একথা সেকথা
সমুদ্র গুপ্তর স্মৃতি
সমুদ্র দার সমাধির পাশে দাঁড়ালাম কিছুক্ষণ।
মনের ভেতর টগবগিয়ে উঠল স্মৃতির অশ্বেরা।
তাকে চিনবার অনেক আগে থেকেই নাম জানতাম তার। আমার পিতা ছিলেন নাট্যদল ড্রামা সার্কেলের সাথে যুক্ত। দেশ স্বাধীন হবার পর দুটো নাটকের কথা মনে আছে, ‘কবয়ঃ’ ও ‘আর্মস অ্যান্ড দ্য ম্যান’। ৭২ ও ৭৩ কিংবা ৭৩ ও ৭৪ সালে হয়েছিল নাটক দুটো পর্যায়ক্রমে। আমি তখন নিতান্ত বালক। ‘আর্মস অ্যান্ড দ্য ম্যান’ নাটকটির ব্রোশিউর অনেক বছর পর্যন্ত ছিল আমার কাছে। এতে সমুদ্র দার নাম ছিল অভ্যর্থনা বা যোগাযোগ বা এমনই কোনো দায়িত্বে রত হিসেবে।
আরও পরে, সাপ্তাহিক বিচিত্রায় তার কবিতা পড়ি। কবিতাবিষয়ক আলোচনায় বাম ধারার কবি হিসেবে তার উল্লেখ দেখতে পাই। আশির দশকের শুরুর দিকটায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতাম। তিনি ‘উন্মেষ’ নামক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি ছিলেন। তার উপস্থিতি ও উপস্থাপনা দেখতে পেতাম।
এরপর ‘উন্মেষ’-এর সাপ্তাহিক সাহিত্য আসরে যেতে শুরু করলে তার সাথে পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা হতে শুরু করে। ওই সভায় দেখতাম, তার একটা আন্তরিকতা ছিল অন্যদের মূল্যায়নে, বিশেষত তরুণদের বেশ উৎসাহ দিতেন।
পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন একসময়। দেখতে গিয়েছিলাম। আরও কয়েকজন ছিল। তিনি তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে আড্ডা দিয়ে যাচ্ছিলেন। রোগীর করোটি খুলে মস্তিষ্ক বের করে রেখে সার্জন টেনিস খেলতে যান, এই গল্পটা তিনি সমর্থন করলেন। বললেন, মস্তিষ্কের থেকে স্পেসিমেন নিয়ে ওটা কালচার করতে দিয়ে মধ্যবর্তী সময়ের জন্য তিনি টেনিস খেলতে যেতেই পারেন।
তিনি ছিলেন সহজ মনের আবেগপ্রবণ মানুষ। গভীর এক স্নেহবোধ ছিল তার। দেখা হলে শুধু কুশল নয়, আরও খোঁজখবর নিতেন। আমার তখন এলোমেলো বোহেমীয় যাপনকাল। একবার তিনি আমাকে বোহেমীয় অসুখ সারবার ওষুধ আছে, এমন শুভবার্তা শুনিয়েছিলেন। ‘লাঠ্যৌষধি নাকি?’ জিগ্যেস করায় একটু গাম্ভীর্যসহ মাথা ঝাঁকিয়েছিলেন। কতবার কত অনুষঙ্গে তার সাথে সময় কেটেছে কমবেশি! সেই সব দৃশ্য যেন কোলাজ হয়ে উঠছে।
পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন একসময়। দেখতে গিয়েছিলাম। আরও কয়েকজন ছিল। তিনি তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে আড্ডা দিয়ে যাচ্ছিলেন। রোগীর করোটি খুলে মস্তিষ্ক বের করে রেখে সার্জন টেনিস খেলতে যান, এই গল্পটা তিনি সমর্থন করলেন। বললেন, মস্তিষ্কের থেকে স্পেসিমেন নিয়ে ওটা কালচার করতে দিয়ে মধ্যবর্তী সময়ের জন্য তিনি টেনিস খেলতে যেতেই পারেন।
তিনি কেবল কবিই ছিলেন না, অ্যাকটিভিস্ট ঘরানার মানুষ ছিলেন। কী একটা এনজিও ছিল বুঝি তার পেশার সাথে সম্পৃক্ত। মুক্তিযোদ্ধার স্পিরিটটা সব সময়ই ছিল তার।
তার বাসায় গিয়েছিলাম এক সকালে এবং হ্যাপি ভাবি নাশতা খাইয়েছিলেন। ভাবি কবে মারা গেলেন জানা ছিল না। দুজনে একসাথেই শুয়ে আছেন। একই কবরে।
মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান
২৯.১০.১৪
গত পর্বে পড়ুন- অগ্রজের প্রস্থান : আবদুল মান্নান সৈয়দ