:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
কুন্তল হোসেন

চলচ্চিত্র সমালোচক

মহারাজ এ কী সাজে
প্রচ্ছদ: 'এক যে ছিল রাজা' পোস্টার অবলম্বনে

এক যে ছিল রাজা

মহারাজ এ কী সাজে

মৃত্যুর প্রায় এক যুগ পর ফিরে আসে এক ব্যক্তি। ফিরে এসেই তাকে দাঁড়াতে হয় কাঠগড়ায়। নিজের বেঁচে থাকা প্রমাণ করতে দীর্ঘ ১৬ বছর লড়তে হয় আইনি লড়াই। এই ঘটনা বৃটিশ শাসন আমলে ঘটে যাওয়া ভারতীয় উপমহাদেশের সব থেকে আলোচিত ও রহস্যমূলক মামলা যা ‘ভাওয়াল সন্ন্যাসী মামলা’ নামে পরিচিত।

বাংলাদেশের গাজীপুরে অবস্থিত ভাওয়াল তৎকালীন বৃটিশ শাসন আমলের বাংলা প্রদেশের বৃহত্তর একটি এস্টেট ছিলো। ভাওয়ালের মেজো রাজকুমার রমেন্দ্রনারায়ণ রায় দার্জিলিং-এ ১৯০৯ সালে সিফিলিস রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান, কিন্তু প্রায় এক যুগ বাদে নাগা সন্ন্যাসী রূপে তিনি ফিরে আসেন তার রাজ্যে ও দাবি করে বসেন তার জমিদারি। যার ফলে শুরু হয় আলোচিত ‘ভাওয়াল সন্ন্যাসী মামলা’। ভাওয়াল সন্ন্যাসী কি সত্যিই রাজা রমেন্দ্র রায়? এই প্রশ্নের জবাবে অনেকগুলো উত্তর আছে।

এই ছবির কিছু বিষয় আমার বোধগম্য হয়নি, যেমন এই ছবিতে একটি দৃশ্যে দুইজন চরিত্রের নিজেদের মধ্যে বার্তালাপ দেখানো হয়েছে যা সম্পূর্ণ কাল্পনিক, মূল ঘটনার সাথেও এর কোনো সম্পর্ক নেই। এ ছাড়া কিছু কিছু দৃশ্য অহেতুক সময় পার করার জন্য রাখা হয়েছে বলে মনে হয়েছে। কোর্টরুম ড্রামাটা আরেকটু ভালো হতে পারতো কিন্তু সেটা হয়নি।

কেউ কেউ বলেন এটা রাজবাড়ি থেকে জমিদারি পুনরায় উদ্ধার করতেই সাজানো নাটক। আবার কেউ বলেন এই ভাওয়াল সন্ন্যাসী আসলে পাঞ্জাবের মান সিং নামক এক প্রতারক। অপর দিকে দার্জিলিং এ রাজা রমেন্দ্রনারায়ণ রায় যখন মারা যান তখন তার স্ত্রী আর শ্যালক ব্যতিত অন্য কোনো বাড়ির লোক ছিল না। তার মারা যাওয়ার সঠিক সময় নিয়েও আছে বিভ্রান্তি, ১৯০৯ সালের ৭ মে নাকি ৮ মে রাজা রমেন্দ্র মারা যান এটা নিয়েও আছে বির্তক।

ডেথসার্টিফিকেট ব্যাতিত রাজা রমেন্দ্রনারায়ণ মারা যাওয়ার কোনো নির্ভরশীল প্রত্যক্ষদর্শী ছিল না, কিন্তু অপর দিকে ভাওয়ালে আসা সেই নাগা সন্ন্যাসী যে রাজা রমেন্দ্রনারায়ণ তা রাজবাড়ির সদস্য থেকে শুরু করে রাজ্যের সাধারণ প্রজারা সবাই এক বাক্যে স্বীকার করেন।
এই ভাওয়াল সন্ন্যাসী মামলাকে নিয়েই নির্মিত হয়েছে ‘এক যে ছিলো রাজা‘ ছবিটি।

এক যে ছিল রাজা । পরিচালক: সৃজিত মুখার্জি।
ধরন : রহস্য, থ্রিলার। অভিনয় : যিশু সেনগুপ্ত, জয়া আহসান, অঞ্জন দত্ত, অপর্ণা সেন…।

১৬ বছর ধরে চলা একটি মামলার মুখ্য চরিত্রের জীবন ও মামলার উল্লেখযোগ্য সাক্ষ্য প্রমাণ একত্র করে কয়েক ঘন্টার একটি চলচিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা হয়েছে। এই চেষ্টায় পরিচালক সৃজিত মুখার্জি অনেকটাই সফল হয়েছেন বলবো, কারণ তার গল্প বলার ধরন খুবই সহজ সরল। স্ক্রিপ্ট খুব সহজ ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যার ফলে সাধারণ দর্শক খুব সহজে গল্পটা বুঝতে পারবেন, আর সাথে আছে এই ছবির প্রধান চরিত্রগুলির অসাধারণ অভিনয়।

যিশু সেনগুপ্ত তার স্বভাবমত চরিত্রের সাথে দারুণ ভাবে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। শুধু তাই নয় এক যুগ আগের ও পরের রমেন্দ্রনারায়ণ এর ভিতর ভাষাগত ও স্বভাবগত যে পরির্বতনগুলো হয়েছিল সেটা তিনি স্রেফ তার সাবলীল অভিনয় দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন। ঠিক একই ভাবে আমাদের জয়া আহসান এই ছবির সময় ও চরিত্রের বয়সের সাথে নিজের গলার আওয়াজ এবং বডি ল্যাংগুয়েজ পরির্বতন করে ফেলতেন। এবং এই পরির্বতনগুলো খুব স্বাভাবিক ভাবেই দেখিয়েছেন, যা কখনো বাড়াবাড়ি ধরনের কিছু মনে হয়নি।

এই ছবির কিছু বিষয় আমার বোধগম্য হয়নি, যেমন এই ছবিতে একটি দৃশ্যে দুইজন চরিত্রের নিজেদের মধ্যে বার্তালাপ দেখানো হয়েছে যা সম্পূর্ণ কাল্পনিক, মূল ঘটনার সাথেও এর কোনো সম্পর্ক নেই। এ ছাড়া কিছু কিছু দৃশ্য অহেতুক সময় পার করার জন্য রাখা হয়েছে বলে মনে হয়েছে। কোর্টরুম ড্রামাটা আরেকটু ভালো হতে পারতো কিন্তু সেটা হয়নি। ভাওয়াল এস্টেটের জমিদারকে নিয়ে যেহেতু কাহিনী তাই ছবির শুরুতে ভাওয়াল এস্টেটকে পর্দায় সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারতো পরিচালক, কিন্তু এমনটাও হয়নি।

সব মিলায়ে এক যে ছিলো রাজা অসাধারণ ও ব্যতিক্রমধর্মী একটা ছবি। বাংলা চলচ্চিত্রকে বিশ্বের কাছে পরিচিত করতে ও বাংলা চলচিত্রের দর্শকদের ভালো ছবির প্রতি রুচি আনতে এক যে ছিলো রাজা ছবির মতো আরো চলচিত্র তৈরি হওয়া দরকার।

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.