:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
সৌগত দেবনাথ

কবি

সান্ধ্য সভার তুলসীবনে
প্রচ্ছদ: রাজিব রায়

কবিতাগুচ্ছ

সান্ধ্য সভার তুলসীবনে

পুনরাবৃত্তি অভ্যাস

তোমায় দেখবো হিমবর্ণ পাখিদের ঠোঁট
এবং সমুদ্রের প্রবাল স্রোতে
যেখানে রোজমেরি, লাইলাক
এবং জাহান্নামও ফোটে,
শয্যাক্লান্তি নিয়ে
আধো ছোটাছুটি দৌঁড়ে অকস্মাৎ
তোমায় দেখবো সহস্র কদম
এক মহাদেশ যাওয়ার মতো নির্মম,

তোমায় দেখবো প্রতিবার ওড়ার সময়
সুমেরু পরিযানে ও আটলান্টিক হাঙরের দাঁতে
বহু বিচলিত আশপাশ নানা স্বর শুনলেও
একবার করে মনে পড়ে যাতে,
বিরুদ্ধ বাতাস হয়ে উড়ে এলে ঝড়
তোমায় দেখবো
প্রবাহী জলের মাপে নির্ঝর,

কাছাকাছি থেকে
কিছুটা সস্নেহ বিরতির পরে
মানুষ হয়ে জন্মাবার যে ভুল
তা মানুষ আবার জন্ম দিয়ে করে,
হাত ছুঁয়ে মনে হয় পাথর
চোখ ছুঁলে দেখি ক্লান্ত ভাস্কর
ঠুকে ঠুকে তার সম্পাদনা অস্ত্রে
পাহাড়কেও মানুষ বানিয়ে ছাড়বে এরপর,
অথচ মধ্য বারোটার কাঁটায় এমন ভুল করে হলেও
তোমায় দেখবো বারবার
শিল্পী হতে প্রয়োজন যতোটুকু শীতলতার,

আকাশ যতোদিন দেখলে আকাশ হয়ে ওঠা যায়
পুরো জীবন শেষ হলে
যেভাবে বুঝি, কেবল শেষ করেছি জীবনের এক অধ্যায়,
সেভাবে দেখবো বিরহের ক্ষেত্রফল ও
বেদনার চারু অবতার,
তোমায় দেখবো
দু’চোখে যতোটা দেখা যায় অন্ধকার!

 

প্রভুর তৈরি বাঙ্কার!

জালের ভেতর হাজারো ফাঁক
অমন স্বাধীনতা দিয়েও কেবল একটি জালই পারে প্রতিটি মাছকে আটকে দিতে
আর আমরা সেগুলো ভেজে জীবনে মুক্তির অর্থবহ সংগীত গাই,
শুধু রসুইঘরে আজকাল মায়ের ক্লান্ত হাত দেখলে মনে হয়
উড়তে চেয়েও কেউ কেউ হয়ে যায় উটপাখি,

তাই ভয়ে তাকাতে পারিনা কারো চোখে
যদি ডিমে তা দিতে ব্যস্ত পোষা মুরগীটাও বুঝে ফেলে
তার খাদ্যসংকট নেই শুধু আমাদের খাবার হওয়ার জন্যেই!

সাঁকোর উপর চলতে থাকা সাইকেল
কতোদিন সেই চাকার শব্দ শুনে মনে হয়েছে
পৃথিবীর লাশের পাহাড় বেয়ে যখন দক্ষ সৈনিক চূড়া ছোঁয়
তখন তার পায়ের নীচেও হাড়ের এমন সিম্ফোনি তৈরি হয়,
আর দক্ষ শোষক চূড়ায় দেশের পতাকা বাঁধিয়ে
বেহালায় তোলে সানশাইন,

শিমলা মরিচের গন্ধ খুব সুন্দর, কিন্তু ওতে ঝাঁজ নেই
কামড়ে খেলেও মনে হয় লাশের স্বাদ,
বৃষ্টি হলে বারান্দায় বাবাকে কাঁদতে দেখি
ভাই ঘন কাদার ভেতর গেঁথে গেছিলো শুধু এক রোমান্টিক বাদলা দিনে
এবং তাকে ‘শুয়োর’ বলে তারা তৈরি করেছিলো ত্রিশ লক্ষ লাশ,

অভ্যাসবশত ছাদে মরিচগাছের পরিচর্যা করি, আর ভাবি
একদিন কেউ আমায় কামড়ে বুঝবে আত্মার ঝাঁজ!

 

লাস্য – কবচ – শ্লোক!

এ যুদ্ধের মাসকট-সময়
বলে দেবে—
অতিথিপরায়ণ হওয়ার জোরে কেমন
সাধুর প্রতিও বিছানাবিদ্বেষ তৈরি হয়,
লিলিথ, তোমার প্রিয় হরিণের মাংস
দূর্বা সবুজে লুটিয়ে পড়লে, আহত;
তখনো কি নগ্ন বিশ্বাসের ছুরি ঠেকানো প্রয়োজন?

পুরো পৃথিবীর তৃষ্ণার্ত জমি
অবহেলার রিসাইকেল বিন,
সেচের সহচর এ তল্লাটে আঙুলে গোনা যায়,
তড়িঘড়ি সাইকেল চাকার বিষাদ ঘুরতে ঘুরতে
পা পেরোতে ব্যর্থ হবার পর
লিলিথ, তোমার ঘাড় জানে কিভাবে সামনে তাকাতে হয়,

অথচ,
না তাকালেও আকাশের মতো সাম্য
চিরকাল মাথার ওপরে সমান্তরাল
তার সাধুবাদ সহ গ্রন্থিত অতীত নিয়ে মূর্ছা যাই,
আর
পৃথিবীর উৎসর্গপত্রে সমস্ত ক্লান্ত জরায়ুর ঘাম
একটি একটি কষ্টসাধ্য জন্ম দেয় রাষ্ট্রের,
লিলিথ, কস্তুরি উৎসের প্রতি সমূহ তীর ছুঁড়ে
আলোকবর্ষ দ্বন্দ্ব করে যেতে পারতাম তোমার সাথে,
যদিও তোমার সুবর্ণ সুযোগ, স্নেহ তৃপ্ত পিকাসো আঁকবে ঘর
দুটো জানালা থাকবে, দুটো দরজা থাকবে, দুটো চোখ থাকবে
নীচ থেকে মাটি বলবে-
স্মৃতি কলোনির ত্রাণকর্তা, বাগান সাজাতে জানতে হবে,
আর তুমিও নেমে যাবে কাঁচি হাতে
বনসাই গ্রাম চারদিক
আহ্নিক সেরে যেদিকেই তাকাবে, বৃন্দাবন!

তবু-
জীবনের প্রতিটি সান্ধ্য সভার তুলসীবনে
এমন নিস্তরঙ্গ হরিণের মাংস, লুটিয়ে-আহত
নৈশভোজের পাঠ-পর্যায়
শেষ হলে;
জানা যায়, কেউ কেউ এসেছিলো জানাযায়!

 

পর ‘লোক’ গমন

১.
তোমার প্রেমিকেরা ফড়িংয়ের মতো লাফাতে লাফাতে
কবে যেনো হয়ে গেলো পঙ্গপালের দল,
কিভাবে যেনো তারা এও জেনে গেছে
আমি ছিলাম তোমার যত্নের একমাত্র ফসল!

২.
মউল ফুলের বনে হাত পাতো,
তর্জনী নয়
হাতের বিশ্বাসে হাত রেখে দেখো
কেমন মাদক হয়ে দুদণ্ডের ভ্রম
মানুষকে বেদনা কিনে দেয় আজীবন!

৩.
পৃথিবীর ভোরগুলো হোক বাৎসরিক
যা আমাদের সমান সমান ভাবার পর্যাপ্ত সময়টুকু দেবে,
বাগান ও বারান্দায় মৎস্যগন্ধ্যা ফুল ফুটুক
তা শুঁকে আমরা হাড় হাভাতে পাথরের দল
মাছের মতো চামড়ার নীচে নরম হয়ে উঠি,
আর হোক অনিয়মিত সুরের কালচার
শুনে মনে হবে বিধিগত সাহারা
যেদিকেই হাঁটো না কেনো, শূন্যের পরিধি অসীম!

৪.
একটি ঝিনুক হয়ে ভেতর থেকে বের করলাম মুক্তো
তা আজকাল গলায় ঝুলিয়ে বেড়ায় সে,
বাহারি নামে দেয়াল টপকে এপাড়া ওপাড়া
সবাইকে সে জানায়-
কেমন উল্কার মতো উজ্জ্বল ছিলাম আমি
এবং প্রতিটি উল্কাই কেমন মাটিতে আছড়ে পড়ে!

৫.
অনুযোগ বাক্যে সবই আফসোস হয়ে গেলে
যাতায়াত বধিরের মতো বোধহীন করে ফেলে—
ভালোবাসা!
হায়, ডুবুরি যে হতে চায়
তার প্রতি অভিশাপ— জলে ভাসা,
বিপরীত উত্তাপের ভোল্টেজ এ তল্লাটে
যে ছিলো গন্তব্য, তার গতি শুধু নিজ ঠোঁট ও ললাটে
ঝিনুকের শোধ; যথেষ্ট ও যথাসাধ্য পোড়ানোর পর-
পৃথিবীর সব ভালোবাসা নিছক গল্প করে ছুঁড়ে দিয়ে
প্রেমিকারা মধ্যাহ্নভোজে বসে সন্তানাদি নিয়ে!

 

কুড়ি লক্ষ শূন্য

ভূমিকা ছাড়াই কান্না করা যায়
বোধহয় তুমি তা জানো,
অবশ্য আমিও জানি–
এ পৃথিবীতে ফণা তোলা সাপেরাই সবচেয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে,
যাদের কিছু নেই, জল ঢেলে ভুলে যেতে পারে বিরুদ্ধতা
চলার পথে যারা পদবির সুযোগে প্রেমিকা
এমন স্থির তরঙ্গ মানুষকে শুধু একবারই চেনা যায়,
তাই বলো তোমার সব ইতিবাচক বাক্য
এ অধমের উত্তম ফলাফল, যাই বলবে অর্থবহ
কানে শুনবো শুধু কুড়ি লক্ষ শূন্য,

সাথে ছিটিয়ে দিবো দু তিনটে সমুদ্র, এক যুগের আহার ও পর্যটন স্রোত,
তুমি তাতে দ্বিধাহীন ঘুরতে ঘুরতে
সংসারে ঢুকে যাবে লাঞ্চবক্স ও হঠাৎ নৈশ রতি,
তারপর একদিন হুট করে
তোমার আমার দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতা অনশন ফুরোবে
এবং কর্মব্যস্ত স্বামীর চোখে দেখবে বহুগামী চালাকি,

তবে আপাতত সায়াহ্ন অবসর দেখো, আর জানো
অযত্নেও যে বায়বীয় সায়র ও নিভৃত গগন
অরিগ্যামি কৌশলে উড়ে উড়ে পৌঁছায় জাকার্তার শস্যক্ষেতে
অমন ইচ্ছা চাই,
আরো চাই হৃদ কমল মফস্বল, কারিগরি বিরুদ্ধতা;
গলি ঘুরে আমাদের প্রিয় অতীতের পন্থায়
থামতে বলা যতিচিহ্ন—
দীর্ঘসময় চলে গেছে এবং দীর্ঘতর যাবে,
প্রয়োজন হলে—
অর্ধ শিরীষের ডালে কিংবা ভাইব্র্যােন্ট ক্যামেলিয়া হাতে
সন্তানকে বলতে পারো এ দিনলিপি
তিরিশ বছর পর একদিন,

সন্তানকে বলতে পারো লক্ষ কোটি নক্ষত্রের জ্যামিতি
পানশালার নিষেধাজ্ঞা আর বিদ্রোহের ভয়াবহতা,
বলতে পারো আমার নোংরামো রোগে দাবি করা অধিকার
এবং সকল পারস্পরিক সংহতি, যা আমরা মুখস্থ চিৎকারে গুঁড়িয়ে দিলাম
বলতে পারো, যা কিছু ছিলো অর্থবহ
আমি শুনেছি শুধু কুড়ি লক্ষ শূন্য।

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.