:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
মুম রহমান

গল্পকার, অনুবাদক ও চলচ্চিত্র সমালোচক

পেরেক জীবন আমার ভালো লাগে না
প্রচ্ছদ: রাজিব রায়

পঞ্চাশ শব্দে অণুগল্প

পেরেক জীবন আমার ভালো লাগে না

ফরেন ট্যুর

ফাইল আটকে রেখে চার লাখ টাকা আদায় করার যোগ্যতা আমিন সাহেবের আছে। এই টাকায় তিনি স্বপরিবার ফরেন ট্যুর দেবেন। কিন্তু মেয়ে বললো, আমি যাবো না। স্যরি, তোমার সাথে বেড়াতে আমার ইচ্ছা করে না। মেয়ের মাও যাবে না। আমিন সাহেব বিরক্ত হলেন। সস্তা আবেগ তার অপছন্দ। তিনি সেক্রেটারিকে নিয়ে ফরেন ট্যুরে গেলেন।

 

কন্যার চিঠি

আব্বা

আপনে খামাখা চইলা গেলেন। আমি ভালা আছি। আপনি ভুল বুঝছেন। সংসারে অইরকম একটু হয়। আপনার জামাই লোক ভালো। তবে মুখে মধু অন্তরে বিষ টাইপের মানুষ না। যা মনে আসে তাই মুখে কয়। আমি ভালা আছি। আপনে ভালা থাইকেন। বিয়া করতে চাইলে কইরেন। আমাগোর আপত্তি নাই।

আবার আইসেন।

ইতি সালমা

 

কাজটা তুমি ভালো করো নাই

কেমন আছো?
কাজটা তুমি ভালো করো নাই।
দুইদিনেই রোগা হয়ে গেছো?
কাজটা তুমি ভালো করো নাই।
মা কি জানে কোন কিছু? বাসার সবাই?
কাজটা তুমি ভালো করো নাই।
ঘরে খুব ময়লা। বুয়া আসে নাই?
কাজটা তুমি ভালো করো নাই।
বুঝলাম, তা এক কথা কতোবার বলবে?
কাজটা তুমি ভালো করো নাই।

 

গ্রাম

কাদামাখা পথে পিছলে পড়ে পা ভেঙে ছিলো। দূরের হাসপাতালে নিতে নিতে ব্যথায় কাতরে ছিলো। ছিলো ওষুধ পথ্যের অভাব। গ্রাম্য রাজনীতি, কুসংঙ্কার ছিলো যথেষ্টই। শিল্প সাহিত্য বুঝতো না সেখানকার কেউ।

আইফেল টাওয়ারের চূড়ায় কনিয়াকে চুমুক দিতে দিতে তবু আব্দুল মতিন তার গ্রামটির কথা ভাবে। ভাবে, সেই মেয়েটির কি বিয়ে হয়ে গেছে?

 

ঢাকা

কাকের শহর ঢাকা।
ময়লা আবর্জনা খাওয়া বা ছড়ানো ছাড়া কাক আমাদের কী কাজে লাগে?
ওই কর্কশ চিৎকারই কি ওর গান?
ঢাকার মানুষগুলোও কাকের মতোই।
তবু কখনো কখনো এই শহরে দোয়েল, শালিক, টিয়া দেখা যায়। সেটুকুর জন্যই ঢাকা ছেড়ে কোথাও যায় না সুলতা।
সুলতাকে চেনো?
সে বনলতা সেনের আপন ছোট বোন।

 

বরিশাল

ধানসিঁড়ির তীরে হাঁটছেন কবি। ভাবছেন, পর জনমের কথা। যে কোনভাবে যে কোন রূপে বারবার তিনি ফিরে আসতে চান এই বাংলার বুকে। সাদা ছেঁড়া পালে ডিঙা বাইছে কিশোর, তীরে কিশোরীর আলতা পায়ে ঘুঙুরের সুর।

ট্রামের বিশ্রি শব্দটাও কানে গেলো না কবির।

বরিশালের কথা ভাবতে ভাবতে কলকাতায় ট্রাম চাপা পড়লেন বাংলার কবি।

 

কলকাতা

তার সাথে দেখা, কলকাতায়।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞানে।

নন্দন চত্বরে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে বক্তৃতা দিচ্ছিলো রূপকথা। আমি মুগ্ধ।

তখন নিখিল, অনিমেষ, মিতালি, সীমা, অয়নদের হাতে হাতে চায়ের ভাড় আর ক্লাসিক ছিলো ঠোঁটে। ওদের সঙ্গে আমি কথা বলছিলাম গদারের ছবি নিয়ে।

তবে আমার মন পড়ে ছিলো রূপকথার কাছে।

 

পেরেক

এই জীবন দিয়ে আমি কী করবো?

কাঠের ভেতরে, দেয়ালের ভেতরে আমি ঢুকে যাই। আমাকে পিটিয়ে পিটিয়ে তাদের শরীরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। শালার হাতুড়ি আমাকে বেদম পেটায়। একটা জীবন আমি কি কেবল হাতুড়ির বাড়ি খেয়ে কাটিয়ে দেবো?

মাবুদ, পেরেক জীবন আমার ভালো লাগে না। পর জনমে আমাকে তুমি হাতুড়ি বানিয়ে দাও।

 

কোনখানে থাকে না মুম রহমান

অনেকেই ভাবে এ বাড়িতে থাকে  মুম রহমান।

অনেকেই জানে এ অফিসে কাজ করে মুম রহমান।

অনেকেই মানে এ পাহাড়ে বেড়াতে আসে মুম রহমান।

না। না। না।

সত্যি বলছি – ‘না’।

আমি বলছি যেখানে যা দেখা যায় তা মোটেও সত্যি না। তোমরা যা জানো তা ভুল। আদতে কোনখানে থাকে না মুম রহমান।

 

বাজারি স্বপ্ন

গাড়িতে রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনতে শুনতে আমি ঘুমিয়ে পড়ি। আর আমার স্বপ্নের মধ্যে ঢুকে পড়ে লাউ, বেগুন, কেচকি মাছ। আমি স্বপ্ন দেখি কচুর লতি, মিনি স্কার্ট, হলদিরামের চানাচুর, টাবাসকো সস, আমড়া, ক্যাসিও হাতঘড়ি, স্ট্রবেরি, আণ্ডারওয়্যার, জুতা, সানগ্লাস ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমার স্বপ্নের মধ্যে সন্ত্রাসীর মতো ঢুকে যায় সাধ ও সাধ্যের দৈনিক বাজার।

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.