বিনোদন নাকি বক্তব্য (পর্ব-৩)
বিনোদন নাকি বক্তব্য (পর্ব-২) এর পর থেকে-
মানুষ যাতে বিনোদিত হয়, তাতেই আকৃষ্ট হয়। এটা মানুষের জন্মগত স্বভাব। এখন দেখা যাক, মানুষ কিসে কিসে বিনোদিত হয়। প্রথমেই খারাপ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলি। কারণ, সেটা আপনাদের সহজেই বোঝাতে পারব। ভালো ভালো বিষয় বা কথা বুঝবার ক্ষেত্রে আমরা বোধ হয় জাতিগতভাবেই কিছুটা ধীরগতিসম্পন্ন। জাতি বলতে আমি অবশ্য মানবজাতির কথা বলেছি, শুধু বাঙালি জাতির কথা বলিনি।
যাহোক, প্রথমেই আলোচনা করা যায় মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা নিয়ে। প্রকাশ্যে স্বীকার করতে না চাইলেও উঠতি বয়সের তরুণদের কাছে এটা খুবই আকর্ষণীয় একটা বিনোদন। আর তাই বাংলা বা হিন্দি, এমনকি কিছু কিছু ইংরেজি সিনেমাতে নায়িকাকে উত্ত্যক্ত করাটাকে নায়কের পৌরুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অনেক সিনেমায় তো পর্দায় নায়কের ফার্স্ট এন্ট্রিই হয় নায়িকাকে উত্ত্যক্ত করার দৃশ্য দিয়ে এবং হলভর্তি দর্শক বিষয়টাকে উপভোগ করে। মজার বিষয় হলো, মহিলা দর্শকেরাও বিষয়টাতে বেশ আমোদিত হয়। মুচকি হেসে বলে, ‘ছেলেরা সব সময়ই এ রকম হ্যাংলা।’ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিখ্যাত হিন্দি সিনেমা ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’তে শাহরুখ খান কাজলকে যেভাবে ক্রমাগত উত্ত্যক্ত করতে থাকে অথবা ‘দিওয়ানা মুঝসা নেহি’ সিনেমাতে আমির খান যেভাবে মাধুরীর পেছনে লেগে থাকে, তাতে তো মহিলা দর্শকদের এই সিনেমাগুলোকে বয়কট করা উচিত ছিল। কিন্তু করেছে কি?
আরেক বিখ্যাত ছবি মাধবন আর দিয়া মির্জার ‘রেহেনা হ্যায় তেরে দিল মে’। সেখানে তো মাধবনের ভিলেন হওয়ার কথা। সে মিথ্যা পরিচয়ে একটা মেয়ের সাথে প্রেম করছে। অথচ আজ পযর্ন্ত আমি কোনো মেয়ে দর্শককে পেলাম না যে মাধবনকে খারাপ ভাবতে রাজি আছে। এই নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বরং আমি অনেকে মেয়ের চক্ষুশূল হয়েছি। মোদ্দা কথা হলো, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করাটাকে নারী-পুরুষ উভয়েই নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত বিনোদন হিসেবেই বিবেচনা করে। যদিও তা মাত্রা ছাড়ালে নারী নির্যাতনে পরিণত হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা বা পিছে পিছে ঘোরাটাকে পছন্দ করি না। কারণ, বিষয়টা একজন পুরুষ হিসেবে আমার ইগোতে আঘাত করে। তবে বন্ধুদের সাথে ইয়ার্কি-ফাজলামি বা প্রেমিকা অথবা বউয়ের সাথে খুনসুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়।
পরচর্চা বা পরনিন্দা আমাদের আরেকটি প্রিয় বিনোদন। জানি অনেক পুরুষই সমস্বরে বলে উঠবেন, এটা তো মেয়েদের ব্যপার। সত্যিই কি? পরচর্চা কি শুধুই মেয়েদের ব্যপার? একটু ভাবুন তো, ট্রাফিক জ্যামে যখন আটকা পড়েন, অফিসে যেতে বা অফিস থেকে ফিরতে যখন দেরি হয়ে যায়, তখন গরমে ঘেমে-নেয়ে বাসের ভেতরে বসে আপনারা, পুরুষ মানুষেরা কী করেন? উত্তর একটাই। সবাই মিলে দেশের রাজনীতিবিদদের গুষ্টি উদ্ধার করেন। রাস্তায় কেন গর্ত বা রাস্তার পাশে কেন ময়লাভর্তি বড় বড় লোহার বাক্স পড়ে থাকবে, সেই আলাপগুলো অবশ্যই যুক্তিসংগত। কিন্তু অমুক মন্ত্রী কেন এই বয়সে বিয়ে করল অথবা তমুক মহিলা নেতার কেন এত সাজগোজের বাতিক? এই আলাপগুলো নিঃসন্দেহে পরচর্চা ছাড়া আর কিছুই নয়। এমনকি নেতাদের দুর্নীতির কী শাস্তি হওয়া উচিত, সেই বিষয়ে যে মার মার কাট কাট আলোচনা হয় বাসে বা চায়ের টেবিলে, আমার তো মনে হয় সেটাও আমরা বিনোদিত হওয়া জন্য করি। যদি দেশের পরিবর্তন আনার জন্যই এই আলাপগুলো হতো, তবে সেগুলো অবশ্যই কেবল চায়ের কাপ আর বাসের সিটের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকত না।
প্রথমেই আলোচনা করা যায় মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা নিয়ে। প্রকাশ্যে স্বীকার করতে না চাইলেও উঠতি বয়সের তরুণদের কাছে এটা খুবই আকর্ষণীয় একটা বিনোদন। আর তাই বাংলা বা হিন্দি, এমনকি কিছু কিছু ইংরেজি সিনেমাতে নায়িকাকে উত্ত্যক্ত করাটাকে নায়কের পৌরুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অনেক সিনেমায় তো পর্দায় নায়কের ফার্স্ট এন্ট্রিই হয় নায়িকাকে উত্ত্যক্ত করার দৃশ্য দিয়ে এবং হলভর্তি দর্শক বিষয়টাকে উপভোগ করে। মজার বিষয় হলো, মহিলা দর্শকেরাও বিষয়টাতে বেশ আমোদিত হয়। মুচকি হেসে বলে, ‘ছেলেরা সব সময়ই এ রকম হ্যাংলা।’
পরকীয়া বা অবৈধ প্রেম, খুবই জনপ্রিয় আরেকটি বিনোদন। সিনেমার পর্দায় তো বটেই, অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তিজীবনেও কথাটা সত্য। সেদিন এক বিবাহিত চিত্রপরিচালককে বলতে শুনলাম, ‘আমার নায়িকাদের প্রতি তেমন কোনো আগ্রহ নেই। আমার সিনেমার নায়িকাও বিয়েশাদি হয়ে যাওয়া মেয়ে। কোনো ঝুটঝামেলা নেই। তবে শুটিং শেষে নায়িকা আমারে একটা চুমু দিছিল। এখন, নায়িকা চুমু দিলে তো সেটা ফেরত দেওয়া যায় না।’ এখানে অবশ্যই ব্যাখ্যা বা মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
ভারতীয় একটা হিন্দি সিরিয়ালের নাম বলেন, যেখানে কোনো না কোনোভাবে পরকীয়া বা অবৈধ প্রেম নেই। বিখ্যাত সিনেমাগুলোর মধ্যে রাজেশ খান্নার ‘আরাধনা’, যার পুরো ঘটনাটাই বিবাহবহির্ভূত দৈহিক সম্পর্কের ওপরে দাঁড়ানো। কিছুদিন আগের প্রীতি জিনতার ‘কেয়া কেহে না’ সিনেমাতে কীভাবে একটি মেয়ে বিবাহিত না হয়েও একটি বাচ্চাকে জন্ম দিল, সেই কাহিনি দেখে অনেক মেয়েকে আমি বলতে শুনেছি, ‘নায়িকার স্ট্রাগলটা, সমাজের সাথে লড়াইটা, ভালো লাগছে।’ ছেলেদের আফসোস করে বলতে শুনেছি, ‘ইন্ডিয়াতে ওরা কতটা অ্যাডভান্স। আমাদের দেশে এ-জাতীয় সিনেমা বানানো সম্ভব না।’ সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ায় পরকীয়াকে আইনগতভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আমাদের দেশে বা ভারতে এখনো পরকীয়া আইনগত বা সামাজিকভাবে স্বীকৃত বিষয় নয়। হলে আলোচনাটা ভিন্ন হতো। যাহোক, পরকীয়া বা অবৈধ প্রেম যে আমাদের বিনোদিত করে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
যাহোক, অনেক খারাপ খারাপ উদাহরণ দিলাম। যদিও বিনোদনের এমন আরও অনেক নেতিবাচক উদাহরণ দেওয়া যায়। তারপরও এবার ভালো কিছু উদাহরণ দিই। প্রথমেই আসা যাক অন্যায়ের প্রতিবাদে। হাসছেন? ভাই, জীবনের ইতিবাচক দিকগুলোকে খুব ছোট করে দেখা আমাদের বদভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। কয়েকটা সংখ্যা বলি, তাতেই বুঝবেন অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে আমরা কী পরিমাণ আনন্দ বোধ করি। ৫২, ৭১, ৯০ জীবন দিয়ে হলেও আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি। সাম্প্রতিক সময়ের গণজাগরণ মঞ্চ এবং হেফাজতে ইসলাম উভয়েই নিজ নিজ মতাদর্শ অনুযায়ী অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্যই মাঠে নেমেছিল। আমরা অপরাধীদের পতন দেখতে এত পছন্দ করি যে শতকরা ৯৯ ভাগ সিনেমার পরিসমাপ্তিতেই অত্যাচারী ভিলেনের পতন হয় নায়ক বা জনতার হাতে। আর এই পতনের দৃশ্য চলাকালীন সময়ে সিনেমা হলে দর্শকদের যে কী উচ্ছ্বাস, তা যারা দেখছেন, তারাই জানেন।
সংগীত নিয়ে আলাদা করে তেমন কিছু বলার নেই। সুস্থমস্তিষ্কের এমন কোনো মানুষ বোধ হয় নেই যে সংগীত পছন্দ করে না। বেশির ভাগ তরুণকেই কানে হেডফোন লাগিয়ে ঘুরতে দেখা যায় এই সংগীতের কারণেই এবং বিশ্বে অনেক সিনেমা আছে, যা শুধু সংগীতের কারণেই বিখ্যাত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ বাংলাদেশের ‘মনপুরা’ আর ভারতের ‘আশিকি ২’।
ভালোবাসা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিনোদন। অনেকেই বিষয়টাকে এভাবে উপস্থাপন করাতে বিরক্ত বোধ করতে পারেন। কিন্তু এ কথা তো সত্য, জীবনে যখন ভালোবাসা আসে, আমাদের মনে আনন্দের মাত্রাও বেড়ে যায়। এখানে একটা কথা না বললেই নয়, পরকীয়া খুব সহজেই সিনেমার পর্দায় দর্শককে আকৃষ্ট করতে পারে। কারণ, তা দেখানো সহজ। অভিনয় বা টেকনিক্যাল ক্ষেত্রে সমস্যা থাকলেও শুধু আপত্তিকর দৃশ্যগুলোর কারণেই মানুষ তা পছন্দ করে। কিন্তু বিশুদ্ধ ভালোবাসা দর্শককে অনেক অনেক বেশি আবেশিত করতে পারে, যদি তা ভালোভাবে চিত্রায়ণ করা যায়। শুধু এই সমস্যাটির কারণে অনেক অদক্ষ পরিচালক বিশুদ্ধ প্রেম বাদ দিয়ে পরকীয়াকে তাদের সিনেমার বিষয়বস্তু হিসেবে গ্রহণ করে।
লেখাটা লম্বা হয়ে যাচ্ছে, তাই আর উদাহরণ দিতে চাই না। সংক্ষেপে বলি, বন্ধুর জন্য আত্মত্যাগ, জীবনে সফলতার জন্য সংগ্রাম। ব্যর্থ জীবন থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা। সন্তানের জন্য মা-বাবার ত্যাগ, কোনো প্রতিজ্ঞা রাখার জন্য লড়াই ইত্যাদি অনেক অনেক বিষয়ই আছে, যা দেখলে আমরা আনন্দিত হয়। আমাদের চোখ সজল হয়ে ওঠে। এই আনন্দে হেসে ওঠা বা কেঁদে ওঠাটাই চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে বিনোদন। হয়তো বাস্তব জীবনেও তাই।
অনেকেই বক্তব্য আর বিনোদনকে মুখোমুখি দাঁড় করাতে চান। আমার সেখানে ঘোর আপত্তি আছে। কদিন আগে এক বন্ধুপ্রতিম পরিচালকের সাথে কথা হচ্ছিল। সে প্রশ্ন আমাকে করেছিল, ‘সার্গেই আইজেনস্টাইনের ‘ব্যাটেলশিপ পটেমকিন’ নিঃসন্দেহে বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় একটি সিনেমা। সেখানে তো পুরোটাই বক্তব্য। এখানে বিনোদন কোথায়?’ উত্তরে বলেছিলাম, ‘বর্জুয়াদের দ্বারা নিপীড়িত কিছু মানুষ জোটবদ্ধ হয়ে অত্যাচারী শাসকের পতন ঘটাচ্ছে। সেই সময়কার রাশিয়ার মানুষদের কাছে এর চেয়ে বড় বিনোদন আর কী হতে পারে?’ আগেই তো বলেছি, সিনেমায় ভিলেনের পতন দেখতে দর্শক ভীষণ পছন্দ করে। ব্যাটেলশিপ পটেমকিনেও তো তা-ই ঘটেছে। কী এক অজ্ঞাত কারণে এই সিনেমাটাকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আমরা আমাদের বিবেচনাশক্তিকে ভিন্ন মার্গে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। হ্যাঁ, এ কথা অনস্বীকার্য যে এর শিল্পমান অতি উন্নত হওয়ায় সিনেমাটি ডিরেক্টরস বাইবেলে পরিণত হয়েছে। কিন্তু বিনোদন বিষয়টি যে ব্যাটেলশিপ পটেমকিনেও রয়েছে, এটা অস্বীকার করবার কোনো অবকাশ নেই।
আমি অশ্লীলতা বা উদ্ভট সিনেমার পক্ষে নই। বক্তব্যধর্মী সিনেমা যে ব্যবসা সফল হয়, তার ভূরি ভূরি উদাহরণ আছে। তবে সেটা কখনোই বিনোদন ছাড়া হতে পারে না। বিনোদন নেই তো সিনেমার সফলতা নেই। আর সিনেমার সফলতা না থাকলে আপনার মহামূল্যবান বক্তব্যরও কোনো ভাত নেই।
সম্প্রতিক সময়কার ভারতীয় একটি সুপারহিট সিনেমায় বলা হয়েছিল, সিনেমা মানে হলো এন্টারটেইনমেন্ট, এন্টারটেইনমেন্ট, এন্টারটেইনমেন্ট। কথা সত্য। সিনেমায় যদি বিনোদন না থাকে, তবে সেই সিনেমা কেউ দেখবে না। আর যদি মানুষ সিনেমাটা না-ই দেখল, তবে আপনার বলা মহাদামি বক্তব্যটির কী বা দাম থাকল? মানুষ তো আপনার কথা জানতেই পারল না। রাজকুমার হিরানি যদি ‘পুঁথিগত বিদ্যা নয়, বরং মানসিক বিকাশ ঘটাও’ বলে রসকষহীন একটা সিনেমা বানাত, তবে সেই অমৃত বচনের প্রচার কতটুকু হতো? ‘থ্রি ইডিয়েটে’ বিনোদন আছে, তাই মানুষ তা দেখেছে এবং সিনেমার ভেতর দিয়ে তার বক্তব্যটাও উপলব্ধি করেছে।
আরেকটি বিষয় অনস্বীকার্য। আর তা হলো, ব্যবসা। একটা সিনেমায় লাখ লাখ বা কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়। যারা করে, তারা আলু-পটলের ব্যবসা করতে পারত। তাতে তাদের মুনাফাও হতো। তা না করে সিনেমায় পয়সা বিনিয়োগ করে তারা কী পাপ করেছে যে তাদের আর্থিক লোকসানকে মাথা পেতে নিতে হবে? যে পুরুষ রোজগার করতে পারে না, সংসারে তার কোনো দাম নেই। যে ঘোড়া দৌড়াতে পারে না, তাকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়। যে গাভি দুধ দেয় না, তাকে হয় বিক্রি করা হয়, নয়তো জবেহ করে রান্না করা করা হয়। ঠিক একইভাবে যে সিনেমা রোজগার করতে পারে না, তার স্থান হয় প্রযোজকের তালাবদ্ধ আলমারির এক কোণ এবং সেটাকে প্রযোজক সংগত কারণেই তার জীবনের কুফা হিসেবেই বিবেচনা করেন।
আমি অশ্লীলতা বা উদ্ভট সিনেমার পক্ষে নই। বক্তব্যধর্মী সিনেমা যে ব্যবসা সফল হয়, তার ভূরি ভূরি উদাহরণ আছে। তবে সেটা কখনোই বিনোদন ছাড়া হতে পারে না। বিনোদন নেই তো সিনেমার সফলতা নেই। আর সিনেমার সফলতা না থাকলে আপনার মহামূল্যবান বক্তব্যরও কোনো ভাত নেই।
সিনেমা হলো সেলুলোজ বা ডিজিটাল ফরমেটে মানুষকে একটি গল্প বলা। অর্থাৎ সিনেমায় অবশ্যই একটি কাহিনি থাকবে। আর সেই কাহিনিটি অবশ্যই বিনোদনময় হতে হবে এবং সিনেমাকে বিনোদনময় করে তুলতে গেলে যার প্রয়োজন তা হলো শিল্প। আশা করি নতুন করে বলার দরকার নেই যে কোনো কিছুকে সাজিয়েগুছিয়ে উপস্থাপন করার অপর নামই হলো শিল্প। অর্থাৎ কাহিনিতে বিনোদন থাকবে। বিনোদনকে ফুটিতে তুলতে শিল্প থাকবে। আর এ দুটো থাকলেই দর্শকপ্রিয়তা থাকবে। দর্শকপ্রিয়তা থাকলেই ব্যবসা থাকবে। এখন, এর মাঝ দিয়ে আপনি যদি আপনার শিক্ষামূলক বা সমাজসচেতনতামূলক বক্তব্যটুকু ঢুকিয়ে দিতে পারেন তো সোনায় সোহাগা।
প্রসঙ্গত একটা কথা বলি। অনেকেই মনে করেন মোনাজাত নামাজের অংশ। কথাটা সত্য নয়। মোনাজাত বা আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা আপনি যেকোনো সময়ই করতে পারেন। কিন্তু অন্য সময়ের চেয়ে নামাজ পড়ার সময় আল্লাহ তায়ালা আপনার প্রতি বেশি সদয় থাকেন। সুতরাং সে সময় আল্লাহ তায়ালা আপনার প্রার্থনা বা মোনাজাত বেশি করে শুনবেন, এটাই স্বাভাবিক। তাই নিয়মিত নামাজ শেষেই মোনাজাত করা হয়। ঠিক একইভাবে দর্শক যখন আমোদিত, উত্তেজিত, উদ্বেলিত, তখন যদি আপনার সচেতনতামূলক বক্তব্যটুকু তাদের সামনে তুলে ধরা যায়, নিঃসন্দেহে তারা তা উপদেশ বা পরামর্শ বিবেচনায় ফিরিয়ে দেবে না। অর্থাৎ যারা সদুপদেশ শুনতে রাজি, তারা তো বটেই, যারা শুনতে রাজি নয়, তারাও নিজের অজান্তে আপনার বক্তব্যটুকু নির্দ্বিধায় গিলে ফেলবে।
তো, একটি সিনেমায় অবশ্যই শিল্প, বিনোদন ও ব্যবসা থাকবে। অথবা শিল্প, বিনোদন, ব্যবসা ও সচেতনতামূলক বক্তব্য থাকবে। এখন আপনি বক্তব্যসহ সিনেমা বানাতে চান, নাকি বক্তব্য ছাড়া, সেটা আপনার অভিরুচি। কিন্তু কোনোভাবেই আপনি শিল্প ও বিনোদনকে বাদ দিতে পারেন না। অবশ্য আপনি যদি ‘দর্শক দেখলে দেখবে, না দেখলে না দেখবে, আমার যা ইচ্ছা, আমি তা-ই বানাব’ গোছের উন্নাসিক পরিচালক হন তো ভিন্ন কথা।
সমাপ্ত
আরও পড়ুন-
● বিনোদন নাকি বক্তব্য (পর্ব-১)
● বিনোদন নাকি বক্তব্য (পর্ব-২)