রেশমপোকা ও অন্যান্য গান
রেশমপোকা, দেখো আকাশে পচন ধরেছে। এখন থেকে আমরা আর আকাশে তাকাবো না। যে আকাশ মানুষের রক্তে হয়ে উঠেছিলো লাল, সূর্য পাশে দাঁড়িয়েছিলো ঘুমরহিত পাহারাদার। সূর্য পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আকাশ তাই পচে উঠছে ক্রমে, রক্তের রং হয়ে যাচ্ছে কালো। আমরা এখন মাটিতে তাকাবো। মানুষ ঘুমিয়ে আছে, সূর্য ছাই হয়ে গেছে। মানুষ কারা? মানুষের মধ্যে আছে মজুর। মানুষের মধ্যে আছে কৃষক। মানুষের মধ্যে আছে শ্রমিক। মানুষের মধ্যে আছে স্বপ্ন। মানুষের মধ্যে আছে স্মৃতি। আর মানুষ গভীর ঘুমে এখন। গভীর ঘুমে মানুষ স্বপ্ন দেখে না। চলো তাদের ঘুম ভাঙাই, আমরা ঘুমিয়ে পড়ার আগে। তাদের ঘুম ভাঙলে তারপরে আমরা ঘুম যাবো দীর্ঘ শরীর টেনে।
রেশমপোকা, দেখো আকাশে পচন ধরেছে। এখন থেকে আর আমরা আকাশ দেখবো না—মাটিতেই আঁকবো অন্য এক পূর্ণ আকাশ।
রেশমপোকা, তুমি আমার কবিতার মধ্য থেকে বের হয়ে এসে জড়িয়ে রেখেছো সঘন পাতার বন। আমাদের বিহার এই বন, এই মাঠ, আর দূরের বাদাড় শেষ করে নদী মধ্যে কচুরিপানার ফুল হবে। একদিন আমরা নদীর গন্ধ পেয়েছিলাম হঠাৎ মৃত্যুর আগে। তুমি নিশ্বাস বুনেছিলে। তোমার নিশ্বাসে ঢেকে গেছে প্রাচ্যের সকল আকাশ। তুমি নিশ্বাসের ভিতর আমাকে নিলে মখমল শয়নজুড়ে গান এসে গলে গড়িয়ে গেছে উত্তরের দিকে। সেইখানে তুমি একটা ছোটোপাখি, তুমি দুইটা ছোটোপাখি। তোমার হরীতকী-রং চঞ্চুতে কাঁপে সময়, কাঁপে সময়ের লেজঝোলা পাখি। মা কোনোদিন বলেছিলো, ‘আয়রে পাখি লেজঝোলা, খোকন নিয়ে কর খেলা।’
রেশমপোকা, তুমি চোখ বেঁধে দিলে জাফরানের ছায়ায় ঘুরে আসি শততন্ত্রী বীণার দেশ। জাফরান রং খানিকটা তোমার সিঁথিতে লেগে গিয়েছিলো জেনেছি। তোমার কথা শুনতে পাই না কিছু। শিরার ভিতর কেবল কম্পন শুনি। ফুলদানিতে ফুলের বদলে তৃষ্ণা রেখে ঘুরে বেড়াই। ব্যথার পাহাড়, আকাশ আমার ধোঁয়ার পায়ে নাচে। আর তোমার চুলে জ্বলে আছে রাত। তোমার চুলেই লুকোনো প্রভাত। সেই প্রভাত বের করে ছড়িয়ে দেবো মাটি ও শস্যের কাছে। তুমি মাটিতে বুনবে রেশমের ধান, বিলম্বিত লয় একটি দিঘল গান।
রেশমপোকা, দেখো আকাশে পচন ধরেছে। এখন থেকে আর আমরা আকাশ দেখবো না—মাটিতেই আঁকবো অন্য এক পূর্ণ আকাশ।