লাইভ ফ্রম ঢাকা : নাগরিক মধ্যবিত্তের বিবমিষা
‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’—৯৪ মিনিটের একরৈখিক কাহিনির সিনেমা। আগে থেকেই আন্দাজ করা যায় এক দৃশ্য থেকে আরেক দৃশ্যের পরিণতি। তবে সন্দেহাতীতভাবে ভালো সিনেমা। এই রকম সিনেমা মাঝে মধ্যে, বছরে বা পাঁচবছরে একটা দুইটা দেখলে আশার আলো দেখি। ভাবি আমাদের দেশেও আউটস্ট্যান্ডিং সিনেমা হতে পারে।
সিনেমাটার কথা শুনেছিলাম আরো কয়েক বছর আগে। তখন টিজার কিংবা এক ট্রেইলার দেখে ভালো লেগেছিলো বলে দেখার প্রতীক্ষায় ছিলাম। কম বাজেটেও যে ভালো সিনেমা বানানো যায় তার হাজারো প্রমাণ পৃথিবীতে আছে। কিন্তু বাঙলাদেশে ছিলো না। এই সিনেমা মুক্তি পাওয়ার পর সেইটার অভাবও পূর্ণ হলো। এইবার মেধাহীন ফিল্মমেকাররা আর বলতে পারবেন না যে বাজেট ছিলো না তাই এই করতে পারি নাই সেই করতে পারি নাই।
সিনেমাটার কথা শুনেছিলাম আরো কয়েক বছর আগে। তখন টিজার কিংবা এক ট্রেইলার দেখে ভালো লেগেছিলো বলে দেখার প্রতীক্ষায় ছিলাম। কম বাজেটেও যে ভালো সিনেমা বানানো যায় তার হাজারো প্রমাণ পৃথিবীতে আছে। কিন্তু বাঙলাদেশে ছিলো না। এই সিনেমা মুক্তি পাওয়ার পর সেইটার অভাবও পূর্ণ হলো। এইবার মেধাহীন ফিল্মমেকাররা আর বলতে পারবেন না যে বাজেট ছিলো না তাই এই করতে পারি নাই সেই করতে পারি নাই।
শিল্প কী? শিল্প মূলত সময়ের নির্যাস। এই যে আপনি সময়টাকে যাপন করছেন, সেই যাপনে আপনি ব্যক্তিগত ও নৈর্ব্যক্তিক অনেক অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে যান, এই অভিজ্ঞতায় অনেক টানাপোড়েন আছে, অস্তিত্বের যন্ত্রণা আছে, ক্রোধ আছে। পলায়নকামিতা, পাওয়া-নাপাওয়া, হিশেব-নিকেশ, স্বপ্নভঙ্গ ইত্যাকার ব্যাপার আছে। কিন্তু সবকিছু একযোগে প্রকাশের তেমন কোনো ভাষা বা মাধ্যম কিন্তু পৃথিবীতে নাই। ফলত আপনাকে যেটা করতে হবে সেইটা হলো অভিজ্ঞতার মূল রসটাকে ছোট্ট একটা জায়গায় নিয়ে এসে দৃশ্যমান করা। মূলত আপনার অভিজ্ঞতাকে একটা সিঙ্গেল ফ্রেমে আটকে ফেলতে পারলেই তার শিল্পরূপও দাঁড়িয়ে যায়। তো আলোচ্য সিনেমার পরিচালক সেটা অনেকটাই করতে পেরেছেন বলেই আমার মনে হয়েছে।
ঢাকা শহরে বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষই ঢাকার বাহির থেকে আসে, কাজকর্ম করার জন্যেই আসে। এইখানে বাধ্য হয়ে থিতু হয়। মানুষের জীবন হয়ে যায় নানাবিধ জটিলতায় পরিপূর্ণ। বিবমিষা নিয়ে যানজটে বসে থাকে, অফিস করে ঘরসংসার করে। কিন্তু তারা চান্স খুঁজতে থাকে এ শহর ছেড়ে পালানোর। স্বপ্ন দেখতে থাকে, চেষ্টা করতে থাকে। কেউ কেউ পারে। অধিকাংশই পারে না। তো এই সিনেমা হলো সেই অধিকাংশ মানুষের দোটানা, টানাপোড়েন, হাহাকারের প্রামাণ্যচিত্র।
এ সিনেমা এক রঙের। শাদা-কালো। সিনেমা শাদা-কালো হওয়ার কিছু টেকনিকাল সুবিধে আছে—কালার কম্প্যাক্টনেস অক্ষুণ্ন থাকে, শাদাকালো রঙের কারণে অনেক দৃশ্যের বাহুল্যও চাপা পড়ে যায়। যদিও সিনেমাটা অনেক কম্প্যাক্ট, তবু এর রং ব্যাপারটাকে আরো ঘনীভূত করেছে। ফলত পরিচালক এই সুবিধা পেয়েছেন। অবশ্য আমার মনে হয় তিনি ঢাকা শহরের রংহীন মনোটোনাস, বিবমিষাময় যাপনটাকে বোঝানোর জন্যে শাদা কালো রং ব্যবহার করেছেন। আরো একটা কারণ পারে, সেটা হলো বাজেট।
অনিশ্চয়তা, পলিটিকাল আনরেস্ট, জ্বালাও-পোড়াও, একাকিত্ব, স্বার্থপরতা, প্রতারতা, মাদকাসক্তি, প্রেম, শরীর, প্রতীক্ষা-সহ একটা পচে যাওয়া, নষ্ট হয়ে যাওয়া শহরের চলচ্চিত্র গাঁথা হয়েছে এই সিনেমার সীমিত পরিসরে। এই সিনেমায় গতি আর সাসপেন্স একটা সদর্থক বৈশিষ্ট্য।
এ সিনেমার প্রধান বৈশষ্ট্য হলো এর বাহুল্যহীনতা। সংলাপ কম, চরিত্র কম। দৃশ্য কম। অপ্রয়োজনীয় তেমন কিছু নাই বললেই চলে। আর সাজ্জাদ আর রেহেনা এই চরিত্রদুটি খুবই ভালো অভিনয় করেছে। অন্যান্য চরিত্রের অভিনয়ও খারাপ নয়, তবে সাজ্জাদের মাদকাসক্ত ভাই মাইকেল চরিত্রটা আরেকটু ডিটেইল আর প্রতিষ্ঠিত হতে পারতো। সিনেমায় ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক নিয়ে ভাবনাচিন্তা যদি একটু বিশদ হতো তবে এই সিনেমাটা অন্য মাত্রা পেতে পারতো।
‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’— চিত্রনাট্য ও পরিচালনা আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ। ‘খেলনা ছবি’র ব্যানারে এতে সাজ্জাদ চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোস্তফা মনোয়ার। আর রেহেনা চরিত্রে তাসনোভা তামান্না। এছাড়াও অভিনয় করেছেন তানভির আহমেদ চৌধুরী, মোশাররফ হোসেন, রনি সাজ্জাদ প্রমুখ।
২০১৬ সালে সিঙ্গাপুর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’র জন্য সেরা পরিচালক হন আব্দুল্লাহ মোহাম্মাদ সাদ ও সেরা অভিনেতা হন মোস্তফা মনওয়ার।
ট্রেইলার দেখতে ক্লিক করুন- Live from Dhaka
আরো পড়ুন- লাইভ ফ্রম ঢাকা ও আমাদের সিনেমা বাস্তবতা