:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
অজিত দাশ

কবি ও অনুবাদক

হয়তো প্রেম আসবে একটি হলুদ খামে ভরে ডাকযোগে
ব্যবহৃত শিল্পকর্ম: এ জেড শিমুল

অশোক বাজপেয়ির কবিতা

হয়তো প্রেম আসবে একটি হলুদ খামে ভরে ডাকযোগে

Ashok Vajpeyi. Photo: Sanjay Rawat/Outlook

প্রার্থনা সংগীত

সময় বদলাক আর না বদলাক,
ভরসার একটা জানালা অন্তত
খোলা রাখা চাই।
হয়তো কোনো নারী
বাসন্তী কাপড়ে, নাম না জানা
বৃক্ষের নিচে অজ্ঞাত দেবতার উদ্দেশে
ফুল-চন্দন রেখে যাবে।
হয়তো কোনো শিশুর খেলনা
হারিয়ে গিয়ে আমাদের ঘরে
এসে পড়বে এবং সেটি
ফিরিয়ে দিতে হবে।
হয়ত দেবাসুর সংগ্রামে,
রক্তাক্ত কোনো প্রাচীন শব্দ
পৃথিবীর নিষ্ঠুর বাস্তবতায় ম্লান হয়ে,
কোনো কবিতার উষ্ণতায়
সামান্য বিশ্রাম নিতে চাইবে।
আমি আমার সময়কে
প্রতিযোগীতায় লাগিয়ে দেব।
বাজিতে লাগিয়ে দেব আমার
সব শক্তি, সাহস আর আকাঙ্খা
তারপরও অন্তত
ভরসার একটা জানালা তো
খোলা রাখা চাই।
যেন হেরে যাওয়া কিংবা
জিতে যাওয়ার আগে অন্ধকারে
নিজের শেষ অস্ত্রের দিকে তাকিয়ে
আরো একবার
বেঁচে থাকার গান গাইতে পারি।

 

কেউ আমরা জানি না

কেউ আমরা জানি না
আর ক’দিন আছে আমাদের হাতে!
মুখে খাবারের টুকরো নিয়ে
নীড়ফেরতা কোনো পাখি,
হয়ত আনমনে বসে যাবে
বিদ্যুতের এক তারের উপর,
এবং আহ্লাদে ঝুঁকে পড়ে
ছুঁয়ে ফেলবে দ্বিতীয় তারও
শুকনো ডালে ধীরে ধীরে
সারি বেঁধে চলা কোনো ক্ষুদ্র পোকা,
হয়ত লাকড়ি কুড়ানো এক বুড়ির
ছিঁড়ে জুতোর নিচে পিষে যাবে।
ট্রেনের ইঞ্জিন থেকে
দ্রুতগতিতে ছুটে আসা
কোনো স্ফুলিঙ্গ, হয়ত বিঁধে যাবে
উড়ন্ত প্রজাপতির বুকে।
কেউ আমরা জানি না
আর কতটুকু সময় আছে,
অপেক্ষা করার জন্য।
হয়তো প্রেম আসবে
একটি হলুদ খামে ভরে,
ডাকযোগে-যেনো কিছুটা সময়
আরো বাকি আছে,
কাঁঠালের মুচি খাওয়ার
উপযুক্ত হতে; পৃথিবীকে পুনরায়
সবুজ প্রাণবন্ত এবং দয়ালু
হয়ে উঠতে, কিছুটা সময়
আরো বাকি আছে।
দরজায় কড়া নড়বে
আর সে বলবে- চলো,
তোমার সময় হয়ে গেছে।
কেউ আমরা জানি না
আর কতটুকু সময় আছে
তোমার না আমার।
সে আসবে
যেমন করে আলো আসে,
মেঘ ছেয়ে যায়, ফুলের মতো
খিলখিলিয়ে হাসে ছোট্ট শিশু,
যেমন করে অন্ধকারে
ভয় জাগিয়ে দেয় শূন্য ঘর।
সে আসবে নিশ্চিত!
কিন্তু তার আসার জন্য
আর কতটুকু সময় বাকি আছে
কেউ আমরা জানি না।

 

শুধু শব্দ দিয়েই নয়

শুধু শব্দ দিয়ে নয়, স্পর্শবিহীন ছুঁয়ে
স্পর্শবিহীন চুমু খেয়ে, তাঁকে জড়িয়ে ধরে
দূর থেকে ফুলের পাপড়ির মতো খুলে খুলে,
না দেখে কল্পনায় এনে আমিও তাঁকে বলেছি।

 

হাওয়াকে নয়

হাওয়াকে নয় তাঁকে জিজ্ঞেস কর:
যে অদৃশ্য হয়ে, শব্দের আড়ালে থেকে
এখনো বলে যাচ্ছে?
শব্দকে নয় তাঁকে জানো:
যে শব্দের জালে কেউ আটকা পড়ে না?
নির্লিপ্ত থেকে নয়, তাঁর কাছ থেকে জেনে আসো:
তাঁর ঠিকানা শব্দ থেকে দূরে
আরো কত দূরে?

 

তৃষ্ণা

প্রচণ্ড গরমে সে যখন
জলের পাত্র হাতে নেয়,
ঠিক সেই মুহূর্তে
আমারও তৃষ্ণা বুঝতে থাকে।

 

তুমি যেখানে বলবে

তুমি যেখানে বলবে, সেখানেই চলে যাব
অন্য কোনো ঘরে, অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে,
অথবা নাম না জানা গন্তব্যহীন
কোনো ট্রেনে উঠে পড়বো।
নিজের মালপত্র কাঁধে নিয়ে
ময়লার বোঝার মতো
জীবনের পিঠে ঝুলতে ঝুলতে
যেখানে বলবে সেখানেই চলে যাব।
কখনো এই শহর, এই ঘর
এই আঙ্গিনায় ফিরবো না।
সেখানে পাখি হব, বৃক্ষ হব, ফুল
কিংবা শব্দ হয়ে ঘুরে বেড়াবো দিনরাত
যেখানে হয়ত তুমি কখনোই আসবে না!

 

তারা সবাই চলে গেছে

তারা সবাই চলে গেছে সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে,
ধ্বংস করে; কিছুই অক্ষত রাখেনি যখন
ঠিক তখনই শুকনো পাতার আড়ালে
হারিয়ে যাওয়া কোনো পোকার পায়ের শব্দ হলে,
তুমি মুচকি হাসি দিয়ে ঘাসের ডগা হাতে নিয়ে
পুনরায় লিখতে শুরু করে দিলে।

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.