:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
মুম রহমান

গল্পকার, অনুবাদক ও চলচ্চিত্র সমালোচক

আমি জন্মেছিলাম ঈশ্বরের আস্তিনে
ব্যবহৃত শিল্পকর্ম: এ জেড শিমুল

এক লাইনের কবিতাগুচ্ছ

আমি জন্মেছিলাম ঈশ্বরের আস্তিনে

প্রথম পর্যায় : ইহকাল

১.
সূর্যাস্তের পর একটা লাল টিপই হয়ে ওঠে আমার একান্ত বাতিঘর।

২.
ধুর ছাই, এতো জড়তা নিয়ে শরীর ধারণ করো কী করে!

৩.
কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থাই ইশারায় বলে দেয় আমরা নিরাপদে নেই আর।

৪.
পথ ভুলে গ্রিলে এসেছিলো চাঁদ, উঁকি দিয়ে দেখে গেছে আমাকে!

৫.
তোমাদের এই হৈহুল্লোড়ের দেশে আমি রয়ে যাই নিজের মধ্যে একা।

৬.
এই মনের ঘরে আগল তো দূরের কথা, দরজাই রাখি নাই…

৭.
একটু খুঁজে দেখবে, তোমার ওখানে আমার হাতটা রেখে এলাম কিনা!

৮.
ফোন নষ্ট হলে কতো চিন্তা, নষ্ট মানুষটাকে কেউ দেখে না।

৯.
দেখি সারাদিন ফেসবুকে আছো কারো বুকে কি ঠাঁই পেয়েছো?

১০.
না, তেমন কিছু নয় পুরনো সেতুর মতো ভেঙে পড়ছি ক্রমশ…

১১.
পুরনো মন্দিরে বেড়ে ওঠা বটগাছের মতো আমাকে গ্রাস করে নিলে!

১২.
নারী পুরুষের প্রেম নামক মূদ্রার দুইপিঠে নাচে ভালোবাসা আর ঘৃণা।

১৩.
হতচ্ছাড়া একতরফা প্রেম মাঝরাত্রিরে ঘুম ভাঙিয়ে বলে, এবার কাঁদো নির্জনে।

১৪.
কোথায় ফুটেছো? গোরানে না মুগদায়? কৃষ্ণচূড়াকে এখনই দেখতে মন চায়।

১৫.
আমার আজ শরীর খারাপ, ইউটিউব, তোমার কাছে কোন গান নেই?

১৬.
আর জোড়াহীন আমি জোড়াতালি দিয়ে চলি; কী আসে যায় কার!

১৭.
মা এখন সাবান ডলে দেয় না, বিশ্রী এই বড় হওয়া।

১৮.
তোমাকে বলছি মেয়ে, আমিই পাহাড়, এসো, এইবার আমাকে জয় করো।

১৯.
এমন একটা ঝর্ণাই বানাতে চেয়েছিলাম, যাকে তুমি আয়না ভাবতে পারো।

২০.
বেকুব ভঙ্গুর গাছ, পাখি তো বিশ্বাস করেই তোমার ডালে বসেছিলো।

 

দ্বিতীয় পর্যায় : পরকাল

১.
পরকাল থেকে চিৎকার করে বলি, আম্মা, আপনার বানানো বালিশটা কই?

২.
মহামতি বানিয়া সমাজ, অন্তত মৃত্যুর পর আমাকে আর বেঁচো না।

৩.
নীল কাফন দিয়ো, আমার বেদনার্ত জীবনের সঙ্গে বরং ওটাই মানায়।

৪.
তোমার বাড়ির পথ চিনতে ভুল হয়, তোমাকে চেনা আরো কঠিন।

৫.
ও মালিক, পেরেক জীবন ভাল্লাগে না, এইবার আমারে হাতুড়ি বানাও…

৬.
এতো অন্ধকার, নিজের ছায়াকে দেখতে পাইনি সাড়ে তিন হাত জীবনে।

৭.
জীবন, তোমাকে পড়ছি, পৃষ্ঠা সংখ্যা জানা থাকলে কতোইনা ভালো হতো।

৮.
জীবন খরচ হলো ভিড়ে হুল্লুড়ে, এবার চুপেচাপে মৃত্যুকে জমিয়ে ফেলি।

৯.
মিনতি মনে রেখো, তবুও আমারে কবর দিও তোমার বুকের গহীনে।

১০.
জগতের সব ফুল ঝরে যায়, আমার আহাম্মক হৃদয় পরকালের ফুলদানী।

১১.
ঘর সাজিয়েছি, নিজেকেও; দেখি আজ গোরস্থানে আসে কি না কেউ।

১২.
মাওলা, তোমারে ভাববো কখন; রিলিফের আশায় কেটেছিলো এই শরনার্থী জীবন।

১৩.
বোকা মুম বলে, দুনিয়াটা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি চালাক না-হলেও পারতো।

১৪.
আলহামদুলিল্লাহ, অন্ধ হওয়ার পর তোমার চোখের ভাষা পড়তে পারছি মাবুদ।

১৫.
প্রেমের দরজায় মৃত্যু কড়া নেড়ে যায়, কতোদিন দেখি না তোমায়।

 

তৃতীয় পর্যায় : মহাকাল

১.
ফানা ফানা করো মুমের কলিজা, এসো অবিনশ্বর প্রেম, আজ তবে।

২.
বুঝে শুনে খরচ করো প্রেম, সে যে কৃষ্ণগহ্বরের চেয়েও শক্তিশালী।

৩.
লুকিয়ে রেখেছি বেমালুম তোকে- ওরে আমার অদৃশ্য শিল্পকলার একান্ত যাদুঘর…

৪.
ছুটে যাচ্ছে রেললাইন, রেলগাড়ি ভর্তি লোক দেখছে অলৌকিক প্রেমের চলচ্চিত্র।

৫.
ভালোবাসা একটা রেলস্টেশনের নাম। সেখানে ট্রেনটা থামে তিন মিনিটের জন্য।

৬.
এবং জ্বলছি চিরকাল মোমবাতির মতো; ব্যথা আছে, সুখও কম নয়…

৭.
ভেতরে বৃষ্টি, বাইরেও; কেবল আমি রই চিরকাল বেহায়ার মতো শুষ্ক।

৮.
মন খারাপ হলেই মনে পড়ে, আমাদের মন ছিলো মহাকালের গহ্বরে।

৯.
শিশুরা হাসছে খেলছে বলে প্রাচীন পৃথিবী নিঃশ্বাস নিচ্ছে বুক ভরে…

১০.
এই নশ্বর মহাবিশ্বে আমি এসেছিলাম কেবল তোমাকে দেখার পিপাসা নিয়ে।

১১.
বোম্বে সাফায়ারে চুমুক দিয়ে মনে হয়, আমি জন্মেছিলাম ঈশ্বরের আস্তিনে।

১২.
নির্জলা হুইস্কি আয়ত্ম করেছি, বলো, আর কি গরল-সুধা রেখেছো অনন্ত-অম্বরে!

১৩.
চাওয়ার কোন সীমানা নাই, তাই তো অসীম তোমাকে চাই দিনরাত।

১৪.
মুমের হাত পরিস্কার করে দাও মালিক, সে কিছু লিখতে চায়।

১৫.
ভরসা রাখো রাজাধিরাজ, একদিন আমি তোমার উপযুক্ত দাস হয়ে উঠবো।

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.

error: Content is protected !!