:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
আমীন আল রশীদ

লেখক, জীবনানন্দ গবেষক

কেমন আছে জীবনানন্দের বিয়ের মন্দির
ছবি: আমীন আল রশীদ

কেমন আছে জীবনানন্দের বিয়ের মন্দির

১৯৩০ সালের ৯ মে শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ, শুক্লা চতুর্দশী তিথিতে জীবনানন্দ দাশ বিয়ে করেন লাবণ্য গুপ্তকে। ব্রাহ্ম মতে তাদের বিয়ে হয় ঢাকায় ব্রাহ্মসমাজের রামমোহন লাইব্রেরিতে। বিয়ের আচার্য ছিলেন জীবনাননন্দের পিসেমশাই মনমোহন চক্রবর্তী। বিয়ের আসরে উপস্থিত ছিলেন বুদ্ধদেব বসু, অতিজকুমার দত্তসহ তার কবিবন্ধুরা। বিয়ের পরে ঢাকা থেকে নৌপথে (স্টিমারে) তারা বরিশালে যান। বিয়ে হয়েছিল যে ব্রাহ্মসমাজ মন্দিরে, তার অদূরেই ঢাকা সদরঘাট, অর্থাৎ যেখান থেকে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন রুটের লঞ্চ ও স্টিমার ছেড়ে যায়। বিয়ের চারদিন পর ৩১ বৈশাখ বরিশালে জীবনানন্দের পারিবারিক বাসগৃহ সর্বানন্দ ভবনে হয় বৌভাত ও বিশেষ উপাসনা।

ব্রাহ্মসমাজ লাইব্রেরি ও মন্দির এখনও সেরকমই আছে। এটি পুরান ঢাকায় অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদরঘাটে যাওয়ার পথে হাতের ডানে পাটুয়াটুলী রোডে ঢুকে একটু হাঁটলেই হাতের ডানে ৩নং লয়াল স্ট্রিটে কমলা রঙের সুন্দর ভবন। সামনের খোলা জায়গায় অনেক গাছপালা। প্রতি রোববার সন্ধ্যায় এখানে প্রার্থনা হয়।

খ্রিষ্টানরাও রোববার প্রার্থনা করেন। ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠার পেছনে খ্রিষ্টানদের যে প্রভাব ছিল, রোববারের প্রার্থনা তার প্রমাণ বলে মনে করা হয়। তবে প্রশাস‌নিক কারণও ছিল। সাপ্তা‌হিক ছু‌টি রোববার হওয়ায় ওইদিন জমা‌য়েত ও প্রার্থনার দিন নির্ধা‌রিত হ‌য়। শুধুমাত্র শি‌ক্ষিত ও উচ্চব‌র্ণের হিন্দুরাই যেহেতু ব্রাক্ষ্মসমা‌জের সদস্য হ‌য়ে‌ছি‌লেন, ফলে তাদের সুবিধার্থে প্রার্থনার দিন ঠিক করা হয় ছুটির দিনে।

২৬ বৈশাখ ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ, শুক্লা চতুর্দশী তিথিতে জীবনানন্দ বিয়ে করেন লাবণ্য গুপ্তকে। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমানে (২০২০) এই মন্দিরে ১৮৭২ সালের বিশেষ বিবাহ নিবন্ধন আইনের ৩ ধারা মোতাবেক বিয়ে পড়ানোর দায়িত্বে আছেন চন্দনা দে তপাদার। তার পদবি বিশেষ বিবাহ নিবন্ধক। কথা হয় তার সাথে। তিনিও জানেন, এই মন্দিরেই ১৯৩০ সালে কবি জীবনানন্দ দাশের বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু তার কোনো প্রমাণপত্র নেই। কারণ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পুরো লাইব্রেরিটি ধ্বংস করা হয়েছে। ফলে অতীতের কোনো রেকর্ড, ডকুমেন্ট বা কাগজপত্র নেই। চন্দনা জানালেন, এই বিশেষ আইনে এই মন্দিরে বছরে শ’দুয়েক বিয়ে হয়।

জীবনানন্দ গবেষক গৌতম মিত্র জানান, অনেক চেষ্টা করেও তিনি জীবনানন্দ দাশের বিয়ের কার্ড সংগ্রহ করতে পারেননি। ব্রাহ্ম মতে বিয়ে কীভাবে হয় তা জানবার খুব কৌতূহল ছিল তার। জীবনানন্দ দাশের বিয়ের ১৮ বছর আগের একটি বিয়ের কার্ড তিনি সংগ্রহ করতে পারেন। ১৯১২ সালে অনুষ্ঠিত বিয়েটা ছিল জীবনানন্দ দাশের দিদি অমিয়াবালা দাশের। জীবনানন্দর বাবা সত্যানন্দ দাশের দাদা হরিচরণ ও বৌদি সুশীলাবালার মেয়ে এই অমিয়া। বরিশালের সর্বানন্দ ভবনে এই বিয়েটাও হয় জীবনানন্দ দাশের মতো ব্রাহ্ম মতে। বিয়ের আচার্য ছিলেন জীবনানন্দ দাশের বাবা সত্যানন্দ দাশ। ৮ পৃষ্ঠার এই বিয়ের কার্ডে বিস্তারিতভাবে লেখা আছে কোন মন্ত্র, কোন গান, কোন উচ্চারণ ও কোন নিয়মে এই বিয়ে সম্পন্ন হবে। আন্দাজ করা যায় জীবনানন্দ দাশের বিয়ের কার্ডটিও এমনই ছিল। কার্ডে উল্লিখিত বিয়ের নিয়মটা এরকম: প্রথমে একটি সংগীত হবে: বহে নিরন্তর অনন্ত আনন্দ ধারা। শেষে আরেকটি গান: যে প্রেমের পথ গেছে অমৃত-সদনে, সে প্রেম দেখায়ে দাও পথিক দুজনে। এরকম চমৎকার বিয়ের আয়োজনে অভিভূত গৌতম মিত্রর প্রশ্ন, ‘১০৮ বছরে আমরা এগোলাম না পিছিয়ে পড়লাম!’

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.