একথা সেকথা
সৈয়দ সাজ্জাদ আহমেদ
মুজিব মেহদীর লেখা থেকে জানলাম সাজ্জাদ প্রয়াত হয়েছেন কিছু কাল আগে। সৈয়দ সাজ্জাদ আহমেদ। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে। তাহলে এই কারণেই তার ফোন আসছে না বেশ কিছু দিন হয়ে গেল। মাঝে-মাঝেই ফোন দিয়ে কথা বলতেন। বলবার কথাগুলোর মধ্যে একটি বিষয় ছিল তার বাড়িতে দুপুরে আহারের নিমন্ত্রণ। নানা পদের ভর্তা দিয়ে খাওয়াবেন বলে তিনি জানিয়েছিলেন। কিছুটা এড়িয়ে যাবার ধরনে, যাচ্ছি-যাব বলে উত্তর দিতাম। তার নিমন্ত্রণ রাখা হলো না আর।
নিমন্ত্রণের আরেকটা কারণ ছিল, তার আর আমার লেখা পরস্পর পাঠ করব, তার এমনতর বাসনা। তার বক্তব্য ছিল, এ অঞ্চলে কেবল তিনি আর আমিই সুফি ধারায় কবিতা লিখি। আমি অবশ্য আমার অভিমত জানিয়েছি তাকে যে আরও অনেকের কবিতায় সুফি ভাবধারা বিভিন্ন মাত্রায় রয়েছে।
তিনি একবার প্রস্তাব দিলেন, ময়মনসিংহে জয়নুল সংগ্রহশালার অতিথিভবনে একরাত কাটিয়ে আসবার। বললেন, আহারাদির আয়োজন তিনিই করবেন, তিনি পুরোপুরি নিরামিষাশী, আমার জন্য মাংসের আয়োজন করবেন। তার শকট আছে তাই ভ্রমণটাও আরামেরই হবে। প্রস্তাবটি লোভনীয় হলেও সে ব্যাপারেও তত জোরালো উৎসাহ দেখানো সম্ভব হয় নাই।
তার সাথে যোগাযোগের অনুঘটক কবি জহির হাসান। জহির একদা যোগাযোগ করে বলল, সাজ্জাদ নামে একজন সুফিধারায় কবিতা লেখেন, আমার সাথে যোগাযোগ করতে চাইছেন। জহির জানতে চাইছিল তাকে আমার নম্বর দেবে কি না। আমি দিতে বললাম।
যোগাযোগ করে তিনি তার সুফি ভাবধারায় সন্নিহিতির কথা জানালেন। তার বই পাঠাবেন বলে ঠিকানা চাইলেন। আমার বইও পড়তে চাইলেন। তার বই পড়ে দেখলাম তার একেবারে নিজস্ব একটা শৈলী আছে, যা প্রচলিত বাংলা কবিতার আর কারো মতো নয়। পরে তার আরও কয়েকটি বই বের হলো, সবই পাঠিয়েছিলেন। তাকে জানিয়েছিলাম, তার লেখার নিজস্বতা থাকলেও বৈচিত্রহীনতা রয়েছে, এই বিষয়ে আরেকটু সচেতন হলে বোধ হয় ভালো হয়। তিনি উত্তরে জানিয়েছিলেন, তাকে দিয়ে যা লেখানো হয় তিনি কেবল তাই লেখেন।
যোগাযোগ করে তিনি তার সুফি ভাবধারায় সন্নিহিতির কথা জানালেন। তার বই পাঠাবেন বলে ঠিকানা চাইলেন। আমার বইও পড়তে চাইলেন। তার বই পড়ে দেখলাম তার একেবারে নিজস্ব একটা শৈলী আছে, যা প্রচলিত বাংলা কবিতার আর কারো মতো নয়। পরে তার আরও কয়েকটি বই বের হলো, সবই পাঠিয়েছিলেন। তাকে জানিয়েছিলাম, তার লেখার নিজস্বতা থাকলেও বৈচিত্রহীনতা রয়েছে, এই বিষয়ে আরেকটু সচেতন হলে বোধ হয় ভালো হয়। তিনি উত্তরে জানিয়েছিলেন, তাকে দিয়ে যা লেখানো হয় তিনি কেবল তাই লেখেন। নিজেকে একেবারেই একটা লিখবার মাধ্যমমাত্র করে তুলতে পারাটা অল্প মানুষের পক্ষেই সম্ভব। তার লেখায় কোনো যতিচিহ্নের ব্যবহার নাই, একেবারে শেষে একটি দাঁড়ি ছাড়া। একরকম চৈতন্যপ্রবাহে রচিত তার ছোট ছোট কবিতাবলি।
তার সাথে দেখা একবারই হয়েছিল, বছর তিনেক আগে সম্ভবত, একুশের বইমেলায়। তার একটি নিজস্ব প্রকাশনালয় ছিল, যেখান হতে কেবল তার নিজের বই বের হতো। আমাকে অবশ্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাকে পাণ্ডুলিপি দেবার জন্য। তার বই সাধারণত বইয়ের দোকানে পাওয়া যেত না। তার একটা পাঠকতালিকা ছিল, তিনিই বই পাঠাতেন।
তিনি এত দ্রুত পার্থিবতা ঘোচাবেন তা ভাবি নাই। ব্যতিক্রমী মানুষকে স্মৃতি একটু আলাদাভাবে ধরে রাখে। তার কথা ভেবে মন একটু কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে।
তার বইগুলো কোনটা কোথায় আছে চট করে খুঁজে বের করা কঠিন। তবু খুঁজতে গিয়ে কাকতালীয়ভাবে এই দেবীপক্ষে যে বইটা পেলাম তার নাম ‘মা দুর্গা’। বইটির একটি কবিতা :
‘আমি তোমাকে ভালোবেসেছি হে মা দুর্গা তোমাকে প্রেমে হৃদাসনে পাওয়ার জন্য করেছি দুনিয়া ত্যাগ যৌনতায় অনিমগ্ন মন কেননা তোমাকে পেতে হলে মন পবিত্র করতে হয় হে বন্ধু মোর করো খাদ্যেও বিচার তবেই না ভক্তের চিন্ময় শরীর যাতে মা আমি নিজেই দেখতে হয় ভাবতে হয় পুরুষ শরীরটাকে নারীর বদন।’
৯.১০.১৮