চার্লস বুকোস্কি'র দীর্ঘ কবিতা
আমাদের কোন টাকা নাই সখি, তবে আমাদের বৃষ্টি আছে
আমাদের কোন টাকা নাই সখি, তবে আমাদের বৃষ্টি আছে
গ্রিনহাউস এফেক্ট বলো কিংবা যা খুশি
আদতে আর বৃষ্টি হয় না
আগে যেমন হতো।
আমার আলাদা করে মনে পড়ে সেইসব বৃষ্টির কথা
মন্দা যুগের।
তখন কোন টাকা ছিলো না তবে ছিলো তো
যথেষ্ট বৃষ্টি।
বৃষ্টি হতো না কেবল রাত্রি
কিংবা দিন ভর
বৃষ্টি হতো টানা সাতদিন আর
সাত রাত জুড়ে
আর লস এঞ্জেলের সেই সব নালাগুলো
তৈরি হয়নি এতোটা ভার সইতে
জলের
আর বৃষ্টি নেমে আসতো গাঢ় আর
নীচ আর
অবিচল
আর তুমি শুনতে সেটা
ছাদ আর ভূমিতে
জলের ধারা নেমে আসতো
ছাদ থেকে
আর সে ছিলো শিলাবৃষ্টি
বিশাল পাথুরে বরফ
বোমের মতো পড়তো
জিনিসগুলোর উপর আছড়ে পড়তো বিস্ফোরিত হতো
এবং বৃষ্টি
স্রেফ কিছুতেই
থামতো না
আর সব ছাদগুলো ফুটো হয়ে যেতো-
ঘটিবাটি,
হাড়ি পাতিল
চারিদিকে বসিয়ে দেয়া হতো;
তারা সজোরে ঝরতো
আর খালি করে দিতে হতো
আবার আর
আবার।
বৃষ্টি এসেছিলো পথের উপরে
কংক্রিট বেয়ে
তৃণভূমি পার হয়ে, ধাপগুলো বেয়ে
আর
ঘরগুলোতে ঢুকে পড়েছিলো।
সেখানে মোছার কাপড় আর বাথরুম টাওয়েল ছিলো,
আর অধিকাংশ সময় বৃষ্টি এসেছিলো
টয়লেটের ভেতর দিয়ে; বুদবুদের মতো, ধূসর, পাগলাটে, ঘুর্ণিময়,
আর সব পুরনো গাড়িগুলো দাঁড়িয়ে ছিলো
পথে,
সেই গাড়িগুলো যেগুলো স্টার্ট নিতে অসুবিধা হচ্ছিলো
সূর্যকরোজ্জ্বল দিনে,
আর চাকরি বিহীন লোকগুলো দাঁড়িয়ে ছিলো
জানালা দিয়ে বাইরে দেখছিলো
সেই সব পুরনো যন্ত্র মরছে
বাইরে।
চাকরিহীন মানুষ,
এক ব্যর্থ সময়ে ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে
ছিলো বন্দী তাদের ঘরেতে সাথে নিয়ে
তাদের
স্ত্রীদের আর পুত্রদের
আর তাদের
পোষা প্রাণীদের।
পোষা প্রাণীরা বাইরে যাওয়া প্রত্যাখান করেছে
এবং বর্জ্য পদার্থ ফেলে গেলে
বিচিত্র সব জায়গায়।
চাকরিহীন লোকগুলো পাগল হয়ে যাচ্ছে
আটকে যাচ্ছে
তাদের একদার সুন্দরী বৌদের মাঝে।
সেখানে ভয়াবহ তর্কবিতর্ক কেবল
কেননা সম্পত্তি ক্রোটের
নোটিশ ডাকবাক্সে এসে পড়েছে।
বৃষ্টি আর শিলাপাত, বীনের কৌটা,
মাখন ছাড়া পাউরুটি, ভাজা
ডিম, সিদ্ধ ডিম, ডিম
পোচ, পিনাট বাটার
স্যান্ডুউইচ, আর একটা অদৃশ্য
মুরগী
আছে সব পাত্রে।
আমার বাবা, কখনো ভালো মানুষ ছিলেন না
তার সর্বসেরা কালেও না, মাকে মারতেন
যখন বৃষ্টি হতো
আর যেহেতু আমি নিজেকে ছুঁড়ে দিতাম
তাদের মাঝখানে,
পা, হাঁটু, সেই
চিৎকার
যতোক্ষণ না তারা আলাদা হতো।
‘আমি তোমারে মাইরা ফালামু,’ আমি চেচাতাম
তার দিকে। ‘তুমি মার গায়ে আরেকবার হাত দিলে
আমি তোমারে মাইরা ফালামু!’
‘এই খানকির পোলাটারে
সরাও এইখান থাইকা!’
‘না, হেনরি, তুমি থাকো
তোমার মায়ের কাছে!’
ঘরের সকল দ্রব্যাদি যেন অবরুদ্ধ
কিন্তু আমি বিশ্বাস করতাম যে আমাদের
গুলো অনেক বেশি শঙ্কিত থাকতো
অন্যদের চেয়ে বেশি।
আর রাত্রিতে
আর রাত্রিতে
আমরা যখন ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতাম
বৃষ্টি তখনও নেমে আসছে
আর সে বিছানায় চলে এসেছে
অন্ধকারে
চাঁদকে দেখতাম
ভীত জানালা দিয়ে
কি সাহসের সাথে
ধরে রাখতো
প্রায় পুরোটা বৃষ্টিকে,
আমি নুহের কথা ভাবতাম আর
তার কিস্তির কথা
আর আমি ভাবতাম, এটা আবার
এসেছে।
আমরা সবাই ভাবতাম
এমনই ভাবতাম।
আর তখন, চকিতে, সেটা হয়তো
থেমে যেতো।
আর এটা সব সময়ই মনে হতো
থেমে যাবে
হয়তো ভোর ৫টায় অথবা ৬টায়,
তারপর শান্তি,
কিন্তু যথার্থ নিরবতা নামেনি
কারণ ওটা চলছেই
টিপ
টিপ
টিপ
আর তখন কোন ধোঁয়াশা নেই
আর সকাল ৮টা হয়ে গেছে
নেমে এসেছে উজ্জ্বল হলুদ সূর্যালো,
ভ্যান গগের হলুদ-
পাগলাটে, দৃষ্টি আচ্ছন্নকারী।
আর তখন
ছাদের নল ছুটে
একগাদা বৃষ্টির জল
নেমে আসে
উষ্ণতায় বর্ধিত হতে থাকে
ধুম, ধুম, ধুম!
আর সবাই জেগে ওঠে আর বাইরে দেখে
আর বাইরে সব আঙিনা
তখনও ভেজা
সবুজতর সব সবসময়েল সবুজের চেয়ে
বেশি
আর সেখানে পাখিরা আছে
আঙিনাতে
উন্মাদের মতো কিচিরমিচির করছেই,
তারা ভালো মতো খেতে পাইনি
গত ৭ দিন ৭ রাত ধরে
আর তারা ক্লান্ত হয়ে হয়ে
ফলমূলের জন্যে
আর
তারা অপেক্ষায় আছে পোকারা
নিচ থেকে উপরে ওঠে আসবে
প্রায় ডুবে যাওয়া পোকাগুলো।
পাখিরা তাদের অপরহরণ
করবে উপরে
আর গিলে ফেলবে
নিচে; সেখানে ছিলো ফিঙে আর চড়ুই।
ফিঙেরা চেষ্টা করে চড়–ইদের তাড়িয়ে দিতে
কিন্তু চড়ুইরা,
ক্ষুধায় মত্ত,
ক্ষুদ্রতর এবং দ্রুততর
খুঁজে নেয় তাদের
পাওনা।
পুরুষরা তাদের বারান্দায় দাঁড়ায়
সিগারেট ধরায়,
এখন জানে
তাদেরকে বেরুতে হবে
বাইরে
তাদের কাজের সন্ধ্যানে
যা হয়তো বা নেই আদতে
তাদের, গাড়ি চালু করতে হবে
যেটা হয়তোবা চাইছে না
চালু হতে।
আর একদার সুন্দরী
বৌয়েরা
তাদের বাথরুমে দাঁড়িয়ে আছে
আচড়াচ্ছে চুল,
মেকআপ লাগাচ্ছে,
চেষ্টা করে যাচ্ছে তাদের পৃথিবী ফিরিয়ে আসনে
আবার একসাথে,
চেষ্টা করছে ভুলে যেতে
ভয়াবহ বেদনাগুলি যা
তাদের আকড়ে আছে,
ভাবছে কি করতে পারে
তারা এখন
নাস্তার জন্যে।
আর রেডিওতে
আমাদের বলা হচ্ছে
এখন স্কুলগুলো
খোলা।
আর
শিগ্গিরি
আমি সেখানে
রওনা দেই স্কুলের পথে,
অসংখ্য খানা-খন্দ
রাস্তায়,
সূর্য একটা নতুন
পৃথিবীর মতো,
আমার বাবা মা
ফিরে আসে সেই
ঘরে,
আমি পৌঁছাই ক্লাসঘরে
সময় মতোই।
মিসেস সোরেনসর আমাদের অভিবাদন জানায়
বলেন, ‘আমাদের নিয়মিত কার্যাদি
করবো না আজ, মেঝে
এখনও খুব ভেজা!’
‘কিন্তু আমরা বিরতির সময়
খুব বিশেষ কিছু
করতে যাচ্ছি ,’ তিনি বলে যান,
‘আর এটা হবে খুব
মজার!’
বেশ, আমরা সবাই ভাবছিলাম
এটা কী হতে
পারে
আর দুইঘণ্টার অপেক্ষাকাল
মনে হলো দীর্ঘতর
কেননা মিসেস সোরেনসন
এগিয়ে এলেন
তার পাঠ শুরু
করতে।
আমি তাকাই ছোট্ট
মেয়েগুলোর দিকে, তাদের দেখে মনে হয়
খুব সুন্দর আর পরিচ্ছন্ন আর
সতর্ক ,
তারা স্থির হয়ে বসে আর
সোজা হয়ে বসে
আর তাদের চুলগুলো ছিলো
দারূণ সুন্দর
ক্যালিফোর্নিয়ার
সৌরালোকে।
আর তখন বিরতির ঘণ্টা বাজলো
আর আমরা সবাই অপেক্ষা করছিলাম
মজার জন্য।
তখন মিসেস সোরেনসন বললেন
আমাদের:
‘এখন, আমরা যেটা করতে যাচ্ছি
সেটা হলো আমরা বলতে চাই
একে অপরকে যে আমরা কী করেছিলাম
এই বৃষ্টি আর ঝঞ্জার সময়টায়!
আমরা প্রথম সারি থেকে শুরু করে
এবং ডানদিকে যেতে থাকবো!
এখন, মাইকেল, তুমিই
প্রথম…!’
বেশ, আমরা সবাই শুরু করলাম বলতে
আমাদের গল্পগুলি, মাইকেল শুরু করলে আগে
আর সেটা চলতেই থাকলো আর চলতেই থাকলো,
আর দ্রুতই আমরা অনুধাবন করলাম যে
আমরা সবাই মিথ্যা বলছি, আসলে
পুরোপুরি মিথ্যা বলছি না তবে অধিকাংশই মিথ্যা বলছি
আর কোন কোন বালক চাপা হাসি হাসছিলো আর কোন কোন বালিকা
তাদের দিকে বিশ্রীভাবে
তাকাচ্ছিলো আর
মিসেস সোরেনসন বললেন,
‘ঠিক আছে, আমি চাইছি
যৎকিঞ্চিত নিরবতা
এখানে!
আমি শুনতে আগ্রহী কী
করেছো তুমি
ঝড়-বৃষ্টির সময়
এমনকি যদি তুমি
কিছু নাও করে থাকো সেটাতেও আগ্রহী।’
অতএব আমাদেরকে গল্প বলতে হলো
আর সেগুলো ছিলো যথার্থই
গল্প।
গল্প।
এক বালিকা বললো যে
যখন প্রথম রংধনু
উঠলো
সে দেখেছিলো ঈশ্বরের মুখ
সেটার শেষপ্রান্তে।
কেবল সে বললো না
কোন প্রান্তে।
এক বালক বললো সে আটকেছিলো
তার মাছধরার পুলটাকে
জানালার বাইরে
এবং সে ধরেছিলো একটা ছোট্ট
মাছ
আর এটাকে খেতে দিয়েছিলো
তার বিড়ালকে।
প্রায় সবাই বললো
মিথ্যা কথা।
সত্যিটি স্রেফ
ভীষণ ভয়াবহ আর
বিব্রতকর
সবার জন্য।
আর তখন ঘণ্টা বেজে গেলো
আর বিরতি হলো
শেষ।
‘ধন্যবাদ তোমাদের,’ বললেন মিসেস
সোরেনসন, ‘এটা ছিলো খুব
সুন্দর।
আর আগামীকাল মাঠ
শুকিয়ে যাবে
আর আমরা পারবো
সেটাকে ব্যবহার করতে
আবার।’
অধিকাংশ বালকরাই
উল্লাস করলো
আর ছোট্ট বালিকারা
বসে থাকলো সোজা আর
স্থির,
তাদেরকে দেখাচ্ছিলো এতো সুন্দর আর
পরিছন্ন আর
সতর্ক,
তাদের চুলগুলো সূর্যের আলোতে মনোরম দেখাচ্ছিলো
পৃথিবী হয়তো কখনো আর দেখতে পাবে না
এমন।