:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
ক্যান্সার আক্রান্ত অকবিতা
প্রচ্ছদ: রাজিব রায়

দেলোয়ার হোসেন মঞ্জুর কবিতা

ক্যান্সার আক্রান্ত অকবিতা

১.
তোমার জন্য মালা গাঁথছি বলে রাগ করছ কেন
প্রিয় দক্ষিণ, আমার পূর্বপুরুষ তো জুতা সেলাই করতো
আমি শুধু পুষ্প সেলাই করছি

 

২.
এখনো ব্রিজ কালভার্ট কিছুই বসাইনি
চোখ পিছলে পড়ে যেতে পারো
কেউ আমার ফাটা মুখের দিকে ভুলেও তাকিও না

 

৩.
আজ নগর- বার্মিংহাম রোদ উঠেছে
আমি বলছি না- আজ প্রিয়জনের রক্তে রোদ লাগবে
ধীরে তা দুধ হয়ে যাবে…

বরং কোথাও না কোথাও যেতে ইচ্ছে হচ্ছে

যাচ্ছি
যাচ্ছি
যাচ্ছি
একা একা যাচ্ছি আমার জানাযায়

 

৪.
আমায় ক্ষমা করো দক্ষিণ
আমার ক্যান্সার-আক্রান্ত অকবিতাগুলো ভাসিয়ে দিচ্ছি কালিগঙ্গায়
কবি দেলোয়ার হোসেন সম্পাদিত কবিতাপত্রে…

দেবীদক্ষিণ
তুমি কি একবারও পাঠ করবে না
চূড়ান্ত মৃত্যুর আগে দিয়ে যাবে না কবিতার কিমোথেরাপী

 

৫.
দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আর ভালো লাগছে না
গড়িয়ে পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে

কয়েক হাজার ফুট উচ্চতায় দাঁড়িয়েছি
চূড়ান্ত চূড়ায়…

দেবী দক্ষিণ, তুমি কি করুণা করে একটু ধাক্কা দেবে
চোখের ধাক্কা

 

৬.
আজ শ্রাবণের শেষ দিন
বন্ধুবর মঞ্জু মানোহিনের বাগানে কদম ফুটেছে…

আমার চারদিকে ছোট ছোট টিলাভূমি
একটাও পাহাড় নেই
…আর তুমি তো জানোই দক্ষিণ
পর্বত থেকে লাফিয়ে আত্মহননের আনন্দই আলাদা

 

৭.
ঘুমোতে চাচ্ছিলাম। কোথাও চোখ জোড়া খুঁজে পাচ্ছি না। সম্ভবত তোমার পায়ের পাশেই ফেলে এসেছি

দরজা খোলা রেখেছি। তুমি কি একবার অনুগ্রহ করে আসবে! চোখ জোড়া ফেরত দিয়ে সন্তর্পণে ঢেলে যাবে মরফিন অন্ধকার আমার শতবর্ষের ঘুম…

 

৮.
পাখিটা কানের পাশ দিয়ে ফুরুৎ করে যাওয়া আসা করে
দোয়েল পাখিটা ধরতে পারিনি
মৃত্যু, তোমায় ধরে ফেলেছি

 

৯.
সিংহ শিকার না করেও প্রতিটা মানুষ এক একটা শিকারি
মানুষ এক অনবদ্য মৃত্যুশিকারি…

 

১০.
ঘুমিয়ে পড়বো বলে তোমার বুকে কবর খুড়েছি, সিন্দুকী কবর
দেবীদক্ষিণ, এতো রাগ করছো কেন
তুমি কি জানতে না- আমার পূর্বপুরুষ কোনো জমিদার ছিল না
গোরখোদক ছিল গোরখোদক

 

১১.
আমি সাঁতার-কাটা মানুষ
এখন হাঁটতেই ভুলে গেছি
এখন থেকে আমার কোনো হাত নেই, পা নেই, চোখ নেই
অস্তিত্ব বিলীন হলো দক্ষিণে

প্রিয় দক্ষিণ
অন্য কোনো সঙ্গ বা অনুষঙ্গে নয়
আমরা এক সঙ্গেই মারা যাব…

 

১২.
কাঠুরিয়ার দল গাছগুলো জবাই করে নিয়ে গেছে
আমার মৃত্যুদিনে কোথাও কাঠ খুঁজে পাচ্ছি না
একটা মাত্র লাশ পুড়াবো বলে
শ্মশান ঘাটে বসে আছি একা, অন্ধকারে

প্রিয় দক্ষিণ
তুমি কি জানো এই লাশের বয়স কতো
পুরো চল্লিশ বছর

 

১৩.
আমি উজিরিস্তানের নগাই সর্প
পর্বত পাড়ি দিয়ে উত্তরের দিকে যাচ্ছিলাম

দেবী দক্ষিণ
আমার উদ্যত ফণা মুঠোবন্ধি করেছ
ভাবছ- হত্যা করবে না কি পোষে রাখবে

আমি আমার যমদূত চিনে গেছি…

 

১৪.
কাল সারারাত ঘুম হয়নি। একটা অচিন জন্তুর দাঁতের নিচে কুচি কুচি হয়েছি…
প্রিয় দক্ষিণ
প্রভাতের দিকে আমি একজন কবির কফিনের ভেতর ঘুমিয়ে পড়েছিলাম

 

১৫.
আমি পুড়ে গিয়েছিলাম
এক হাজার বছর আগে শশাঙ্কের রাজধানী রক্তমৃত্তিকার নির্জন চিতায়…
দক্ষিণরূপে চিরদগ্ধ আমি
হে অগ্নি
এইজন্মে আর কী করে পোড়াবে আমায়

 

১৬.
জীবিতরাই যেন প্রখর ভাবে মৃত
আসলে কে যে মৃত আর কে যে মৃত নয়, ঠিক বুঝতে পারছি না
তাই
ভুল করি
কয়েকটা শিশু আপেল খরিদ করবো বলে বারবার চলে যাই অস্ত্রবাজারে

 

১৭.
এইবার ছোবল বসাবো
কাঠপেন্সিল খোদাই করে বের করেছি কৃষ্ণসর্প

 

১৮.
চাঁদের পেট ভালো করে সেলাই করে দাও
চন্দ্রপৃষ্ট হতে গড়িয়ে পড়ছে মূর্খ পূর্ণিমা…

 

১৯.
আমায় ক্ষমা করো দক্ষিণ
আমার বাহুতে কোনো হাত নেই। বাহুতে ঝুলে আছে কোনো এক মৃত
পশুর
বাঁকানো হাড়। বুকের মধ্যে পেঁচার কলিজা…
ঐ যে পা-জোড়া, যমুনার জলে ভেসে ভেসে কাঞ্চন নদীর কিনারে এসে
ভিড়ছে। চিতার আগুনে আধপোড়া মৃতের পা কী করে যে দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু হয়ে গেল

 

২০.
যাচ্ছি…
তোমাদের আকাশ সাবান সোডা দিয়ে পরিষ্কার করে দিয়ে যাচ্ছি
আকাশ থেকে তুলে নিচ্ছি আমার ক্যান্সার আক্রান্ত কবুতরগুলো

 

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.

error: Content is protected !!