আগুন
খুব বিষণ্ণ লাগে তার। নিজেকে বিপর্যস্ত মনে হয়, রাত বাড়লে বালিশের ভেতর কান্নায় শুয়ে পড়ে। তার কিছুই ভালো লাগেনা। মানুষের সঙ্গ খুব নির্বাক করে দেয় তাকে। কখনো কখনো ফ্লাইওভারে ঊঠে গাড়ির চাকা গুনতে থাকে, হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূরে চলে যায়। কি যেন খুঁজতে থাকে, কি যেন হারিয়ে গেলো। না পেয়ে বসে পড়ে ফুটপাতের টং এর দোকানেটিতে, লাল চা চুমুক দেয়। একটা কুকুর বসে আছে পাশে, কুকুরটি তার দিকে চেয়ে থাকে যেন তাকে কি যেন বলবে। কুকুরেরও একটা ভাষা থাকে। সন্ধ্যা হয়, শিল্পকলায় আবৃত্তি শোনা যায়। কিন্তু শব্দের সূর ঠিক যেন মিলছে না, সে মজা পায়না।
সিগারেট ধরায় সে, সিগারেটটি শেষ হতে আরেকটি ধরায়। এরপর আবার হাঁটতে হাঁটতে ভিড়ের ভেতর হারাতে থাকে। একদল ছেলেরা সামনে, তারা একজন মেয়ের পিছনে হাঁটছে। তাদের আচরণ দেখে রাস্তার মানুষেরা মজা পাচ্ছে, এসব দেখে তার কোন মজা লাগেনা সে আর হাঁটতে পারেনা। আরেকটা সিগারেট ধরায়। একটু দূরে গিটার বাজাচ্ছে আরেকটা গ্রুপ। সেখানে গিয়ে দাঁড়ালো। হঠাৎ দৌড়ে আসলো কিছু ছেলে, মারামারি শুরু করলো তারা।
ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে আসে, সিগারেট মুখে নিয়ে শুয়ে পড়ে। মাথাটা বালিশে, লাইটার খুঁজতে থাকে। লাইটার খুঁজতে গিয়ে টেবিলে বাঁহাত রাখতেই কি যেন হাতে লাগলো। বালিশ থেকে মুখ তুলে সিফাত তাকালো তখন মুখের সিগারেটটা বাঁকা হয়ে নড়ছে, হাতে নিয়ে ভাল করে দেখলো, ‘এটা তো সেই লাইটারটা!
সে হাঁটা শুরু করে। বড় রাস্তার মোড়ে আসতেই একটা মিছিল দেখে। মিছিলটা আকারে ছোট ১৫/১৬ জনের যুবক-যুবতী, অফ হোয়াইট কালারের ব্যানারে লাল শ্লোগান। মিছিলের শ্লোগানটি দেখে তাঁর মনটা আরো ভীষণ বিষণ্ণ হয়ে গেল। দুদিন আগে এই শ্লোগানে একটা মানববন্ধন হয়েছিল। রোদের তেজও মারাত্মক। ঠেলাগাড়িওয়ালার কালো পিঠ থেকে ঘামগুলো চোখ ধাঁধাচ্ছে।
ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে আসে, সিগারেট মুখে নিয়ে শুয়ে পড়ে। মাথাটা বালিশে, লাইটার খুঁজতে থাকে। লাইটার খুঁজতে গিয়ে টেবিলে বাঁহাত রাখতেই কি যেন হাতে লাগলো। বালিশ থেকে মুখ তুলে সিফাত তাকালো তখন মুখের সিগারেটটা বাঁকা হয়ে নড়ছে, হাতে নিয়ে ভাল করে দেখলো, ‘এটা তো সেই লাইটারটা! সেদিন সেঁজুতি এটি গিফট দিয়েছিল সিফাতের জন্মদিনে’। আগুন ধরাতে গেল কিন্তু ধরলো না আবার লাইটারে টিপ দিল কিন্তু আগুন ধরে না কিছুতেই। সিফাত বার বার টিপছে আগুন ধরছে না অথচ সেদিন এগারোতলা ভবনটি আগুনে জ্বলছিল সাথে ভবনের আটতলার আগুন কেউ নিভাতে পারেনি একনাগাড়ে জ্বলছিল সেঁজুতির শরীরে। কিন্তু সিফাতের লাইটারটি কিছুতেই ধরছে না, সব আগুন সেঁজুতি নিয়ে গেছে। সিফাত মুখে সিগারেট নিয়ে লাইটারটি এখনো টিপেই যাচ্ছে।