একটি মঞ্চ হাসি ও তার হাসনুহানা গন্ধ
ছবির মেয়েটা এমন কলকল করে হাসতেছিল আজ সন্ধ্যার নাটকে, একটানা বৃষ্টির মতো, পাহাড়ের ঝরনার মতো, জলের ঘূর্ণির মতো, কানের মধ্যে এখনো ঘুঙুরের শব্দের মতো তার হাসি জড়ায়ে আছে। এই রকম একটানা হাসির ধারা, নাটকে সহজে দেখতে পাওয়া যায় না। মেয়েটার হাসি প্রায় দুষ্প্রাপ্য। নাটকের পাত্রপাত্রীরা হাসে, প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে, সেসব হাসি শুনেছি, ভুলেও গেছি, কিন্তু ‘রহু চণ্ডালের হাড়’ নাটকে রাধা চরিত্রের হাসি হাড়ের ভেতর দিয়ে হৃদয়ে গিয়ে পৌঁছায়। তার হাসি আনন্দময়, উচ্ছ্বাসভরা। এই হাসির জন্য পুরো একটা কাব্য করা যায়, তার হাসি আর দশটা হাসির মতো শুকনো, বানানো, বা চাবি মারা মনে হয়নি, মনে হয়েছে অকপট, অবিকল, অবিরল। এমন হাসি কানের মধ্যে নিয়ে বাড়ি ফেরা যায়। টেপ রেকর্ডারের মতো রিপ্লে করে শোনা যায়।
নাটকে হাসি সহজ জিনিস না, বিশেষ করে চরিত্রের হাসি। চরিত্রের হাসিতে প্রাণ থাকে না, থাকে হাসির কঙ্কাল, হাসির নামে যান্ত্রিক ধ্বনি, হা হা হি হি। হাসিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা উঁচু মাপের শিল্পকর্ম। সেই শিল্পকর্ম দেখলাম রাধা চরিত্রের হাসিতে।
মেয়েটা যখন অভিনয়ের সময় স্টেজে কাচভাঙা হাসি হাসতেছিল, দেখতেছিলাম কাচের টুকরোগুলো সারা স্টেজে কীরকম ছড়ায়ে পড়তেছে। তার হাসির টুকরোগুলো খুন ঝরানোর মতো ধারালো ছিল। আমি তার হাসির হরিণেরা কী করে ঘুরে ঘুরে নেচে বেড়ায় স্টেজের আলোআঁধারিতে, দেখতেছিলাম আর অবাক হচ্ছিলাম। এরকম পূর্ণাঙ্গ হাসি কতদিন শুনিনি।
মেয়েটা যখন অভিনয়ের সময় স্টেজে কাচভাঙা হাসি হাসতেছিল, দেখতেছিলাম কাচের টুকরোগুলো সারা স্টেজে কীরকম ছড়ায়ে পড়তেছে। তার হাসির টুকরোগুলো খুন ঝরানোর মতো ধারালো ছিল। আমি তার হাসির হরিণেরা কী করে ঘুরে ঘুরে নেচে বেড়ায় স্টেজের আলোআঁধারিতে, দেখতেছিলাম আর অবাক হচ্ছিলাম। এরকম পূর্ণাঙ্গ হাসি কতদিন শুনিনি।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে নাটকের চেয়ে হাসি বড় হয়ে উঠল? এর উত্তরে আমাকে হা হা করে হাসতে হবে। এই সময়ের সবচেয়ে তুখোড় নির্দেশক রেজা আরিফ, তার নির্দেশিত বিগ ক্যানভাসের নাটক রহু চণ্ডালের হাড়, দর্শককে দুই ঘন্টার উপরে এমন জাদুবাস্তবতার মধ্যে নিমগ্ন করে রাখে, ভুলে যেতে হয় আমি কি নাটকের বাইরের কোনো দর্শক নাকি নাটকের অংশ হয়ে আছি। এই নাটকের সেট, প্রপস, আলো, অন্ধকার এতটাই সর্বগ্রাসী, নিজেকে আলাদা করা যায় না, বারবার নিজেকে দর্শকের কাতারে ফিরিয়ে আনতে হয়। আমাদের নাটক কতটা উজ্জ্বলতর হয়ে উঠছে তার স্মারক হয়ে থাকবে রহু চণ্ডালের হাড়, আমাদের সময়ের থিয়েটারকে প্রতিনিধিত্ব করবে আরশিনগর প্রযোজনা রহু চণ্ডালের হাড়।
নাটক শেষে অতিথিদের সাথে স্টেজে দাঁড়িয়ে কথা বলেছি। নির্দেশকের সাথে হাত মিলিয়েছি, অভিনেতাদের সাথে ভাব বিনিময় করেছি। তবে সব কিছুর পর দুই ঘন্টার নাটক দেখে, নাটক থেকে একটা অপাপবিদ্ধ হাসি পিক করে নিয়ে বাড়ি ফিরেছি। ইচ্ছা আছে মাঝে মাঝে হাসিটা খুলে দেখব আর তার হাসনুহানা গন্ধ নেব।
০৯.০৩.২০১৯