অক্ষরবন্দী জীবন
বিসর্গতে দুঃখ : একটি পাঠ
ভূমিকা
শাহাদুজ্জামানের ‘ ঃ তে দুঃখ’ একটি অভিনব বই। আমার ধারণা এটি তাঁর স্বল্পপঠিত বইগুলোর মধ্যে একটি। শাহাদুজ্জামানের লেখালেখির উপর সাধারণত আলোচনা কম হয় (সাম্প্রতিকতম গ্রন্থ ‘একজন কমলালেবু’ বাদে) কেননা তাঁর লেখায় আখ্যান বা কাহিনির চাইতেও মনোজগৎ আর অনুভূতির জগত নিয়ে বর্ণনা থাকে। তাঁর গল্প পড়ে নিটোল কোনো কাহিনি পাওয়া যায় না, পাওয়া যায় অনুভূতিপ্রদেশে আলো ফেলা কিছু টুকরো টুকরো লাইন, কিছু মন্তাজ। তাই তাঁকে নিয়ে লেখা সহজ নয়।
বিসর্গতে দুঃখ এক অন্যমনস্ক তরুণের ব্যক্তিগত বর্ণমালার বই, বলা যায় তার ব্যক্তিগত বিশ্বকোষ এটি। স্বরবর্ণ এবং ব্যঞ্জণবর্ণের প্রতিটি বর্ণের বিপরীতে বইয়ের নায়ক শফিকের এক-একটি শব্দ আছে, শফিকের হয়ে লেখক তা নির্ধারন করে দিয়েছেন। যেমন, অ-তে অন্যমনস্ক, ড-তে ডায়েরি। প্রতিটি বর্ণকেন্দ্রিক শব্দটি নিয়ে বইয়ের এক পাতা বরাদ্দ; পাতার আকৃতি অবশ্য সাধারণ বইয়ের চেয়ে ঢের বড়, একে ডিমাই সাইজ বলে বোধ হয়। প্রতি পৃষ্ঠার বর্ণনাগুলো কোলাজের মত জোড়া লেগে একটি আখ্যান দাঁড়িয়ে যায়। এই বইয়ের লেখাটি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার পারস্পরিক দেয়াল ভেঙে মিলিত হয়েছে, এটি না কবিতা, না প্রবন্ধ, না প্রথাগত বড় গল্প বা উপন্যাস।
অসফল, অন্যমনস্ক শফিকের জীবনের একটা অংশ আমরা এই আখ্যানে দেখতে পাই, পরিচয় পাই তার পারিবারিক ও জাতীয় উত্তরাধিকারের, পরিচয় মেলে তার হয়ে ওঠার সময়ের অস্থিরতার।
শফিকের জন্য বরাদ্দকৃত প্রতিটি শব্দই তার জন্যে অনিবার্য। এমনকি তার বর্ণমালা চন্দ্রবিন্দুতে শেষ হয়নি, কেননা চন্দ্রবিন্দু বিশিষ্ট ব্যক্তির জন্যে বরাদ্দ। অগত্যা তার বর্ণমালা শেষ হয় বিসর্গতে, দুঃখে।
বইয়ের পাঠ
বাংলা বর্ণমালার এক একটি বর্ণের বিপরীতে এক একটি শফিকীয় শব্দের অবতারণা ও তার বর্ণনার পাশাপাশি একটি কাহিনিও গড়িয়ে চলে- কখনও বর্তমানে, কখনোবা অতীতে।
আর সব শিশুদের মত শফিকের জীবনের শিক্ষাও অ-তে অজগর দিয়ে শুরু হলেও তার চারিত্রিক বৈশিষ্টের কারণে যুবক শফিকের জন্য অ-তে বরাদ্দ হল অন্যমনস্কতা। এই ‘অন্যমনস্কতা’য় রবিঠাকুরের বিস্তর হলেও শফিকের বেকার জীবনে অন্যমনস্কতা এক বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। সঙ্গত কারণেই শফিক আ-তে আকাশ দেখে। তার বন্ধু আতিক আকাশছোঁয়া ইমারতে অফিস করলেও আকাশ দেখবার সময় পায় না। ই-তে লেখক দেখতে পেয়েছেন শফিকের মেসের ইঁদুর!
ঈ-তে ঈশ্বরের ভূমিকা নিয়ে মনে প্রশ্ন থাকলেও ঈ-তে শফিকের জন্য ঈশ্বরই থেকে যান। মনে সংশয় নিয়েও নির্বিকার ঈশ্বর ছাড়া শফিকের শব্দভাণ্ডারে আর কিছুই প্রথম পছন্দ হিসেবে আসে না।
আর সব শিশুদের মত শফিকের জীবনের শিক্ষাও অ-তে অজগর দিয়ে শুরু হলেও তার চারিত্রিক বৈশিষ্টের কারণে যুবক শফিকের জন্য অ-তে বরাদ্দ হল অন্যমনস্কতা। এই ‘অন্যমনস্কতা’য় রবিঠাকুরের বিস্তর হলেও শফিকের বেকার জীবনে অন্যমনস্কতা এক বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। সঙ্গত কারণেই শফিক আ-তে আকাশ দেখে। তার বন্ধু আতিক আকাশছোঁয়া ইমারতে অফিস করলেও আকাশ দেখবার সময় পায় না। ই-তে লেখক দেখতে পেয়েছেন শফিকের মেসের ইঁদুর!
উ-তে শফিকের মামার কাছ থেকে ছোটবেলা থেকেই উপরে ওঠার যে প্রনোদনাটা ছিল, সেটা রয়ে যায়, যদিও শফিকের উপরে ওঠা হয়না। তার মামা গ্রামের মাটি থেকে দূরত্বে গিয়ে সফল হবার সংজ্ঞা খুঁজে উপরে উঠেন কিন্তু অনিবার্য নিঃসঙ্গতায় সেই ওঠাটা নিষ্ফল হয়ে যায়। শফিকের উপরে ওঠা বিলম্বিত, অন্তত আমরা দুই মলাটের সীমায় তার উপরে ওঠার কোনোই সম্ভাবনা দেখি না। তাকে সন্তুষ্ট থাকতে হয় ঊ-তে ঊন দিয়ে, পঞ্চাশ তার জন্যে নয়, তার জন্যে বরাদ্দ ঊনপঞ্চাশ। ঋ-তে শফিকের পছন্দের শব্দ ঋষি, কিন্তু ঋষিদের মত আকশবৃত্তি করার অবকাশ তার থাকে না।
অন্যমনস্ক শফিকের জন্য এ-তে একাকীত্ব। পৃথিবীর সকল একাকীত্বের উদাহরণকে সে আত্মস্থ করেছে, কিন্তু শফিক এতোটাই সাধারণ যে একাকীত্ব তাকে অবৈধ প্রবৃত্তি কিংবা সৃজনশীলতা – কোনও পথেরই সন্ধান দেয় না। তার সেই প্রজ্ঞা নেই, সীমা লঙ্ঘনের সাহসও নেই। কিন্তু একটা কিছু হয়ে ওঠার মতো ঐ-তে ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার নিয়ে একদিন এসেছিল সে তার গ্রাম থেকে। দাদা ছিলেন সম্পন্ন মানুষ, বাবা হয়ে গেলেন সাধারণ, শফিক হয়ে গেল ‘প্রাচীন বংশের নিঃস্ব সন্তান’।
ও-তে ওলাওঠা বা কলেরায় গ্রামকে গ্রাম উজাড় হয়ে যাবার গল্প আছে। সেই সাথে লেখকের চিকিৎসা নৃ-বিজ্ঞানে অধিকারহেতু কলেরার বিশ্বব্যাপী মহামারী হয়ে যাবার গল্পও আমরা পেয়ে যাই। শফিকও রোগ বিস্তারের সেই গল্পে আমোদ পায়, আর ঔ-তে ঔষধের বাণিজ্যিকীকরণের গল্পও আমরা জানতে পারি। মেসের সহবাসী অসুস্থতার জন্য ঔষধ খেতে শুরু করেন, যিনি কীনা পরে মারাই যাবেন।
ব্যঞ্জনবর্ণে এসে ক-তে স্বপ্নের কম্যুনিজম পেয়ে যায় শফিক, যিনি কম্যুনিজমের পাঠ দিতেন, সেই মাহবুব ভাই চলে যাচ্ছেন বিদেশে, হয়তো চিরতরে। শফিকেরা সেই জেনারেশন, যাদের কাছে প্রেমভঙ্গের বেদনার মত কম্যুনিজমের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল। কম্যুনিজমের বর্ণনার পাতায় লেখক দ্বান্দ্বিকতা নিয়ে এসেছেন চমৎকার কিছু মন্তাজের মাধ্যমে। বাসে হেলপারের সাথে যাত্রীর বচসার ফাঁকে ফাঁকে আমরা অন্যতর এক দ্বান্দ্বিকতা পাঠের মনোহর অভিজ্ঞতা পাই। মাহবুব ভাই শফিককে তার প্রতিশ্রুত চিঠি লিখেননি, তবু খ-তে খাম। শফিক চিঠির যুগের শেষ প্রতিনিধি, কিন্তু আজকাল আর কেজো চিঠি ছাড়া অন্য কোনো খাম পাওয়া যায় না, তাই ‘দরোজার পাশে চৌকা এক টুকরো রোদের মত পড়ে থাকা’ মায়াবী খাম এখন কফিনের চেহারা নিয়েছে।
শফিক অনিতাদির কাছে গ-তে গান শিখতে যেত। সেই অনিতাদিরা একদিন ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হয়ে দেশ ছেড়ে ওপারে চলে গেলেন। এখনও সে গান শোনে, গান শুনতে শুনতে একমাত্র বিলাসিতা ঘ-তে ঘুমের দেশে চলে যায়।
ঙ-তে ব্যাঙের শরীর কাটাছেঁড়া করতে গিয়েই শফিক মানবদেহের রহস্যময় কিছু বিষয়ের খোঁজ পায়। চ-তে চাঁদ এসেছে, চাঁদ মামা থেকে শুরু করে স্নায়ুযুদ্ধের চাঁদে অভিযান পর্যন্ত ঘটনা শফিক তার জীবৎকালেই দেখতে পেয়েছে। শফিকের জন্য ছ-তে ছলনা, জ-তে জীবন, আশ্চর্য এ জীবন। মেসের হারুন সাহেবের মৃত্যু দেখে শফিক ভাবে ‘তবে কি জীবন মৃত্যুর নিকটবর্তী হবার ঘটনাক্রমিক অভিজ্ঞতা মাত্র?’
জীবনকে বোঝা হল না শফিকের। ঝ-তে ঝড় নিয়ে এসে, প্রলয়ংকরী ঝড়ের পড়ে এক দ্বীপে ত্রাণদলের সাথে কাজ করার সূত্রে জীবন সম্পর্কে শফিকের দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই বদলে যায়। ঞ-তে শফিক পায় বিড়ালের ডাক মিঞ – সেই সূত্রে রাবীন্দ্রিক, জীবনানন্দীয়, শরতকুমারীয়, শ্রোয়ডিংগারীয় বিড়ালের স্মৃতি ঘাঁটা শেষে প্রিয় বিড়াল এলিস ইন দা ওয়ান্ডারল্যান্ডের চেশায়ার ক্যাটের কথা ভাবে শফিক, যেখানে বিড়ালটা মিলিয়ে গেলেও হাসিটুকু থেকে যায়।
শফিকের জীবনের একটা অধ্যায় জুড়ে আছে ট-তে ট্রেন। শৈশবের সেই ট্রেনে করেই ঠ-তে ঠিকানা বদলে সে আজ রাজধানীতে। পৃথিবীতে অনেক মানুষেরই ঠিকানা নেই, শফিক তাই কিঞ্চিৎ আশ্বস্ত বোধ করে। ড-তে ডায়েরি। শফিক ডায়েরি লিখে ভারমুক্ত হতে চায় না বলে ইদানিং আর ডায়েরি লিখে না। এখানে আমরা আনা ফ্রাংকের বিখ্যাত ডায়েরির পাশাপাশি শফিকের স্বল্পশিক্ষিত শোলক-বলা দাদীর ডায়েরির কৌতূহলোদ্দীপক বর্ণনা পাই।
ঢ-তে সর্বাধিক উচ্চারিত শব্দ ঢাকা। শফিকেরও ঢ-তে ঢাকা, যে শহরে নিজেকে আজও একজন আগন্তুক বলে মনে হয়। নিজের স্বপ্নকে বারবার এলোমেলো করে দিয়েছে এই নিষ্ঠুর শহর ঢাকা, অথচ লুই কান নতুন ঢাকার নকশা করতে করতে ভাবছিলেন এ শহরের পথে পথে তরুণেরা হাঁটতে হাঁটতে নিজেদের স্বপ্নকে গুছিয়ে নিতে পারবে।
স্বপ্নের দোলাচলে শফিক তার দাদীর ডায়েরীর পাতায় জমানো কান্না, শৈশবের হারানো মার্বেল, খালার ছেলের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া, হারিয়ে যাওয়া মাহবুব ভাই, সাহিত্যকর্মী আতিকের কর্পোরেট দাস হয়ে যাওয়া, স্বপ্নের রাজকন্যা রুবিনা – সবার স্মৃতি এক সাথে ঝাপটা দিয়ে যেতে দেখে, তখন একাকী তাকে দুঃখ নামেই শনাক্ত করতে পারে।
ত-তে তত্ত্বের পাশাপাশি মুনির নামের এক তাত্ত্বিককে পেয়ে যাই আমরা। তাত্ত্বিক চরিত্রটিকে শফিক দেখেছে তত্ত্বে বন্দী হিসেবে, তাকে নিজস্ব ভাবনাহীন রোবট জাতীয় মানুষ বলে মনে হয়েছে তার কাছে। শফিক ভেবেছে মুনির যদি তত্ত্বের পিছনে না দৌড়ে থ –তে থামতে জানতে পারত তাহলে হয়তোবা অন্যরকম উপলব্ধির সন্ধান পেতে পারত। শফিক তার মাহবুব ভাই বা মুনির – কারো দিকেই গেল না, দ-তে দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে মাঝখানে ভেসে বেড়াল। পঠন-পাঠন ছিল, পর্যবেক্ষণও ছিল, কিন্তু দ্বিধার কারণে লেখালিখিটাও হল না তার। ধ-তে শফিকের প্রিয় কাজ ধ্যান, কিন্তু মেসের কোলাহলের মধ্যে বাস করে সে আর ধ্যানে থিতু হতে পারল কই! ‘ধ্যানে ব্যর্থ হলেও ঋষিদের দুয়েকটা বৈশিষ্ট্য শফিকের আছে’ যেমন মৌনতা, ন-তে নীরবতা। শফিক খুঁজে পেয়েছে নীরবতাই শ্রেষ্ঠ ভাষা। সেই শফিক প-তে পুরুষ হতে পারেনি, যাকে প্রকৃত পুরুষ বলা হয়। রুবিনার প্রত্যাশা অনুযায়ী পুরুষ সে হতে পারেনি; তাই ভ-তে ভালবাসার মানুষটি তাকে ছেড়ে চলে যায় স্বামীর সাথে স্টুটগার্টে। আর ব-তে বন্ধুত্ব, অথচ শফিক দিন দিন বন্ধুহীন হয়ে যাচ্ছে।
ম-তে শফিক নির্বাচন করেছে মুজিব এবং মুক্তিযুদ্ধ, অথচ আমরা এখানে ‘মুজিব’ কিংবা ‘ মুক্তিযুদ্ধ’ দুটো শব্দই পাই অমুদ্রিত ভাবে, ইঙ্গিতে। হয়তোবা শফিক তার জীবনে ইতিহাসের এমন একটা ক্রান্তিকাল পেয়েছে যে সময় এই শব্দ দুটি উচ্চারন করা নিষিদ্ধ ছিল বলে ইঙ্গিতে যাপন করার শিক্ষা পেয়েছিল।
শ-তে শফিক শৈশবের দিনগুলোতে ফিরে যায় আর বর্তমানের শিশুদের শৈশবহীনতা তাকে নিয়ত পীড়া দেয়। ষ-তে শফিক স্মরণ করছে বাংলার ষড়যন্ত্রের ইতিহাস- পলাশী থেকে ‘৭৫। সমাজ ও রাজনীতি সচেতন অন্যমনা শফিক কখনও কখনও স-তে স্তনের সৌন্দর্য নিয়ে ভাবে না তা নয়। তবে সে ক্ষণিকের ধোঁয়াশা, শেষাবধি য-তে শফিক পায় যুক্তি, র-তে রাজনীতি। শফিকের কাছে রাজনীতি এক কৌতুকময় বিষয়। র- তে রাজনীতির পাতায় বানরখেলার সাথে রাজনীতির মেলবন্ধন ঘটতে দেখা যায়।
ল-তে লেখালেখি হলেও আমরা জানি শফিক নিজে লিখে না, তার বন্ধু সাহিত্যের কাগজ করত আর সে সাহায্য করত। শফিক জানে হ-তে হিসাব, কিন্তু জীবনে সে কোনো হিসাব মিলাতে পারেনি। গানপ্রেমী দাদার রক্ত তার শরীরে। তাই সে ঢ়-তে আষাঢ়ে ব্যাকুল হয়। স্বাপ্নিক শফিক মাঝে মধ্যে য় –তে আয়নার মুখোমুখি হয়। শফিক তার দাদার স্বাপ্নিকতা পেয়েছে, পেয়েছে বাবার কাছ থেকে ৎ -তে সৎ হবার জিনগত বৈশিষ্ট্য। সৎ মানুষ কখনও চোরাগোপ্তা পথের সন্ধান চায় না। এই ং –তে বিংশ শতাব্দীতে শফিক তাই এক ভুল মানুষ, বেমানান মানুষ। তার জন্যে বর্ণমালা শেষ হয় ঃ-তে দুঃখ দিয়ে। চন্দ্রবিন্দু বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বেলায় ব্যবহৃত হয় বলে শফিকের বর্ণমালা ঃ-তেই শেষ।
স্বপ্নের দোলাচলে শফিক তার দাদীর ডায়েরীর পাতায় জমানো কান্না, শৈশবের হারানো মার্বেল, খালার ছেলের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া, হারিয়ে যাওয়া মাহবুব ভাই, সাহিত্যকর্মী আতিকের কর্পোরেট দাস হয়ে যাওয়া, স্বপ্নের রাজকন্যা রুবিনা – সবার স্মৃতি এক সাথে ঝাপটা দিয়ে যেতে দেখে, তখন একাকী তাকে দুঃখ নামেই শনাক্ত করতে পারে।
উপসংহার
শাহাদুজ্জামানের এই সাহিত্যকর্মের নায়ক শফিক এক স্বপ্নভঙ্গের প্রজন্মের মানুষ। শফিকদের যৌবন শুরু হয়েছিল সমাজতান্ত্রিক পৃথিবীর অঞ্জন চোখে নিয়ে। বিশ্বাস চূর্ণ হবার বেদনা নিয়ে কেটে যায় শফিকদের জীবন। শফিকের ভালবাসার মানুষ এবং তার সমতার স্বপ্ন- দুটোই তার কাছ থেকে সমান দূরত্বে অবস্থান করার ফলে তাকে সমদ্বিবাহু ত্রিভুজের বিষণ্ণ তৃতীয় বিন্দুর বেদনায় জীবনযাপন করতে দেখা যায়। ‘ঃ-তে দুঃখ’ পাঠককে এক অভূতপূর্ব পাঠের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করে দেয়।