ডুবে যাওয়া ততো বেদনার নয় : এমিলি ডিকিনসনের কবিতা
[ আমেরিকান কবি এমিলি ডিকিনসন এর জন্ম ম্যাচাসুসেটস এর আমহার্স্ট-এ (১৮৩০-১৮৮৬)। তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের চেয়ে অগ্রসর একজন কবি, একজন বিরল-অতিপ্রজ-অন্তর্মুখী ব্যক্তিগত-অনুষঙ্গের কবি। অথচ তাঁর রচিত প্রায় ১৮০০ কবিতার মধ্যে মাত্র এক ডজনেরও কম তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়। তাঁর যে লেখাগুলো প্রকাশিত হয়েছিলো, তা-ও প্রকাশকেরা প্রচলিত কাব্যভঙ্গির নিয়মের মধ্যে সাজাতে গিয়ে মারাত্মকভাবে পালটে ফেলেছিলো। যে সময়কালে ডিকিনসন কবিতা লিখেছেন, সে সময়ের জন্য তাঁর কবিতাগুলো ছিলো সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী ও ভিন্নধর্মী।
এখানে এমিলি ডিকিনসন এর কয়েকটি কবিতার বাংলা অনুবাদ দেওয়া গেলো। যদিও তিনি কোনো শিরোনাম ব্যবহার করতেন না, তবু পড়ার ও মনে রাখার সুবিধার্থে কবিতার প্রথম চরণকে শিরোনাম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। পি জে কাভানাঘ ও জেমস মিশি সম্পাদিত ‘দ্য অক্সফোর্ড বুক অব শর্ট পোয়েমস’ গ্রন্থে এভাবেই নির্বাচিত কিছু কবিতা সংকলিত হয়েছে। তবে কিছু কবিতা এ ডাবলু এলিসন ও অন্যদের সম্পাদিত ‘দ্য নরটন এন্থলজি অব পোয়েট্রি’র তৃতীয় সংস্করণ থেকেও নেওয়া হয়েছে। এমিলি ডিকিনসনের অধিকাংশ কবিতাই সমিল, তবে অনুবাদে মূলানুগ থাকার উদ্দেশ্যে বাংলায় অন্তমিল বজায় রাখা সবসময় সম্ভব হয়নি। -অনুবাদক ]
নিদারুণ যন্ত্রণার দৃষ্টি ভালো লাগে
আমার নিদারুণ যন্ত্রণার দৃষ্টি ভালো লাগে,
কারণ আমি তো জানি বাস্তবতা তার;
মানুষেরা খিঁচুনির ভনিতা করে না,
এমনকি নকলও না তীব্র বেদনার।
চোখগুলো একদিন চকচক করে ওঠে, আর সেটাই মরণ।
পরিচিত পীড়ন-যাতনা দিয়ে তো
জপমালা কপালে ঝুলিয়ে
ছলচাতুরি কিছুতে সম্ভব নয়।
আমার জীবন থামার আগেই দুবার থেমেছে
আমার জীবন থামার আগেই দুবার থেমেছে
এখনো দেখতে চায়
অমরতা যদি উন্মোচিত হয়
আমার জন্য তৃতীয় পর্ব হবে,
এতো ব্যাপক, এতো হতাশার – এইসব মেনে নিতে
যা দুবার পিছু হটেছে আগেই।
স্বর্গ বিষয়ে যতোটুকু জানি – বিচ্ছেদই সব;
আর আমরা সকলেই দোজখের প্রয়োজনে।
আমি কেউ নই
আমি কেউ না! তুমি কে?
তুমিও কি কেউ না?
তবে কি আমরা একজোড়া আছি?
কাউকে বলো না! তারা বিজ্ঞাপন দেবে, তুমি তো জানোই!
কেউ একজন হওয়া কতোটা বিষাদময়!
কতো প্রকাশ্য সে – একটা ব্যাঙের মতোন –
দীর্ঘায়ু জুন আর স্তুতিকারী জলাকে
কেবল একজনের নাম বলার জন্যে
ডুবে যাওয়া ততো বেদনার নয়
ডুবে যাওয়া ততো বেদনার নয়
যতোটা ভেসে ওঠার চেষ্টা।
বলা হয়, তিন তিন বার, এক ডুবন্ত মানুষ
উঠে আসে আকাশের মুখোমুখি হতে,
আর তারপরে চিরতরে ডুবে যায়
সেই ঘৃণ্য নিবাসে,
যেখানে প্রত্যাশা আর সে সঙ্গী পরস্পর-
কারণ সে ঈশ্বরের করায়ত্ত।
কারিগরের আন্তরিক মুখচ্ছবি,
যতোই দেখাক ভালো, এড়িয়ে যায়,
বিদ্বেষের মতো-
আমাদের মানতেই হবে।
‘তারা বলে সময় উপশম করে’
তারা বলে সময় উপশম করে।
সময় কখনও উপশম করেনি তো।
একটা প্রকৃত যন্ত্রণা শক্তিমান হয়ে ওঠে,
যেমন পেশীতন্তু, বয়সের সাথে সাথে।
সময় হলো ভোগান্তির পরীক্ষা বিশেষ,
তবে প্রতিকার নয়।
তেমন যদি প্রমাণ মেলে তো, এটাও প্রমিত তবে –
আসলে সেখানে পীড়া-ই ছিলো না।
তক্তায় রেখেছি পা ধাপে ধাপে
তক্তায় রেখেছি পা ধাপে ধাপে,
ধীর ও সতর্ক পদক্ষেপে;
তারারা মাথার চারপাশ জুড়ে, মনে হলো,
পদপ্রান্তে সাগরের জলও।
একটু পরেই; – জানতে পারিনি যদিও
সর্বশেষ ইঞ্চিটুকু আমার চলিষ্ণুতার।
পদক্ষেপ তাই অনিশ্চিত টলোমলো
কেউ কেউ বলে – অভিজ্ঞতার।
শব্দ হলো যেন রাস্তাগুলো দৌড়াচ্ছে
শব্দ হলো যেন রাস্তাগুলো দৌড়াচ্ছে
আর তারপরে তারা স্থির দাঁড়িয়ে পড়ে;
খিড়কি দিয়ে যা দেখেছি – সকলই গ্রহণ করি,
আর সমীহ করেছি যা আমরা অনুভব করতে পেরেছি।
অচিরেই, তার গুপ্তস্থানে ধৃষ্টতার সাথে চুরি হয়
দেখি, যদি আরও কিছু সময় থাকতো।
প্রকৃতি উপল এপ্রোনে আবৃত,
মিশিয়ে দিচ্ছে বিশুদ্ধ বাতাস।
আমি কখনও তেমন একটা হারিয়ে যাইনি
আমি কখনও তেমন একটা হারিয়ে যাইনি, কেবল দুবার ছাড়া
আর তা ছিলো ঘাসের চাপড়ায়।
দুবার আমি ভিক্ষুকের বেশে দাঁড়িয়েছি
ঈশ্বরের দরোজার সামনে!
দেবদূতেরা – নামার সময়ে দুবার
আমার দোকানে মূল্য পরিশোধ করে –
জালিয়াত! ব্যাংকার – ফাদার!
আমি আবারও দীন হলাম!
বিশ্বাস এক চমৎকার আবিস্কার
“বিশ্বাস” – এক চমৎকার আবিস্কার
যখন ভদ্রলোকেরা দেখতে পায় –
কিন্তু মাইক্রোস্কোপগুলো বিচক্ষণ
জরুরী ক্ষেত্রে।
বুনো রাতগুলো
বুনো রাতগুলো – হায় বুনো রাত
তোমাদের সাথে আমি কোথায় রয়েছি
বুনো রাতগুলো আমাদের
বিলাসিতা হওয়া চাই!
বৃথা – বাতাসেরা –
এক হৃদয় বন্দরে হুহু করে –
কম্পাসের কাঁটার সাথে সাথে –
নকশার সাথে সাথে !
ইডেন-এর সাথে দাঁড় টেনে –
আহা, সংক্ষুব্ধ সাগর!
আমি কী বিস্তীর্ণ পতিত জমি হতে পারি –
আজ রাতে – তোমার অভ্যন্তরে!
প্রচ্ছদ : রাজিব রায়
আরও পড়ুন- এমিলি ডিকিনসন-এর কবিতা ও জীবন