নূরা পাগলা
যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, সদ্য স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধার নামধারী মাস্তানদের দৌরাত্ম্য এবং নব্য ক্ষমতাধরদের একাংশের দাপট ও দুর্নীতি তখন প্রকট। দেশে এক হতাশাজনক পরিস্থিতি। বিএ পরীক্ষা দেওয়া এক যুবক তখন ফ্রাসট্রেশনের কুহেলি অনুভব করছেন রক্তে। ঘুরে বেড়াচ্ছেন মাজারে। অনুভব করছেন সমকালীন পরিস্থিতি। তার নাম আজম খান। গাইলেন তিনি :
হাইকোর্টের মাজারে কত ফকির ঘোরে
কয়জন আর আসল ফকির?
প্রেমের বাজারে কত প্রেমিক ঘোরে
কয়জন আর আসল প্রেমিক?
সেই সময় হাইকোর্টের মাজারে যার জমজমাট অবস্থান, তার নাম নূরা পাগলা। দ্য গ্রেট অ্যান্ড দ্য নটোরিয়াস। ঢোল-বাদ্য সহযোগে নাচ-গান-হই-হল্লা দিয়ে জমিয়ে রেখেছিলেন শিষ্য-শাগরেদ-ভক্ত-দর্শনার্থী সমবায়ে হাইকোর্টের মাজার প্রাঙ্গণ। অনেক অনেক কাহিনি ও কিংবদন্তি আছে তার সম্পর্কে। জিনটিনের সাথে কারবার আছে তার, এ কথা যেমন অনেকে বিশ্বাস করত, তেমনি তিনি নিজেও ভয় ছড়াতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এক ছাত্রী তাকে বিয়ে করেছিলেন, এমন কথা পড়েছিলাম কোনো পত্রিকায়।
তার সাথে আমার দু-এক রাত সঙ্গ হয়েছিল, অবশ্য সেটা অনেক কাল পরে, একুশ শতকের প্রথম দিকে। তার বাসা রামপুরায়। আমার গুরুভাই সালাম মাস্তানের সাথে তার একটু খাতির ছিল। কয়েকজন গুরুভাই মিলে গিয়েছিলাম। আমাকে অবশ্য তার পছন্দ হয় নাই কোনো গূঢ় কারণে। হয়তো তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে আমি ঠিক তার ঘরানার নই, হবার সম্ভাবনাও নাই।
সারা রাত ধরে কথা বলছিলেন এটা-ওটা-সেটা। পরনে একটু লেংটি, মাঝে মাঝে সেটিও খুলে ফেলছিলেন।
সেই সময় হাইকোর্টের মাজারে যার জমজমাট অবস্থান, তার নাম নূরা পাগলা। দ্য গ্রেট অ্যান্ড দ্য নটোরিয়াস। ঢোল-বাদ্য সহযোগে নাচ-গান-হই-হল্লা দিয়ে জমিয়ে রেখেছিলেন শিষ্য-শাগরেদ-ভক্ত-দর্শনার্থী সমবায়ে হাইকোর্টের মাজার প্রাঙ্গণ। অনেক অনেক কাহিনি ও কিংবদন্তি আছে তার সম্পর্কে। জিনটিনের সাথে কারবার আছে তার, এ কথা যেমন অনেকে বিশ্বাস করত, তেমনি তিনি নিজেও ভয় ছড়াতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এক ছাত্রী তাকে বিয়ে করেছিলেন, এমন কথা পড়েছিলাম কোনো পত্রিকায়।
মতলবের বেলতলিতে সোলায়মান শাহ লেংটার মেলার সময় বিরাট এক আস্তানায় তার মজমা বসত। তার শিষ্যদের কয়েকজন দুই ঊরুতে দুইটা ছুরি গেঁথে হেঁটে বেড়াতেন, কারও বাহুতেও ছুরি গাঁথা থাকত। এটা তার বিশেষ একটা রীতি।
মেলায় একটা ছোট গামলায় চাউল রাখা থাকত, ভক্তজনেরা কোনো মানত করে একদানা চাউল নিত দশ টাকা নজরানা দিয়ে। শেষের দিকে নজরানার পরিমাণ কুড়ি টাকা হয়েছিল।
ফকিরি ধারায় দুটো ব্যাপার আছে: কামেলিয়াত আর আমলিয়াত। কামেলিয়াত হলো আত্মজ্ঞান অর্জন করে আত্মসিদ্ধি লাভ করা। আমলিয়াত হলো ঝাড়-ফুঁ-তন্ত্র-মন্ত্র এই সব ব্যাপার। এগুলো যে ষোলো আনাই ভণ্ডামি, তা নয়। এগুলোতে প্লাসিবোর ইফেক্ট অনেক ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ হয়। (আরও কিছু থাকতেও পারে, যা আমার জানা নাই)। আমলিয়াতে ভালো দখল ছিল নূরা পাগলার।
নূরা পাগলা প্রয়াত হয়েছেন কয়েক বছর আগে। তার ছোট ছেলে পিতার ধারাতেই ছিলেন বলে জানি। স্থানীয় লোকজনেরা বাসায় সমাধি দেবার ব্যাপারে আপত্তি তুলেছিল শুনেছি। শেষমেশ কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।
একটি পোস্টারে তার ছবি দেখে এই সব কথা মনে পড়ে গেল।