বিনোদন নাকি বক্তব্য (পর্ব-২)
বিনোদন নাকি বক্তব্য (পর্ব-১) এর পর থেকে-
যাহোক, বক্তব্য বা মেসেজ নিয়ে অনেকেরই অনেক ধরনের অভিমত রয়েছে। বাংলা সিনেমার অনেক পরিচালককে আমি বুক ঠুকে বলতে শুনেছি, ‘আমার সিনেমায় এন্ডিংয়ে তো সত্যেরই জয় হয়। তাহলে আমার সিনেমা খারাপ হবে কেন?’ আমার গুরু ক্যামেরাম্যান আব্দুস সামাদ এর সুন্দর একটা উত্তর দিয়েছিলেন। যদি কোনো সিনেমায় নায়িকা পাক্কা আড়াই ঘণ্টা ধরে আধলেংটা হয়ে থাকে, তারপর শেষের ১৫ মিনিটে মাথায় ঘোমটা টেনে বলে, আমি বুঝতে পেরেছি উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করা উচিত নয়। আজ থেকে আমি সমাজের আদবকায়দা মেনে চলব, তবে দর্শকের ওপর সিনেমার শেষ ১৫ মিনিটের প্রভাব পড়বে, নাকি প্রথম আড়াই ঘণ্টার? সিনেমার পরিসমাপ্তি ভালো না মন্দ, সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হলো সিনেমার কোনটা দর্শকের ওপর প্রভাব ফেলতে সমর্থ হচ্ছে। কারণ, সেটাই আপনার সিনেমার বক্তব্য বা মেসেজ।
বক্তব্য নিয়ে আরও একটা জটিলতা রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, সিনেমার মাঝে তিনি যে বক্তব্য দেবেন, তা দেখে সাথে সাথেই মানুষ তা মেনে নেবে বা প্রভাবিত হবে। না ভাই, সিনেমা দিয়ে এটা সম্ভব নয়। আপনি যদি তাৎক্ষণিকভাবে ফল পেতে চান, তবে রাজনীতিতে নামেন। জনসভায় ভাষণ দেন। দেখবেন শত শত লোক আপনার কথায় উত্তেজিত হবে, অ্যাকশনে নামবে। আর যদি সাংস্কৃতিক কোনো উপায়ে আপনি জনগণকে উত্তেজিত বা জাগরিত করতে চান, তাহলে ডকুমেন্টারি বানান, ফল পাবেন। কিন্তু চলচ্চিত্র বা নাটক ভিন্ন একটি ব্যাপার। এখানে তাৎক্ষণিক ফল আপনি পাবেন না। কারণ, চলচ্চিত্রে একটি কাহিনি থাকবে। সেই কাহিনির কোনো এক ভাঁজে আপনার বক্তব্যটি লুকানো থাকবে। দর্শক হয়তো দেখার সময় বুঝবেও না সে কী দেখল। কিন্তু আর্সেনিকের মতো তা একটু একটু করে শরীরে ছড়িয়ে পড়তে থাকবে। মিছিল-মিটিং-সভা-সেমিনারে তাৎক্ষণিক ফল পাওয়া গেলেও সেই ফলাফলের স্থায়িত্ব সব সময় দীর্ঘস্থায়ী হয় না। কিন্তু নাটক-সিনেমায় পাওয়া মেসেজ অনেক ধীরে কাজ করলেও তার স্থায়িত্বকাল দীর্ঘ তো বটেই, অনেক ক্ষেত্রে তা স্থায়ীও। ব্যাপারটা উদাহরণ দিয়ে বোঝাই।
তখন আমি একটি পত্রিকায় চাকরি করতাম। দেড় মাস হলো বেতন পাই না। তাই মেজাজ গরম। রিকশা করে তাজমহল রোড থেকে কলেজ গেট এসেছি। ভাড়া সে সময় ছিল ৫ টাকা। বৃদ্ধ রিকশাওয়ালা ৬ টাকা দাবি করে বসল। বললাম, ‘ন্যায্য ভাড়া ৫ টাকা। আপনি যদি এক টাকা আমার কাছ থেকে চেয়ে নেন, তো সেটা আলাদা বিষয়।’ কিন্তু বুড়োর সেই একই কথা, ৬ টাকাই নাকি তার পাওনা এবং একসময় সে হুংকার দিয়ে উঠল, ‘আমার পরিশ্রমের টাকা, দিবেন না মানে?’ এবার আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল। আমিও চেঁচালাম, ‘ওই মিয়া, তোমার পরিশ্রমের টাকা তো আমার কি চুরির টাকা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাধার খাটুনি খাটি। তারপরও ঠিক মতো বেতন পাই না…’ ইত্যাদি ইত্যাদি।
বাংলা সিনেমার অনেক পরিচালককে আমি বুক ঠুকে বলতে শুনেছি, ‘আমার সিনেমায় এন্ডিংয়ে তো সত্যেরই জয় হয়। তাহলে আমার সিনেমা খারাপ হবে কেন?’ আমার গুরু ক্যামেরাম্যান আব্দুস সামাদ এর সুন্দর একটা উত্তর দিয়েছিলেন। যদি কোনো সিনেমায় নায়িকা পাক্কা আড়াই ঘণ্টা ধরে আধলেংটা হয়ে থাকে, তারপর শেষের ১৫ মিনিটে মাথায় ঘোমটা টেনে বলে, আমি বুঝতে পেরেছি উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করা উচিত নয়। আজ থেকে আমি সমাজের আদবকায়দা মেনে চলব, তবে দর্শকের ওপর সিনেমার শেষ ১৫ মিনিটের প্রভাব পড়বে, নাকি প্রথম আড়াই ঘণ্টার?
প্রশ্ন হচ্ছে, এই যে ‘আমার পরিশ্রমের টাকা’ বলে রিকশাওয়ালা আমার ওপর প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ল, তার কারণ কি বামপন্থী রাজনৈতিকদের মিছিল, মিটিং, সভা, সেমিনার? বামপন্থী রাজনীতিবিদদের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আশির দশকজুড়ে কোনো এক বস্তির ছেলে, কোনো শিল্পপতির মেয়েকে প্রেম করে, অনেক লড়াই করে, শেষে বিয়ে করতে সমর্থ হচ্ছে, এ-জাতীয় সিনেমা যদি এই দেশে এবং পার্শ্ববর্তী দেশে তৈরি না হতো তবে কি শ্রমিকশ্রেণির জনতার মাঝে এই পরিবর্তনটুকু আনা সম্ভব হতো?
এককালে শ্রমিকেরা সহজে মুখ খুলত না। নীরবে সহ্য করে যেত। এখন গার্মেন্টসের বেতন এক দিন দেরি হলেই তারা প্রতিবাদ করে। এর পেছনে বাম রাজনীতির কিছু অবদান তো আছেই। কিন্তু কাজের বেটি রহিমার সাথে বাড়ির মালিকের ছেলের প্রেম অথবা ‘গরিবের রাজা’ টাইপের কেউ দুর্নীতিগ্রস্ত কোনো মন্ত্রীকে চৌরাস্তার মোড়ে একেবারে নাস্তানাবুদ করে ছেড়ে দিল অথবা কোনো রিকশাওয়ালা তাকে অসম্মান করার শাস্তি হিসেবে কোনো ধনীর বেয়াদব মেয়েকে পুরো এক মাস নিজেদের বস্তিতে রেখে থালাবাসন মাজতে বাধ্য করল এবং শেষে সেই বেয়াদব মেয়ে বুঝতে পারল জীবন আসলে কী, এ-জাতীয় সিনেমাগুলো যে দরিদ্র শ্রমিক সমাজকে সাহসী হতে সাহায্য করেছে, এটা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। যদিও এই পরিবতর্নটা আসতে এক দশকের বেশি সময় লেগেছে।
আরেকটি উদাহরণ দিই। ‘কুতুবের খাস কামরা’ নামে আমার লেখা একটি রম্য মঞ্চনাটক আছে। কুতুব আলীর বউ মারা যাওয়ার পর সংসারে আর মন নেই। তার তিন ছেলে তিন ধরনের। তারাই সংসার চালায়। এই প্রেক্ষাপটে তিন ছেলের মাঝ থেকে আমি বেশ কিছু বক্তব্য প্রদানের চেষ্টা করেছিলাম। ছেলেরা ঠিকমতো সংসার চালাতে পারছে না দেখে অনেকটা বাধ্য হয়েই কুতুব আলী শেষে আবার সংসারের হাল ধরে। নাটক শেষে এক ছেলে আমাকে তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলল, ‘আসলে বাবা হতে গেলে এমনই হতে হয়।’ তার মন্তব্যে আমি ধাক্কা খেয়েছিলাম। আমি লেখার সময় ছেলেদের নিয়েই মাথা ঘামিয়েছি। বাবাকে নিয়ে নয়। কিন্তু আমার নিজের অজান্তেই এখানে আরও একটা মাত্রা যুক্ত হয়েছে। ছেলেটির চোখমুখ দেখে আমার মনে হয়েছে, সে যখন বাবা হবে, তখন সে এই বিষয়টা মনে রাখবে। ব্যস, আমার ওই নাটকটা থেকে অর্জন এইটুকুই। একটু ভাবেন, একজন মানুষ…মাত্র একজন মানুষ যদি বাবা হিসেবে আজ পাল্টে যায়, কাল তার সন্তানরা ভিন্নতর জীবন পাবে। সেই থেকে তার সন্তানেরা, তার থেকে তারও সন্তানেরা। নাটক-সিনেমায় বক্তব্য এভাবে কাজ করে। সরাসরি বা তাৎক্ষণিক নয়, ঘুরিয়ে কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী।
অর্থাৎ বক্তব্য থাকবে বিনোদনের আড়ালে। প্রশ্ন করতে পারেন, কেন, বক্তব্য সরাসরি থাকলে ক্ষতি কী? ভাই, আপনাকে পাল্টা একটা প্রশ্ন করি, স্কুলে শিক্ষকদের পরামর্শ বা উপদেশ কি আপনি কখনো তৃপ্তি নিয়ে শুনেছেন? নাকি আপনার অফিসের বস বা কোনো সিনিয়র আপনাকে আগবাড়িয়ে উপদেশ দিলে আপনি আবেগে আপ্লুত হয়ে যান? নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, অধিকাংশ মানুষের উত্তরই হবে, ‘না’। তাহলে ভাই, সিনেমাতে আপনি কেন দর্শকদের অমৃত বচন শোনাতে চাচ্ছেন? সারা দিন ধরে খাটাখাটুনি করে মানুষ সিনেমা দেখতে বসে মনের চাপ কমানোর জন্য, একটু হালকা হওয়ার জন্য। এই রকম একটা মুহূর্তে তাদের সদা সত্য কথা বলিবে, একবার না পারিলে দেখো শতবার অথবা নারী মাতা, নারী ভগ্নি, তাদের কখনো কামনার দৃষ্টিতে দেখিয়ো না জাতীয় সদুপদেশ কী পরিমাণ বিরক্তির উদ্রেক ঘটাতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। কারণ, অপ্রিয় হলেও সত্য, তারা তখন নারীকে মাতা বা ভগ্নি হিসেবে নয়, বরং প্রেয়সী হিসেবে দেখতে চায়।
তাহলে ভাই, সিনেমাতে আপনি কেন দর্শকদের অমৃত বচন শোনাতে চাচ্ছেন? সারা দিন ধরে খাটাখাটুনি করে মানুষ সিনেমা দেখতে বসে মনের চাপ কমানোর জন্য, একটু হালকা হওয়ার জন্য। এই রকম একটা মুহূর্তে তাদের সদা সত্য কথা বলিবে, একবার না পারিলে দেখো শতবার অথবা নারী মাতা, নারী ভগ্নি, তাদের কখনো কামনার দৃষ্টিতে দেখিয়ো না জাতীয় সদুপদেশ কী পরিমাণ বিরক্তির উদ্রেক ঘটাতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। কারণ, অপ্রিয় হলেও সত্য, তারা তখন নারীকে মাতা বা ভগ্নি হিসেবে নয়, বরং প্রেয়সী হিসেবে দেখতে চায়।
জানি, অনেকেই আমাকে খাঁটি বাংলা ভাষায় গালি দেবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ভাই, আমার কথা শেষ হয়নি। আমি সততার বিরুদ্ধে নই, নারীদের সম্মান করার বিরুদ্ধেও নই। আমি যা বলতে চাচ্ছি তা হলো, সিনেমায় একটা কাহিনি থাকে। সেই কাহিনিটি স্বয়ং অনেক কিছু বলে দিতে পারে। তাহলে আপনি কেন অহেতুক বকবক করতে যাবেন? এমন একটা কাহিনি বানান, যাতে করে মানুষের সত্য কথা বলার আগ্রহ জাগে। মেয়েদের সম্মান করার ইচ্ছা জাগে। হয়তো সেই সিনেমায় একবারও সত্য কথা বলার তাগিদ থাকবে না। অথবা মেয়েদের সম্মানের পরামর্শও দেওয়া হবে না। কারণ, পরামর্শ দিতে দেখলেই মানুষ বিরক্ত হয়। আর বিরক্ত হলেই সে আর আপনার সিনেমা দেখবে না।
আপনার সিনেমা দেখে যদি মানুষ মিথ্যাকে বর্জন করে, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা বন্ধ করে, তবেই আপনি সফল, আপনার সিনেমা সফল। ‘স্লোগান’-এ আপনি কী বলছেন, সেটাই মূল ব্যাপার। কিন্তু ‘সিনেমা’য় দর্শকের মাঝে সেই বক্তব্যের প্রভাব বিস্তার করাটাই মূল ব্যাপার। এখন আপনাকে যদি সম্পূর্ণ উল্টোটা দেখিয়েও তা করতে হয় তো করবেন। আমি যুদ্ধবিরোধী বেশ কয়েকটা সিনেমার নাম বলতে পারব, যার পুরোটাই যুদ্ধে ভরা। ব্যালেড ফর আ সোলজার, অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট, গ্লাডিয়েটর, এই সব কটি সিনেমাতেই যুদ্ধকে ছাপিয়ে মানুষের প্রতি ভালোবাসাই প্রধান হয়ে উঠেছে এবং এই সিনেমাগুলোর কোথাও ‘ভাই, যুদ্ধ করবেন না। আপনার আল্লাহর দোহাই লাগে, যুদ্ধ খুব খারাপ জিনিস’ জাতীয় কোনো ডায়ালগই একবারের জন্যও ছিল না।
চলচ্চিত্রের বক্তব্য বা বিষয়বস্তু নিয়ে আরেকটি অভিযোগ রয়েছে, ‘ভালো কোনো বিষয় নিয়ে সিনেমা বানালে তো মানুষ দেখে না।’ কথাটা একেবারেই সত্যি নয়। আপনার সিনেমা, নাটক বা উপন্যাসটা মানুষ দেখছে না বা পড়ছে না। কারণ, হয় আপনার বক্তব্যটা ভালো ছিল না অথবা আপনি ভালোমতো সিনেমাটা বা উপন্যাসটা নির্মাণ করতে পারেননি। বলতে পারেন, মানুষ পর্নোগ্রাফি কেন দেখে? হলিউডে বছরে যত সিনেমা তৈরি হয়, তার তিন ভাগের দুই ভাগই পর্নোগ্রাফি। একই বিষয়, তারপরও এত দর্শক কেন? কারণ, বিষয়টা আদিম এবং সরাসরি আমাদের জীবনের সাথে জড়িত। তাই এর আকর্ষণ বা আবেদন কখনোই শেষ হয় না। প্রশ্ন হলো এটাই কি একমাত্র বিষয়, যা আদিকাল থেকে আমাদের জীবনের সাথে জড়িত? জানি বেশির ভাগ পাঠকই বলবেন, ‘আদিম ব্যাপার তো একটাই- সেক্স’। না ভাই, আরও অনেক আদিম ব্যাপার আমাদের জীবনে আছে। অবাক হচ্ছেন? উদাহরণ দিই, আপনার মা কি এই পৃথিবীর প্রথম ব্যক্তি, যে তার সন্তানকে নিজের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন? আমাদের সাত বীরশ্রেষ্ঠর আগে কি এই পৃথিবীতে কেউই দেশের জন্য জীবন দেয়নি? ৯০-এ যে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন হয়েছে, সেটাই কি পৃথিবীর প্রথম কোনো শাসকের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ? আপনারা কি প্রতিদিন বাসে অফিস যাওয়ার সময় দেশের অবস্থা নিয়ে আলোচনা করেন না? একই তো আলোচনা, তারপরও প্রতিদিন কেন করেন? কারণ, সেক্সের মতো দেশপ্রেমটাও সেই আদিমকাল থেকেই আমাদের চেতনার মাঝে বাসা বেঁধে আছে। একটু ডানে-বাঁয়ে তাকালেই দেখবেন, এমনই অনেক বিষয় আছে, যা আদিকাল থেকে আমাদের সাথে জড়িত।
নিজেকে একটু প্রশ্ন করে দেখেন পর্নোগ্রাফির মতো নিষিদ্ধ একটা আদিম বিষয় যদি মানুষকে এতটা আকৃষ্ট করতে পারে, তবে মায়ের ভালোবাসা, মানুষের প্রতি মমতা বা দেশপ্রেমের মতো আদিম বিষয়গুলো নিয়ে বানানো সিনেমাগুলো কেন মানুষকে আকৃষ্ট করবে না? মেনে নিচ্ছি, সেক্সের মাঝে প্রাকৃতিক কিছু আকর্ষণ রয়েছে, যা অন্য বিষয়গুলোতে নেই বা থাকলেও সেটাতে হয়তো আমরা সেভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারছি না। আর ঠিক এখানেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে বিনোদনের প্রয়োজনীয়তা।
চলবে…