

সেলিম মোরশেদ: বিপন্ন মাস্তুলের কর্ণধার
শিল্পের সঙ্গে জড়িত মানুষটি শিল্পী — তা সেটা যে কোনো শিল্পমাধ্যমই হোক-না কেন। বিভিন্ন শিল্পকর্মের মধ্যে সাহিত্য-শিল্প অন্যতম প্রধান শিল্পমাধ্যম। একজন শিল্পী প্রথমে একজন মানুষ, তার পরে তিনি শিল্পী। বিভিন্ন গুণাবলির সমন্বয়ে একজন মানুষ যথার্থ মানুষ হয়ে উঠতে সক্ষম হন।
গুণাবলি হিসেবে যে উপাদানগুলোকে প্রাথমিক ভাবে ধরে নেয়া যায়— সেগুলোর মধ্যে দূরদর্শিতা, বিবেচনা-বোধ ধারণ করা, স্বীয় নীতিতে নিষ্ঠাবান থাকা, অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকা— ইত্যাদিকে সভ্য মানুষ স্বীকার ও গ্রহণ করে নিয়েছে। এর বাইরেও বিভিন্ন মাত্রার অন্যান্য গুণাবলি, যেমন — বহুদর্শিতা, ভবিষ্যতের কোনো বিষয়ের ব্যাপারে আগাম আঁচ করতে পারা, পাণ্ডিত্য ও জ্ঞান ধারণ করা এবং অপরের কাছে নিজের চিন্তা-ভাবনা পরিশীলিত উপায়ে প্রকাশ করতে পারার সক্ষমতা থাকা — এই বিষয়গুলো ধারণ করতে-পারা ব্যক্তি শিল্পী হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে পারেন।
‘মেঘচিল’-এর এই ক্রোড়পত্রে আমি জনাব সেলিম মোরশেদকে একজন মানুষ হিসেবে আলোচনায় আনছি। শিল্পী সেলিম মোরশেদ-এর অন্তর্গত গুণাবলি যা-কিছুই রয়েছে — তার ভিত্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে মানুষ সেলিম মোরশেদ-এর যাবতীয় মাল-মশলা।
সাহিত্য ও শিল্পে মতাদর্শের গুরুত্ব অসাধারণ; সাহিত্য-সহ সকল ধরনের শিল্পই হচ্ছে জীবনেরই এক ধরনের রূপায়ণ। সাহিত্যিক তথা শিল্পীর দৃষ্টিভঙ্গিতে যদি গভীরতা না-থাকে, শিল্পী যদি জীবনের চলমানতাকে গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে বুঝতে না-পারেন — তা হলে এই রূপায়ণকে গভীরতা দেয়া সম্ভব হয় না। পৃথিবীতে এমন কোনো উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্ম তথা সাহিত্যকর্ম নেই যার মধ্যে মতাদর্শ তথা দর্শন নেই। প্রকৃত শিল্প শুধুমাত্র বিনোদন নয়, তার ভেতর দার্শনিকতা বা মতাদর্শ থাকবেই। সে কারণ থেকেই শিল্প কালোত্তীর্ণের মর্যাদা লাভ করে।
শেক্সপিয়র তাঁর শিল্পে মানুষকে রূপায়িত করতে গিয়ে উপলব্ধি করলেন, মানুষের মনে অমঙ্গলের বিরুদ্ধে, অশুভের বিরুদ্ধে এবং শুভ’র পক্ষে নিজেকে দাঁড় করাবার আকাঙ্ক্ষা জাগছে, — শেক্সপিয়র সে আকাঙ্ক্ষাগুলোকে শিল্পে গভীরভাবে রূপায়ণের মাধ্যমে তাঁর সৃষ্ট চরিত্রগুলোকে কালজয়ী হবার পথে এগিয়ে দিলেন। শেক্সপিয়রের শিল্পকর্মের ভেতর সুস্পষ্ট মতাদর্শিক অবস্থান ছিল। অন্য ভাবে বলতে গেলে ভালো-মন্দ, পক্ষ-বিপক্ষ ছিল। ডেনমার্কের রাজকুমার হ্যামলেট শুধুমাত্র শেক্সপিয়রের কল্পনার চরিত্র না-হয়ে হয়ে গেলেন সর্বকালের মানুষের।
ন্যায়-অন্যায়-বোধের প্রশ্নটি একটি সার্বজনীন বোধ — সার্বজনীন উপলব্ধির বিষয়। মানুষের ভেতরকার সকল ভালো, মঙ্গল বা শুভ’র প্রতি পক্ষপাত এবং অমঙ্গল ও অশুভের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় শেক্সপিয়রের শিল্পকর্ম কালোত্তীর্ণ হতে পেরেছে।
শিল্পকর্মের ভুবনে ক্বচিৎ দেখা যায় যে, দৃশ্যত সামাজিকভাবে কোনোপ্রকারের দায়বদ্ধতা ধারণ না-করেও শিল্পসৃষ্টিতে শক্তিমত্তার পরিচয় দেবার মতো কেউ কেউ রয়েছেন। এ হচ্ছে নিতান্তই ব্যতিক্রম। মানুষ যা-কিছু নিজের অধীন করে নেয় কিংবা সে নিজে যা-কিছুর অধীনস্থ হয়ে যায় — তার সৃষ্ট শিল্পকর্মের ভেতর তারই কিংবা সেইগুলোর প্রভাব প্রাধান্য পায়। সমাজের বিরোধী অবস্থানে পোক্ত থেকে, মানববিদ্বেষী ভূমিকা পালন করে কেউ সফল শিল্পকর্ম সৃষ্টি করবে — তা একেবারেই অসম্ভব একটি ব্যাপার। বড়, মহান ও যুগোত্তীর্ণ শিল্পীর ক্ষেত্রে, শেষ পর্যন্ত একটি পর্যায়ে, ন্যূনতম মাত্রায় হলেও, আদর্শ বহন করে যাওয়াটা নিতান্তই প্রয়োজন। শিল্পকর্মের ইতিহাস, সেইসঙ্গে শিল্পীদের ভূমিকা পর্যালোচনা-কালে আমরা দেখতে পাই, একজন প্রকৃত শিল্পী শুধুমাত্র শিল্প সৃজন করেই ক্ষান্ত হন না — তাঁর শিল্পকর্মে অনুসৃত আদর্শের সংরক্ষণ, প্রচার ও প্রতিষ্ঠা দানের আন্দোলনের সঙ্গে যতটা সম্ভব অব্যাহত ভাবে নিজেকে যুক্ত রাখেন।
‘মেঘচিল’ ক্রোড়পত্রের পাঠকদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটবার অবকাশ না-রেখে এখন বলা যেতে পারে যে, — উপরের কয়েকটি প্যারায় যে কথাগুলো বলা হয়েছে, যা কারুর কারুর কাছে তত্ত্বকথা বলে মনে হতে পারে, সেই কথাগুলোর আলোকে মানুষ সেলিম মোরশেদ একজন সফল শিল্পী সেলিম মোরশেদ হিসেবে ভাস্বর রয়েছেন।
খুবই প্রতিকূল শারীরিক অবস্থায় থেকেও অনুজ শিল্পীদের সাহিত্যশিল্প যাতে আলোর মুখ দেখতে পায় — সেই প্রচেষ্টায় তিনি ব্যক্তিগতভাবে, শারীরিক উপস্থিতির মাধ্যমে যে আয়াস স্বীকার করে নেন — তা শিল্পী সেলিম মোরশেদকে মানুষ সেলিম মোরশেদ হিসেবে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়।
পুঁজিবাদের সর্বনিম্ন স্তরের যে সংস্করণ আমাদের গোটা সমাজকে গ্রাস করে নিয়ে সমাজের অধিবাসীদের স্রেফ ক্রেতা ও বিক্রেতায় পরিণত করেছে — পুঁজিবাদের সবকিছুকে পণ্য করে ফেলার এই প্রক্রিয়া এখানে খুবই বিকৃত ও কুৎসিত ভাবে ক্রিয়াশীল। পণ্যের চেয়েও পণ্যের বিজ্ঞাপন এখন এই সমাজে প্রাধান্য পাচ্ছে।
আমার দেখা মানুষ সেলিম মোরশেদ সত্যকে এভাবেই উপলব্ধি করতে চান। সাহিত্যশিল্পের ক্ষেত্রে তিনি জয়-পরাজয়ের অন্ধ ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় মত্ত হয়ে পড়েন না। ভুল কিছু ঘটে গেলে সেটি শুধরে নেবার মানসিকতায় তিনি ঋদ্ধ। প্রতিপক্ষের কাছ থেকেও গ্রহণযোগ্য কিছুর খোঁজ পেতে তিনি যত্নবান। তাঁর পরিমণ্ডলের মানুষদের প্রতি তিনি সহানুভূতিশীল ও শ্রদ্ধাশীল। অন্যের ভুল সন্ধান করার পাশাপাশি তিনি নিজের ভুলগুলোও সন্ধানে তৎপর।
বিরাজমান এই অবস্থায় শিল্পীগণ প্রত্যেকেই নিজ নিজ শিল্পকর্মের মাধ্যমে নিজ নিজ অনুভূতি, উপলব্ধি, চিন্তা ও মতামত প্রকাশ করবার অধিকার রাখেন। সত্যের সন্ধানে শিল্পসৃজনের কোনো-এক পর্যায়ে এসে শিল্পী নিজের নির্ভুলতার নিদর্শন প্রদানে সক্ষম হন — মানুষের কল্যাণে তাঁর অবদান তখন স্বীকৃতি পায়। আবার একই ক্ষেত্রে অন্য কোনো শিল্পী যখন নিজের নির্ভুলতার নিদর্শন প্রদানে ব্যর্থ হন — তাঁরও কিছু অবদান থেকে যায়। কেবলমাত্র এক পক্ষের দ্বারা সত্যের সম্পূর্ণ উদঘাটন সম্ভব নয়। সৃষ্টিশীল শিল্প-উদ্যোগে সত্যনিষ্ঠ প্রয়াসে পরিমার্জিত আলাপ-আলোচনা অনিবার্য ও অপরিহার্য — বর্তমানের বাস্তবে দাঁড়িয়ে ভবিষ্যতের বাস্তবে উত্তীর্ণ হবার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে চিন্তা, কল্পনা, সম্ভাব্যতা বিচারের মাধ্যমে নতুনতর আদর্শ সৃষ্টি হয়। এতে করে শিল্পীদের তথ্য ও অভিজ্ঞতার মিথষ্ক্রিয়ায় সত্যের ধারণা অধিকতর পরিশোধিত, পরিমার্জিত, পরিবর্তিত ও বিকশিত হওয়া সম্ভব হয়।
আমার দেখা মানুষ সেলিম মোরশেদ সত্যকে এভাবেই উপলব্ধি করতে চান। সাহিত্যশিল্পের ক্ষেত্রে তিনি জয়-পরাজয়ের অন্ধ ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় মত্ত হয়ে পড়েন না। ভুল কিছু ঘটে গেলে সেটি শুধরে নেবার মানসিকতায় তিনি ঋদ্ধ। প্রতিপক্ষের কাছ থেকেও গ্রহণযোগ্য কিছুর খোঁজ পেতে তিনি যত্নবান। তাঁর পরিমণ্ডলের মানুষদের প্রতি তিনি সহানুভূতিশীল ও শ্রদ্ধাশীল। অন্যের ভুল সন্ধান করার পাশাপাশি তিনি নিজের ভুলগুলোও সন্ধানে তৎপর। অনুশোচনা-বিহীন কোনো কোনো ব্যক্তিকে পর্যন্ত তিনি অপরাধী গণ্য করে চলতি উত্তেজনায় মেতে ওঠেন না। — এসব ক্ষেত্রে দেখেছি তাঁর ব্যাপক ও গভীর অনুসন্ধান।
শিল্পকর্ম তথা সাহিত্যকর্ম যে এত গভীরভাবে আমাদের অভিভূত করে তার কারণ নিহিত থাকে শিল্পকর্মের বিষয়বস্তুর মধ্যে। কিছু শাশ্বত হৃদয়ভাবই শিল্পের মূল উপজীব্য। যুগের পরিবর্তনে সমাজ তথা ব্যক্তিচেতনা অনেকখানি পরিবর্তিত হয়ে যায়, ভাববিন্যাসেরও বদল ঘটে, — কিন্তু ওই বিন্যাসটুকু বাদ দিয়ে দেখলে আমরা দেখতে পাই যে, শিল্পের সার-বিষয়বস্তু অ-পরিবর্তিত রয়ে যায়।
চিরন্তন হৃদয়াবেগের বৈশিষ্ট্যের ব্যাপকতার কারণে শিল্পী বার বার একে নতুন রূপে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম। সাহিত্যশিল্পী এবং সাহিত্যপাঠক খুব সহজে পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হতে পারেন না। পারস্পরিক যোগস্থাপনের পথে বিদ্যমান বাধাগুলোর অন্যতম হচ্ছে পাঠকের ব্যক্তিগত রুচি-বোধ। ‘রুচি’ শব্দটি সাধারণত দ্বিবিধ অর্থে প্রযুক্ত হয়ে থাকে — ভালোলাগা-মন্দলাগা এবং বিচারশক্তি। ভালো লাগার এই সহজাত প্রবৃত্তির মতো বোধটির পেছনে কোনো প্রায় ক্ষেত্রেই কোনো যৌক্তিক কারণ থাকে না।
কেন ‘ভালো লাগে’ অথবা ‘ভালো লাগে না’ — সাহিত্যপাঠকের মনে যখন এই প্রশ্নের উদয় ঘটে, তখন বুঝতে হবে যে, পাঠক তাঁর স্বাভাবিক সাহিত্যানুরাগের ধরন নিয়ে খুব-একটা সন্তুষ্ট নন, বুদ্ধিবৃত্তির আরও চর্চার মাধ্যমে তিনি স্বীয় রুচিকে যাচাই করে নিতে আগ্রহী। এ-ভাবেই ক্রমশ রুচি মার্জিত হয়ে ওঠে। রুচির এই ক্রমাগত সচেতন পরিমার্জনের কারণেই আমাদের বাল্যকালের ভালো-লাগা বিষয়ের প্রতি পরিণত বয়সে আমরা আকর্ষণ হারিয়ে ফেলি। শিক্ষা, যুগবিশেষের সমকালীন চিন্তার গতি-প্রকৃতি, প্রচলিত সমালোচনা-সাহিত্য আর মহৎ সাহিত্যকর্মের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয় সাহিত্যপাঠকের রুচির ওপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। এ-ক্ষেত্রে যে বিষয়টি বিশেষভাবে স্মরণ রাখা প্রয়োজন — তা হচ্ছে, যুগধর্মের প্রভাব সর্বদা কল্যাণদায়ক হয় না, অবস্থা-বিশেষে শিল্প-অনুরাগী ও শিল্পভোক্তাকে বিপথেও পরিচালিত করে থাকে। চিত্রশিল্প, সাহিত্য ও সংগীতের ইতিহাসে এর দৃষ্টান্ত একেবারে বিরল কোনো ঘটনা নয়। আঠারো শতকে শেক্সপিয়রের মর্মভেদী ট্র্যাজেডি ’কিং লিয়র’ -কে এক চরম হাস্যকর কমেডিতে রূপান্তরিত করে মঞ্চায়নের পরে দেখা গেল, সেটি উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের বিপুল প্রশংসায় ধন্য !
সমষ্টিগত রুচি যখন এ-পর্যায়ের বিভ্রান্তির শিকার হয়ে যায় সেখানে সাধারণ শিল্পভোক্তা অতি সহজেই পাকচক্রে পড়ে খাবি খেতে থাকেন। এ ধরনের একটি পরিস্থিতিতে জনাব সেলিম মোরশেদ গড্ডলিকাপ্রবাহে ভেসে যেতে দৃঢ়ভাবে অস্বীকৃতি জ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রতিভূ ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষমতা দেখিয়ে যাচ্ছেন।
কয়েক বছর আগে আমাদের দেশে যখন এক তরুণী কর্তৃক পিতৃ-মাতৃ-হত্যার ঘটনাটি ঘটে — তার কয়েকদিন পরে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎকালীন সময়ে, ঘটে যাওয়া ঘটনাটি এবং পিতৃ-মাতৃ-হন্ত্রী তরুণীটির মানসিক গঠনের বিশ্লেষিত রূপ — এ দুটোর সংশ্লেষ-সাধনে তাঁকে বেশ উদ্বেলিত দেখছি। বিষয়টি নিয়ে আমার ব্যক্তিগত ধারণা জানানোর পরে তিনিও প্রায় কাছাকাছি পর্যায়ের উপলব্ধির কথা জ্ঞাপন করলেন। মানসিকভাবে তিনি বিষয়টিতে যথেষ্ট তাড়িত হয়েছিলেন বলে আমার মনে হয়েছে — তাঁকে এ-কথা বলায় তিনি বিষয়টি নিয়ে লিখতে চান বলে জানিয়েছিলেন। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে তাঁর লেখা আমরা পেয়েছি।
১৯৪৭-পূর্ববর্তী ও ১৯৪৭-পরবর্তী সময়কালে ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন স্তরে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলির প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ; বাঙালি মুসলমানের উন্মেষের বা উথ্থানপর্বের প্রাথমিক পর্যায়ের অবস্থা উপলব্ধির ক্ষেত্রে বিদ্যমান অসঙ্গতিগুলোর পূর্বাপর উদঘাটন-প্রচেষ্টা; উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষ করে বঙ্গীয় ভূ-খণ্ডে আরব উপদ্বীপ এবং তদসংলগ্ন অঞ্চলগুলো থেকে আগত মুসলিম ধর্মপ্রচারকদের চরম প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবেলা করেও স্বীয় স্বীয় কর্মপদ্ধতিতে নিবিড়তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকার সফল কর্মোদ্যোগের সফলতা অনুসন্ধান; এই অঞ্চলে বামপন্থী রাজনীতির গতি-প্রকৃতি অনুসরণ — এই সমস্ত বিষয় নিয়ে জনাব সেলিম মোরশেদ-এর সঙ্গে নিবিড় আলোচনাপর্বের প্রতিটি পর্বে তাঁর জানা-বোঝা, স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি ও পাণ্ডিত্যের প্রকাশ আমার মননকে আলোড়িত করেছে — আমার কাছে এটা প্রতিভাত হয়েছে যে, সেলিম মোরশেদ শুধু লেখা লিখতে হবে বলেই হাতে কলম ধরেন — বিষয়টি মোটেও সে-রকম কিছু নয়, কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা থেকেই তিনি লিখতে উদ্যোগী হয়ে থাকেন।
ঢাকার পিজি হাসপাতালের বটগাছের তলায় বাঁধানো চত্বরে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পারস্পরিক মতবিনিময়ের সময়গুলো ভবিষ্যতে হয়তো অধরা থেকে যাবে — কিন্তু জনাব সেলিম মোরশেদ-এর সঙ্গ ও সাহচর্যে যে সমৃদ্ধ সঞ্চয় অর্জিত হয়েছে, তা এক জীবনকালের প্রেক্ষিতে মোটেও ফেলনা কিছু নয়।