:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
মোহাম্মদ জসিম

কবি, গল্পকার

রাজনীতি ও অন্যান্য
প্রচ্ছদ: রাজীব দত্ত

রাজনীতি ও অন্যান্য

রাজনীতি

ঘুম থেকে উঠে মিনিট দশেক হাঁটাও হলো, অথচ কেমন যেন লাগছে। হালকা লাগছে, কি যেন নেই কি যেন নেই একটা ভাব।
তারপর হঠাৎই আবিষ্কার করে বসলো আসল ঘটনা। নেই, সত্যি সত্যিই নেই!
প্রিয় লেজটা! আহা! নেই!
টিকটিকিটি বিশ্বাসই করতে পারছে না তার ফর্সা, প্রায় ছাইরঙের লেজটি আর নেই। ঘুমের মধ্যে চুরি হয়ে গেছে।
হারানো লেজের দুঃখ নিয়েই সে ফিরোজা রঙের গোটা দেয়ালটি এক দৌড়ে পার হয়ে যায়। সিলিংয়ে হাঁটে, দরজা ও জানালার কবাট ধরে ছোটাছুটি করে।

এটা তৃতীয় দিনের ঘটনা। আগের দুদিনে আরো আটজন টিকটিকির লেজ চুরি হয়েছে। বিষয়টা উদ্বেগের। অসম্মানেরও। নিজের লেজটিকে সামলে রাখতে না পারাটা নিশ্চয়ই সম্মানের নয়!

নিজের লেজই যার চুরি হয়ে যায় সে কি করে বউ-বাচ্চার দেখভাল করবে! ওয়াক থু! বউ চলে যায় কারো কারো।
কাপুরুষ কোথাকার! লেজ ছাড়া সামনে দাঁড়াতে লজ্জা করে না? প্রেমিকা চলে যায় কারো কারো।
লেজ নাই পণ্ডিত… হাহাহা। কাউকে কাউকে সইতে হয় বিস্তর উপহাস।

অষ্টম দিনের গল্পটা ভিন্ন। গোটা টিকটিকি সমাজেরই মাথা হেট। ঘুমের মধ্যে লেজ চুরি গেছে সকলের।

নবম দিনে তারা গেল মাকড়সার কাছে। মহান মাকড়সা, যিনি জাল পেতে পোকা ধরেন। সেইসব পোকার একটা অংশ যায় টিকিটিকির পেটে। মাকড়সা বুদ্ধিমান, হাজার বছর ধরে টিকটিকি সমাজ ভরসা করে এসেছে তার ওপর।

সবিস্তারে ঘটনা শুনে মাকড়সা অবাক।
শোন ভাইয়েরা, লেজ হয়তো আবার গজাবে, কিন্তু হারানো সম্মান আর ফিরে আসবে না। এখন থেকে সতর্ক থাকো, যেন এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় আর। যতদিনে না চোর ধরা পরে ততদিনে আমি দুচোখের পাতা এক করবো না। নিশ্চিন্তে ঘুমাও তোমরা। মাকড়সা বললো।

ধন্য ধন্য রব উঠলো, শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে এলো টিকটিকি সমাজের। চিরকৃতজ্ঞ তারা।
তবু, সন্দেহ বাতিকগ্রস্ত কারো কারো মনে হতে লাগলো খুব বড় একটা মাকড়সার জালে জড়িয়ে যাচ্ছে তারা।

 

লাউডস্পিকার

তার ধারনা মৃতেরা তার কথা শুনতে পায়।
তাই সকাল আর সন্ধ্যা নেই, তৈয়বুরকে পাওয়া যাবে গোরস্থানে—একদম উলঙ্গ হয়ে ভাষণ দিচ্ছে কবরবাসীর উদ্দেশ্যে।
‘ভাইয়েরা আমার, রাজপথ আজও চিত হয়ে শুয়ে আছে বাধ্য স্ত্রীর মতো, শুধু একবার বীরের মতো ঝাপিয়ে পড়ো, সঙ্গমের ভঙ্গিতে কাঁপিয়ে দাও পূঁজিবাদের ইশতেহার। অবশ্যই তোমার কোলে জন্ম নেবে শিশু বিপ্লব…।’
তৈয়বুর ভাষণ দেয়, মৃতেরা জাগে না, শুধু মুগ্ধ হয়ে শোনে।

তৈয়বুর সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করতো। ছাত্রজীবন থেকে লড়াকু ছেলেটি হারাতে হারাতে সবই হারালো, এমনকি পোষাকও।
যে বছর লোনের টাকা নিয়ে এনজিও ওয়ালাদের সাথে ঝামেলা হলো, শেষপর্যন্ত ঘটনা গিয়ে জেলখানা পর্যন্ত গড়ালো সেই বছরেই গেল মাথাটাও।
কদবেলের মতো ফাঁকা ও ফাঁপা মাথাটি দিয়ে ভেবেই শেষে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এসবের পেছনে পূঁজিবাদই দায়ী!

জীবিত মানুষগুলো এসব বাক্-বক্তৃতায় বিশ্বাস করে না। মৃতেরা বিশ্বাস না করলেও অবিশ্বাস যে করে তাও তো বলেনি কোনোদিন! তাই কবরখানায়ই বিপ্লবের কারখানা খুলেছে তৈয়ব।
‘তোমার শরীরে শুধু পঁচা মাংসের গন্ধ…’ ভয়ে ভয়ে বলেছিলো রোখসানা, শেষ সঙ্গমের দিনে। তৈয়ব বুঝেছিলো, প্রেমিকার কাছেও সে এখন মৃত একজন।
মাথা নিচু করে বেরিয়ে এসেছিলো সেদিন, আর যায়নি।

সন্ধ্যা হলে হরর ফিল্ম ভর করে তৈয়বের দেহে। মনে হয় মৃতেরা তাদের দল ভারী করতে চায়। তৈয়বুর তাই রাত হবার আগেই জীবিতদের শহরে আশ্রয় নেয় প্রতিদিন।

রাস্তার পাশে শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকে সে, এভাবে অন্ধকারের ভয়ে গুটিয়ে গেলে বিপ্লব কি করে আসবে! দিন-রাত সমানতালে না খাটলে দীর্ঘায়িত হবে বিপ্লবের পথ। আরো দেরি হয়ে যাবে পূঁজিবাদের হাত থেকে নিজের মস্তিষ্ক উদ্ধার করতে।

ভাবতে ভাবতেই তৈয়বুর দৌড় লাগায় গোরস্থানের দিকে। রাতের পুলিশ টর্চের আলোয় উলঙ্গ বিপ্লবীর থলথলে পাছার দিকে তাকিয়ে ফেটে পড়ে অট্টহাসিতে।

 

দরজা

দরজাটি বন্ধ, এখন সে নিজে থেকে খুলে না গেলে তাকে খোলার কোন উপায় তার হাতে নেই।

যেহেতু করোনা পজেটিভ, সেহেতু পৃথিবীর খাতা থেকে তার নাম কেটে দেয়া হয়েছে। এলাকাবাসী এসে তালা দিয়ে গেছে মাইনুদ্দিনের দরজায়।

যতক্ষণ ফোনে ব্যালেন্স ছিলো একে ওকে ফোন দিয়ে জানিয়েছেন, সাহায্য চেয়েছেন। পুলিশকেও জানিয়েছেন ব্যাপারটা। দ্রুত খাদ্য ও ঔষধ না পেলে তার জন্য বেঁচে থাকা মুশকিল।

জানালায় দাঁড়িয়ে সাতপাঁচ ভাবছে মাইনুদ্দিন। ব্যাংকে দারোয়ানের চাকরি করতো সে। তিন বছরে হাজার নাকি লক্ষ মানুষের জন্য দরজা খুলে দিয়েছে সে গুনে কুলাতে পারে না।
অথচ—আজ তার নিজের ঘরের দরজাটিই বন্ধ।

কেউ এগিয়ে না এলেও একসময় অপেক্ষার অবসান হয় তার। শ্বাসকষ্টে ধিরে ধিরে বুজে আসতে থাকে গলা। মাইনুদ্দি বাইরে থেকে তালা দেয়া দরজায় করাঘাত করতে থাকে। চিৎকার করে প্রতিবেশিকে ডাকে। কেউ আসে না।
চিৎকার বের হয় না আর, ফ্যাসফেসে গলায় নিজেকেই নিজে অভিশাপ দেয় সে। মনে হয়, যদি প্রাণবায়ুটি বেরিয়ে যেত তবেই হয়তো শান্তি মিলতো।

মাইনুদ্দিন ফ্যাসফেসে গলায় গাল দেয়। বাইর হইয়া যা শুয়ারের বাচ্চা। নাকি দরজা চিনোস না!

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.