসহ তথ্য জানতে কাল সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। সেলুন ঘুমিয়ে থাকবে, আমিও এসবের মধ্যে আর নেই।
শীতে অন্ধকারে
দরজায় বন্ধ তালা- অস্বস্তি এসে গেছে, উশখুশে ভংগি। ভিন্ন দিকে ফেরানো মুখ, খাঁজের গৌরবে এক চাবি; একাকি রাজার মত আনমনা রোদ। শ্রেয়তর কারো কথা আরো কিছু দীর্ঘশ্বাসে শেষবেলা, ধাতব জড়দিন। রাজত্ব গুছিয়ে নেবে না, ঘরদোর চলে যাবে অনিবার্য পথে; খেয়ালী ক্ষণিক স্পর্শ জমা থাক।
টার্মিনাল চিরদিন আমার রাজধানী, গতিময় চাকার তাললয়ে আয়োজনে জুড়ে আছি। গড়িয়ে চলার শুরু, বাসের ছাদ থেকে হাত ঝুলে আছে, ধুলোর দমকে কাশি, দুলছে যেন জাহাজের খোলে পাতা সার্কাস। তুমি ঠিক কোন পথে এগিয়ে গিয়েছিলে, চিঠিতে-সাইকেলে দিকভ্রান্ত পাড়ায়; আবারও এসব মনে পড়ে যায়। কখনো ব্রেক ধরে অমোঘ ঝাঁকুনি, সংহত দুলুনি বারবার টেনে নেয় প্রগতিমিছিল। মেধাবী দরিদ্র ভীড়ে অচেনা তৃপ্ত চোখ, উদাস শহরতলি এসে গেছে।
অস্ফুট নিবিড় যাত্রা শরীরের স্বপ্ন থেকে ক্রমশঃ ঠোঁটের আদ্র টিকিটে মেশে, ফাঁকা পকেটে বাজছে গোছার ঝুমঝুমি। কান পেতে পরস্পর, রংচটা বয়েসী বয়ানে, ঘনিষ্ঠ- রূপোলী নতুন যত চাবি। গোপন তরংগে খেলা ভাবলেশহীন; কোথাও শব্দ নেই আর। পায়ে পায়ে অজস্র দরজা খুলে যাই তোমার ঐশ্বর্যের শীতে, অন্ধকারে।