

আহবানের প্রশ্নমালা
‘এটা এমন একটা ক্রিস্টাল, যা পড়ে পায়। আর যে পায়, সে পৃথিবীর আর কোনো কিছু ধরে রাখতে পারে না। এর ইমেজ দূর থেকে এতো দীপ্তিমান যে ছুটে আসতে হয়—বহন করা অভিশাপের মতো’: সেলিম মোরশেদ
নাঈমা সিদ্দিকার একটি প্রশ্ন
নাঈমা সিদ্দিকা: বাংলাদেশের লিটলম্যাগ আন্দোলনের সাথে পশ্চিমবঙ্গের লিটলম্যাগ আন্দোলনের কোনো পার্থক্য প্রত্যক্ষ করেছেন কিনা? আপনি যখন লিটলম্যাগ এবং এন্টি-স্টাব্লিসমেন্ট আন্দোলন শুরু বা মুভমেন্ট শুরু করেন তার সাথে এখনকার মুভমেন্টের কোনো পার্থক্য আছে কিনা? এই মুভমেন্টকে আপনি ভবিষ্যতে কিভাবে দেখতে চান?
সেলিম মোরশেদ: বাংলাদেশের লিটল ম্যাগাজিনের সাথে পশ্চিমবাংলার লিটল ম্যাগাজিনের বিস্তর ফারাক। পার্থক্য তো আছেই। সেটা সামাজিক, রাজনৈতিক এবং দীর্ঘদিনের দুই দেশের মিডলক্লাসের বেড়ে ওঠা বা কমার পার্থক্য। আরেকটি যে প্রশ্ন করেছেন তার উত্তর আমি দিয়েছি; ভবিষ্যতে মানুষের মুভমেন্টের সাথে একাত্ম হতে চাই।
বিপুল বিশ্বাশের তিনটি প্রশ্ন
বিপুল বিশ্বাশ: লেখালেখি করার জন্যে ছোটকাগজ জরুরি কেন? যে ছেলেটি/মেয়েটি আজ একদম নতুন, সে তার স্বাধীন মতোই লিখবে, যেখানে খুশি সেখানে লিখবে। সে যদি ছোটকাগজে যুক্ত না হয়, সে কি লেখক হয়ে উঠবে না?
সেলিম মোরশেদ: লেখালেখির জন্যে ছোটকাগজ জরুরি এই জন্যে। সেই ছোট্ট ছেলেটা জীবনের শুরুতেই একটা ভালো এসোসিয়েশন পায়। এ ম্যান ইজ নোন বাই দি কোম্পানি হি কিপস— ছোটকালে বাবারা বলতেন। সুন্দরভাবে প্রতিযোগিতা এবং সহযোগিতার মন তৈরি করতে পারে, যদি শৈশবে কারোর একটা ভালো বলয় থাকে। তার লেখক-সত্তা সারা জীবনের জন্যে একটা যূথবদ্ধের প্রবণতাকেও নানানভাবে প্রকাশ করতে পারে। লেখক হওয়া ছোটকাগজ-বড়কাগজের হাতে না। লেখক, প্রকৃতিপ্রদত্ত বলবো খানিকটা। কারণ কেউই জানায়নি সাহিত্যে সত্যিকার কী আশা করা উচিত। ফ্রয়েড নিজেই স্বীকার করেছেন, লিবিডো কী করে আর্টিস্টের সক্রিয় চেতনা হয়ে যায় তা তিনি জানেন না। ফলে অমিয়ভূষণ মজুমদারই সম্বল। তাঁর কথাটাই বরং বলি, ‘লেখক কল্পনায় নতুন করে তৈরি করে তাকে নিয়ে পালায়। এবং পাঠক যখন রসকে ধরতে পেরেছে তখন সে-ও পলাতক।…’ এই পালানো কেন? কি লেখক কি সাহিত্যিক; তাদের মনে এমন অব্যক্ত বেদনা থাকে (Trauma) বলা যায়। ট্রমা ব্যক্তির মনের মানসিক অবস্থা। প্রতিকারহীন যে ব্যাথার শেষ নেই, যেমন নিজের মৃত্যুভয়, প্রিয়জনের মৃত্যু, এই পৃথিবীকে ছেড়ে যাওয়ার ভয়, চির-প্রতিপক্ষ সমাজের সঙ্গে অন্তহীন দ্বন্দ্ব, জরা শাশ্বত সংগ্রামে বিপন্ন; এগুলো ট্রমা অবস্থাপ্রাপ্ত হয়। ট্রমার কোনো চিকিৎসা নেই। মোদ্দা কথা, ‘সাহিত্য প্রস্তাব’ প্রবন্ধে অমিয়ভূষণ বলতে চান স্কেপ থেকে লেখক হয়ে ওঠে। ফলে এখানে ছোটকাগজ-বড়কাগজ তেমন কোনো বিষয় না।
বিপুল বিশ্বাশ: বোঝানোর জন্যে বলছি, ১০০ মিটার দৌড়ে জিততে গেলে সবাইকেই অতিক্রম করে যেতে হয়। (তবে এখানে জিতে যাওয়া শব্দটা গৌণ হিসেবে ধরে অতিক্রম বা এগিয়ে যাওয়া শব্দটি ধরবেন)। বাংলাদেশের গল্প বা গল্পকাররা কতখানি অতিক্রম করতে পারল অন্যান্য দেশের/লেখকের তুলনায়?
সেলিম মোরশেদ: সেটা বিশ্লেষণ সাপেক্ষ। কারণ পৃথিবীর অন্যান্য ভূখণ্ডের রাজনীতি, সমাজবাস্তবতা, আর ভারতবর্ষ বা বাংলাদেশের রাজনীতি সমাজবাস্তবতা ভিন্ন। মূল্যবোধগুলোতেও তফাৎ আছে। অর্থনৈতিক তারতম্য রয়েছে। এ সবকিছুই একজন লেখকের মননের জন্ম দেয়। তার পরেও বাংলাদেশের লেখকদের ভেতরে যে অনুদ্ঘাটিত প্রবণতার অন্বেষণটা এসেছে, সে প্রবণতা এমন কিছু মানবিক সত্যের দিকে নিয়ে গেছে ইতিমধ্যে কিছু গল্পে, উপন্যাসে যে, আমার সেক্ষেত্রে মনে হয় বাংলাদেশের গল্প অনেক দূর এগিয়েছে।
বিপুল বিশ্বাশ: আমাদের দেশে প্রচুর ভালো লেখা হয়—কবিতা, গল্প, গদ্য ইত্যাদি কিন্তু যেহেতু তা অনুবাদ হচ্ছে না, তাই তার পাঠক শুধু এক-দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে এবং বাইরের পাঠকেরা/লেখকেরা কিছুতেই এইসব লেখার সাথে পরিচিত হতে পারছেন না। আমরা দেখেছি, যে পরিমাণ অন্য ভাষার সাহিত্য বাংলা ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে, সেভাবে বাংলা লেখাকে অন্য ভাষায় অনুবাদ করা হয়নি। সেক্ষেত্রে অনুবাদের (বাংলা থেকে অন্যান্য ভাষায়) একটা ঘাটতি থেকে গেছে না, এদেশে?
সেলিম মোরশেদ: যাঁরা সাংস্কৃতিক বলয়ে নেতৃত্বে আছেন বা সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত আছেন কিংবা দেশের যে সমস্ত সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আছে, তাদের হীনমন্যতাই আমি বলব। রাজনৈতিক দৈন্যতা তো আছেই। তবে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সাথে যারা যুক্ত তারা নিজেরাই হীনমন্য এবং আত্মগত প্রতিষ্ঠায় এতো ব্যস্ত যে, দেশের ভেতরে তাদের এই লিপ্সাটুকু নিয়েই তারা তৃপ্ত। এখানকার ধারাবাহিক সাহিত্যকে বিশ্বে উপস্থাপন করার মতো চিন্তা তারা করেও না। সেই ধরনের আগ্রহ এবং উপযুক্ততাও নেই।
তানজিন তামান্নার প্রশ্নমালা
তানজিন তামান্না: শিলা অনন্তে গল্পটি আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। গল্পের শেষের দিকে সব্জিবাগানের ভেতর শিলা উধাও হয়ে যায়, তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না, পাঠকরূপে আমি নিজেও খুঁজেছি। তবু শিলার উধাও হয়ে যাওয়া সম্পর্কে আপনি যদি কিছু বলতেন—
সেলিম মোরশেদ: ‘শিলা অনন্তে’ নিয়ে বেশ কিছু আলোচনা হয়েছে। তার ভেতর সরিফা সালোয়া ডিনা’র একটা দীর্ঘ আলোচনা আছে। পরস্পর বিপরীতধর্মী মন্তব্যও আছে অনেকের লেখায়। আমি নিজে যখন পরে পড়েছি, তখন দেখেছি যে, সে প্রকৃতির সাথে মিশে যায়। যা তার অচেতন মন চাইতো। হাতিশুঁড়ের ঝড়টা বোধহয় সেই আহবান।
তানজিন তামান্না: কাটা সাপের মুণ্ডু এ-রকম একটি অসম্ভব গল্প আপনি কিভাবে সৃষ্টি করলেন? হেমাঙ্গিনীর সাপভক্ষণের দৃশ্য একটি অবিশ্বাস্য করাঘাত। আমি শুধু ভাবছি হেমাঙ্গিনীর এতটা নিকটে আপনি কিভাবে পৌঁছলেন?
সেলিম মোরশেদ: আসলে স্বৈরশাসন এবং আমার দেখাগুলো তখন এ-রকমই ছিল। যশোর থেকে খুলনা যাবার সময় রূপদিয়াতে একটা মেয়ে এভাবে ভিক্ষা করতো। আমি বোধহয় সর্বপ্রথম ওকে জিগ্যেস করেছিলাম, কেন এমন হলো? ও উত্তর দিতে পারছিলো না। পরে সত্যটা বলেছিল। যে ইচ্ছা করতে করতে সত্যি সত্যিই ওর হাতটা এমন হয়েছে। বেশ কয়েক বছর পর হঠাৎ ঘটনাটা এমনভাবে কাজ করতে লাগলো, যে মাত্র দুইদিনে লেখাটা লিখেছিলাম। তখন আমার বয়স একুশ বছর। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে গিয়ে শোনালাম সাজ্জাদ শরিফ, শোয়েব শাদাব আর পারভেজ হোসেন এবং অঞ্জনকে। তখন পারভেজ হোসেন সংবেদ বের করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ওর কাগজেই গল্পটা ছাপা হলো।
তানজিন তামান্না: বলা হয়ে থাকে লিটল ম্যাগাজিনেই একমাত্র প্রকৃত সাহিত্য জন্মলাভ করে থাকে। আমি নিজেও তা মানি বা মানতে চাই। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে কথাটা কতটুকু বাস্তবসম্মত?
সেলিম মোরশেদ: লিটল ম্যাগাজিনের ধারাবাহিকতায় কথাটা সত্য। বিশেষ করে আশির দশকের লিটল ম্যাগাজিন এবং সাহিত্য এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে যে লেখা এইসব বিষয়গুলো অঙ্গাঙ্গীভাবেই যুক্ত ছিল। বর্তমান বিষয়টা আমার কাছে অতোটা স্পষ্ট না।
তানজিন তামান্না: ‘পাল্টা কথার সূত্রমুখ অথবা বুনো শুয়োরের গোঁ’ বইটা প্রকাশ পেয়েছিল ২০০২ সালে। এই এখন ২০২০ সালে এসে আপনার কি মনে হয়, বইটি আরেকটু পরিমার্জন করি?
সেলিম মোরশেদ: যখন আমরা লিটল ম্যাগাজিন শুরু করি, ঢাকায় গাণ্ডীবের ইস্তেহারের পর পর; তার থেকে ‘পাল্টা কথার সূত্রমুখ’ বিশ বছর পরে লেখা। এটা আমি একটা প্রশ্নের ভেতরে বলেছি। কেন এই দাঁড়িয়ে থাকা, এইসব নিয়ে প্রশ্ন ছিল। এখন অবশ্যই তো তা পরিবর্তন করার বিষয়। এখন কেন এই স্থবির দাঁড়িয়ে থাকা! আমাকে বলতে হয়, যে এখনকার লিটল ম্যাগাজিনের যে গতি, এই বাস্তবতার তুলনায় অনেক স্থবির। তখন লিখেছিলাম ব্যক্তিগত ইস্তেহার—যা সামষ্টিক হতে পারে। কেবল নিজের জন্যেই। এখন তো আর শুধু তার উপরে দাঁড়িয়ে নেই। অনেক কিছু পাল্টিয়েছে, বিষয়টা ভেতরেও বসে গেছে। এখনকার বাস্তবতা অনুসারে পরিবর্তন আশা করি।
তানজিন তামান্না: আপনার লেখায় আপনার নিজস্ব একটা ল্যাঙ্গুয়েজ আছে। আপনি নিশ্চয়ই নিজেও তা টের পান। আপনার নিজস্ব ভাষাভঙ্গির পেছনে যে বিভিন্ন ধাপগুলো আপনি পার করেছেন সে সম্পর্কে একটু জানতে চাই।
সেলিম মোরশেদ: একজন লেখক সারা জীবন ধরেই অন্বেষণ করে একটা নিজস্ব ভাষার, এটা একটা দিক। অবশ্য ভাষাই সব না। সে অবস্থার অনেকগুলো স্তরই পার করেছি, সেগুলো বলাও খুব কঠিন। তবে একটা উদাহরণ দেই, আমার রচনাসমগ্রের কোনো একটা কপি আজ বইয়ের দোকানে নেই। মানে শেষ। কেউ যদি দ্বিতীয় সংস্করণ বের করতে চায়, আমি তার কাছ থেকে এক বছর সময় নেবো, শুধু নতুন করে আবার কাটাকাটি করার জন্যে। একদিন ‘উলুখড়’-এর প্রকাশক সাগর নীল খান বলেছিল, যতবার বের হবে ততবারই কি এই করবেন? আমি বলেছিলাম, হ্যাঁ। ‘ওয়ার এন্ড পিস’ তেরোবার কাটাকাটি করা হয়েছিল বলে জানি। তেরোবার একজন মানুষের পক্ষে পড়া সম্ভব?
স্বাক্ষর শতাব্দর একটি প্রশ্ন
স্বাক্ষর শতাব্দ: একটা গল্প বা ফিকশন লেখার শুরু কীভাবে হয়? কোনো চরিত্র বা ঘটনা বা ভাব থেকে সূত্রপাত ঘটে নাকি একটা সমগ্র কাঠামো জোড়া দিয়ে তার পরে লেখেন? নাকি অন্য কোনো জাদুই ব্যাপার? রিভিশন বা পুনর্লিখন-এর ব্যাপারে বলেন।
সেলিম মোরশেদ: দু’ভাবেই হয়। তবে এখানে কোনো জাদু নেই। পরিশ্রম আছে। সেলাইয়ের দাগটা রাখবেন কি রাখবেন না এই সেন্সটা খুব কাজ করে। পুনর্লিখন কখনো করিনি। তবে বেশ কাটাকুটি করি।
অরুনিমা স্যানালের চারটি প্রশ্ন
অরুনিমা স্যানাল: এখন অনেক অনেকপ্রচার মাধ্যম। কেউ চাইলেই নিজের ব্লগ বানিয়ে ওইখানে লিখতে পারছে। ফেসবুকে লিখতে পারতেছে। যার কারণে জনপ্রিয় দৈনিকের সম্পাদকের যে আধিপত্য তা নেই বললেই চলে। এরকম সময়ে লিটল ম্যাগাজিনের প্রাসঙ্গিকতা কতটুক? অদৌ আছে কিনা?
সেলিম মোরশেদ: বিষয়টা এমন নয় যে, ফেসবুকে লেখার কারণে দৈনিক পত্রিকার আধিপত্য একেবারে নেই বা লিটল ম্যাগাজিনের প্রাসঙ্গিকতাও হারিয়ে গেছে। দৈনিক পত্রিকার সাহিত্যপাতায় লিখতে গেলে ন্যূনতম লেখকসত্তা থাকতে হয়। ছোটকাগজে লিখতে গেলে আলাদা দৃষ্টিভঙ্গির ও চিন্তাশীল সত্তা লাগে। দৈনিক পত্রিকায় যারা জনপ্রিয় হবে তারা ওখানে লিখবে। আজকে যারা ফেসবুকে লিখছে তাদের ভেতরে সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ, ব্রাত্য রাইসু, মজনু শাহ, কামরুজ্জামান কামু কিংবা আহমেদ নকীব, মারুফুল আলম— এরা সবাই কোনো-না-কোনো ভাবে দীর্ঘদিন ছোটকাগজে লিখে একটা পরিচিতি, কিছুটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে ফেসবুকে তারা চর্চাটা রাখছে। যে আজ সিরিয়াসলি লিখতে চায় সে ছোটকাগজেই লিখবে। শুরুতেই ফেসবুক নিয়ে এগোতে গেলে সে লেখক হবে কিনা এটা সন্দেহ। এটা একটা টিনএজ মাধ্যম। যে যাই বলুন, একদল লোক সবসময় সম্মতি জানানোর জন্যে প্রস্তুত থাকে লাইক দিয়ে। লিটল ম্যাগাজিনের প্রাসঙ্গিকতা সবসময় জরুরি থাকে। প্রচার, প্রকাশ নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমেই লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি। সে কী লিখতে চায়, কাদের জন্যে লিখতে চায়। সবাইকে তো আর লেখক ভাবার কারণ নেই।
অরুনিমা স্যানাল: বাংলাদেশে লিটলম্যাগ যারা করতেন, এখন যারা করেন, অনেকে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার কথা বলেন? এই প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা জিনিসটা কী? বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠান কী, কোনগুলো?
সেলিম মোরশেদ: আমি বরং ‘পাল্টা কথার সূত্রমুখ ও বুনো শুয়োরের গোঁ’ (২০০২) আমার লেখা বইটা থেকে বলি।
‘চারপাশে চলমান যে প্রথা তার প্রতি বিরোধটা কেন? যে মূল্যবোধ বিরাজমান তার প্রতি বিরোধটা কেন? ব্যক্তিগত জীবন-যাপনে একটা পর্যায় পর্যন্ত আমরা নানামুখী প্রভাবময় অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছ্বল জীবন ধারণ করতে পারি। যদি আমরা চলমান মূল্যবোধকে মেনে নেই। কিন্তু একজন সচেতন লোক কেন এটা মেনে নেয় না? কেন? তার ব্যক্তিগত সুখগুলো যে প্রক্রিয়ায় অর্জন করে তা নৈতিক এবং সুন্দর না। এই কারণে যে, অন্যের রেশন কেটে অদ্ভুত দায়দায়িত্বহীন মনোবৃত্তি নিয়ে একটা কথিত স্বস্তিদায়ক জীবনের পেছনে ছুটতে থাকে, এটা ক্রাইম। এক পর্যায়ে সে যে ক্রাইম করছে সে নিজেও তা বিশ্বাস করতে চায় না। অধিকাংশ মূল্যবোধ, যেগুলো নিয়ে চলমান প্রথা তৈরি হয়েছে তার পেছনে রয়েছে এক্সপ্লয়টেশন। কায়েমি স্বার্থান্বেষীরা তাদের প্রয়োজনে এই প্রথা টিকিয়ে রেখেছে। যার বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেলে সপাং সপাং চাবুক খেতে হচ্ছে। এই যে এক্সপ্লয়েট হবার সিস্টেম এরই জোটফল নিয়ে স্টাবলিশমেন্ট হয়। এটাই প্রতিষ্ঠান। ফলে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা একটা মনোভঙ্গি, একটা নিরন্তর কোশ্চেন, নিজেকে ভাঙা, নিজের বিরুদ্ধে লড়া, নিজস্ব রুচি তৈরি করা, আর প্রয়োজনে নিজস্ব নন্দনের প্রয়োজনীয়তা বোঝা।’
(‘পাল্টা কথার সূত্রমুখ ও বুনো শুয়োরের গো’, পৃষ্ঠা-৯)
এটা কোনো জিনিস না, বিষয়ও না, বোধ!
অরুনিমা স্যানাল: প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা করতে গিয়ে কেউ কেউ নিজেরাই প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছেন এমন মনে করেন কিনা? অনেকে আবার প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা বলতে বোঝেন জাতীয় দৈনিকে না-লিখা। কিন্তু বাংলাদেশে এসব দৈনিক, তাদের সাহিত্যপাতা আদৌ প্রতিষ্ঠান হতে পারছে কিনা?
সেলিম মোরশেদ: ব্যক্তি কখনও প্রতিষ্ঠান হয় না। তাহলে সক্রেটিস থেকে কার্ল মার্কস প্রতিষ্ঠান হতো। মূল বিষয় ব্যক্তির কার্যক্রম এবং এক্সপ্লয়েটেশন। এবং সেটা প্রক্রিয়াগত ভাবে। আর নিঃসন্দেহে তা অর্থনৈতিক। স্থানীয় দৈনিকে না-লেখা— এটা একটা ক্রাইটেরিয়া। এটা ভালো বলেছেন, যে প্রতিষ্ঠানকে সত্যিকার বিরোধিতা করতে হয় তা কখনো দুর্বৃত্ত-পুঁজি দিয়ে এগোয় না। বণিক-পুঁজির প্রতিষ্ঠান, যেটা আমাদের দেশে কম। এবং সত্যি দৈনিক পত্রিকাগুলোর পরিস্থিতি আজ ভালো না।
অরুনিমা স্যানাল: আবার ধরেন, প্রতিষ্ঠান-বিরোধী লিটলম্যাগ, এ জন্য বাংলা একাডেমির পত্রিকাতে লিখবে না। কিন্তু বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইমেলায়, একাডেমির বরাদ্দ জায়গাতে গিয়ে বসা, এতে কোন স্ববিরোধিতা আছে কিনা? বাংলা একাডেমিকে যদি জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখি, তাহলে তাতে সবারই হক আছে। এখন বয়কটের মাধ্যমে অধিকার ছাড়া হয় কিনা। আর বয়কট না করলেও, কোনোরকম প্রভাব-প্রতিপত্তি তৈরি করা বাদেই, তাদের বানানো খোপে গিয়ে বসা, আদৌ প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার সাথে যায় কিনা?
সেলিম মোরশেদ: প্রতিপত্তির এই কথাটা আমি আগের প্রশ্নে বলেছি। একটা কথা মাথায় থাকলে এতো খুচরো প্রশ্ন আসে না। আমি কি রাষ্ট্রের ধারণায় বিশ্বাসী? হ্যাঁ কি না। একাত্তরের যুদ্ধে কি বিশ্বাসী? হ্যাঁ কি না? যদি বিশ্বাসী হই, তাহলে এই ধরনের প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা করা উচিত না। কেননা রাষ্ট্র তৈরিই হয় সুগঠিত প্রতিষ্ঠানের জন্যে। আমাদের প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার পেছনের মূল কারণটাই ছিল আজ বুঝি যে, বিকৃত প্রতিষ্ঠান; যে প্রতিষ্ঠান গঠনমূলক না, যে প্রতিষ্ঠান শুধু বৈষম্যের। রাষ্ট্র মানে শ্রেণিদ্বন্দ্বের অমীমাংসিত ফলাফল। আর যদি সে রাষ্ট্রকে মেনে নিয়ে চলতে হয়, রাষ্ট্রের সকল সংস্থাগুলোয় সংস্কারভিত্তিক আন্দোলন করতে হবে। অর্থাৎ কম বৈষম্যপূর্ণ সমাজের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। আমাকে খাজনা দিতে হয়, ইলেক্ট্রিসিটির বিল দিতে হয়, পৌরকর দিই, আমি এদেশে থাকি, এই আলো-বাতাসে বাস করি, এখানকার মানুষের জীবন নিয়ে বাঁচি, জীবন দেখি, লিখি, শুধু গণতান্ত্রিক অর্থে না। চেতনাগত অনেক ধরনের অধিকার আমার রয়েছে। আজকে লড়াইটা এখানেই। বিকৃত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। যে প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠু হয়নি।
দিশান ক্বারীবের প্রশ্নমালা
দিশান ক্বারীব: জনপ্রিয়তার মোহে আপনি আক্রান্ত হতেন কিনা, হলে কিভাবে মোকাবেলা করতেন?
সেলিম মোরশেদ: কখনও হইনি। বলা মুশকিল।
দিশান ক্বারীব: খ্যাতি আর অর্থ-লোভ একজন লেখকের লেখালেখিতে বিঘ্ন ঘটায় কিনা?
সেলিম মোরশেদ: এটা লেখক-টু-লেখক ভ্যারি করে। অরুন্ধতী রায় যেমন বলেছিলেন, যে বুকারটা পেতে আমার কষ্ট হয়েছে। কারণ তিনি জানতেন, যে তিনি এমন কাজ করবেন, ব্যাপক পাঠকসমাজের সাপোর্টের প্রয়োজন, তার শরীরী বেঁচে থাকাটা প্রয়োজন। এবং পরবর্তীকালে এ পুরস্কারটা নেবার পরে না-এসেছে তাঁর বই বের করার আকাঙ্ক্ষা, না-এসেছে তাঁর ভেসে যাবার আকাঙ্ক্ষা। বরং এমন-এমন বিষয়ে হাত দিয়ে উনি লেখা শুরু করেছেন, যেগুলো মনে হয়েছে, বুকারটা না-পেলে তিনি শরীরীভাবে বেঁচে থাকতেন কিনা সন্দেহ।
দ্বিশান ক্বারীব: বাংলা সাহিত্যে ক্ল্যাসিকাল এবং জনপ্রিয় সাহিত্য বলে একটা বিতর্ক আছে, বিষয়টাকে আপনি কিভাবে দেখেন?
সেলিম মোরশেদ: বিষয়টা আমি অতো গুরুত্বের সাথে দেখি না। এটা লেখক-মননের তারতম্য।
দ্বিশান ক্বারীব: বাংলাদেশে লিটলম্যাগ আন্দোলনে লিড দিয়েছেন, পুরা একজীবন স্রোতের বিপরীতে থেকে সাহিত্যচর্চা করেছেন, কেমন ছিল সেই দীর্ঘ চড়াই-উৎরাই?
সেলিম মোরশেদ: আসলে লিড দেয়ার বিষয়টা, হ্যাঁ, চাপ আমি হয়তো বেশিই নিয়েছি। কাজও আমার উপরে বেশি পড়েছে। কিন্তু অনেকেই ছিল আমার সাথে। আমিও তাদের সাথে ছিলাম। তবে বিষয়টা প্রীতিজনক হয়নি। এটার জন্যে কোনো বিশেষ কাউকে আমি দায়ী করবো না। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে, যদি লেখকের মনন থেকে শুনতে চান, বলব, এটা তত্ত্ব থেকে আসে না। এটা এমন একটা ক্রিস্টাল, যা পড়ে পায়। আর যে পায়, সে পৃথিবীর আর কোনো কিছু ধরে রাখতে পারে না। এর ইমেজ দূর থেকে এতো দীপ্তিমান যে ছুটে আসতে হয়—অভিশাপের মতো।
দ্বিশান ক্বারীব: পিছনে তাকালে কী মনে হয়, লিটলম্যাগের সেই আন্দোলন সফল, নাকি ব্যর্থ?
সেলিম মোরশেদ: আসলে এটা তো নিরন্তর কোশ্চেন, যে কোশ্চেন আপনি আমাকে করেছেন। তবে পেছনে আমি যতোটা না-তাকিয়েছি, সামনের দিকেই তাকিয়েছি বেশি। কারণ পেছনটায় যা যা আমাদের সামর্থ্য ছিলো, আমাদের বুদ্ধি-বিবেচনা যা যা বলেছিল, আমাদের সতীর্থদের বই বের করা, তাদের জন্য একটা প্রকাশনী তৈরি করা, লিটল ম্যাগাজিনগুলো বের করা, সেগুলোর চেষ্টা করতে আমরা কখনো কুণ্ঠাবোধ করিনি। এতে আমাদের লেখক-সত্তার ক্ষতি হবে, অন্তত আমার; এ কথাটা ভাবিনি। আর ভাবিনি বলেই আমাকে এখনও কথা শুনতে হয় যে, আমার লেখা এতো কম কেন?
দ্বিশান ক্বারীব: যেসব প্রত্যাশা নিয়ে সাহিত্যচর্চা শুরু করেছেন সব কি পূরণ হয়েছে?
সেলিম মোরশেদ: কখনও তা হয় না।
দ্বিশান ক্বারীব: নিজের জীবন নিয়ে কোনো আক্ষেপ আছে?
সেলিম মোরশেদ: যেমন প্রত্যেকেরই থাকে, আমারও তেমন আছে।
দ্বিশান ক্বারীব: প্রায় শুনি— লেখকের স্বকীয়তা দরকার, এই স্বকীয়তা কী, স্বকীয় হয়ে ওঠার জন্য নতুন লেখকদের কী করতে হবে?
সেলিম মোরশেদ: আত্ম-সিলেবাসে শিক্ষিত একটা মনন, তার ভাবনা, তার দেখা, সচরাচর অন্যদের ভেতরে যা দেখা যায় না, তেমন। নিজস্বতা নিয়ে আমার একটা বিশ্লেষণ কবি ও লেখক ফরিদা হাফিজের গ্রন্থ ‘অগ্নিযুগ, প্রস্তর কাল’-এর আলোচনায় ওর সম্পর্কে লিখেছিলাম, সেটা বোধহয় এখানে বলা দরকার।
‘সব শিল্পে ভাষার একটা ছায়া থাকে। ছায়াটা শুধু প্রতিবিম্ব না, অদৃশ্য পোশাকও। বহু রঙের হয়, বর্ণাঢ্যে বর্ণিল থেকে কাফনের রঙও–সে আসে ক্রিয়া থেকে—সেই ক্রিয়ার ভাষা উন্মুক্ত, স্বাধীন; শাস্ত্রীয় এবং সামাজিক ব্যাকরণকে অতিক্রম করে। যাবতীয় নগ্নতা উন্মোচন করে এই আপন অন্তর্গত ক্রিয়া। এই আপন ক্রিয়া তাই–যেন এক পরম্পরার অদৃশ্য রেখা ধরে আসে, দীপ্তিতে। আর সেখানে ক্ষেত্রটা তৈরি হয় নিরীক্ষাধর্মে বা নতুনত্বের প্রয়োজনে। ক্রিয়া থেকে ওঠা অনুভব। ক্রিয়ার ক্রিয়া থেকে প্রতিক্রিয়া না।‘
স্বকীয়তা বলতে যদি কিছু বোঝায়, তাহলে তা এইটাই।
(অমায়িক খচ্চর, ‘রামধনু জ্বলে তার গায়ে’ নিবন্ধ।)
দ্বিশান ক্বারীব: একজন লেখকের লেখার দৃষ্টিভঙ্গি, নাকি ভাষার ওপর জোর দেয়া উচিত?
সেলিম মোরশেদ: দৃষ্টিভঙ্গির উপর।
দ্বিশান ক্বারীব: ফেসবুক, ইউটিউব আর অনলাইন বিনোদন অহরহ থাকায় মানুষ আর সাহিত্য পড়বে না, এক সময় সাহিত্য মরে যাবে এবং উপন্যাস-গল্পের ফর্ম উঠে যাবে, আপনার কী মনে হয়?
সেলিম মোরশেদ: দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ পারেনি শিল্প-সাহিত্য, উপন্যাস এগুলোকে প্রতিরোধ করতে। ফেসবুক, ইউটিউব গতিশীল হলেও, মানুষ এখনও লিখছে। বই বের করার আকাঙ্ক্ষা করছে। যে বাড়িতে বাবা তার শিশুসন্তানকে করোনার সময়ে স্পর্শ করতে পারছে না, তবুও তারা কবিতা পড়ছে, কবিতা লেখার চেষ্টা করছে এবং গ্রন্থভুক্ত করছে। আযাদ নোমান এখনও ‘চর্যাপদ’ প্রকাশ করার চেষ্টা করছে।
আর ফেসবুক, অনলাইন বা ইউটিউবে সে আসলে কী পড়ছে? সে তো সাহিত্যই পড়ছে। ফলে একটা সম্পূরক অবস্থাও তো দেখছি। ফেসবুকের কারণে একেবারে বিচ্ছিন্ন যারা হচ্ছে, সেটা ব্যক্তিগতভাবে যারা ফেসবুক চর্চা করছে, পোস্ট দিচ্ছে, খেয়ালখুশি মতো তারা তাদের ছবি ছাপাচ্ছে। এখানেও তো যারা বিদেশে আছে, তারা তো অনলাইনেই পড়াশোনা করছে এবং তারা যথেষ্ট অভ্যস্ত হয়ে উঠছে ইতিমধ্যে।
দ্বিশান ক্বারীব: বাংলা সাহত্যে দীর্ঘমেয়াদি অবদানে হুমায়ুন আহমেদেকে কোন জায়গায় রাখবেন?
সেলিম মোরশেদ: তরুণদের প্রিয় লেখক হিসেবে।
দ্বিশান ক্বারীব: জীবনে একটা ভুলের নাম বলুন যে ভুল বার বার করেছেন এবং বার বার আফসোস করেছেন?
সেলিম মোরশেদ: জীবন যে রিপু করে চলতে হয় জানা ছিলো না। জীবন নতুন করে করা যায় না। এই ভুলটা আমার জীবনে নিয়তির মতো। আই কনফেস মাই গিলট, আই থিংক আই অ্যাম নট এনাফ স্মার্ট। এই ক্রোড়পত্রে সাক্ষাৎকারে এই একটি মাত্র প্রশ্ন— যার ব্যাখ্যা দেয়ার থেকে একজন লেখককে আপনি বের করে আনলেন।
চঞ্চল নাঈমের প্রশ্নমালা
চঞ্চল নাঈম: বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায়, লিটল ম্যাগাজিন এবং প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার মধ্যে সম্পর্কটা কোথায়?
সেলিম মোরশেদ: লেখা এবং বিকল্প রাজনীতির সমন্বয়।
চঞ্চল নাঈম: বর্তমান প্রেক্ষাপটে গোষ্ঠীবদ্ধতা লিটল ম্যাগাজিনের জন্য জরুরি? আপনার ব্যাখ্যা কী?
সেলিম মোরশেদ: একটা প্ল্যাটফর্মের ভেতর দিয়ে অবশ্যই গোষ্ঠীবদ্ধতা জরুরি।
ব্যাখ্যা: সাংস্কৃতিক দায়বদ্ধতা।
চঞ্চল নাঈম: লেখা প্রকাশ ও বই প্রকাশের ক্ষেত্রে লিটল ম্যাগাজিন লেখকদের কি করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?
সেলিম মোরশেদ: তাদের নিজস্ব প্রকাশনী গড়ে তোলা এবং যে যে প্রকাশনীগুলো মুনাফার লোভে বই করে না, তাদের সাথে যোগাযোগ করা। এবং তৃতীয়ত, বাংলাদেশের প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোর বাংলা ডিপার্টমেন্টের টিচারদের অবহিত করা। যাতে তাদের বইটা বিপণন হয়; টাকাটা তুলতে পারে।
চঞ্চল নাঈম: বাংলাদেশের লিটল ম্যাগাজিন এবং পশ্চিমবঙ্গের লিটল ম্যাগাজিনের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়?
সেলিম মোরশেদ: ব্যাপক তফাৎ। বিশেষ করে রাজনৈতিক এবং সামাজিক মূল্যবোধে।
চঞ্চল নাঈম: সব ছোটকাগজই কি লিটল ম্যাগাজিন?
সেলিম মোরশেদ: এখন সেভাবে ভাবাটাই সমীচীন।
চঞ্চল নাঈম: একটা ভালো লেখা হয়ে ওঠার পিছনে কী কী কারণ থাকতে পারে?
সেলিম মোরশেদ: একটিই কারণ, দৃষ্টিভঙ্গি।
আবু সাঈদ নয়নের একটি প্রশ্ন
আবু সাঈদ নয়ন: একজন সাহিত্যিকের জন্য ভাষার সঠিক ইতিহাস এবং ব্যবহারবিধি জানা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
সেলিম মোরশেদ: আন্তন চেখভ যেটা বলতেন, একজন লেখক তার ভাষার এবং ভূখণ্ডের দু’হাজার বছরের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য জানবে। আমারও সেটা মনে হয়। তবে সবার আগে লেখা এবং লেখার ইচ্ছা। পথই বলে দেয় পথের ঠিকানা। নিষ্ঠাবান লেখক এমনিই শিখে যান এগুলো।
ইসমাইল হামিমের একটি প্রশ্ন
ইসমাইল হামিম: সাহিত্যের কি কোনো নেতিবাচক ও সমাজবিরোধী ভূমিকা আছে? থাকলে সেটা কেমন?
সেলিম মোরশেদ: যখন কোনো বিশেষ একটি ধারা, সে ধারা মহৎই হোক আর সাধারণ মূল্যবোধেরই হোক; যখন মনোপলি হয়ে ওঠে, তখনই তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।