মুহূর্তের বিন্যাসে ‘দোলাচল’
নির্মাণ মানে নানান উপাদান দিয়ে কোনো কিছু তৈরির আয়োজন। একজন নির্মাতা সেই আয়োজনের প্রধান, যিনি সব উপাদান পরিমিত মাত্রায় একত্র করে আয়োজনের একটি সম্পূর্ণ রূপ দেন। একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে যেকোনো আয়োজনকে একত্রে দেখতেই আমার ভালো লাগে। আর তাই চলচ্চিত্র সমালোচনা থেকে সর্বদাই দূরে থাকতে চাই। একটি চলচ্চিত্রের ব্যবচ্ছেদ করে তার সমালোচনা করা আমার কর্ম নয়। তাই এই লেখাকে কোনো ছকে না ফেলে আমার ব্যক্তিগত মতামত হিসেবে গ্রহণ করলে আমি স্বস্তি পাব।
সম্প্রতি অনলাইনে মুক্তি পেয়েছে শ্রীচেতা দাস নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দোলাচল। চলচ্চিত্রটি ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের বিহার রাজ্যের পাটনায় অনুষ্ঠিত বোধিসত্ত্ব আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দেখার সুযোগ হয়েছিল।
পাঁচ সদস্যের একটি দরিদ্র পরিবার। পরিবারের গৃহকর্তা দীর্ঘদিন ধরে বাড়ি ফেরে না। গৃহকর্তার মা, দুই কন্যাসন্তান আর গৃহকত্রী নিয়ে বেশ অভাবে দিন যাপন করছিল পরিবারটি। এ রকম সময় পরিবারটিতে জন্ম নিয়েছে আরও একটি কন্যাসন্তান। নতুন এই সদস্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত পরিবারে সদস্যরা। এই শঙ্কার সমাধানের একটি মুহূর্ত থেকে এগোতে থাকে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘দোলাচল’।
‘দোলাচল’ চলচ্চিত্রের স্ক্রিন প্লে গল্পনির্ভর নয়। একটি ঘটনার কিছু মুহূর্ত চিত্রায়িত হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে। সময় এবং স্থানের সাপেক্ষে নির্মাতাকে চিত্রের চেয়ে সংলাপের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতে হয়েছে। তাই বলে চিত্রের ওপর তিনি নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেননি। আগন্তুকের নতুন কোলে বাচ্চাটি যখন কাঁদছিল, তখন মাকে দেখা যায়, বাচ্চার কান্না সহ্য করতে না পেরে স্বহস্তে নিজের বাহু সজোরে খামচি দিয়ে চেপে ধরে। এখানে চিত্র দিয়ে চমৎকার করে মুহূর্তটি রচিত হয়েছে। আগন্তুক চলে গেলে মায়ের কান্নার শব্দে প্রতিবেশীরা যখন এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করে, কী হয়েছে? তখন বৃদ্ধা হাত দিয়ে ইশারায় বলে, ‘কিছু হয়নি’। তারপর আবার হাত দিয়ে ইশারা করে বলে, ‘নিয়ে গেছে বা চলে গেছে’। এখানেও চমৎকার একটি দোলাচল মুহূর্ত রচিত হয়। চলচ্চিত্রটির সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো দর্শককে একটি ভেক্যুয়াম টিউবে নিয়ে বসিয়ে দেয়। যেখানে ধীরে ধীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকে, তখন একধরনের অস্বস্তি অনুভূত হয়।
অভিনয় প্রসঙ্গে বলতে গেলে শুধু বৃদ্ধা চরিত্রে হালকা বোল্ড অভিনয় ছাড়া বাকি সবাই বেশ ভালো করেছেন। চলচ্চিত্রটিতে কিছু সিনেম্যাটিক শট দেখা গেলেও ক্যামেরা মুভমেন্টে কিছুটা অস্থিরতা দেখা যায়, যা চলচ্চিত্রটির আবেগ প্রকাশে কিছু মুহূর্তকে ব্যাহত করে। সেট, প্রপ্স এবং লাইটের ব্যবহার ছিল অসাধারণ। তবে শব্দের ব্যবহার ছিল সাধারণ মানের।
সব মিলিয়ে চলচ্চিত্রটি আমার ভালো লেগেছে। নির্মাতা শ্রীচেতা দাসকে অভিনন্দন।