:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
সাবেরা তাবাসসুম

কবি, অনুবাদক

বিষণ্ন এই উপত্যকা
প্রচ্ছদ: রাজিব রায়

গুলজারের কবিতা

বিষণ্ন এই উপত্যকা

শোকগাথা

তোমরা কাঁধে কী বয়ে নিচ্ছ, বন্ধু
এই খাটিয়ায় কেউ তো নেই,
না কোনো ব্যথা, না আকাঙ্ক্ষা, না বেদনা-
না হাসির কোনো আভাস না কোনো কাতর ধ্বনি
আর না কোনো দৃষ্টিলিখন না কোনো ধ্বনিমাধুরী
কবরে কাকে দাফন করতে যাও?

এ শুধু মাটি, মাটি
মাটিকে মাটিতে দাফন করে
কাঁদো কেন?

 

উইম্বলডন

টেনিস ম্যাচে দর্শকদের ঘাড় যখন ডানে-বামে চলত
ডান দিকে আমি তোমাকে দেখতাম!
বৃষ্টিতে উইম্বলডনের খেলা যখন থেমে যেত
একটা ভেজা ছাতার নিচে
রেইনকোটের ভেতর
গরমা গরম কফির ধোঁয়া উঠে উঠে চশমার কাচ ঝাপসা করে যেত
বাষ্পীভূত ফিল্টারে তুমি যেন জলরঙে আঁকা ছবি
রোজ ঐ কফি-কাউন্টার থেকে চিপস আর বার্গার নিয়ে
সেন্টার কোর্ট অব্দি আসা
রোজ ওই সীমানায় এসে পায়চারি করা
কিন্তু দুজনেই জানতাম সীমানা আমরা পেরোতে পারি না!
আমাকে ফিরে আসতে হত হিন্দুস্তানে
আর তোমাকে যেতে হত আমেরিকায়
দুদিকে দুটো আলাদা ঘর,
দুদিকে দুটো আলাদা সূর্য !!

 

গরমের ছুটি 

বড়দের ঘরের ভেতর দিয়ে
সিঁড়িগুলো পার হয়ে
পা টিপে টিপে চলে এসেছিলাম ছাদে
এসেছিলাম তোমার ঘুম ভাঙাতে
ঘুম ভাঙিয়ে বলতাম, চলো, পালিয়ে যাই
এখনো অন্ধকার গভীর আর পুরো বাড়ি ঘুমে ডুবে আছে
এখনই সময়, ভোরের প্রথম ট্রেন আসার সময় হলো
এখনো ওটা আগের স্টেশন ছেড়ে আসে নি
ছাড়লে নিশ্চিত গার্ডের লম্বা সিটি শুনতাম
এই ঘন অন্ধকারে আলোয়ানে মুখ ঢেকে
গাঁয়ের টি.টি’র চোখ বাঁচিয়ে পার হয়ে যাবো,এসো!
কিন্তু তুমি ছিলে বড্ড মিষ্টি একটা ঘুমে
ঠোঁটের কোণে লেগেছিলো চাপা হাসির সুগন্ধ
কামিজের সুতার কাজ থেকে একটা সুতা খুলে ঝুলছিলো
তোমার গলায়, নিঃশ্বাসের তালে তালে উঠছিল নামছিল
তোমার নিঃশ্বাসের মৃদু শব্দ সন্তুরে ধীরে ধীরে নামা মীড়ের আবেশ যেন
অনেকক্ষণ বিভোর হয়ে শুনছিলাম
অনেকক্ষণ আমার ঠোঁটকে চোখে ভরে নিয়ে
তোমার কোনো স্বপ্নকে ভালোবাসছিলাম
না তোমার ঘুম ভাঙলো না তোমাকে জাগানোর সাহস আমার হলো
ফিরে এলাম
সিঁড়িগুলো পেরিয়ে
বড়দের ঘরের ভেতর দিয়ে
কে জানতো যে মামা বাড়ির সে রাতের দেখাই
তোমার সাথে আমার শেষ দেখা ছিল
তুমি চলে যাবে আমার চোখের সীমানা থেকে দূরে
কে জানতো, তোমাকে হারিয়ে আমার জীবনের মোড়
ঘুরে যাবে আর কোনো দিকে!

 

কাশ্মীরের উপত্যকা

বড় বিষণ্ন এই উপত্যকা
যেন কারো আঙুল তার গলায় চেপে বসেছে
সে শ্বাস নিতে চায় কিন্তু শ্বাস নিতে পারে না
খুব ভেবেচিন্তে বেড়ে ওঠে গাছেরা যেন
যে মাথা তুলবে প্রথমে কাটা পড়বে সে-ই
ঘাড় ঝুঁকিয়ে আসে অনুতপ্ত মেঘ
এত রক্ত সে ধুয়ে দিতে অক্ষম!
দেখে মনে হয় সবুজ, আসলে সবুজ নয় ঘাসগুলো
যেখানে বৃষ্টির মতো গুলি ঝরেছে সেই ক্ষত মাটি এখনো ভোলেনি
সেই ‘অতিথি পাখিরা’ যারা উড়ে আসত,
আহত হাওয়াকে ভয় পেয়ে ফিরে গেছে তারা
বড় বিষণ্ন এ উপত্যকা- এই ভূস্বর্গ কাশ্মীর!

 

সোনালু

পেছনের জানালা খুললেই চোখে পড়ত
ঐ সোনালু গাছটা, একটু দূরে একলা দাঁড়ানো
শাখাগুলো মেলে ছিল পাখনার মতো
ওকে একটা পাখির মতো দেখতে লাগত
রোজ ঐ পাখিগুলো এসে ওকে ফুসলাত
মাথা খারাপ করে দিত ওড়ার গল্প শুনিয়ে
ডিগবাজি খেয়ে উসকে দিত উড়বার আকাঙ্ক্ষা
অনেক উঁচুতে মেঘ ছুঁয়ে এসে ওরা বলতো ঠান্ডা হাওয়ার কী মজা!
হয়তো ভেবেছিল ঝড়ের হাত ধরে উড়তে পারবে
কাল উড়তে গেছিল
মুখ থুবড়ে মাঝ রাস্তায় পড়ে আছে, বেচারা!

 

ডাকবাক্স

ডাকবাক্স আজও খালি পড়ে আছে
শেষ চিঠি এসেছে তাও কত বছর হয়ে গেল
পোস্টম্যান বলে
‘এখন কে তোমাকে চিঠি লিখবে বাবা?
এখন তো মরণই শুধু আসবে খোদার চিঠি নিয়ে’

তুমি নিজের হাতেই চিঠিটা লিখো, মওলা আমার
হিক্কা উঠলে ভাবি এই বুঝি ডাক এসে গ্যাছে
কিন্তু না, চিঠি আসে না-
প্রতি মাসে
বিদ্যুতের বিল
পানির নোটিশ
এসবই তো পাঠিয়ে দিচ্ছ তুমি

 

একটা ইমারত 

একটা দালান আছে
হয়তো সরাইখানা একটা
যা আছে আমার মাথার ভেতরে
সিঁড়ি বেয়ে উঠতে নামতে যে জুতোর শব্দ
তা মাথার ভেতর বেজে চলে
কোনো এক কোণায় দাঁড়ানো কারুর কানাকানি শুনতে পাই
ষড়যন্ত্র আপাদমস্তক কালো চাদরে উড়ছে
যেমন ভূতবাংলোয় উড়ে বেড়ায় চামচিকা

একটা প্রাসাদ হবে হয়তো
আমার শিরায় বীণার ঝংকার তোলে
কেউ চোখ খুলে
পলকের ইশারায় ডাকছে কাউকে
উনুন জ্বলতে থাকে সুরভিত গমের ধোঁয়ায়
জানালা খুলে কিছু মুখ আমাকে দেখতে থাকে
আর শুনে ফেলে যা আমি ভাবি

একটা, মাটির ঘর আছে
একটা গলি আছে, যা কেবল ঘুরতেই থাকে
শহর আছে কোনো, আমার কল্পনায় হয়তো!

 

গুলজারকে আরো জানতে পড়ুন-
গুলজারের কবিতা: স্মৃতিমেদুর বিষণ্ণ আলো

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.