:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
তানভীর মোকাম্মেল

চলচ্চিত্রকার

বাংলাদেশের বিকল্প সিনেমা আন্দোলন : জমা, খরচ ও ইজা
প্রচ্ছদ: রাজিব রায়

পর্ব : ৩

বাংলাদেশের বিকল্প সিনেমা আন্দোলন : জমা, খরচ ও ইজা

বাংলাদেশের বিকল্প সিনেমা আন্দোলন : জমা, খরচ ও ইজা (পর্ব : ২) এর পর থেকে-

পুরস্কার নিয়ে একটা মাতামাতি আছে বাংলাদেশে। পুরস্কারের লোভে কিছু লোকেরা নানারকম খুদকুড়ো ছড়ায়! ফলে পুরস্কারের নামে এদেশে নানা অনৈতিক কার্যকলাপ অহরহই ঘটে। এসব পুরস্কার তাই তেমন কিছু প্রমাণ বা অপ্রমাণ করে না। অনেক দূর্বল ছবিই নানা লবিংয়ের কারণে পুরস্কার পেয়ে যেতে পারে, আবার অনেক শিল্পসম্মত ছবিও পায় না। ফলে পুরস্কারই কোনো ছবির শিল্পবিচারের মাপকাঠি নয়। ঋত্বিক ঘটকের ছবি কী পুরস্কার পেয়েছে! তবুও, আজো ঋত্বিকের ছবি নিয়েই বেশী গবেষণা হচ্ছে, দেশে-বিদেশের গবেষকেরা বই-কেতাব লিখছে। অথচ সে সময়কালের রাষ্ট্রীয় বা জাতীয় পুরস্কার পাওয়া অনেক ছবির কথা লোকে ভুলেই গেছে। কোনো ছবির শিল্প হয়ে উঠতে পারাটাই বড় কথা, পুরস্কারের সংখ্যা নয়। বিকল্পধারার একজন নির্মাতাকে পুরস্কারের এই কাঙালপনার উর্ধ্বে উঠতেই হবে।

ওই যে জীবনান্দ দাশ বলেছিলেন-“জগতে নেই কোনো বিশুদ্ধ চাকুরী”। চাকুরী করে শিল্প হয় না। সব ছাড়তে হবে। রবীন্দ্রনাথের কথাই: “আমাকে যে সব দিতে হবে/ সে তো আমি জানি।” সব দিতে যদি রাজি থাকেন, তাহলেই এ ধারার কাজে নামা উচিৎ। আর রাজি না থাকলে, বুঝতে হবে শিল্প সৃষ্টি ঠিক আপনার কাজ নয়। বিকল্প সিনেমা তো নয়ই। আন্দ্রে ভাইদার “দি কন্ডাকটার” ছবির বৃদ্ধ পিয়ানোবাদক শিল্পীটি পিয়ানোবাদক-হতে-চাওয়া তার মেয়ের প্রেমিক যুবকটিকে বলেছিলেন: “এটা তোমার লাইন নয়, অ্যাডাম। তুমি অন্য কোনো কাজে চলে যাও।” সকলেই কবি নহে, কেহ কেহ কবি। তেমনি সকলেই শিল্পী নন, সৃজনশীল নন। যারা অন্তরে শিল্পী নন, সৃজনশীল নন, তারা স্বকল্প, বিকল্প, কোনো ধারার সিনেমাতেই তেমন কোনো অবদান রাখতে পারবেন না। এক পর্যায়ে তারা হতাশ হবেন, হতাশা ছড়াবেন। বিকল্প সিনেমার জগৎ ছেড়ে চাকুরী, ব্যবসা বা অন্য পেশায় যাওয়াই তাদের জন্যে মঙ্গলজনক হবে।

আর সত্যিকারের সৃজনশীল তাড়না যার ভেতরে আছে সৃষ্টি সে করবেই। কারণ অন্যথায় তো সে রাতে ঘুমোতেই পারবে না! অন্যরা চলচ্চিত্র নিয়ে কথাবার্তা বলবে, নানা রকম পরিকল্পনা করবে, অনেক বাজেট তৈরি করবে, কিন্তু সিনেমা সৃষ্টি হবে না! ছবি বানাতে গেলে ক্যামেরা নিয়ে গ্রামে-গঞ্জে, বস্তিতে, নদীর কিনারে, হাটে-মাঠে ঘুরে বেড়াতে হয়। সৃষ্টিশীলতার এ এমন এক ঘোরের জগৎ যে আপনার পরিবার বা বউ আপনাকে ভুল বুঝবে, বুঝতে হবে সঠিক বিয়েটা আপনি করেননি, আপনার প্রেমিকা আপনাকে ছেড়ে চলে যাবে, বুঝবেন সঠিক প্রেমটি করেননি, আপনার বন্ধুরা দূরে সরে চলে যাবে, তারা হয়তো সঠিক বন্ধু ছিল না। আপনাকে চালিত করবে শুধুই কেবল আপনার সৃষ্টিশীলতার তাড়না। তা আপনাকে নিয়ত  উদ্বেলিত করবে, উত্তেজিত করবে, ক্ষেপিয়ে বেড়াবে। তবে মনের গভীরে ওই বিশ্বাসটা রেখে এগোতে হবে, শান্তিনিকেতনের সাদা দাড়িওয়ালা সেই বৃদ্ধটিরই কথা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যাঁর নাম, যে– “Work Will Win”। কাজটাই বিজয়ী হবে। কথা, অহং বা অভিমান নয়। তাই কাজগুলো করে ফেলাটা জরুরী। সব কিছু ছেড়ে।

সৃষ্টিশীলতার এ এমন এক ঘোরের জগৎ যে আপনার পরিবার বা বউ আপনাকে ভুল বুঝবে, বুঝতে হবে সঠিক বিয়েটা আপনি করেননি, আপনার প্রেমিকা আপনাকে ছেড়ে চলে যাবে, বুঝবেন সঠিক প্রেমটি করেননি, আপনার বন্ধুরা দূরে সরে চলে যাবে, তারা হয়তো সঠিক বন্ধু ছিল না। আপনাকে চালিত করবে শুধুই কেবল আপনার সৃষ্টিশীলতার তাড়না।

ছবি তৈরির নানা রকম সুযোগ অবশ্য তরুণদের সামনে ইদানীং তৈরি হচ্ছে যা আগে ছিল না। তবে সুযোগ তারই সামনে আসে যে প্রস্তুত থাকে। ওই যে হ্যামলেট বলেছিল “Readiness is all”। আর মনে রাখতে হবে সুযোগ সর্বদাই আসে কোনো একটা কাজের আবরণে। প্রথমে মনে হবে যেন এটা একটা কাজ। কিন্তু তার আড়ালেই ঢাকা থাকে সম্ভাবনা। এবং কাজটা যত কঠিন, সুযোগ ও সম্ভাবনাও ততই বেশি।

কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো নানাভাবে এদেশের বিকল্পধারার ছবিকে ক্ষতি করার চেষ্টা করে থাকে। করবেও। তারা শত্রু  চেনে। প্রথমত: তারা ক্ষতি করে আমাদের ছবিগুলি সম্পর্কে তাদের পত্রিকাগুলোতে নানা নেতিবাচক সমালোচনা ছাপিয়ে। অথবা করে, নীরবতা দিয়ে এসব ছবির মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টা করে। ইংরেজীতে যাকে বলে “Kill by silence”। তাই এটা ধরেই নিতে হবে যে কর্পোরেট মিডিয়া আমাদের সহায়তা করবে না। তাদের চ্যানেলগুলো আমাদের ছবি তেমন দেখাবে না। আর দেখালেও যে অর্থটা দেবে, তার অঙ্কটা হাস্যকর। আর কর্পোরেট স্বার্থের বড় বড় পত্রিকাগুলো তো আমাদের ছবির খবর পারতপক্ষে ছাপবেই না।

একটা সমাজে সত্যিকারের সৃজনশীল মানুষ খুব বেশী থাকে না। একটা সভ্য রাষ্ট্র ও সমাজের কর্তব্য থাকে একজন শিল্পীর সৃজনশীলতার বিকাশ ও প্রকাশে সর্বাত্মক ভূমিকা রাখা। আর রাষ্ট্র যদি তা না রাখে আমাদের পরস্পরের কর্তব্য হবে পরস্পরের সাহায্যে এগিয়ে আসা, পরস্পরকে সাহায্যের মাধ্যমে যৌথভাবে এগিয়ে চলা। সে কারণেই আমরা যৌথ সিনেমার কথা বলেছি। বর্তমানে আরো জোর দিয়ে বলছি। কারণ এদেশের কর্পোরেট পুঁজি দ্রুত বিকশিত হচ্ছে এবং তারা বিকল্প সিনেমাকে গিলে খেতে চায়। টিঁকে থাকতে হলে কর্পোরেট পুঁজির ব্যক্তিস্বার্থের বিপরীতে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে যৌথভাবে সিনেমা তৈরী করা, এক ধরণের– ফিল্ম কালেকটিভ। বিকল্প সিনেমার নির্মাতাদের নিজেদেরকে যৌথভাবে এ ধরণের ফিল্ম কালেকটিভ-য়ে সংগঠিত হতে হবে। একা একা লড়তে গেলে তাদের অবস্থা ‘মহাভারত’-এর অভিমন্যুর মতোই হবে। কর্পোরেট পুঁজির বুহ্যের ভেতরে হয়তো ঢুকতে পারবেন, কিন্তু বের আর হতে পারবেন না।

শুরুটা আদর্শই ছিল। সামরিক শাসনের সময়কালে এজিট প্রপ ধারায় তৈরী “আগামী”-“হুলিয়া” এসব ছোট ছবি সে যুগের রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে তাদের ভূমিকা রেখেছে। আমরা সব সময় বিশ্বাস করে এসেছি বিকল্পধারার নির্মাতারা এমন ছবি করবে যা শাসকশ্রেণীর সপক্ষে নয়, কথা বলবে জনগণের সপক্ষে, বিশেষ করে জনগণের বঞ্চিত অংশগুলির কথা তারা তুলে ধরবে। তারা হয়ে উঠবে ভাষাহীনদের কন্ঠ– voice to the voiceless। অনেক সংকটের মধ্যেও আমরা আশা রাখি নতুনেরা অন্তত: সবাই কর্পোরেট পুঁজির কাছে বিকোবে না। হারাবে না বিদেশি ফেস্টিভ্যালের মোহনীয় জগতে। কিছু তরুণ সব সময়ই থাকবে যারা এদেশের বঞ্চিত জনগণের জন্যে, জনগণের স্বার্থে ছবি তৈরী করতে চাইবে, আঁকতে চাইবে আমাদের দু:খিনী বাংলা মায়ের প্রকৃত রূপ ও সঙ্কট। আর তারা ছবি তৈরি করবে বিকল্প ধারাতেই।

ডিজিটাল প্রযুক্তি বর্তমানে চলচ্চিত্রনির্মাণের প্রক্রিয়াটার এতই বি-রহস্যকরণ ঘটিয়েছে, বিশেষ করে ইরানের সৃজনশীল সব নির্মাতাদের দ্বারা, যে গদার হয়তো যথার্থই বলেছেন সিনেমার জন্ম হয়েছিল গ্রিফিথের হাতে, মৃত্যু ঘটল কিয়ারোস্তামির হাতে! হ্যাঁ, পুরনো কায়দার বিশাল সব যন্ত্রপাতি, কৃত্রিম সেটের সিনেমা তৈরির দিন শেষ। এখনকার ক্যামেরা পালকের মতোই হালকা। তবে সিনেমা হালকা হলে চলবে না, হওয়া চাই কিয়ারোস্তামির ছবির মতোই বহুস্তরবিশিষ্ট, হওয়া চাই মায়াকোভঙ্কির ইজের-পরা-মেঘের মতোই–গভীর।

জমা-খরচ তো হো’ল, এখন ইজা, মানে হাতে রইল কী? শুধুই কী পেন্সিল! না, তা নয়। রয়েছে সুবিশাল ও বৈচিত্র্যময় এক অভিজ্ঞতা যা থেকে আগামী দিনের তরুণেরা অনেক কিছুই শিখতে পারবেন।

অনেক সংকটের মধ্যেও আমরা আশা রাখি নতুনেরা অন্তত: সবাই কর্পোরেট পুঁজির কাছে বিকোবে না। হারাবে না বিদেশি ফেস্টিভ্যালের মোহনীয় জগতে। কিছু তরুণ সব সময়ই থাকবে যারা এদেশের বঞ্চিত জনগণের জন্যে, জনগণের স্বার্থে ছবি তৈরী করতে চাইবে, আঁকতে চাইবে আমাদের দু:খিনী বাংলা মায়ের প্রকৃত রূপ ও সঙ্কট। আর তারা ছবি তৈরি করবে বিকল্প ধারাতেই।

বিকল্পধারায় বাংলাদেশে কতগুলো ধ্রুপদী ছবি হয়েছে, এই ধারা দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে কতটা পৌঁছতে পেরেছে, কতটা গভীর ও সুদূরপ্রসারী হতে পেরেছে আমাদের সংস্কৃতিতে বিকল্প সিনেমার প্রভাব, কেবল সেসব বিচারই বিকল্পধারার আন্দোলনের সাফল্যের একমাত্র মাপকাঠি নয়। বাংলাদেশের বিকল্প সিনেমা একটা ধারা, একটা মডেল। এখন অন্য কেউ যদি এই ধারাটাকে অনুসরণ করে, এখান থেকে কিছু শেখে এবং তারা যদি আমাদের সংগঠন না-ও করে, এমন কী আমাদের বিরুদ্ধ পক্ষও হয়, কিন্তু আমাদের কর্মপন্থাগুলি যদি অনুসরণ করে, তবে তা আমাদের বিকল্পধারারই সাফল্য বলে মনে করতে হবে। এদেশে এখন অনেক চলচ্চিত্রকার রয়েছেন, বিশেষ করে বয়সে তরুণ, যারা নিজেদেরকে হয়তো ঠিক “বিকল্পধারার চলচ্চিত্রকার” বলেন না, কিন্তু তাদের ছবি তৈরির প্রক্রিয়া ও সেসব ছবির প্রদর্শনের ব্যাপারে তারা আমাদের শুরু করা পথের অনেক কিছুই আজ অনুসরণ করে থাকেন। সেটাও তো আমাদের বিকল্পধারারই এক ধরণের সার্থকতা।

একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, প্রতিষ্ঠান থাকলেই তার বিকল্প থাকবে। প্রতিষ্ঠান তার রূপ, চরিত্র ও ধরণ পাল্টালে বিকল্পও তার রূপ, চরিত্র ও ধরণ পাল্টাবে। এ এক নিয়ত ছায়াযুদ্ধ। যেখানেই প্রতিষ্ঠান সেখানেই তার বিকল্প। তা সে চলচ্চিত্র নির্মাণ, প্রচার ও প্রদর্শন যেখানেই হোক। ফলে আমাদেরকেও নিয়ত পাল্টাতে হবে। এক সময় ভালো ছবি বানিয়েছি সেই আত্মপ্রসাদ নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। আর একটা ব্যাপারেও সতর্ক থাকাটা জরুরী। তা হচ্ছে বিকল্পও এক সময় মূলধারা হয়ে উঠতে পারে। তখন প্রয়োজন তারও বিকল্প। প্রতিনিয়ত নিজেকে নবায়ন করা, যুগোপযোগী করা, জন-বান্ধব করা। এমনও হতে পারে এক সময় বিকল্পধারার যারা বড় প্রবক্তা ছিলেন জীবনের চাপে তারা পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারেন। ব্যক্তি পতনশীল, পচনশীলও। কিন্তু সত্য ও শিল্প পতনশীল নয়, পচনশীল তো নয়ই। ব্যক্তি হয়তো ঝরে পড়তে পারেন, বসে পড়তে পারেন, কিন্তু চলচ্চিত্র নির্মাণের একটা ধারা হিসেবে বিকল্পধারাটা এদেশে টিঁকেই রইবে।

এটা ঠিক যে বাংলাদেশের বিকল্প সিনেমা তার জন্মলগ্নে যে সম্ভাবনা দেখিয়েছিল পরিণতি সে রকম হয়নি। সব কিছু আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়নি। তবে খুব দূরেও যায়নি। আমাদের বয়স হয়েছে। তবুও আমরা এখনও ময়দান ছেড়ে যাইনি। তবে আমরা সব সময় ভরসা রাখি এদেশের তারুণ্যের উপর। বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীরা পৃথিবীর যে কোনো দেশের তরুণদের সমকক্ষ। তারা পারে না এমন কাজ নেই। এ কথা আমি ভুলি না যে বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের বয়স মাত্র তেইশ বছর! এবং তারা অনেক সময়ই পৃথিবীর অনেক বাঘা বাঘা দেশকে হারিয়ে দেয়। এক যুগের তরুণেরা বাংলাদেশে এই বিকল্প ধারার আন্দোলন শুরু করেছিল, আরেক যুগের তরুণেরা সেটা এগিয়ে নিয়ে যাবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি। নদীমাতৃক দেশ আমাদের। আমরা জানি ভাঁটা যেমন আসে, তেমনি জোয়ারও এক সময় আসবেই। এবং আসে অবধারিতভাবেই। তাই হতাশ হওয়ার কিছু নেই। সব যুগেই, সব কালে, তরুণেরা প্রতিবাদী হবেই। তারা তাদের স্বপ্নের ছবি বানাতে চাইবে। এবং বানাবে–বিকল্পধারাতেই।

আর আমাদের মধ্যে যারা দেশে-বিদেশে ফিল্ম ইনস্টিটিউটে পড়ার সুযোগ পেয়েছে বা চলচ্চিত্রের মতো সর্বাধুনিক শিল্পমাধ্যমটি শেখবার সুযোগ পেয়েছে, শুধুমাত্র সুবিধাপ্রাপ্ত সেরকম কিছু ব্যক্তিরা নয়, আজ সবাই-ই হোক নির্মাতা। বর্তমানের আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তি, এই যুগ, আমাদের সামনে সে সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। আসুন সেই নতুন যুগকে স্বাগত জানাই। শত বছর আগে এক বাঙ্গালী, আমাদের মাণিকগঞ্জের এক গাঁয়ের ছেলে হীরালাল সেন যা শুরু করেছিলেন, সেই চলচ্চিত্র মাধ্যমটি আজ শতগুণে বিকশিত–প্রভাবে, প্রযুক্তিতে। তাকে আজ আমরা সারা বাংলায় আরো ছড়িয়ে দিই। চলচ্চিত্র শুধু সিনেমা হলে বা টেলিভিশনের পর্দায় নয়, সৃষ্টি হোক, প্রচারিত হোক, ইউটিউবে, ল্যাপটপে, মোবাইল ফোনে। ছবি হোক ঘরের দেয়ালে, মুক্ত আকাশে। ছবি হোক আমাদের হৃদয়ের গভীরে গভীরে। এই স্বপ্নই আমি দেখি।

আসলে বিকল্প সিনেমা একটা স্বপ্নেরই নাম। শুরুটা হয়েও ছিল এক স্বপ্ন দিয়ে। মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে স্বাধীনতা, অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি ও গণতন্ত্রের বিকাশের স্বপ্ন নিয়ে। সত্তর-আশির দশকে আমরা যারা বড় হয়েছি, সোনার বাংলার স্বপ্ন আমরা কখনও ভুলিনি। সোনার বাংলা গড়বে সোনার মানুষেরা। আর সে সোনার মানুষেরা হবে বাঙালির সাংস্কৃতিক চেতনায় ঋদ্ধ, বিশ্ব মানবতায় সমৃদ্ধ, এবং তাদের সেই উন্নত সংস্কৃতি চেতনায় আমরা সর্বাধুনিক শিল্পমাধ্যম চলচ্চিত্রকে রাখতে চাই খুব বড় এক জায়গায়। কারণ চলচ্চিত্র হবে আগামী প্রজন্মেরও সবচেয়ে প্রিয় শিল্পমাধ্যম। তো সেই শিল্পিত সোনার বাংলার স্বপ্ন জারি থাকুক। জারি থাকুক বিকল্প সিনেমার স্বপ্নগুলিও।

সমাপ্ত 

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.