:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
গৌতম মিত্র

কবি, প্রাবন্ধিক

ছায়াহীন জল
প্রচ্ছদ: 'অন বডি অ্যাণ্ড সোল' পোস্টার থেকে

On Body and Soul

ছায়াহীন জল

আসলে একটি মেয়ের গল্প। মারিয়া নামের একটি মেয়ের গল্প। কোন মারিয়া? যে হয়তো আমার পরিচিত বৃত্তেরই কেউ। হয়তো পাশের বাড়িতেই থাকে। খুব পরিচিত। অথচ আমি চিনতে পারি না।

প্রত্যেক সমাজে এমন একজন মারিয়া থাকে, সমাজের সেফটি ভালভ, যে না থাকলে একটা সমাজ পূর্ণতা পায় না। খুব চতুর, খুব ধূর্ত ও খুব সেয়ানা এই সমাজে একটু অগোছালো, একটু পাগল, একটু অন্যমনস্ক একজন মারিয়ার খুব প্রয়োজন।

আজ ‘অন বডি অ্যাণ্ড সোল’ দেখতে দেখতে এই সব কথাই মনে হচ্ছিল। মনে পড়ছিল সিলভিয়া প্লাথ বা ভার্জিনিয়া উলফের কথা। আপাত যে সমস্ত কারণে মানুষ আত্মহত্যা করে তার কোনওটাই ছিল না যদিও এঁদের মধ্যে।

তবে কী ছিল? গোপন কোনও সুরঙ্গ পথ? ঘোরানো কোনও সিঁড়ি? যে পথে কোনও ফেরা নেই। মার্কেজের উপন্যাসে একটা দৃশ্য ছিল। একজন মানুষ প্রতিদিন স্বপ্ন দেখে, একটার পর একটা দরজা পেরিয়ে সে বহুদূর চলে যায়, আবার একটার পর একটা দরজা পেরিয়ে সে ফিরে আসে। যেদিন মানুষটি মারা যাবে সেদিন স্বপ্নে যাওয়ার দরজা খুললো কিন্তু ফেরার কোনও দরজা খুললো না।

তো স্বপ্নেরই তো গল্প ‘অন বডি অ্যাণ্ড সোল’। মারিয়া একজন পশু চিকিৎসক। সে একটি কসাইখানায় কাজ নিয়েছে গরুদের খাওয়ার গুণগত মান পরীক্ষকের। আর সেই অফিসেই ফিনানশিয়াল ম্যানেজার এন্দ্রে। মধ্যবয়স্ক এন্দ্রের একটা হাত পক্ষাঘাতগ্রস্ত। এন্দ্রে মারিয়ার প্রতি অদ্ভুত এক টান অনুভব করে।

কেন? তার একটি কারণ কি এই যে দুজনেই দু’রকম ভাবে অসম্পূর্ণ? একজন শারীরিক ভাবে ও একজন মানসিক ভাবে?

আমার চোখ শুধু মারিয়াকে অনুসরণ করে। কোন মারিয়াকে? যে মারিয়া নিজের মধ্যেই আরেকজন মারিয়া হয়ে উঠতে চায়। সে হয়তো কবিতা লেখে না অথচ প্রায় কবিতার মতো। তার হাঁটাচলা শোয়াবসা ঘুমানো জেগে ওঠা আমাকে গ্রাস করে নেয়। আমার শীত করে। বড্ড শীত করে।

মারিয়া একা। বরং বলা ভাল নিজের মুদ্রাদোষে ক্রমশঃ একা হয়ে ওঠে সে। সে কোনও স্পর্শ কোনও শব্দ সহ্য করতে পারেনা। কোনও মানুষের সঙ্গে মিশতে পারে না। অথচ ভয়ঙ্কর রকমের সেনসিটিভ। সিনেমাটা আসলে এই দ্বৈততার খেলা। কসাইখানার পশু নিধনের ভয়াবহ দৃশ্যের পাশে স্বপ্নের নির্জন বরফে মোড়া বনাঞ্চল। রক্তের লালের পাশে বরফের সাদা। বাস্তবের সঙ্গে স্বপ্নের দ্বন্দ্ব। সিনেমার নামটাও তাই। দেহ ও আত্মা। পরিপূরক ও প্রতিদ্বন্দ্বী।

তবে মারিয়া ও এন্দ্রের মধ্যে একটাই মিল। বড্ড মরমি মিল। তারা একই স্বপ্ন রোজ রাতে একই সঙ্গে দেখে। দেখে তারা হরিণ হরিণী হয়ে গেছে। বরফে ঢাকা বনে তাদের দেখা যায়। তারা করুণ চোখে চেয়ে থাকে। নাকে নাক ঘষে। একসঙ্গে জল খায়।

বাস্তবে তাদের মিলন হয় সিনেমার শেষ দৃশ্যে। যখন অবশ্য তাদের যৌথ স্বপ্ন হারিয়ে যাবে। স্বপ্ন যে আসলে কোনও বাস্তব ভার বহন করতে পারে না এটা আবার প্রমাণিত হল।

On Body and Soul (2017). Director& Writer: Ildikó Enyedi
Stars: Alexandra Borbély, Géza Morcsányi, Réka Tenki
Drama, Fantasy, Mystery | 1h 56min

সিনেমাটা আসলে আমার কাছে এসব কিছু নয়। অথবা এসব কিছু নিয়ে হলেও আমার চোখ শুধু মারিয়াকে অনুসরণ করে। কোন মারিয়াকে? যে মারিয়া নিজের মধ্যেই আরেকজন মারিয়া হয়ে উঠতে চায়। সে হয়তো কবিতা লেখে না অথচ প্রায় কবিতার মতো। তার হাঁটাচলা শোয়াবসা ঘুমানো জেগে ওঠা আমাকে গ্রাস করে নেয়। আমার শীত করে। বড্ড শীত করে।

কিছু মানুষ তো মারিয়া হবেই। যোগাযোগের পথ খুঁজে পাবে না। একা একা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসবে। নিজের অনেকগুলো প্রতিবিম্বে নিজেই হারিয়ে যাবে। এই কর্কশ পৃথিবী ঠিক মারিয়ার জন্য নয়। তাই সে গ্লাভস পড়ে থাকবে। আহা আমি যে এমন কবিতাই পছন্দ করি?

মারিয়া শেষে আত্মহত্যা করল কি করল না সেটা আমার কাছে বড়ো কথা নয়। মারিয়ার পর্ন ফিল্ম দেখে, হার্ড রক শুনে, যৌনতা উপভোগ করতে শিখে, মেটামরফোসিস ঘটলো কিনা সেটাও বড়ো কথা নয় আমার কাছে। বরং তার উন্মাদগ্রস্ত স্থিতির আভাসটুকু, মনখারাপের কার্নিশটুকু, পথ হারানোর রেলিঙটুকু চির জায়মান হয়ে থাকবে।

সিনেমা তো আমার কাছে সবসময় বজ্রমুষ্ঠি নয় কখনও কখনও মুঠো খোলা হাত,নগ্ন নির্জন হাত।

হাঙ্গেরিয়ান পরিচালক এদিকো এনেদি আঠারো বছর পর এই সিনেমাটি করেছেন। এবং বার্লিনে স্বর্ণ ভল্লুক পদক অর্জন। এবং অনবদ্য একটি সিনেমা উপহার দিয়েছেন।

ট্রেলর দেখতে : On Body and Soul

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.