উমবের্তো একোর সঙ্গে এলেইন আলকানের আলাপ
অনেকগুলো পরিচয় তাঁর- ঔপন্যাসিক, সাহিত্যসমালোচক, চিহ্নবিজ্ঞানী, দার্শনিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক; বুদ্ধিজীবী হিসেবেও তাঁর ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাগুলো- দ্য নেইম অব দ্য রোজ, ফুকোজ পেন্ডুলাম, দ্য আইল্যান্ড অব দ্য ডে বিফোর, দ্য মিস্টেরিয়াস ফ্লেইম অব কুইন লোয়ানা, ইয়ার জিরো, মিসরিডিংস, ট্র্যাভেলস ইন হাইপাররিয়ালিটি, হাউ টু ট্র্যাভেল উইথ আ স্যামন অ্যান্ড আদার এসেজ, অন লিটারেচার, অন বিউটি, অন আগলিনেস, দ্য প্রাগ সিমেট্টি, দ্য বুক অব লিজেন্ডারি ল্যান্ড, দ্য সার্চ অব দ্য পারফেক্ট ল্যাঙ্গুয়েজ, কান্ট অ্যান্ড দ্য প্লাটিপাস : এসেজ অন ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কোগনিশন, কনেশন্স অব আ ইয়াং নভেলিস্ট (বক্তৃতা), থিয়োরি অব সেমিওটিকস, দ্য লিমিটস অব ইন্টারপ্রিটেশন, দিজ ইজ নট দ্য অ্যান্ড অব দ্য বুক (আলাপ) ইত্যাদি। ‘দ্য নেইম অব দ্য রোজ’ উপন্যাসটি বাংলাসহ বিশ্বের ৪৩টি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর জন্ম ইতালির আলেসান্দ্রিয়ায়, ১৯৩২ সালের ৫ জানুয়ারি; মৃত্যু মিলানে, ২০১৬-র ১৯ ফেব্রুয়ারি। সাক্ষাৎকারীদের তিনি বলেন, তাঁর জন্মশহর ‘বারসোলিনো টুপি’র জন্য বিখ্যাত।
এলেইন আলকান লেখক, বুদ্ধিজীবী ও জার্নালিস্ট, জন্ম ১৯৫০-এ, আমেরিকার নিউইয়র্কে; বিভিন্ন লেখা ইতিমধ্যে ফরাসি, হিস্পানি, পর্তুগিজ, রুশ, হিব্রু, তুর্কি আর জাপানি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তিনি সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী হিসেবেও বিশ্বব্যাপী পরিচিত, কারণ তার গৃহীত সাক্ষাৎকারগুলো শেষ পর্যন্ত শিল্প হয়ে ওঠে। তিনি ইতালির প্রখ্যাত দৈনিক ‘লা স্তামপা’য় সাপ্তাহিক ‘সাক্ষাৎকার কলাম’টির দায়িত্বে আছেন ১৯৮৯ সাল থেকে; তার নিজের আর্কাইভেও রক্ষিত আছে বহু মূল্যবান সাক্ষাৎকার। তিনি উমবের্তো একোর মতো লেখকের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, পেরুর নোবেলজয়ী লেখক মারিও বারগাস য়োসার সঙ্গেও কথা বলেছেন। ‘দ্য নোটবুকস অব দন রিগোবের্তো’র প্রকাশ উপলক্ষে ইতালিতে এসেছিলেন বারগাস য়োসা; হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন রোমের রাস্তায়, ঘুরতে ঘুরতে একসময় কিছুটা বিস্ময় কিংবা কোনো আবিষ্কারের জন্যই হয়তো ঢুকে পড়েছিলেন রোমের বিখ্যাত এক বইয়ের দোকানে, সাক্ষাৎকারী এলেন আলকানের সঙ্গে কথা বলতে বলতে ৯৭ সালের ৬ আগস্ট। বিস্মিত হয়ে বলেছিলেন, এখানে দেখছি শুধু নারীরাই বই কিনছেন! দেখুন এখানে মোট আঠারো জন ক্রেতা আছেন, যাঁদের মধ্যে পুরুষ মাত্র দুজন!
উমবের্তো একোর সঙ্গে আলকানের কথা হয় ২০০৪ সালের জুলাইয়ে; তাঁর ‘ইন্টারভিউজ’ আর্কাইভ থেকে সেই আলাপচারিতাটি এখানে অনূদিত হলো।
এলেইন আলকান : যাঁরা আপনার খোঁজখবর রাখেন, তাঁরা জানেন এখন আপনি কোথায় আছেন কিন্তু আপনি সেটা গোপন রাখতে চান। এবারের গ্রীষ্ম কোথায়, কীভাবে কাটাবেন?
উমবের্তো একো : এখন এই বাড়িতে আছি, সব সময় এই বাড়িতেই থাকি, মিলানের বাইরে, গত বছর যে বাড়িটিতে বসে ‘দ্য মিস্টিরিয়াস ফ্লেইম অব কুইন লোয়ানা’র শেষ পর্বগুলো লিখেছিলাম। আমার সবগুলো বই শুরু হয়েছে এই বাড়িতে, শেষও হয়েছে এখানে, ইতালির কান্ট্রিসাইডে। ‘ফুকো’স পেন্ডুলাম’ লিখতে আমার আট বছর লেগেছিল। বইটি বছরের বিভিন্ন সময়ে লিখেছি- হলিডের দিনগুলোতে, তারপর ক্রিস্টমাস, ইস্টার ও গ্রীষ্মগুলোয়। বহুবার বলা একটি কথা আবারও বলি। ‘দ্য নেইম অব দ্য রোজ’ শেষ করেছিলাম জানুয়ারির ৫ তারিখ, এদিন আবার আমার জন্মদিনও! আর এখন সব ধরনের কুসংস্কারমুক্ত হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ৫ জানুয়ারি আরও কয়েকটি বই আমি শেষ করব।
এখন যে বইটি লিখছি, যদিও বইটির কাজ ২ তারিখ শেষ হবে। আনুষঙ্গিক সব মিলিয়ে আরও ৩ দিন, তারপর শেষ, অর্থাৎ জানুয়ারির ৫। তৃতীয় বইটির বেলায়ও এমন ঘটনা ঘটবে কিন্তু চতুর্থ বইটি, বাউডোলিনো, শেষ হবে জুলাইয়ের শেষ নাগাদ। আমার ধারণা, বইগুলো এমন এক সময়ে শেষ হচ্ছে, তারিখও মিলে যাচ্ছে- রহস্যময় এই ব্যাপারটিকে আমার ভালো লাগে না, মনে হয় কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। কারণ আমরা জানি, উপন্যাস তার নিজস্ব গতিতে শেষ হয়। উপন্যাস যাত্রাবিরতিহীন একটি প্রক্রিয়া।
অবশ্য কয়েক দিন ধরে লেখা থেকে মনকে মুক্তি দিয়েছি, তাতে কিছুটা নির্ভার লাগছে, এদিকে আমার নাতি ইমানুয়েলও জন্ম নিয়েছে৷ তবু এর মধ্যেই ‘লোয়ানা’ লিখে শেষ করব। ধারণা করছি, আগস্টের শেষ আর সেপ্টেম্বরের আরম্ভেই লেখাটা শেষ হবে। এ বছর আমার লেখার ক্যালেন্ডার শুরুই হয়েছে আগস্টে, ব্যাপারটি আমার জন্য দুশ্চিন্তার। এদিকে লেখালেখির চেয়ে এখন বেশ কয়েকটি কনফারেন্সের প্রস্তুতি নিতে হবে; সকালে যেতে হবে শহরে, ফার্মাসিস্টের কাছ থেকে এপারিটিফ আনতে হবে, ফুরিয়ে গেছে।
এলেইন আলকান : আগস্টে আর কী কী হবে?
উমবের্তো একো : জগৎ-সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব থেকে মুক্ত হয়ে বিশেষ কিছু লেখা পড়তে চাই, পড়াটা যদিও বাধ্যতামূলক নয় কিন্তু পড়তে চাই; বহু লেখাই আছে, তাদের একবার পড়লে হয় না, দ্বিতীয়বার পড়তে হয়, কখনো জীবনভর পড়তে হয়; সেই বইগুলো আমি আবারও পড়তে চাই। চিন্তা উসকে দেওয়া শ্রেষ্ঠ দর্শনের লেখাগুলো বারবার পড়তে হয়।
পাঠের ক্ষেত্রে আমি বিশেষ কোনো নিয়ম মেনে চলি না, অর্থাৎ আমি পদ্ধতির অনুগামী নই। বেশ কয়েক দশকের চেষ্টায় নিজের ভেতরে আমি একধরনের ‘নৈতিক অবমুক্তি’ অর্জন করতে পেরেছি, সে জন্য আমার মধ্যে কিছু পরিবর্তন এসেছে। উপন্যাস পড়ার জন্য রাতে ঘুমানোর আগের সময়টাকে বেছে নিচ্ছি। উপন্যাস পড়ার পক্ষে দিন আমার জন্য উপযুক্ত নয়। দিনে পড়ার সময় মনে হয় কত গুরুত্বপূর্ণ কাজ পড়ে আছে আর আমি এখন উপন্যাস পড়ছি! সময় কত দ্রুতই না চলে যাচ্ছে!
এলেইন আলকান : পাঠের ক্ষেত্রে কোন ধরনের লেখাকে প্রাধান্য দেন?
উমবের্তো একো : পাঠের ক্ষেত্রে আমি বিশেষ কোনো নিয়ম মেনে চলি না, অর্থাৎ আমি পদ্ধতির অনুগামী নই। বেশ কয়েক দশকের চেষ্টায় নিজের ভেতরে আমি একধরনের ‘নৈতিক অবমুক্তি’ অর্জন করতে পেরেছি, সে জন্য আমার মধ্যে কিছু পরিবর্তন এসেছে। উপন্যাস পড়ার জন্য রাতে ঘুমানোর আগের সময়টাকে বেছে নিচ্ছি। উপন্যাস পড়ার পক্ষে দিন আমার জন্য উপযুক্ত নয়। দিনে পড়ার সময় মনে হয় কত গুরুত্বপূর্ণ কাজ পড়ে আছে আর আমি এখন উপন্যাস পড়ছি! সময় কত দ্রুতই না চলে যাচ্ছে! তবে সব সময় এমনটা করি না, মাঝে মাঝে ব্যতিক্রমও হয়, যেমন দুই বছর আগে, অসুস্থ হয়ে পুরো বিছানায় পড়েছিলাম, সে সময় আমি টমাস মানের ‘ম্যাজিক মাউন্টেন’ পড়েছি, দ্বিতিয়বার। উপন্যাসখানি প্রতিদিন বিকেলে পড়তাম৷ বছরখানেক আগে নিউমোনিয়ায় কাবু হয়ে হসপিটালে ভর্তি হতে হয়েছিল। নিউমোনিয়ার সেই দিনগুলোতেও ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ পুনর্পাঠ করেছি…তবু…আমার বদ্ধমূল ধারণা, দিনে উপন্যাস পড়লে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ব!
এলেইন আলকান : তাহলে উপন্যাস আপনার কাছে শুধু বিনোদন?
উমবের্তো একো : অবশ্যই না। পেশাগত দিক থেকে আমি একজন দার্শনিক এবং চিহ্নবিজ্ঞানী বলেই হয়তো উপন্যাস পাঠের ক্ষেত্রে এই বিশেষ নিয়মটি আমার ভেতর জন্ম নিয়েছে।
এলেইন আলকান : কিন্তু আপনি কি নিজেকে ফিকশন রাইটার হিসেবে বিবেচনা করছেন না? উপন্যাস আপনিও তো লিখেছেন!
উমবের্তো একো : এই যে আমি নিজেও ঔপন্যাসিক, তা দিয়ে কিন্তু এমন বিশেষ কিছু বোঝায় না, কথাটা বলেছি এ জন্য, আমি যখন নের্ভাল অনুবাদ করছি কিংবা জয়েস সম্বন্ধে কিছু একটা লিখছি, তখন কিন্তু দিনরাত খেটেখুটেই লেখাটা লিখছি। আবার দিনের বেলা যখন কোনো বই পড়ছি, তখন আমি এমন কিছু কথা, এমন কিছু শব্দের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছি, শব্দের শক্তিকে অনুভব করছি, শব্দটিকে ভাঙছি, বিস্তৃত করে দেখতে চাইছি, আরও ব্যাপকভাবে বোঝার জন্য হয়তো আরও কিছু বইয়ের সাহায্য নিচ্ছি। এভাবে বইটি পড়ছি। নানাভাবে শব্দের পরম অর্থটি বোঝার চেষ্টা করছি। এখন আপনি যদি উপন্যাস পড়তে গিয়েও শব্দের অর্থ অনুসন্ধানে নেমে পড়েন, এক পাতা উপন্যাস পড়ে দশ পাতা রেফারেন্স দেখতে হয়, তাহলে আপনি উপন্যাস পাঠের আনন্দ থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত হবেন। উপন্যাসে আপনি আখ্যানপ্রবাহের সাথে নিজেকে প্রবাহিত করার সম্ভাবনা তৈরি করেন। উপন্যাসকে আপনি সমুদ্রসৈকতেও পড়তে পারবেন না। কারণ, আপনাকে বিরক্ত করে তুলতে কেউ না কেউ সেখানে থাকবে। উপন্যাসের জন্য দরকার রাত, একাকিত্ব, খাটের পাশে জ্বলতে থাকা বাতি আর কোনো রকম বিরতি না দিয়ে একটানা পড়ে যাওয়া।
এলেইন আলকান : এখানকার গ্রামাঞ্চলেও কি বড় লাইব্রেরি আছে, মিলানের মতো?
উমবের্তো একো : মিলানের লাইব্রেরিগুলোর মতো বড় লাইব্রেরি এখানে নেই; আমি নিজেই এখানকার লাইব্রেরিগুলোতে অজস্র বই পাঠিয়েছি, আমার সবগুলো বইয়ের একটি করে কপিও দিয়েছি৷ এখন আমার বাড়িতে প্রায় ২০ হাজার বই আছে, বইগুলোকে নিজের কাছে রাখাটা জরুরি বলেই রেখেছি। কিছু বই হাতের কাছে থাকা দরকার। আমি যদি মোরাভিয়া কিংবা হেমিংওয়ের বইয়ের একাধিক কপি পাই, সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় কপিটি লাইব্রেরিগুলোকে দিয়ে দিই।
এলেইন আলকান : লাইব্রেরিতে কীভাবে সময় কাটান?
উমবের্তো একো : এক শেলফ থেকে অন্য শেলফে হেঁটে…আমার লাইব্রেরিতে, নির্দিষ্ট বইটি ঠিক কোথায় আছে, সেটা খুঁজে দেখবার দরকার হয় না। কারণ, আপনি জানেন বইটি কোথায় আছে। দুর্ভাগ্যবশত এখানকার লাইব্রেরিগুলোতে খুঁটিনাটি পরিচয় দিয়ে ফরম পূরণ করলে সর্বোচ্চ দুটি বই নেওয়া যায়। আমি আমেরিকার লাইব্রেরিগুলোর কথা ভাবি, যেখানে পাঠকেরা সরাসরি বইয়ের কাছে পৌঁছে যেতে পারেন৷ হেঁটে হেঁটে, শেলফ থেকে শেলফে, বই দেখতে দেখতে কাঙ্ক্ষিত বইটি তাঁরা বের করে আনেন। কেউ হয়তো প্রথম শেলফে বই দেখছেন, তারপর দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় শেলফে গিয়ে ফিরে এসেছেন, চতুর্থ শেলফে যেতে ভুলে গেছেন কিংবা সেই শেলফটি তাঁর চোখেই পড়েনি আর ঠিক তখনই সবচেয়ে বড় অ্যাডভেঞ্চারটি শুরু হয়। একটা কিছু ঘটে।
এলেইন আলকান : সেটা কী রকম?
উমবের্তো একো : ব্যাপারটা হচ্ছে, পাঠক হঠাৎ এমন একটি বই পেয়ে যান, যেন বইটি এইমাত্র এখানেই তিনি আবিষ্কার করলেন, এই বইটিই তাঁর দরকার ছিল বহু দিন, কোথাও পাওয়া যায়নি, তা ছাড়া আছে বইয়ের সঙ্গে তৈরি হয়ে যাওয়া অদৃশ্য এক সম্পর্ক। বন্ধন। অপেক্ষা! আপনার যদি ২০ হাজার বই থাকে, তবে তেমন চমকপ্রদ কিছু ঘটবে না কিন্তু ৩০ থেকে ৪০ হাজার বইয়ের ভেতর আপনার সেই আবিষ্কারটি হবেই।
এলেইন আলকান : কিন্তু বই খুঁজতে খুঁজতেও তো সময়ের অপচয় হচ্ছে!
উমবের্তো একো : কোনোভাবেই সময়ের অপচয় হচ্ছে না, একটা ফল পাওয়া যাচ্ছে ঠিকই। উদাহরণস্বরূপ বলি, গলফ খেয়াল সময়ের অপচয় হয়। তো, বার্নার্ড শ বলছিলেন, গলফ খেলার জন্য স্টুপিড হতে হবে না কিন্তু এই খেলা আমাদের স্টুপিডে পরিণত হতে সাহায্য করে। লাইব্রেরির ভেতরে কাউকে বিচক্ষণ হতে হয় না, লাইব্রেরিই তাকে বিচক্ষণ হতে উঠতে সাহায্য করে।
বাবা ভেবেছিলেন তাঁর ছেলে আইনজীবী হবে। আমরা তখন যে ছোট্ট শহরটিতে থাকতাম, সেখানে এই পেশার কদর বেশি ছিল। কিন্তু সেই তরুণ বয়সে আমি যখন নভেলা আর কমিক স্ট্রিপগুলো লিখতে শুরু করলাম, বাবা খুব সাবধানে আমাকে লক্ষ করছিলেন! আমার প্রথম বই বের হলে আমার ক্লার্ক বাবা কিন্তু গর্বিত হয়েছিলেন, এক রাতে পুরো বইটি পড়ে ফেলেছিলেন!
এলেইন আলকান : বাবা আপনার ব্যাপারে কী চিন্তা করেছিলেন?
উমবের্তো একো : বাবা ভেবেছিলেন তাঁর ছেলে আইনজীবী হবে। আমরা তখন যে ছোট্ট শহরটিতে থাকতাম, সেখানে এই পেশার কদর বেশি ছিল। কিন্তু সেই তরুণ বয়সে আমি যখন নভেলা আর কমিক স্ট্রিপগুলো লিখতে শুরু করলাম, বাবা খুব সাবধানে আমাকে লক্ষ করছিলেন! আমার প্রথম বই বের হলে আমার ক্লার্ক বাবা কিন্তু গর্বিত হয়েছিলেন, এক রাতে পুরো বইটি পড়ে ফেলেছিলেন!
এলেইন আলকান : তিনি আপনার সফলতা উপভোগ করতেন?
উমবের্তো একো : তারপরও আমার লেখক হয়ে ওঠাটা তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না কিন্তু মন্তেল যেদিন আমার দ্বিতীয় বইয়ের রিভিউ করলেন ইতালির প্রখ্যাত ‘ক্যারিরে দেলা সারা’য়, তিনি সেদিন অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। কিংবদন্তি একজন কবি তাঁর ছেলের বই নিয়ে সবচেয়ে বড় পত্রিকাটিতে লিখেছেন!
এলেইন আলকান : কোনো দিন হাস্যরসাত্মক উপন্যাস লিখতে চান?
উমবের্তো একো : হাস্যরসাত্মক উপন্যাসটি আমি লিখে ফেলেছি! আমার বিদেশি সম্পাদকদের একজন সব সময় বলেন, যখনই তিনি উপন্যাসটি পড়েন, কোনোভাবেই বাঁধভাঙা হাসি আটকাতে পারেন না, এমনকি এর পাত্রপাত্রীরা সবাই মারা যাওয়ার পরও নয়।
এলেইন আলকান : রসিকতাপূর্ণ হাসি আপনার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই না?
উমবের্তো একো : এই হাসি নিজেকে উন্মোচনের স্মিত হাসি, অনর্থক অট্টহাসি নয়। নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে না করে অন্যদের গুরুত্ব না দেওয়ার মাঝে একটা ব্যাপার আছে। ইতিমধ্যে ‘বুক অব এক্লেসিয়াস্তে’র কয়েকটি খণ্ডে হিব্রু ভাষায় এসব প্রবাদ লিপিবদ্ধ হয়েছে।
এলেইন আলকান : নিজেকে কি সেন্টিমেন্টালিস্ট মানুষ মনে করেন?
উমবের্তো একো : বাস্তবের আবেগমথিত মানুষেরা হতাশাবাদী, চিরবিষণ্ণ।