:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
বিজয় আহমেদ

কবি

বাতাসের ভারে, মৃত্যু
প্রচ্ছদ: রাজিব রায়

দীর্ঘ কবিতা

বাতাসের ভারে, মৃত্যু

ডেকে গেল মেঘ, নদীর বোয়াল, আঁটকুড়া চাষি
তোমার জেওর থেকে কুড়ালাম শস্য রাশি রাশি।
রোদ উঠে গেল, সঙ্গী হল পথে জিন-পরি-দল
বাতাসের ভার সয়ে আমাকেই মরে যেতে হল।

কিছু সুবাসের পথে কিছু খোঁপা আজন্ম খুলেছে
যেন জিন্দা পীর বেভুলের মত পরান দিয়েছে।
জমিনের বুক ছুঁয়ে, ভেবে নাও কদম রসুল
যদিও পুরুষ শস্যখেত আর বাথানে উন্মুল।

ইশারায় ডাকো যেন দূর থেকে ফিদা হয় পাখি
কাফেরের বুকে প্রেম টলমল নিভে জ্বলে জানি।
প্রেমের ওজন সবচেয়ে বেশি আসমানে লেখা
মৃত্যুর পরেও জান, নদীতলে দিও তুমি দেখা।

আমি তো রাখাল উদাসী দিবসে বাজিয়েছি বাঁশি;
পরির হেঁয়ালি, নাভী-স্তন-ডানা, আসমানের শেষে
দেখেছি, গিয়েছে মরে, গোত্তা খেয়ে বুক-গুলিস্তানে!
আমি যে মরেছি তুমি কি জানো না সোনা তার মানে?

ইরিধান গেল খোদার আরশ পানে, পেল গন্ধ।
চক্করের পর জানি কিছু পাখি পায় হীরা ডানা;
তুমি বুক খুলে দিলে দুনিয়ার, জন্মালো ঈগল।
আর বাতাসের ভার সয়ে আমাকেই মরে যেতে হল।

২.
আরো কোনো চৈত্রদিনে, যদি বেঁচে থাকি মনোরোগ
ভুলে। যদি বোরো ধান কাটা হয় দূরের হাওরের
যদিবা তরমুজ খুব হয় লাল, যদি মাছি আসে
অনেক হলুদ কুটুম পাখির মত, যদি তুমি
মনে পড়ো, আহা যদি তুমি সিনা ধরে টান মারো
আচমকা যেভাবে সূর্যাস্তের দিকে যায় সুগন্ধেরা;
যেইভাবে বাঘাড়ের লেজ স্মৃতিমধ্যে নড়ে ওঠে
যেইভাবে আমি মরে যেতে পারি সকল ব্যর্থতা
নিয়ে, রাখালের মত, একটা ষাঁড়ের কূজে বসে…

৩.
বুক মধ্যে ঝরা চাঁদ আল্লা আল্লা ডাকে।
রাজহাঁসদল জ্বলে নিভে বিলে। রে আসমানী
নূর, কোনো পাখি রূপে এসো অবিরাম
সুগভীর বুক থেকে, খুঁজে খাও মাছ।

ডানা আমি খুলে রাখি এসো মিকাঈল
প্রাণের নবীর কাছে দিও পৌঁছে গান
যদিও পশুর দল হয় নি কখনো
আমার। রাখাল শুধু, পেলে পুষে যাই।

সাতদিন সাতরাত পুনরায় পার হলে
কার কাঁধে দুই ডানা কার কথা বলে!
কোন পরি দিল থুতু পুরুষের দেহে
ফেটে যায় প্রেম আহা বৈশাখের শেষে।

৪.
টানা দিন দুই হলো বৃষ্টি—পরি-ডানা
নুয়ে আসে, উপচে পড়ে, খেত আর খাল;
মিটমিটিয়ে হাসে বোরো ধান; বাতাসের
বুকে বাজে গান, ‘বুলবুলির পুটকি লাল’।

উঠিতেছে ডাক, ভাসা মেঘে, হাতি ওড়ে—
তরমুজের বুক থেকে কামার-কুমার
মসজিদে জিকির আল্লা আল্লা অবিরাম
যেন হীরা—বুকে তুমি গুমড়ে ওঠো কার?

আসমানেতে ওড়ে জানি অভিশপ্ত জিন
অজানা পার্পেলে দুনিয়াও অলৌকিক;
আকস্মিক পশ্চিমের রেখা ধরে সোনা
জাদু ভুলা পক্ষি সব মৃত্যু বুঝে নিক।

আর সব পরি ভুলে যাক গতকাল
একটানা বৃষ্টিতে ভাসা খেত আর খাল।
জিকিরের শেষে জানি নামাজের শেষে
পীরের মাজারে জ্যান্ত হাঁস ভালোবেসে
তুমি আমি যেন বাঁচি জমজ তরমুজে
বুলবুলির পুটকি লাল জেনেছি যে দেশে।

৫.
পাল ছাড়া নৌকাগুলা সোনাবন্ধু রৌমারিতে যায়
কার গন্ধ লেগে আছে বিন্দুমতো বাতাসের গায়;
কেউ কি কেঁদেছে বলো মাজারেতে উথাল পাথাল
নবিজীর যান বোরাকের ঘোড়া পাখনা উড়ায়।
তাগড়া ধানের বুকে এলোমেলো এক পরি আছে
গাও জুড়ে এই কথা রাতভর স্বপ্নে জুড়ে গেছে;
এখনে আমার ধান, সোনা-মতো উড়ে যেতে চায়
আমি তো চাষার ব্যাটা রাখি তারে বুকেতে জড়ায়।

৬.
উত্তুরে হাওয়ারা সোনা যায় পূবে যায়
ষাড়ের পিঠেতে এক পরি চড়ে যায়;
বসন্ত বৌড়ির গান থেমে তো রয়না
রাতভর ঘুমে তার খুলেছি গয়না।

আমি কি আর সে যুবা পরির পিছনে
খুঁজে নেব নীল তীল গহীন গোপনে?
বাথানের আশপাশে বেহেশত আছে
মন্ত্র শিখে নিছি সোনা পরিদের কাছে।

দুই ডানা ধরে আমি হয়ে যাবো গুম
দাও খোলে নদী স্তন— দেহ জুড়ে ওম।

৭.
দুপুর ফেটে বৃষ্টি পড়ে তোমার দেহে
কোথায় আমি লুকাবো মুখ বলতে পারো?
একটা নদী নদীর কূলে হারিয়ে গেছে
চর মধ্যে খুঁজে পেলে কি গহনা কারো?

কোথাও আমি চাই না যেতে শপথ এই
বাজার থেকে গজাড় পিঠে ফিরছি বাড়ি
তোমার হাতে রাখছি হাত শক্ত করে
চারটা কাঁধে সামলে নেবো মড়ক-মারি।

এই চৈত্র খুব অজানা আসেনি আগে
ইরিধানের পোক্ত মাজা দোল লেগেছে
আমার বুকে উদোম করে দুহাত ভরে
তোমার স্তন উপচে ওঠে প্রেম দিয়েছে।

প্রতিটি দিন নতুন কোনো আশংকার
তবুও আমি চাইছি পেতে জান গো তোরে
বাংলা ভাষা যেমন করে মাতৃবুকে
আলতো করে শব্দ করে জাগছে ভোরে।

আমায় ডাকো আমায় ডাকো বাপ্পি বলে
যমুনা তীরে, মধ্য চরে কিংবা বিলে
এমন প্রেম জাগল কেন বলতে পারো
চৈত্রে ফলা সর্বনাশা অসুখ কালে।

৮.
এ বৈশাখে ধানের দাম
যেনবা বেশি পাই গো পরি;
আমি কাটবো শিরা বইবে
রক্তস্রোত, নূরের তরি।

তুমি আমার সিনা মধ্যে
লুকায়া রাখো মাতৃমুখ;
রে দুলদুল দ্যুলোক ভেদে লেখো
ফসল কাটা তীব্র সুখ।

মেঘ উড়ছে, মিনার ছেড়ে।
মুয়াজ্জিনে দেয় আযান;
ধাতব পিঠে চাপাও ধান
টানবে জোরে শক্তিশালী ডানা ওয়ালা
কাফ্রি কোনো জিনের প্রাণ।

আমি কাটবো শিরা, বইবে
রুহু, ফানার দিকে তীব্রতর;
কাফের বুকে আল্লা বলে
হাওয়া আসে যমুনা তলে;
মারছে ঘাই গজার মাছে
তুমি না হয়, বুক মধ্যে গুমরে মরো!

৯.
এই ভূমি মুক্তাঞ্চল সোনা—পশু, চর
পরি আর মানুষের পাজর-পশম;
জানো না কোথায় তুমি অলক্ষ্যের কেউ
সুতীব্র তেজের জ্যান্ত গলা ছেড়ে দেবে
যেন বাঘাড়ের তীব্র ঘাই আছড়ে পড়ে…

অনেক বসন্ত জুড়ে লাজুকেরা থাকে
ভাষার বাইরে থাকে নিদারুণ মুখ
গেরিলার মত ওৎ পেতে থাকা কণ্ঠে
মহিষের শিং, কূজ—যায় তেড়েফুঁড়ে।

শাপলা ফুলের মত সূর্য মনে রেখো
সেও যাবে জোর চিৎকারে স্বর্ণস্তুপে;
তোমার স্তনের সুষমাও প্রেমিকের
ছোঁয়া পেতে জান করবে অধীর অপেক্ষা।
যেন কারবালা প্রান্তরেই আসে মৃত্যু।

দলবেঁধে কাফেলা ছুটে নক্ষত্রের মত
অনেক পশুর দল, সম্মুখে রাখাল।
আধফোটা এক চাঁদ গিলে নিচ্ছে সব
বাতাসের শরীরেও যেন তীব্র ক্ষীর।

চলনবিলের পেঁয়াজের মত তীক্ষ্ণ
তোমার দুচোখ দেখে অপেক্ষায় থাকি।
পোষা জিনেদের মত ডানা খোলে রাখি
তোমার শরীরে যেতে যেতে নাইওরি।

অবোধ্য সন্ধ্যায় পত পত করে পরি
পয়গম্ভর আর পীর কোথায় যে যায়।
শুধু প্রলম্বিত পূর্নিমার মত সুরে
সুরে জিকিরের শব্দ ওঠে নদী থেকে।

আমার বাথান আছে, নেই কিছু আর
আছে ষাঁড়েদের পিঠ, কূজের নরোম;
আর ওই পাড়ে ঠা ঠা হাসে মুক্তাঞ্চল
যেনবা চলনবিল, যায় খোদার আরশ পানে
নরোম ক্ষীরের মত কোনো যন্ত্রযান চেপে, ধীরে…

এই ভূমি মুক্তাঞ্চল সোনা—পশু, চর
পরি আর মানুষের পাজর-পশম;
কাফেলার শেষে তুমি সৈন্য বাতাসের
তুলোর মতন, কিছু মৃত্যু লিখে এসো।

১০.
আমার পিঠে জড়িয়ে দাও এসে
গ্রামগুলোর ছোট্ট ডানা সোনা।
আমরা উড়ে যাব, হারিয়ে যাব
যেন বোয়াল মাছ, শোলের পোনা।

চৈত্র রোদ ধরে শরীর চেপে
ইরিধানের মন বাকুম বাক
তোমার তরে সুবাস ছুড়ে দেই
তিল চিহ্ন ধরে জান্নাতের স্পর্শ পাক।

খানিক দূরে একলা বিলে মতিমিয়ার হাঁস
তার চে দূরে নিম গাছটা যেন অনুপ্রাস।
নামাজ শেষে মুয়াজ্জিনে বাড়ির পথে যায়
ঝাঝা রৌদ্রে জিনের ডানা স্নেহের হাত বাড়ায়।

পীরের বাড়ি অস্ত গেলে আমার বাড়ি হবে
তার আগেই ষাঁড়ের কূজে আমার ছায়া রবে।
চন্দ্র কোনো ডাকলে বুঝি জোহর শেষে হায়
কোথায় যাবো কোন সে পরি কোথায় মারা যায়?

দোয়া দরুদ পড়ার শেষে দাও তো ফু’উ বুকে
গ্রামগুলোর ছোট্ট ডানা উড়ছে মন সুখে।
ইল্লি লাগে ঝিল্লি লাগে রোদ দিবস জুড়ে
আমার বুকে তুমি কুটুম থাকো গোপন হয়ে!

১১.
বাতাসেই যুদ্ধ করি সাই সাই চলে তলোয়ার
বোরো খেতে ফেলে রেখে ত্বক, চক্ষু, ডানা, মাথা,ঘাড়।
পশুর কাফেলা ছুটে লক্ষাধিক তারাদের মতো
পশমের নিচে স্পর্শ করো সোনা, লাল ঘা ও ক্ষত।
নদীতে দিয়েছে মুখ গাভীদের দল, সাথে আমি
চিতলের ঘাড় থেকে নেমে গেছে আধফোটা চাঁদ—
তারপর শত বছরের মুনাজাত শেষে আহা
বাতাসের সাথে যুদ্ধ পুনরায় সিনা টান করে।
পশমের নিচে কলিজাও থাকে অবিরাম লাল
আমাকে হত্যার পর ছিঁড়ে নিও খেয়ে নিও তাও।

জানি স্বর্ণগন্ধ যুদ্ধ শেষে বাতাসের সাথে নাচে
ভিক্ষা বলো মাগবো কোন মাদী পশুর কাছে?

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.