:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
মুয়ীয মাহফুজ

কবি, সংগীতশিল্পী

চক্ষুষ্মানদের সুসভ্য অন্ধত্বের নাম বিদ্যাদর্প
শিল্পকর্ম: রাজীব দত্ত

চক্ষুষ্মানদের সুসভ্য অন্ধত্বের নাম বিদ্যাদর্প

আমি শুধু পাঠকদর্শী। কোনো এক ফুটপাতের বইয়ের দোকানে এক পাঠক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেলিম মোরশেদের দ্বারা সুলিখিত ‘নীল চুলের মেয়েটি যেভাবে তার চোখ দুটি বাঁচিয়েছিল’ নামক এই গল্পটি একদিন পড়ে নিচ্ছিল, আমিও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেই কপর্দকহীন পাঠকের অভিব্যক্তি দেখে দেখেই এই গল্পটি পাঠ করে নিয়েছিলাম। তাই আমিও ধরে নিচ্ছি আপনিও এ গল্পটি অপরের চেহারায় দেখে নিয়েছেন, আমি ধরে নিচ্ছি আপনি গল্পটি পড়েছেন। তবুও পুনর্ভাষ্যের সুবিধার্থে আমি আমার মত করে গল্পটির একটি ছোট বিবরণ দিতে চাই।

এটা একটা শহরের গল্প, এটা একটা উপরিকাঠামোর গল্প। অনেক পুরনো ও প্রাচীন শহরটি কৃষ্টি আর সভ্যতায় ভরা ছিল, ছিল জগৎজোড়া স্বীকৃতি। অধিবাসীরা সকলে নিজেদেরকে খুব সৎ আর বিবেচক ভাবত। সে শহরে হঠাৎ এলো এক যুবক, কোথা থেকে এলো তা কেউ জানে না। সে খুব আত্মবিশ্বাসী, সে নাগরিকদের সাথে মিশলো, সবাইকে জানলো, তারপরে সে বলল আপনারা সবাই ভীতু, বর্বর এবং মিথ্যাচারী! সে এরকম সিদ্ধান্তে আসার আগে নাগরিকদের কিভাবে দেখেছে? প্রথমত সে দেখেছে যখন নাগরিকরা ঘুমিয়ে থাকে। দ্বিতীয়ত নাগরিকদের সে দেখে তাদের শিল্পকর্মে, তৃতীয়ত নাগরিকেরা কিভাবে দুর্বলের মোকাবিলা করে।

যুবকটি বলে তোমরা মূলত উপরিকাঠামো পরিতোষক। নাগরিকরা বিরক্ত হয়ে এ মন্তব্যের কারণ জানতে চাইলে সে বলে তাদের আভিজাত্য আসলে যদি কাচ হিসেবে ধরা হয় নিম্নমানের হবে একটি ঘুড়ির সুতোয় মাঞ্জা দেয়ার জন্য অযোগ্য বলে তার কাছে মনে হয়। স্বভাবতই নাগরিকেরা এতে ক্ষুব্ধ হয়ে একটি সাজানো বিচার করে তার মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয় এবং গভীর রাতে শহরের পবিত্র উপাসনালয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে। হঠাৎ বৃষ্টির কারণে লাশটিকে তারা সেখানে ফেলে রেখে আসে পরেরদিন সমাধাকার্য সমাপ্ত করবে বলে। পরেরদিন একটি মেয়ে যে মেয়েটির চুল এত নীল যা দূর থেকে কালো বলে মনে হয়, সে মেয়েটি ছুটে ছুটে এসে বললো যে সেই যুবকের লাশ পাওয়া যাচ্ছে না বরং সেখান থেকে তাজা রক্তের দাগ অনেক দূর পর্যন্ত চলে গিয়েছে। নাগরিকেরা সেই রক্তের দাগ অনুসন্ধান করতে করতে একটি জায়গায় পৌঁছায় এবং সেখানে গিয়ে রক্তের চলাচল থেমে গিয়েছে। তারা সে স্থানের মাটিতে অনেক দূর খনন করে এবং অনেক গুপ্তধন আবিষ্কার করে। তারা যখনি সে গুপ্তধন আপন করে নিতে চায় তখনি তারা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ছিটকে দূরে পড়ে যায়! কেননা সেসব গুপ্তধনের উপরে লেখা আছে ‘আমি শুধু তারই যে অন্ধ’। তারপর নাগরিকরা তাদের সকল চক্ষু উপড়ে ফেলে এবং গোপনে সেই সব গুপ্তধন নিজের করে নিতে সেই গুহাতে লুকিয়ে লুকিয়ে যায়। পরে তারা যখন বুঝতে পারে তারা অন্ধ হয়ে গিয়েছে তখন তারা দ্রুত আবার চোখগুলো কুড়িয়ে নিয়ে তাদের অক্ষিকোটরে স্থাপন করে এবং বুঝতে পারে অপর নাগরিকের কাছে তাদের সেই সেই চোখগুলো অদল বদল হয়ে গেছে। ফলে তাদের ভেতরকার প্রহসনের সম্পর্কগুলো পরস্পরের কাছে ধরা পড়ে যেতে থাকে এবং সকল সম্পর্ক ভেঙে যেতে থাকে। এরকম পারস্পরিক অবিশ্বাসের কারণে তাদের স্বপ্ননগরী ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়, … সে সময়ে সেই নীল চুলের মেয়েটি সেও অনুভব করতে থাকে যে সে অন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং সেই না চাইলেও গুপ্তধনের টানে ছুটে ছুটে সেই গুহার দিকে চলে যাচ্ছে। শেষবারের মতো সে মহান সূর্যের দিকে তাকিয়ে রয় এবং সে ভাবতে থাকে যে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি জিনিসের বিনিময়েও সে তার দৃষ্টি হারাতে চায় না, চায় না সে অন্ধ হতে।

প্রিয় পাঠক, গল্পের এই শহর কি খুবই পরিচিত লাগছে না?

শহর তো মূলত একটি বহির্কাঠামোই! শ্রমিকের শ্রম ও ঘামে গড়ে ওঠা সেই বিশাল কাঠামো যার অন্তরে থাকে মানুষ আর উপরিকাঠামো/বহির্কাঠামো হিসেবে জন্ম নেয় শহর ও রাষ্ট্র! শোষণযন্ত্র হিসেবে এই রাষ্ট্রের কথা সুবিদিত। উপরিকাঠামো মূলত রাষ্ট্র, যা নাগরিকদেরকে ভোট দিয়ে মরে যেতে বলে, নাগরিককে রাষ্ট্র ভাবে নিছক বিচার বুদ্ধিহীন শোষণের একটি বস্তু হিসেবেই। যখন মানুষেরা তার অধিকারের কথা বলে রুখে ওঠে তখন তাকে খুব সুন্দর লাগে, যখনই সে ভাবে ভোট দেয়া ছাড়াও তার অন্য কর্তব্য রয়েছে তখনই রাষ্ট্র তার মৃত্যুর সুব্যবস্থা করে দেয়। তার উপর রয়েছে নিপীড়ন ও নির্লজ্জ নিয়ন্ত্রণ। ভাবি সেই যুগের কথা যে যুগে মানুষের রাষ্ট্রে ভোটের প্রহসনও ছিল না, যখন মানুষ বন্দি ছিল পুরোহিততন্ত্রের কাছে, ঈশ্বর বরাবরই রাজাদের ভালোবাসেন, ঈশ্বর রাজার রাজত্ব ভালোবাসেন, রাজত্ব বিস্তারের মন্ত্র দেন আর সেই মন্ত্র জীবৎকাল প্রচার করে চলে পুরোহিতেরা। এসকল ঈশ্বর এবং পুরোহিতের কখনই মানুষের কথা ভাবার ইতিহাস নেই কেবল আছে শোষণের সাথে বন্ধুত্বের ইতিহাস। এ তো গেল রাজতন্ত্রের কথা, একটা সময় দাসপ্রথা বিলুপ্ত হয়ে সভ্যতা এগিয়ে যায় সামন্তবাদে। প্রশ্ন জাগে সেলিম মোরশেদ-এর এই গল্পটি কোন সময়ের? এই যুবকটি কোন পুরোহিতের সন্তান? না কি ছিল রাজার সন্তান? না কি কৃষকের সন্তান অথবা সে কি সামন্ত ঘরে জন্ম নেয়া কোন পুত্র? অথবা এটি কোন সভ্যতার গান? এটি কি নিছকই কাল্পনিক গল্প, না কি সূর্যের দিকে শেষ দৃষ্টি দেয়া একটি দীর্ঘশ্বাসের শব্দ?

অন্ধত্ব সেই যুবকের ছিল না, তার দু’চোখে ছিলো সূর্যালোক আর কণ্ঠস্বরে ছিলো হীরকের মত ধার। এসব যুবকেরা কখনো হত্যা হয় না, তাদের রক্তের দাগ কখনও মুছে যায় না। তাদের থেমে যাওয়া পায়ের দাগ থেকে শুরু হয় আরও অজস্র যুবকের যাত্রা।

মনে মনে ভাবি বর্তমান সভ্যতা সামন্তীয় সকল লক্ষণ মুছে ফেলে হয়ে যেতে চায় আধুনিক, হয়ে যেতে চায় যন্ত্রচালিত, চলে যেতে চায় কারখানা যুগে। স্থির সম্পদের যুগ শেষ হয়ে মানুষ পৌঁছে গিয়েছে চলতি সম্পদের যুগে, লিকুইড মানি যুগের ক্যাশলেস জেনারেশন জানে না কৃষক কারা, কৃষি কী জিনিস। এ উপরিকাঠামো এমন জিনিস যে তা নাগরিককে দূরে রেখেছে মূল উৎপাদিকা শক্তি থেকে, নাগরিককে সে-ই বিচ্ছিন্ন করেছে প্রকৃতি থেকে। বলেছে স্মার্ট হও, মাটিবর্তী হয়ো না, মাটিতে যারা থাকে তারা অভাগা। তাই আমরা ধরে নিতে পারি লেখকের এই সভ্যতাকে হয়তো পুঁজিবাদী কোন নাগরিক সভ্যতা। কেননা এই সভ্যতা প্রাচীন সভ্যতা থেকে বিবর্তিত হয়েছে এই পর্যায়ে এসেছে। পুঁজিবাদী নাগরিক সভ্যতাতে রয়েছে রাজতন্ত্রের ধ্বজাধারী পুরোহিত তন্ত্রের আদলে গড়া আমলাতন্ত্র, ব্যবসায়ী ও কোম্পানি। সবকিছুর মূলেই রয়েছে নিয়ন্ত্রণ। এরা সবাই নিয়ন্ত্রকের হয়ে কলকাঠি নাড়ে। এ কলকাঠি নাড়ার যে কঠোর নিয়ন্ত্রণমুলক বিদ্যা রয়েছে তার শ্রেণিঘৃণামূলক একপ্রকার অর্বাচীন গর্ব রয়েছে। তাকে লেখকের ভাষায় বলা যেতে পারে বিদ্যাদর্প। কেননা, সেই যুবকটি নাগরিকদেরকে তাদের ঘুমের ভেতরেও আরো সম্পদের সুখস্বপ্ন দেখতে দেখেছে, কেননা, সেই যুবক হয়তো দেখেছে তাদের শিল্পকর্মে মূল উৎপাদিকা শক্তি যারা— সেই শ্রমিক শ্রেণির কথা অনুল্লেখিত। কেননা, এই যুবক এও হয়তো দেখেছে যে তারা প্রতিবাদী জনতার উপর কেমন নির্মম! পরিহাসের কণ্ঠে সে বলে ওঠে ‘তোমাদের এই দর্প আসলে বাস্তব জীবনের সাথে তুলনা করলে তা ঠুনকো কাঁচের মতন নরম একটা জিনিস, এই কাচ দিয়ে শিশুদের ঘুড়ি ওড়ানোর মাঞ্জা দেয়ার মত ধারালো সুতোও তৈরি হবে না!’

আমি এই গল্পটাকে আধুনিক সভ্যতায় প্রতিস্থাপন করতে চাই। দেখাতে চাই এরকম যুবকদের পরিণতি আমাদের এই আধুনিক সভ্যতাতেও একই রকম। এবার যুবকটিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার স্থানটির কথা বলি, এটি ছিল সেই নগরের পবিত্র উপাসনালয়। যখন কেউ বলে ‘হে নিয়ন্ত্রক তুমি মিথ্যে’ তখন নিয়ন্ত্রকেরা তাদের পবিত্র অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে এই কথা বলে বারবার তাদের নির্মিত উপাসনালয়ে যুগে যুগে সত্যবাদীদেরকে ও বিপ্লবীদের হত্যা করেছে। ফরাসি বিপ্লবের পরে ধর্মকে পাশ কাটিয়ে নতুন যে রাষ্ট্রব্যবস্থা হয়েছে তাতে ইউরোপে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার হিড়িক পড়ে যায়। আধুনিক গণতন্ত্র রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে ধর্মকে দূরে রাখার কথা বলে, কিন্তু ধর্মেরই আদলে নিজেকে সীমান্তে আটকে রেখে রাষ্ট্র তৈরি করে জাতীয়তাবাদ যা ব্যক্তির আঞ্চলিকতাকে ধ্বংস করে, যেমন করে তা ধ্বংস করেছে সামন্তীয় যৌথ পরিবারকে। এমনি সেই যুবকটিও হয়তো ভাগ্যাহত হয়ে সব হারিয়ে অনেক স্বপ্ন নিয়ে কোন অঞ্চল থেকে আসা। ধরে নিলাম শহরে উচ্চশিক্ষার্থে এসেছিল। শিক্ষালয়ে সে পেল শুধু আদেশ পালনের সার্টিফিকেট, তার মতো আরো অনেক যুবকের মত সেও শিখলো নিজের আঞ্চলিকতা চেপে সুসভ্য নাগরিক হবার অভিনয় করা। একটা সময় বিদ্রোহী হয়ে উঠল— তোমরা যারা নাগরিক হবার পথে কিংবা যারা নাগরিক হয়ে গিয়েছে তারা সকলেই মূলত মিথ্যুক। আর এই সত্য কথাটি বলার কারণেই তাকে হয়তো উপাসনালয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়, মারা যাবার আগে সে অস্ফুটে বলে ওঠে তোমরা সবাই ধ্বংস হবে।

আমরা জানি মানবসভ্যতাকে যারা এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য মৃত্যুবরণ করেছে তাদের মৃতদেহ হয়ত লুকানো যায় কিন্তু তাদের উচ্চারিত চেতনা কখনো লুকানো যায় না, তাই তার লাশ নাগরিকরা আর খুঁজে পায়নি, তারা যুবকের রক্ত অনুসরণ করে ঘুরে বেড়িয়েছে আর আর যুবকটিও মুক্তির গুপ্তধনের স্বপ্ন দেখিয়েছে একটি গুহায়। নাগরিকরা যখনই স্বীকার করলো যে তারা অন্ধ এবং তাদের দৃষ্টি বিনিময় করে সেই গুপ্তধন যখন চুরি করল তখন তারা দেখল মুক্তির অনেক পথ বাকি। কিন্তু তারা এই পথে যেতে রাজি নয়। এদিকে দৃষ্টি বিনিময় করার কারণে পরস্পরের প্রতি অন্যায়গুলো ধরা পড়ে যেতে থাকে। তারা মুখে ক্ষমার কথা বললেও ক্ষমা করার স্থৈর্য তাদের ছিল না। ফলত ব্যক্তিগত ক্রোধ, ঘৃণা ও ব্যক্তিগত সম্পদ আকাঙ্ক্ষায় তাদের ভিতর শুরু হলো খুনোখুনি ও অপরাধ যা গোটা সভ্যতারই বিনাশ ঘটাতে যাচ্ছিল। ধীরে ধীরে তারা যখন নিজেদেরকে নিজেরাই ধ্বংস করছে তখন একমাত্র মানুষ যাকে এসব কোনো কিছু স্পর্শ করছিল না, সেও বুঝতে পারে যে সে নিজেও অন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, এ হয়তো নিছকই এক পুরাতন নগরের গল্প, আমিই হয়তো এতসব অতিশয়োক্তি করেছি। না এতে নগর বন্দনা নেই, নগরস্ফুর্তি নেই, নগরনিন্দাতেও ভর্তি নয়। নেই এতে অহেতুক গ্রামবন্দনা। এই যে গ্রামের অপরূপ সৌন্দর্য, বাতাসে ধানের ক্ষেতের শস্যের দোলা— নগরবাসীর মত কৃষকেরই এইসব সৌন্দর্য দেখার আমোদ আর অবসর কই? সে বঞ্চিত তার ন্যায্য দাম থেকে, সে চিন্তিত খরা ও শস্যের মড়ক নিয়ে। সেই যুবকটি যেন এমনই শ্রমঘনিষ্ঠ কোনো এলাকা থেকে এসেছে। যেন সেও চেয়েছিল এসব শস্যশিল্পীর মুখেও হাসি ফুটুক। তাই যেন সেই সবুজ সত্যের পিয়ন হয়ে এসেছিলো এ নগরে। তোমরা এর আগেও হাজার বার তাকে ভুল বুঝেছ, তাকে চেনোনি এবারো। সে তোমাদের দিতে চেয়েছিল জীবন, তোমরা বারবার তাকে দিয়েছ মৃত্যু। তবুও সভ্যতা এগিয়ে চলে। পুরাতনের গর্ভে জন্ম নেয়া এই নতুনেরা বৈপরীত্য করে, সভ্যতা বৈপরীত্যকে গ্রহণ করে ভাঙনের পথে এগিয়ে চলে। এ ভাঙনের পথ সুমসৃণ নয়। ভাঙাগড়া এর স্বভাব। যেন এক খেয়ালি কবির মত এই নতুনেরা পুরাতনের ধ্বংসাবশেষ থেকে শুরু করে নতুন যাত্রা। পরিবর্তনের তোমাদের এ সভ্যতা যেন এক বৈপরীত্যের ঐক্যবিশেষ!

তবুও চিরকালই সমাজে রয়ে যায় সমাজবিরোধী লুটেরাদের অন্ধত্ব। এই যে এই অন্ধত্ব, এটা কিসের অন্ধত্ব? জীবনানন্দ দাশ তার ‘অদ্ভুত আঁধার এক’ কবিতায় কাব্যিক সুরে বলেছিলেন: যখন পৃথিবীতে অদ্ভুত আঁধার গ্রাস করে তখন অন্ধরাই সবচেয়ে বেশি চোখে দেখে।

অন্ধত্ব সেই যুবকের ছিল না, তার দু’চোখে ছিলো সূর্যালোক আর কণ্ঠস্বরে ছিলো হীরকের মত ধার। এসব যুবকেরা কখনো হত্যা হয় না, তাদের রক্তের দাগ কখনও মুছে যায় না। তাদের থেমে যাওয়া পায়ের দাগ থেকে শুরু হয় আরও অজস্র যুবকের যাত্রা।

পরিশেষে, সেই নীল চুলের মেয়েটিকে দেখি সে এই যুবকের মৃত্যু মানতে চায়নি, ভাবতে চেয়েছে এই যুবক মারা যায়নি। তবুও সমাজের অসুখে মেয়েটিকেও যখন অন্ধত্ব বরণ করতে হয় যে অন্ধত্ব সে চায়নি, তখন শেষবারের সূর্যালোকের দিকে তাকিয়ে সে কি ভেবেছিল? সে কি আসলেই তার দুচোখ বাঁচাতে পেরেছিল?

আপনার মতোই আমারো তা জানতে ইচ্ছে করে।

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.

error: Content is protected !!