:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
সেলিম মোরশেদকে উৎসর্গিত কবিতাগুচ্ছ

সেলিম মোরশেদকে উৎসর্গিত কবিতাগুচ্ছ

বোধি সংহিতা
মারুফুল আলম

সেলিম মোরশেদ প্রিয়জনেষু

তোমাকে চিনেছি দেবী,লহ তুমি প্রসন্ন প্রণাম
মোকামে মোকামে দেখি ব’সে আছে ব্যাকরণবিদ
বিচিত্র অক্ষরে ওরা ভরে তোলে কাগজের গ্রাম
সুবর্ণ ধানের ক্ষেতে মেলে রাখে বাদুড়ের ডানা

অস্বচ্ছ কাচের গৃহে ঝুলে থাকা মাছের দু’চোখ
সতর্ক সংশয়ে গাঁথে মুণ্ডুহীন নিত্যানন্দ ঘোর
তোমাকে চিনেছি দেবী,প্রাকৃতিক নিয়ম মাফিক
প্রাথমিক প্যাপিরাসে প্রতিদিন তোমাকে এঁকেছি –

ভোরের বৃত্তান্ত ভেঙে ছুটে আসে দিবসের ঘোড়া
দুরন্ত দুপুর শোনে পাতাঝরা বেদনার ধ্বনি
ট্যুরিস্ট বাহনে চড়ে দূরে যায় অষ্টাদশী আলো
তাহার সিঁদুর ছুঁয়ে অতিকায় লালটিপ ডোবে

তোমাকে চিনেছি দেবী,লহ তুমি প্রখর প্রণাম
করোটিতে ফুটে আছে কী ভীষণ বোধির প্রসূন!

(প্রতিশিল্প-৪,সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ সংখ্যায় মুদ্রিত।)

 

মৃত্তিকা মন্ত্র
কবির মনি

কুমার থমকে দাঁড়ায় জটিল সংশয়ে
পেছনে কুয়াশা ঝাপসা রহস্যময়
চিত্তবিভ্রম মস্তিষ্ককোষ, নাচে টানটান
পুতুলসুতোই জীবন ইতিবৃত্ত
জাগে বল্কলে নীলস্বপ্ন মথুরা বিষজ্বালা
উদ্দীপিত শৈশব পুড়ে ছাই
নিশ্চিদ্র নির্জনতায় ঝরে সন্ধ্যার বাদামি আবছায়া
অন্ধধোয়ায় মায়াবান বন্দি মানব পুরোহিত সম্মান
গির্জার অভ্যন্তরে মধুময় যজ্ঞপাঠে আনে অন্ধ বিশ্বাস
গুহার গভীরে পতিত ধর্মের বীজ-অঙ্কুর
আমরা আদম হতে আদম মাটি হতে
জড় থেকে জীব জীব থেকে ক্লীব
অন্ধকারের ভেতর উড্ডীন সর্পরূপ লুসিফার
দৃষ্টিহীন সীমানায় ঈশ্বর পাহাড়ি দৈত্য
ভাসমান পাথরের ছাই অলৌকিক বাণী
শূন্যতার ওপারে স্পর্শহীন অবিনাশী সত্তা
বেড়ে ওঠে পতিত রক্তে জেহোভার কণিকা
জরায়ু ধারণ করে ক্রোমোজম দেবজিন
প্রভু-প্রেরিত অবতার পবিত্র পুরুষ
সমমানব বিভক্তে যায় ঐশী আপেলে
ক্ষিতি স্বর্গ পাতকী নরক অলীক আশায়

কুমার দ্বিধান্বিত ধূসর কোষে দুর্বোধ্য হেঁয়ালি
বিধ্বংসী নেশায় নাচে বিকট নরক মূর্তি
প্রত্যাভিজ্ঞা স্বশব্দ খেয়ালি মগজ ধবল বাসনা
অনাস্থা অবশ্যই বিশ্বাসে দেব-ঈশ্বর
অলীক মন্ত্রপাঠে অতিক্রমিত স্বর্গতোরণ
দুর্লঙ্ঘ্য পাঁচিল ব্যবছিন্ন অনঐশী স্বীকার্যে
ভেতর-বাহিরে জাগুক বিপ্লব
পাপ-ক্ষমায় পুনরুত্থিত কিসের ধার্মিকতা—কাপুরুষ
অতঃপর অবনত ধার্মিক নয়

কুমার ফিরে যায় বিপরীত সাধনায়
মনুষ্যত্বে বিশ্বাস আনে মানুষ ঈশ্বর!
খসে পড়ে পাথরের চাঙড় জিয়ুসের দেবপুরী
আলোকিত বিষ্ফোরণে জন্মে জড় ও জৈব সত্তা
প্রোটোজোয়া ভাঙনে সৃষ্ট অণু-পরমাণু বহুকোষ
চক্রাকারে অনমনীয় দৃঢ়তার নির্লোভ প্রাণান্তে
প্রদীপ্ত সূর্য বেড়ে ওঠে মৃতের আলয়ে
জ্ঞান প্রদীপন পৃথিবীর বয়স দৈর্ঘ্য ওজন-সমুদ্র শৈবালে
তটভূমি প্রাণীর জীবনী শিকড়
নিষিক্ত শুক্রাণু ডিম্বকোষে ঘটায় বংশজ বিস্তার

কুমার অনুভব করে সত্তায় আদিম বিমূর্তচিত্র
গাঢ় অন্ধকার জাপটে ধরে নগর বেষ্টনী আলো নিভে যায়
নিস্তব্ধতা আঁতকে ওঠে জোনাকি
নিঃসীম গভীর শূন্যতায় প্রহরী নির্বাক নিথর
ব্যাপক গোরের উত্তাপে লোকায়িত হাড়ের আর্তনাদ
প্রাচীন পুরুষ বেরিয়ে আসে নাচঘর থেকে
বেঢপ নৃত্যে বালিশ মৈথুনে বীর্যস্খলন
শ্যাওলা ঘোলাটে জলে ভেজা সর্বাঙ্গ গন্ধময়-নির্লজ্জ বাতাস
উড়িয়ে নেয় বন্য পশুর ঘ্রাণ
আদিমতা অবলীলাক্রমে ফিরে আসে শ্যাওলার শরীর
কামনার বিদগ্ধে পোড়ে পূণ্যার্থিনীর গৈরিক অন্তর্বাস
আদিম গন্ধ ছোটে রাজপথ নগর ফটকে
ভেসে ওঠে নগ্ন শরীর রঙিন পর্দায়
হুডখোলা বুক মুখ ঘষে দুর্ধর্ষ পর্বতআরোহী
আদিমতা ফিরে আসে অরণ্য শিকড়ে — ঢালে বীর্য
জন্ম গুহা যোনি — সঙ্কেতের খোঁড়লে
নিখুঁত রাত্রি চমকে দেয় রমণী চিৎকার
কামট তীক্ষ্ণতাই ঘটে মনুষ্য বিচ্ছেদ
উপচে পড়া ভ্রূণে জন্মে লক্ষাধিক বিবর্ণকুসুম
দীর্ঘ অভিপ্রয়াসের খেলা চলে স্যাঁতসেঁতে জীবনে

কুমার থমকে দাঁড়ায় দোদুল্যমান সমাজ পায়ে পিষে
তীক্ষ্ন কঠিন শব্দ ছোঁড়ে মানুষ সৃষ্ট সমাজে
আমি দেবশিশু অঙ্গরোপন বাইজি মায়ের জঠরে
অভিশপ্ত শূন্যগর্ভ জারজধ্বনি ওঠে চতুর্পার্শ্বে
দুঃখ-বিষাদের নদীবয়ে মৃতদের বাসস্থানে
খল-খল শব্দে শিশ্নজল ঢালে দেবকুমার
চকমকি রঙের মাকালভণ্ড অবতার মুখোশে
আলো-আঁধারির খেলায় হারায় প্রিয়চিন্তা

কু মা র ম ন্ত্র পা ঠে হ য় নি ম গ্ন

শ্মশান চিতায় মরা জলে জলে কুমির পাথর ভাঙে
ভাঙা জীবন নষ্ট বাড়ি শাড়ি খোলে বেশ্যা নারী
নাড়ি বিচ্ছেদ মায়ের ছেলে ছেড়ে বাঁধন পিতামহের
মোহ-ই ভুলে শিশ্ন ঘসে নষ্ট উরুই বীর্য ঢালে
ওম: ওম: ওম: স্বর্গ বাস বাস্তবতার জীবননাশ
নাশপাতি গাছে প্রেতের দল নাচে প্রেতিনী পটকা ফল
নষ্ট বীর্য ঢালো আকণ্ঠ পানিপানে ভোলো বাঁচার কষ্ট
কষ্ট নষ্ট মানুষ ভ্রষ্ট

মত পথ ভুলে ভুলের সাগরে সাঁতরায় ভ্রণ পৃথ্বী জঠরে
জটপড়া চুল চালচুলোহীন হিমালয় দেখে নাগরিক দিন
দিনের বেলায় মাকাল রূপ রূপ বদলায় মাঝ রাত্রি
রাত্রি কালো অনেক ভালো ভালোলাগে না আঁশটে তোলো
তোলা ভাতেই লবণ ছিটা ছিটা দুঃখ ছিটা কষ্ট
বামন সাধু দেব সম্মান সম্মোহিত বোকার দল
দল বদলে ছিল যারা শ্মশান ঘাটে খাচ্ছে মরা
দল বদলে কষ্টি পাথর নিথর দেহ কুমির হাঙর
করলো কি-হা প্রেতের দল গিলে খা—সব মাকাল ফল

ম ন্ত্র পা ঠে ফি রে পা ই প্রি য় চি ন্তা

কুমার ঘুমহীন খুঁড়ে চলে কংক্রিট সময়
স্বপ্নেরা জেগে থাকে চিতায় চন্দন জ্বালিয়ে
কোরাস সংগীত বাজে বাতাস কেটে একা
মেঘেদের চাঁদ নেমে আসে পচা যোনির আড়ালে
প্রচন্ড দুর্দমনীয় কামনা কর্ষণে জবুথবু উরুসন্ধি
স্বর্গ-নরক বজ্র শব্দে বাজায় ঘণ্টি
পুলসিরাতের আজব মাঠে কুটুম কুটুম নষ্ট খেলা
খোলস প্রলাপ উহ্: আহ্: শিৎকার মূলত মেলা
আয় আয় ডাকে মর্ত্য আদম-হাওয়া
ভাঁপা ভাঁপা ওমে ফোটে আদমের বাওয়া
অতঃপর কিলবিল ব্যাপ্তি নগর-নাগর
ঝরায় শূন্যতায় জলজপ্লাবন স্বপ্ন ভাঙন
অনুভূতি হিমায়িত পাথর অনুভূতি হিমায়িত বরফ
স্বপ্নজাল বুননে ক্লান্ত মনন ক্ষমতা ভুল
স্বচ্ছকাচে ফ্লাশ করে রেডিয়াম স্মৃতি
নীল সময় চলে গেছে ঘনরাতে নিরুদ্দেশে
নিউরোন কোষ তাড়িত করে কদর্য বিবেক
আলোকবর্ষ দূরে তারকার মতো ছোট্ট অশ্রুপাত
জীবনের তাড়নায় জীবন পাথরে টানে সময়

মানুষ ও মৃত্তিকার রহিত ক্ষরণ থেকে
ক্রমাগত ক্ষয়ে যাওয়া ক্রমাগত মরে যাওয়া
অলৌকিক বাণী নয় লৌকিক শব্দে ভেজে কুমার
বুকে জমে পরমাণু কার্বনগ্যাস

মানুষ ও মৃত্তিকায় পুনশ্চ কৌমার্য হরণ
কুমার তৈরি করে বারুদ কামার অস্ত্র
জমাট রক্ত লোনা শৈবালে সৃষ্ট মানুষ
শিল্পীর ছেনির আঘাতে অপসৃয়মান ভাস্কর

উৎসর্গ: শ্রদ্ধেয় সেলিম মোরশেদকে— শিল্প সাহিত্যের বাইরে যার অন্য কোনো জীবন নেই!

 

নীল জারজ
নাভিল মানদার

এরপর নীল একটি আকাশ আরো কিছু কান্না গিলে নীলরঙে বাঁচে
আরো কিছু পাঁচিল টোপকে উড়ে গেলো পাখির একটি গান
পাখির সঙ্গীতধারী ডিম পেয়েছে আগামী আকাশের উত্তরাধিকার
মানঠাখালির সেতুর উপর দিয়ে যে আকাশ চলে গেছে-তার পিতৃপরিচয় নেই
আরো এক অলৌকিক নৌকা সনাতন জল ছুঁয়ে ভেসে আছে
ভেসে আছে নীল আকাশ-নৌকার নিচে নদীধারা জল
অচেনা বয়সী অচেনা একটি কুকুর আমাকে ফলো করে প্রতিদিন
নীল নীরবতা নিয়ে সে আমায় চেটে দেয় দেহমন ভয়ভীতি
আর বীজের সমগ্র জোড়া খুলে জেগে ওঠে দুটি করজোড়ে জালিপাতা
দুটি পাতার যুগল কান্না আরো এক নীলাকাশে নীল হয়, জারজের মর্যাদায়

 

উৎসর্গ: কথাসাহিত্যিক সেলিম মোরশেদ

আলোকাটা লেন কাব্যগ্রন্থ থেকে
প্রকাশক: প্রতিশিল্প, ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ খ্রীস্টাব্দ

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.

error: Content is protected !!