:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
সৈয়দ তারিক

কবি, ভাবুক

ও জো হাম মেঁ তুম মেঁ
ব্যবহৃত শিল্পকর্ম: 'Rhythm of Miniature', Az Shimul

মোমিন খান মোমিনের গজল

ও জো হাম মেঁ তুম মেঁ

এই গজলটি গেয়েছেন অনেকেই। বেগম আখতার, গোলাম আলি, ঊষা উত্থুপ, নাইয়ারা নুর, মধুরানি, পঙ্কজ উদাস, আবিদা পারভিন, ফরিদা খানুম, তালাত আজিজ প্রমুখ। প্রতিটি গায়কের গায়কীতে নিজস্বতা আছে। তবে সম্ভবত বেগম আখতার আর গোলাম আলিরটাই উপস্থাপনে সেরা।

পুরো গজলটি মোট এগারটি শের বা দুই পংক্তির স্তবকে গঠিত হয়েছে। তবে গানটির বিভিন্ন জনের রেকর্ড শুনলে দেখা যায় যে পুরো গানটি না গেয়ে এর কতিপয় শের বিভিন্ন জন গেয়েছেন, একেকজন একেক অংশ বাদ দিয়েছেন। আর শেষ শেরটির প্রথম কলিটার কথা বিভিন্ন গায়ক বিভিন্ন রকম করে গেয়েছেন।

এখানে আমরা গজল সম্পর্কে একটু আলোচনা করে নিতে পারি।

গজল একরকম গীতিকবিতা। আদিতে আরবি প্রকরণ হলেও বিভিন্ন ভাষায় এটি ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে উর্দু ভাষা হলো গজলের উর্বর ক্ষেত্র। গজল রচিত হয় শের বা যুগলপংক্তির স্তবক পরম্পরায়। সাধারণত পাঁচ থেকে তেরটি শের থাকে। শেরগুলো সব একই কেন্দ্রীয় ভাব বা থিমের হতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নাই।

উর্দু ভাষায় গজলের নিয়মাবলি এরকম :

১. মাতলা : এটা হলো প্রথম শেরটি।

২. কাফিয়া : প্রতিটি শেরের শেষ একটি বা দুটি শব্দ একদম একই হতে হবে। প্রথম শেরটির দুটি পংক্তিরই শেষ একটি বা দুটি শব্দ একদম একই হতে হবে।

৩. রাদিফ : প্রতিটি শেরের শেষ শব্দের আগের শব্দটি অন্যান্য শেরের সাথে ধ্বনির মিল রাখবে।

৪. বেহার : প্রতিটি শের ভাবে ও ওজনে সমতা বজায় রাখবে।

৫. মাকতা : শেষ শেরের শেষ পংক্তি। এখানে কবির নাম সাধারণত কলমি নাম বা তাখুল্লাস উল্লিখিত হবার রীতি আছে।

Momin Khan MominImage Source: goodreads.com

২.
এই গজলটির রচয়িতা মোমিন খান মোমিন (১৮০০ – ১৮৫২) মোগল আমলের শেষ ভাগের কবি ছিলেন। গজল রচনার জন্য তিনি খ্যাতনামা। মির্জা গালিব ও জউকের সমসাময়িক ছিলেন তিনি। তার সমাধি দিল্লিতে। পেশায় তিনি হেকিম অর্থাৎ চিকিৎসক ছিলেন।

চিকিৎসাবিদ্যা ও কবিতা ছাড়াও গণিত, জ্যোতিষ, দাবা, হিন্দুস্থানি সঙ্গীত ইত্যাদি বহু বিষয়ে আগ্রহ ছিল তার। কথিত আছে, তার একটি শের অর্থাৎ দুই পংক্তির কবিতা শুনে মির্জা গালিব তার নিজের সমস্ত দিওয়ান বিনিময় করতে চেয়েছিলেন। বিষয়টা অতিশয়োক্তি নিশ্চয়ই। তারিফের একটা রকম এটা।
শেরটি এরকম :

তুমি আমার পাশে
যখন অন্য কেউ নাই।

[মূলে : তুম মেরে পাস হতে হো গয়া
জব কই দুসরা নাহি হোতা]।

এই শেরটি আপাতভাবে খুব সরল হলেও এতে বহুমাত্রিক ব্যাঞ্জনা রয়েছে। এক অর্থে এটা বলছে, তুমি আমার পাশে তখন আছো যখন আমার পাশে থাকার মতো আর কেউ নাই; আবার বোঝাচ্ছে, তুমি যখন আমার পাশে থাকো তখন আর অন্য কেউ থাকে না; আবার এটাও বোঝায় যে অন্য কেউ যখন থাকে না কেবল তখনই তুমি আমার পাশে থাকো ইত্যাদি।

গজলটির বাংলা রূপান্তর :


আমাদের মাঝে যেই বোঝাপড়া ছিল
আজ তুমি সেটা মনে রেখেছ কি রাখো নাই,
একসাথে রবো সেই যে প্রতিশ্রুতি :
আজ তুমি সেটা মনে রেখেছ কি রাখো নাই।


যদিবা কখনও ঘটে থাকে এরকম,
তোমার লাগেনি ভালো,
নালিশ করার আগেই গিয়েছ ভুলে :
আজ তুমি সেটা মনে রেখেছ কি রাখো নাই।


শোনো, সে কাহিনি অনেক বছর আগের,
তুমি যে আমায় কিছু কথা দিয়েছিলে
আজ ভুলে যাও সেসব প্রতিশ্রুতি :
আজ তুমি সেটা মনে রেখেছ কি রাখো নাই।


সেইসব যত অখুশি এবং নালিশ
লঘুচিত্তের মজার গল্পগুলি,
সবকিছুতেই ছিল যে অসন্তোষ :
আজ তুমি সেটা মনে রেখেছ কি রাখো নাই।


তোমার-আমার কখনও-বা ছিল চাওয়া,
তোমার-আমার কখনও আনন্দ,
তোমার-আমার কখনও-বা ছিল সুগভীর বন্ধুতা :
আজ তুমি সেটা মনে রেখেছ কি রাখো নাই।


হঠাৎ যখন আমরা দুজনে মিলিত হতাম
প্রতিটি দমের প্রতি নিষ্ঠতা প্রকাশ পেত
কলহ-নালিশ প্রিয়র সাথে তো মাঝে মধ্যেই হয় :
আজ তুমি সেটা মনে রেখেছ কি রাখো নাই।


পেয়েছি প্রায়শ আমি যে আনন্দ
পেয়েছি আমার প্রতি যে সদয়তা
বিন্দু বিন্দু সবটুকু আছে স্মরণে আমার :
আজ তুমি সেটা মনে রেখেছ কি রাখো নাই।


লোকেদের ভীড়ে আমরা দুজন মুখোমুখি বসে,
মুখে চুপ তবু চোখে-চোখে হতো কত-না কথা,
ইশারাই সব বলে দিত মনে কী যে আছে কার :
আজ তুমি সেটা মনে রেখেছ কি রাখো নাই।


যখন বাড়ির কথা আমি মনে করিয়ে দিয়েছি,
সরল মনেই বলেছি সে কথা আমি,
তুমি বলেছ যে জানো না, করো না পরোয়া :
আজ তুমি সেটা মনে রেখেছ কি রাখো নাই।

১০
সেই যে রাত্রে তুমুল ঝগড়াঝাঁটি,
কোনোকিছুতেই একমত হতে না পারা,
সব কথাতেই কেবল ‘না, না, না, না, না।’
আজ তুমি সেটা মনে রেখেছ কি রাখো নাই।

১১
যাকে তুমি, ওগো, অনুগত ভেবেছিলে,
যাকে বিবেচনা করেছ বন্ধু বলে,
আমি সেই জন, প্রেমেতে দগ্ধ মোমিন :
আজ তুমি সেটা মনে রেখেছ কি রাখো নাই।

শুনুন- ও জো হাম মেঁ তুম মেঁ

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.