মণিপুর, মণিপুর নয়
মণিপুরে আমরা কী দেখেছিলাম, বা কী দেখতে চেয়েছিলাম? মণিপুরে আমরা পেয়েছিলাম প্রদর্শক, সঙ্গী, অভিভাবক, আত্মীয়, মানুষের দেখা। কত অল্প সময়ের মধ্যে! তাদের গল্পগুলি বলা যাক।
মালেম, আমাদের পথপ্রদর্শক
মালেমকে পেয়ে গেলাম কাঙলার গেটে। একটা গলফকার্ট নিয়ে আসলো আমাদের জন্য। মেয়েটার বয়স পঁচিশ এর আশেপাশে হবে। কর্পোরেট পোশাক, মুখে স্নিগ্ধ হাসি। ওর পাশে বসে পড়লাম।
মালেম ইংরেজি ও হিন্দি দুই ভাষায় ওস্তাদ। প্রথমে নিয়ে গেলো কাঙলা মিউজিয়ামে। এই কাঙলা ফোর্ট বা দুর্গ পুরোটাই ইংরেজরা ধ্বংস করে দিয়েছিল। ইঙ্গ মণিপুর যুদ্ধের সময়। মালেম জানালো, ২০০৪ এর আগ পর্যন্ত এই দুর্গে মনিপুরীরা প্রবেশাধিকার পায়নি। অথচ, ব্রিটিশ চলে গেছে সেই ১৯৪৭ এ। আসাম রাইফেলস এর দখলে ছিল এতদিন।
কাঙলার ভেতরে কিছু ব্রিটিশ বাংলো রয়ে গেছে। ওগুলি এখন সরকারি কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এদিককার ফ্রন্টের সর্বাধিনায়ক জেনারেল স্লিম? এর বাংলোও এর ভিতর। যে কাঙলা ছিল মণিপুরের গর্বের কেন্দ্রে, ১১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেটি ছিল ব্রিটিশ ও ভারতীয় সামরিক শক্তির দখলে।
এখানে গোবিন্দজী পুরানো মন্দির। মূর্তি নেই বলে জুতা সহ ঢোকা যাচ্ছে। মালেমও খুশি তাতে। তার জন্য বারবার জুতা খোলা যন্ত্রণার। সারি সারি স্কুল বাচ্চারা হাসিমুখে কাঙলায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমাদের দেখে হাত নেড়ে অভিবাদন দিল। শিশুরা সবেতেই খুশি। নতুন কিছু জানার আগ্রহ তাদের মস্তিষ্কের কোষে কোষে, দেহের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। শুধু এই মন্দিরটা ধ্বংস করেনি ইংরেজরা। কেন? উত্তর ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অনুগত ভারতীয় হিন্দুরা হয়ত জানে।
প্রথমে মনিপুরী হরফ, এর পরে বাংলা হরফে মেইতেই ও পরে ইংরেজিতে নির্দেশনা লেখা। ত্রিপুরায় দেখেছি, শুদ্ধ বাংলা ও বাংলা হরফে কোকবরক লেখা। মণিপুরে বাংলা হরফ চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল, বৈষ্ণব ধর্মের সাথে সাইড ডিশ হিসেবে গেলানো হয়েছিল। পাঁচশ বছরেও যে হজম হয়নি, তা এখন প্রমাণিত। নতুন প্রজন্ম তাদের পুরোনো ধর্ম ও হরফে ফিরতে চলেছে পূর্নোদ্যমে। জাতীয়তাবাদ এর উত্থান হচ্ছে ব্যাপকতর। সমসাময়িক রাজনৈতিক ইতিহাস তাই বলে। গণমুক্তির একটা সাময়িক স্তর হিসেবে এর মধ্য দিয়ে যেতেই হয়, কারণ এরই মধ্যে আছে হিন্দু জাতীয়তাবাদ, সর্বভারতীয় সম্প্রসারণবাদ/একত্ববাদ, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, ইত্যাদি নানা রকমের চাপ, তাপ, হাওয়া।
কাঙলার উপর ইংরেজদের আক্রোশ বোধগম্য, ভারতীয় আক্রোশ তদানুসারী। এক্ষণে নির্বাচিত রাজ্য সরকার আছে, বিদ্রোহ স্তিমিত জাতীয়তাবাদের ঢেউয়ে কোথাও ভেসে গিয়ে আশ্রয় নিয়ে আছে। সম্ভবত মায়ানমার সীমান্তের দিকে গেছে, ব্রহ্মপুত্রের একটা শাখাও গেছে আভার ঐ দিকটায়।
এখানে কাঙলার ভেতরে আর ইম্ফলের রাস্তায় প্রচুর জারুল আর কৃষ্ণচূড়া। এরই ফাঁকে ফাঁকে সোনালুর হলুদ, তেরঙা মণিপুর। তাদের প্রথম ড্রাগনরাজা এখনও আছেন, তাদের গার্ডিয়ান এনিম্যাল কাঙলা সা এখনো পাহাড়া দিচ্ছে, এই বুঝি বিশ্বাস। কাঙলা মনিপুরীদের জন্য সবচেয়ে পবিত্র স্থান।
প্রথমে মনিপুরী হরফ, এর পরে বাংলা হরফে মেইতেই ও পরে ইংরেজিতে নির্দেশনা লেখা। ত্রিপুরায় দেখেছি, শুদ্ধ বাংলা ও বাংলা হরফে কোকবরক লেখা। মণিপুরে বাংলা হরফ চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল, বৈষ্ণব ধর্মের সাথে সাইড ডিশ হিসেবে গেলানো হয়েছিল। পাঁচশ বছরেও যে হজম হয়নি, তা এখন প্রমাণিত। নতুন প্রজন্ম তাদের পুরোনো ধর্ম ও হরফে ফিরতে চলেছে পূর্নোদ্যমে। জাতীয়তাবাদ এর উত্থান হচ্ছে ব্যাপকতর। সমসাময়িক রাজনৈতিক ইতিহাস তাই বলে।
কাঙলা মিউজিয়ামটা ছোট, বীর টিকেন্দ্রজিতের একটা ছবি আছে বেড়ি পরা, ব্রিটিশ সৈন্য দুপাশে, মৃত্যুদন্ড কার্যকর হবার আগের মুহুর্তে। কাঙলা মাত্র ১২৫ বছর আগে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে, কিন্তু ভগ্নাবশেষ আমাদের মহাস্থানগড় এর চেয়ে করুণতর। কিছু কিছু পুনঃনির্মাণ হয়েছে, আরো চেষ্টা চলছে। আনারস আকৃতির একটা মন্দির আছে, মনিপুরী সাতটা গোত্রের জন্য সবখানে সাত এর উপস্থিতি। পাশেই আরেকটা মন্দির, তাতে রাজনৌবহরের নৌকার বিশাল অনুকৃতি। কাঙলার এক পাশে ইম্ফল নদী, অন্য দিকে ইম্ফলের জল বইয়ে নিয়ে পরিখা। ভেতরে আরেক দফা পরিখা। কাঙলার প্রবেশ তোরণ পুননির্মাণ করা হয়েছে, সুন্দর দেখতে, নতুন দুটো শুভ্র কাঙলা-সা মূর্তিও দাড়ানো আছে।
চাওবা, আমাদের সঙ্গী
সাদুচিরু ঝর্না দেখলাম। লেইমেরাম গ্রামটা সুন্দর, পাহাড়ের গায়ে। ইম্ফল থেকে কাছেই। জাপান ওয়ার মেমোরিয়ালের পর ডান দিকে সোজা ঢুকে গেছে পাহাড়ের দিকে। দুপাশে ক্ষেতগুলিতে বর্ষার আগ দিয়ে কচু রোপন করা। রাস্তার দুপাশে গ্রামের লোকেরা আনারস, লিচু আর তরমুজ গাঁজিয়ে প্রস্তুত দেশি পানীয়ের রঙ্গিন বোতল সাজিয়ে রেখে দিয়েছে। ঝর্নার পাদদেশে দোকান গুলিতে ভাজা হচ্ছে বড়া। মেইতেই বড়া। নানারকম সবজি, পাতা, শাক, কলার মোচা, মরিচ, ইত্যাদি কুচি কুচি করে কেটে চালের গুড়ার বড়া। সিদ্ধ ডিমও দেয়া হচ্ছে। এই বড়া মেইতেই ভাষায়ও বড়া। উৎস যাচাই করিনি যদিও।
জাপান ওয়ার মেমোরিয়ালে কিছু স্থাপনা আছে, একটা পুরানো কামান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যাবহৃত। জাপানীরা এই পর্যন্ত চলে এসেছিল যুদ্ধের সময়। এর পরে ব্রিটিশ মিত্রবাহিনী অগ্রগতি লাভ করলে, এরা পিছিয়ে ব্যাংকক চলে যায়। ভারতের স্বাধীন সেনাবাহিনী তথা আজাদ হিন্দ ফৌজও এই একই পথ অনুসরণ করে। উৎপল দত্তের একটা অসাধারণ নাটক আছে “দিল্লী চলো” নামে, ইম্ফল যুদ্ধের পটভূমিতে।
চাওবাকে পেলাম এয়ারপোর্টে। প্রথমদিন তেমন আলাপ হয়নি। পরের দিন চাওবা আমাদের সকাল থেকে সারাদিনের সঙ্গী। পেশায় গাড়িচালক। কিন্তু মনে প্রাণে অতিথিসেবক। আমাদের পরিকল্পনা ছিল, পরেরদিন কাঙলা যাবার। চাওবা সেদিনই যেতে বলে দিল, কারণ পরেরদিন কাঙলা বন্ধ। তাতে আরেকটা উপরি পাওয়া হলো, বিকেলে না গেলে ডান্সিং ডিয়ার বা সাঙাই এর জন্য অনেক অপেক্ষা করতে হবে। বিচক্ষণ চাওবা।
মণিপুরে উগ্রবাদীরা এই ১/২ বছরে খুব সক্রিয় নয়। জিজ্ঞেস করলাম, এরা কি চায়? স্বাধীনতা। এখন একটা বাটে পড়ে গেছে। দীর্ঘদিন সেনা অত্যাচার সয়েছে মনিপুরীরা। চাওবাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম সে কি চায়, ইংরেজিতে উত্তর এলো, ইন্ডিপেন্ডেন্স! চারদিকে আর্মির গাড়ি, অস্ত্র তুলে দাঁড়ানো সিপাহি দেখে কোন সন্দেহ রইল না। শ্রীনগরের স্মৃতি মনে পড়লো।
চাওবার মতে, কেন্দ্রীয় সরকার এখন অনেক পরিকল্পনা নিচ্ছে মণিপুরের বাসিন্দাদের ভজানোর জন্য। এর মধ্যে আছে, প্রাইভেট কোম্পানিগুলির মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরি করা। কিন্তু বিনিময়ে পুঁজি-পন্থী কেন্দ্রীয় সরকার চায় মণিপুরের খনিগুলির উপর কর্তৃত্ব। চাওবার মতন একজন সাধারণ নাগরিক, এ ব্যাপারে বেশ সচেতন এবং এর বিরুদ্ধে। তার কথা হলো, এরা এসব তুলে নিলে আমাদের কী লাভ হবে? মালেম, চাওবা দুজনকেই মেইতেই স্বার্থসচেতন মনে হলো। প্রগাঢ় দেশপ্রেম এদেরকে স্বাধীনচেতা করেছে, কিন্তু জাতীয়তাবাদী উগ্রতা এখনো ভেতরের অতিথিপরায়ণ মেইতেই কে হারাতে পারে নি। পর্যটনের গুরুত্বও ধীরে ধীরে বুঝতে শুরু করেছে।
চাওবা আমাদের নিয়ে গেলো মৈরাঙ। এখানেই প্রথম স্বাধীন ভারতের পতাকা উত্তোলিত হয়। আজাদ হিন্দ ফৌজের একটা মিউজিয়াম, কাছেই আজাদ হিন্দি ফৌজের একটা পুরানো ক্যাম্প তার আদি অবস্থায় পাওয়া গেলো। এই ক্যাম্পটা আদি অবস্থাতেই রেখে দেয়া আছে। কিন্তু পাশের বেড়ায় বিজেপি লেখা। মণিপুর বিধান সভায় বিজেপি ক্ষমতাসীন। বর্তমান গভর্ণরের নাম নাজমা হেপতুল্লাহ। “হেপতুল্লাহ” সম্ভবত ব্যাঙ্গালোরের মানুষ। সাদাত হোসেন মান্টোর উপরে নন্দিতা দাসের সিনেমায় এই নামটা পেয়েছিলাম। তৎকালের কোন এক ক্রিকেট প্লেয়ারের নাম।
চাওবা ইংরেজি আর হিন্দি বলতে পারে সচ্ছন্দে, বাংলা অল্প বোঝে। লোকতাক লেকের পাশের পাহাড়ের উপরে সবচেয়ে চমৎকার কিন্তু দামে সুলভ একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলো দুপুরের খাবারের জন্য। ঠিক তখনই ঝুম বৃষ্টি নামলো। চাওবা স্মার্ট ফোনে তার স্ত্রী ও দুই কন্যার ছবি দেখালো। তাদের একটা পার্বনে নৃত্যরত মনিপুরীদের দেখালো। এরা স্বাধীনচেতা এবং সমাজে মেয়েদের স্থান উঁচুতে। চাওবা জানালো, এই সব পার্বনে ইচ্ছে মতন যেকোন ছেলে মেয়ে, মনের মিল হলে হাত ধরা ধরি করে নাচতে পারে।
লোকতাক লেকের মধ্যেও ভাসমান কিন্তু তৃণদ্বীপ। এর একেকটার উপরে ছোট ছোট মাছ ধরার জেলেদের কুড়ে, কোনটা আবার এত বড় যে তাতে আস্ত রেস্টুরেন্ট এবং রাতে থাকার জায়গার ব্যাবস্থা হয়েছে। বার্মার ইনলেতে এরকম দেখেছি, সেখানে টমেটো, শসা, লাউ, এরকম সবজির চাষ হয়। এখানে মৎস্যজীবীতা মুখ্য। গোল গোল করে তৃণঘের করা। ইম্ফলে আসার সময় বিমান থেকেও এগুলি চোখে পড়ে। দমকা বাতাস পশ্চিমদিকের বৃষ্টিসহ মেঘগুলিকে পূবদিকে নিয়ে গেলো।
ইম্ফল থেকে মৈরাঙ এর রাস্তা চমৎকার। উখ্রুল অন্যদিকে। এদিকটা জেলার নাম বিষ্ণুপুর। বুকাননের লেখায় মনিপুরী পুরোহিতের কাছ থেকে পাওয়া পথের বর্ণনায় এই জায়গার নাম পেয়েছিলাম। তখন ত্রিপুরা থেকে সিলেট হয়ে কাছারের মধ্য দিয়ে মেইতেই এর রাস্তা ছিল। উখরুলে অনেক ঠাণ্ডা, দুপুরের পরেই সব ঘরের ভেতর গিয়ে ঢোকে শীতের সময়।
দুপুরের খাবারের পর বৃষ্টি থেমে এলো। চাওবা নিয়ে গেলো কেইবুল লামজাও জাতীয় উদ্যানে। এখানে আমরা পেলাম রতনকুমারকে। ফেরার পথে চাওবাকে জিজ্ঞেস করলাম শর্মিলা ইরমের কথা। তার অনশন ভঙ্গে খানিকটা আশাহত মনে হলো তাকে।
রতনকুমার, আমাদের রাখাল
কেইবুল লামজাও জাতীয় উদ্যানের উপরে একটা ভিউপয়েন্টে দেখি গুটিকয়েক পর্যটক দূরবীনে জাতীয় উদ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে। আমরা গিয়ে দাড়ালে একটা অল্পবয়সী যুবক ভাঙা হিন্দীতে কিশোর গলায় বললো, তুম ভি দেখো। ছেলেটার নাম রতনকুমার। চশমা খুলে তাকিয়ে দেখি একটা পুরুষ আর একটা স্ত্রী হরিণ মনের সুখে ঘাস খাচ্ছে। ভিউ পয়েন্টটা পাহাড়ের উপরে। এখান থেকে দিগন্ত বিস্তারী সবুজ জাতীয় উদ্যান। এর উপরে বড় গাছ একটাও নেই। সব গুল্ম জাতীয়, ঘাস, মাটি নেই। পুরোটাই লেকের উপরে ভাসছে। লোকতাক লেক, উপরে ফুমদিস বা ভাসমান তৃণদ্বীপ। মৈরাঙে পাহাড়ের উপর থেকে যেগুলি দেখেছিলাম, এখানে গোটা দ্বীপের আয়তন চল্লিশ বর্গকিলোমিটার এর উপরে।
এই জাতীয় উদ্যানে প্রধান প্রাণী সাঙাই বা ডান্সিং ডিয়ার বা এল্ড ডিয়ার। আর আছে বুনো শুয়োর। সাঙাই বিরল প্রজাতির, বিলুপ্তির মুখে। এদের একমাত্র বাসস্থান এই উদ্যান। গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে বিলুপ্ত ঘোষিত এই হরিণ ১৯৭৫ এ জাতীয় উদ্যান ঘোষণার সময় গুণে পাওয়া যায় ১৪ টি। সংরক্ষণের ফলে ২০১৮ তে সংখ্যাটা দাড়িয়েছে ২৫১ তে।
পৃথিবীর এই একমাত্র ভাসমান জাতীয় উদ্যান। তিতিকাকা হ্রদে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল অনেক দিনের, লোকতাকে পেলাম কেইবুল লামজাও। রতন বলল, নৌকাতে করে লেকের ভেতরে নিয়ে যাবে। আমরা গাড়ি নিয়ে নৌকা ঘাটে পৌছে দেখি, রতন পাহাড় বেয়ে আমাদের আগেই নেমে গেছে। বৃষ্টির কারণে নৌকায় বেশ জল জমেছে। চাওবা আর রতন মিলে জল সেঁচে ফেলে দিল। চাওবা একটা গামছা দিল ভেজা জায়গা মোছার জন্য। এরপর দুইজনে মিলে বেয়ে নিয়ে চলল ভাসমান লেকের ভেতর দিয়ে। লগি দিয়ে মেপে রতন দেখাল লেকের জলের গভীরতা ৫ থেকে ৭ ফুটের মতন। এর উপরে বায়োম্যাস বা তৃণদ্বীপের পুরুত্ব স্থানভেদে ১ থেকে ৩ ফুটের মতন।
রতন জানাল, এখানে বুনো শুয়োরগুলির প্রিয় খাবার সাপ। প্রজননের সময় পুরুষ শুয়োরেরা এক রকমের ঘর বানায়। এরা চলে গেলে সাঙাই হরিণেরাও প্রজননের জন্য এগুলি ব্যাবহার করে। এতে এই দুই প্রাণীর মধ্যে খুব সদ্ভাব। কিছু দূর গিয়ে আমরা তৃণদ্বীপের উপরে নামতে পারলাম। দুলছে অল্প, একটু লাফিয়ে দেখা গেলো। একটু আগের বৃষ্টিতে ভেজা, মাটি নেই কোথাও। ফুমদি পঁচে পঁচে নতুন ঘাস তৈরি হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
চাওবা আমাদের নিয়ে গেলো মৈরাঙ। এখানেই প্রথম স্বাধীন ভারতের পতাকা উত্তোলিত হয়। আজাদ হিন্দ ফৌজের একটা মিউজিয়াম, কাছেই আজাদ হিন্দি ফৌজের একটা পুরানো ক্যাম্প তার আদি অবস্থায় পাওয়া গেলো। এই ক্যাম্পটা আদি অবস্থাতেই রেখে দেয়া আছে। কিন্তু পাশের বেড়ায় বিজেপি লেখা। মণিপুর বিধান সভায় বিজেপি ক্ষমতাসীন। বর্তমান গভর্ণরের নাম নাজমা হেপতুল্লাহ। “হেপতুল্লাহ” সম্ভবত ব্যাঙ্গালোরের মানুষ। সাদাত হোসেন মান্টোর উপরে নন্দিতা দাসের সিনেমায় এই নামটা পেয়েছিলাম।
আগে শুকনো মৌসুমে জল শুকালে ফুমদির তলা লেকের তলায় গিয়ে মিশত, বর্ষায় আবার ভেসে উঠতো। এতে লেকের তলা থেকে মাটির পুষ্টি পেত ভাসমান তৃণ বা ফুমদি। এখন পাশের নদীতে বাঁধ দিয়ে হাইড্রো-ইলেকট্রিক প্ল্যান্ট এর কারণে লেকের জলের পরিমাণ বেড়ে গেছে, ফলত আগের সেই চক্রে বাঁধা পড়েছে। সাঙাই আবার বিপন্ন হয় কিনা।
রতনের নৌকায় ভালোই ঘুরতে পেলাম। তার কাছ থেকে জানলাম, সাঙাই এর মানে। মেইতেই ভাষায় সা মানে পশু। যেমন, কাঙলা সা। আর ঙাই মানে যে অপেক্ষা করে। এই হরিণ ফিরে তাকায়, অপেক্ষা করে, কাছে আসে। কিন্তু যদি কোন মানুষ তাকে ছুয়ে দেয়, তাহলে বিপদ। এরা দল বেঁধে বাস করে, ছুয়ে দিলে দল তাকে পরিত্যাগ করে আর দলহীন সাঙাই আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। রতনকে জিজ্ঞেস করা হলো, এই কাহিনী কোন রিসার্চে পাওয়া গেছে? উত্তর, এগুলি মুখে মুখে চলে আসছে, আদিকাল হতে। স্থানীয় গ্রামবাসীরা মনে করত, সাঙাই এর মাংস খেলে প্রজননে সুবিধা হয়, বন্ধ্যাত্ব দূর হয়। রতনের মতে এই অন্ধ বিশ্বাসের কারণেই এদের সংখ্যা কমে গিয়েছিল।
রতন খুব ভোরে মৈরাঙ বাজারে তার মায়ের সাথে মিলে লোকতাকের মাছ বিক্রি করে। এরপর চলে আসে কেইবুলে। এখানে দূরবীন পরিসেবা ফ্রি, নৌকা জনপ্রতি পঞ্চাশ টাকা, এর অর্ধেক পায় সে। এর বাইরে কোন বেতন নেই। দেরাদুনের থেকে পর্যটন এর কর্মকর্তারা এখানে এসে প্রশিক্ষণ দিয়ে গেছে। এর বাইরে ইম্ফলের পত্রিকাওলারা এদের জন্য বেতন ব্যাবস্থা করার কথা বলছে। কিন্তু এখনো কোন কাজ হয়নি।
প্রফেসর প্রেম
কল্যানী থেকে এয়ারপোর্টে রওনা হবার আগে প্রফেসর প্রেম বলে গেল, দেখা হবে এয়ারপোর্টে। এল বীরমঙ্গল মজা করে বললেন, ওর নাম মনে রেখো, হিন্দি প্রেমচন্দ।
প্রফেসর প্রেম এর সাথে আলাপ হলো সিঙ্গাইরবিল এয়ারপোর্টে। প্রফেসরকে জানালাম, মায়ের ইচ্ছা মেইতেই গ্রাম দেখার। প্রফেসর জানালেন, গোটা মণিপুরটাই গ্রাম। তার মতে অরুণাচল যোগাযোগ ব্যবস্থায় সবচে’ পিছিয়ে এই উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির মধ্যে।
সে যাচ্ছে ছুটিতে, কাকচিং। ইম্ফল থেকে বার্মার দিকে। ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক। বয়স ছেচল্লিশ। আমাকে অনুমান করতে বলায়, আমি অপারগতা জানালাম। প্রফেসর এর অধীনে চট্টগ্রামের একজন এই মুহুর্তে পিএইচডি করছে। অল্পসময়ের মধ্যে প্রফেসর আমাদের সাথে আলাপ স্বাভাবিক করে ফেললেন। কী কী দেখতে হবে, সেই সাথে ইম্ফলে চাওবাকে বুঝিয়ে দিলেন কী কী দেখতে হবে। আমাদের শেখালেন বাংলা সংবৃত “ব” আর মেইতেই “বা” এর তফাৎ। ইংরেজরা রোমানাইজেশনের সময় দুটোকেই এক করে গোলমাল করেছে।
পরের দুদিনে হোয়াটস এপ এর মাধ্যমে বার বার খোঁজ নিচ্ছিলেন, বিদেশে এমন অভিভাবক পাওয়া সৌভাগ্যের। এয়ারপোর্ট থেকে এক সাথে চাওবার গাড়িতে উঠেছিলাম, ভাড়া দিয়ে নেমে গেলেন কাকচিং এর বাস ধরার জন্য। আমরা সুযোগই পেলাম না।
এল বীরমঙ্গল সিংহ, আমাদের অভিভাবক
একটা মনিপুরী ছোট গল্পের অনুবাদ সংকলন পড়েছিলাম। ইলিশের স্বাদ ও অন্যান্য গল্প। লেখক শিলচরের বাসিন্দা ছিলেন। অনুবাদকের নাম মনে ছিল না। কল্যাণীতে যে বাসায় উঠেছি, সেখানে প্রতিবেশী দেখা করতে এলেন। আমাদের গৃহকর্তা দীপক দাদু, মঞ্জু দিদিমা আর দোলা মাসি। দোলার ক্লাশ ছিল দিনের বেলা। দিদিমা-দাদু পরিচয় করিয়ে দিলেন। প্রতিবেশী সাহিত্যিক। নিজে থেকেই জানালেন, মনিপুরী গল্প বাংলায় অনুবাদ করেন, পত্রিকার সাথে যুক্ত। বললেন, কিছু বইপত্র পড়ে যাও তাহলে মণিপুর গিয়ে বুঝতে সুবিধা হবে।
ঘরে গেলেন বই আনতে। আমি ততক্ষণে গুগল করে একটি ইলিশের স্বাদ খুঁজে বের করেছি। উনি ফিরে এলেন ৩ টা বই হাতে। একটা মনিপুরী লোকসাহিত্যের উপরে, আরেকটা ত্রিপুরা-মণিপুর এর ইতিহাসের উপরে, শেষ টা ইলিশের স্বাদ এবং…। প্রত্যেকটার প্রচ্ছদে জ্বলজ্বল করছে, লাঙ্গোঞ্জম বীরমঙ্গল সিংহ। দীপক দাদু আমার মায়ের মামা, মা উনাকে “বীরমঙ্গল মামা” বলতে শুরু করলেন, আমি দাদু।
দাদুর বাসায় গেলাম, তার সুবিন্যাস্ত লাইব্রেরি। দাদু ত্রিপুরা চে পত্রিকার সাথে যুক্ত। লাইব্রেরি সাথে লেখার টেবিল, স্ত্রী মিনা সিংহ, দিদিমা। বাংলাদেশের কবি এল কে শেরাম বীরমঙ্গল দাদুর বন্ধু। এখানে আসার আগে এল কে শেরামের মণিপুর ভ্রমণ কাহিনী পড়েছিলাম। সেখানেও এল বীরমঙ্গল নামটা ছিল, খেয়াল করিনি। উনি নিজেই জানালেন এখন। আমরা যাবো মণিপুর, তাতে দুজনেই বেশ চমৎকৃত। অনেক অনেক তথ্য দিতে লাগলেন অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে। ইম্ফলে জওহরলাল নেহেরু ডান্স একাডেমির পরিচালক উপেন্দ্র শর্মাকে সাথে সাথে ফোন দিলেন। প্রফেসর প্রেম এর সাথেও পরিচয় করিয়ে দিলেন তিনিই। একই ফ্লাইটে প্রফেসরও ইম্ফল যাচ্ছেন। আমরা ফেরার পর আগরতলা ঘুরে দেখালেন।
ইম্ফলে পৌঁছে হোটেল থেকে বেরিয়ে প্রথমদিন বীরমঙ্গল দাদুর পরামর্শ মতন আমরা গেলাম জওহরলাল নেহেরু ডান্স একাডেমি ও নতুন গোবিন্দজি মন্দিরে। একাডেমির পরিচালক উপেন্দ্র শর্মা আর প্রোগ্রাম ম্যানেজার জ্যাকির সুবাদে তাদের ক্লাসরুমগুলি দেখা হল। গুরুরা আমাদের সাদরে অভ্যর্থনা জানালেন। বেশ উপভোগ করলাম তাদের ডিপ্লোমা প্রোগ্রামগুলির কাবুই নাচ, সংকীর্তন, সংগীত ও অন্যান্য পরিবেশনা। আমন্ত্রিত হলাম দুদিন পরের নতুন ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে।
মণিপুরের মায়েরা
ইমা কেইথেল বা উইমেন মার্কেট। ইমা মানে মা। এই বাজারে গেলাম ফেরার দিন। এয়ারপোর্টে যাবার আগে। ১৫৩৩ সালে শুরু হয় এই বাজার। সম্পূর্ণরূপে মায়েদের, মেয়েদের দ্বারা পরিচালিত বাজার। দোকানের সংখ্যা? ৩৫০০ এরও বেশি। আজোকের বাজার দেখলে মনে হতে পারে, খুবই সুপরিকল্পিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। কিন্তু শুরু হয়েছিল নিতান্তই টিকে থাকার দায়ে। মণিপুরের পুরুষেরা তখন কৃষিজমিতে কাজ করার জন্য দূরে চলে যেতে বাধ্য হত। ফলে মায়েরা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নিয়ে পেটের তাগিদে শুরু করে এই বাজার।
মণিপুর মণিপুর নয়
মণিপুরের রাজা দেবেন্দ্র যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ঢাকায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। যেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন সে স্থানের নাম আজকের “মনিপুরীপাড়া”। বাংলাদেশের ঢাকাস্থ জাতীয় সংসদের পূর্বদিকের এলাকা। এখানেই জন্ম নেয় তার কন্যা রত্নমঞ্জুরীকে বিয়ে দেন ত্রিপুরা রাজা রাঁধাকিশোর মাণিক্যের সাথে। এই রাণী ত্রিপুরায় ঢাকার রাণী হিসেবে পরিচিত। আমার নিজের জন্মপরবর্তী বেরে উঠাও বর্তমান বাসস্থান এর নামকরণের এই ইতিহাস জানতে পারি এল বীরমঙ্গলের কাছ থেকে। এখানে রাজা দেবেন্দ্র ও তার অনুসারীরা আবাস গড়েছিলেন। এল বীরমঙ্গল জানালেন, এখানকার অধিবাসী সব মনিপুরীরা নানান সময়ে সে জায়গা ছেড়ে চলে এসেছে। তিনি নিজে এই স্থান স্বচক্ষে দেখে গেছেন। মজা করে বললেন, মনিপুরীপাড়ার অবস্থানগত গুরুত্বের কারণে সেই মেইতেইরা এখনো থাকলে বেশ দামী জায়গার মালিক হতেন।
ইম্ফলের রাস্তার মোড়ে বীর টিকেন্দ্রজিতের বড় মূর্তি আছে। দিল্লিতে তার নামে রাস্তার কথাও জানলাম মালেম ও এল বীরমঙ্গলের কাছে। মণিপুরের স্বাধীনতার ইতিহাসে উজ্জ্বল নাম বীর টিকেন্দ্রজিৎ সিংহ। এখানে কাহিনী বিস্তার করবো না। উইকি পড়লেই ইংরেজদের বেঈমানি ও শঠতার কথা জানা যাবে। যেটা ঊল্লেখ করতে চাই তা হল, মেইতেই প্রাচীন পুরাণে বর্ণিত ছিল, কাঙলা সা মেইতেইদের সবসময় রক্ষা করবেন, এবং একদিন পাঁচ শ্বেতাঙ্গের রক্তে রঞ্জিত হবে। ঘটেছিলও তা, ইঙ্গ-মণিপুর যুদ্ধের ঠিক আগ দিয়ে। ১৮৯১ সালের কথা। ইংরেজরা এর রেশ ধরে তিন দিক দিয়ে আক্রমণ করে মণিপুরকে, গুড়িয়ে দেয় কাঙলা দুর্গ, হত্যা করে সেনাপতি টিকেন্দ্রজিত এবং থাঙ্গালকে। আজকে ইম্ফলের প্রাণকেন্দ্রের নাম থাঙ্গাল বাজার।
এই থাঙ্গাল বাজার কাঙলার পাশেই, এখানেই পাশে শহীদ মিনার, স্টেট মিউজিয়াম, এমা কেইথেই, জওহরলাল নেহেরু ডান্স একাডেমি, পৃথিবীর সবচেয়ে পুরাতন পোলো গ্রাউন্ড। হ্যা, মণিপুর থেকেই পোলো সারা পৃথিবীতে ছড়িয়েছে। ইম্ফল এয়ারপোর্ট সুন্দর, কাঙলা দুর্গের প্রবেশদ্বারের ডিজাইনে নির্মিত। ইম্ফল উপত্যকা থেকে চারপাশে উঁচু পাহাড় দেখা যায়, অনেকটা বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি শহরের মতন।
ইম্ফলে আমরা ছিলাম তিন দিন। আমরা মানে, আমি, মা ও বাবা। ইম্ফল, ভারতীয় রাজ্য মণিপুরের রাজধানী। প্রাচীন নামে মেইতেই। মেইতেই ভাষা ও জাতি। রাজা গরীবে নেওয়াজের আমলে সিলেট বা কাছার থেকে আগত কোন এক বাঙালি বৈষ্ণব গুরু তাকে বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত করেন এবং রাজা বৈষ্ণবধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করেন। এই বৈষ্ণবগুরুদের প্রভাবে আসাম ও সিলেট থেকে প্রচুর বৈষ্ণবদের আগমন ঘটে। এই গুরুরাই মহাভারত ঘেটে মণিপুর নামের উল্লেখিত রাজ্যটিকেই মেইতেই রাজ্য বলে ঘোষণা করেন। এই প্রাচীন নাম “মণিপুর” এর আগের লিখিত ১৫০০ বছরের ইতিহাসে কোথাও নেই। প্রাচীন ত্রিপুরা রাজমালার মতন, মেইতেই রাজাদের গ্রন্থটির নাম, চেইথারন কুম্বাবা। তাতেও কোথাও “মণিপুর” নামটির উল্লেখ নাই। বৈষ্ণবগুরুদের প্রাচীন গ্রন্থখুঁজে এই নাম উদ্ধারের যে ভিন্ন মতলব ছিল তা বলাই বাহুল্য। ফলত চিত্রাঙ্গদা মনিপুরি, কিন্তু মেইতেই নাও হতে পারেন। পুরো অধ্যায়টা অর্জুনকে জামাই বানিয়ে বাঙালি বৈষ্ণবের জাতে উঠানোর চেষ্টা মাত্র।
রাজধর্ম হয়ে বসার পরেও স্বস্তি হয়নি এই বৈষ্ণবদের। এরা দেখলো, প্রজারা তাদের পুরান ধর্ম নিয়েই আছে। তাদের ভাষা, তাদের ধর্ম, তাদের হরফ। রাজদণ্ডের সুবিধা নিয়ে এরা বিপুল পরিমাণে মেইতেই হরফের লেখা বইপত্র যোগাড় করে পুড়িয়ে দিল। জোর করে চাপানো হলো হানাদারি বাংলা হরফ ও তার বৈষ্ণবধর্ম। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, ২০০৫ এ মেইতেইরা সংগ্রাম করে সরকারকে বাধ্য করেছে মেইতেই হরফ ফিরিয়ে আনতে। পুড়িয়ে দিয়েছে অজস্র বাংলা ও বাংলা হরফে লেখা বই। বিবিসি বলছে তালিবান কান্ড, মেইতেইদের কাছে এটাই দেশপ্রেম। এর মধ্যে উগ্রতা খোঁজ করার আগে কেউ যদি নিপীড়ন এর ইতিহাস সন্ধান না করে, তাহলে তার এক চোখ কানা। এল বীরমঙ্গল, মালেম, চাওবা প্রত্যেকে বলেছে মেইতেইরা এখন নতুন হরফ সানন্দে শিখছে, এমনকি ফিরিয়ে আনছে, পুরানো ধর্ম, ঘোষণা করছে, “আমরা হিন্দু নই”, বাংলাকে মেনে নেয়ার প্রশ্নই আসে না।