:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
মোশতাক আহমদ

কবি, গদ্যকার

ফিস অ্যান্ড চিপসের কবিতা
প্রচ্ছদ: রাজিব রায়

লিভারপুলের দশটি কবিতা

ফিস অ্যান্ড চিপসের কবিতা

Adrian Henri [1932–200]  Photo Edward Lucie-Smith © National Portrait Gallery, London
এড্রিয়ান হেনরির কবিতা

ক্রিসমাস দিনের বিষাদ

ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি আজ ক্রিসমাস
রাতজাগা পাখিরা গাইছে কখন থেকে
চেয়ারে গতরাতের ছাড়া দু ফালি মোজা আমার
চারপাশে বৃথাই খুঁজে ফিরলাম তোমাকে
পড়ে আছে আপেল-কমলার ঝুড়ি
.                               কয়েকটা চকোলেট
.                               … আফটারশেভ
-তুমিই নেই কোথাও।
নিচতলায় গিয়ে মজার খাবার খেলাম
কিছু পুডিং, টারকির মাংসের সাথে ভরপুর মদ
হাসিমুখেই খুলে ফেললাম বিস্কিটের টিন
তোমার চেয়ারটাই ফাঁকা
পড়ে আছে কিমা, ব্রান্ডি
.                       বাদাম, কিশমিশ
                      … আলু ভর্তাও কিছু
-তুমিই নেই কোথাও।

আজ নববর্ষ, গাইছে সবাই আনন্দগান
রাত গভীর হচ্ছে, ভালোই আছি আমি
ভুলে যাব পুরনো দিনের গান?
সে কথা জানি না মেয়ে কিন্তু ভাবতে বেদনা জাগে
পড়ে আছে হুইস্কি
.                ভোদকা
.                       ড্রাই মার্টিনি
                 … আর আমার নববর্ষের বারোটা নতুন শপথ
-তোমাকে ভেবেই।

শুভ হোক নতুন বছর!
টলতে টলতে আবার বিছানায়
তোমার বালিশের দিকে তাকিয়ে
… আমি কেঁদেই ফেলেছিলাম মেয়ে!
আসবে কত না হেমন্ত
               গ্রীষ্মকাল
.                         নতুন বসন্ত
                                   দীর্ঘ শীতকাল
-তুমিহীনা।

 

ভালোবাসা মানে

ভালোবাসা মানে রেলের বগির পিছনে ঠান্ডায় জমে যাওয়া
ভালোবাসা মানে দুই সদস্য বিশিষ্ট ফ্যানক্লাবে ভর্তি হওয়া
ভালোবাসা মানে বেদনার্ত হাত ধরে হেঁটে যাওয়া
ভালোবাসা মানে

ভালোবাসা মানে শীতরাত্রির ফিস এন্ড চিপসের থালা
ভালোবাসা মানে অদ্ভুত সুখের কম্বলে গা ঢাকা
ভালোবাসা মানে রাতভর তোমার বাতি জ্বালিয়ে রাখা
ভালোবাসা মানে

ভালোবাসা মানে থরে থরে সাজানো ক্রিসমাস উপহার
ভালোবাসা মানে পপ সংগীতের তেহাইতে ভেসে যাওয়া
ভালোবাসা মানে গান থেমে যাবার মুহূর্তের ঘটনা
ভালোবাসা মানে

ভালোবাসা মানে নিঃসংগ বিষাদে ঝুলে থাকে শাদা অন্তর্বাস
ভালোবাসা মানে ছেড়ে যাওয়া উষ্ণ গোলাপী রাত্রিবাস
ভালোবাসা মানে সন্ধ্যার মুখে ফিরে যাবার তাড়া
ভালোবাসা মানে

ভালোবাসা মানে তুমি ভালবাসা মানে আমি
ভালোবাসা কারাগার ভালবাসা মুক্তি
ভালোবাসা মানে আমাকে যা যা দিয়ে দূরে গেছ তুমি
ভালোবাসা মানে

Roger McGough [1937] Image Source irishnews.com
রজার ম্যাকগাফের কবিতা

তুমি আমি

বুঝিয়ে বলছিলাম। তুমি
শুনলে আমার চিৎকার। তুমি
নতুন প্রেমিক খোঁজো। আমার
পুরনো ক্ষত দৃশ্যমান।

দুদিকে দেখতে পাও তুমি। আমি
দেখি তোমার চোখে ঠুলি। আমি
ক্ষেপাবই তোমাকে। তুমি
দেখছ আমিও স্বার্থপর।

আমি এক নিরীহ ঘুঘুপাখি। তুমি
ভেবেছ তাকে বাজ। তুমি
দিয়েছ জলপাই শাখা। আমি
আঘাত পাচ্ছি কাঁটার।

তোমার রক্তক্ষরণ। আমি
দেখছি কুম্ভীরাশ্রু। আমি
ক্ষান্ত চাই এবার। তুমি
গুটিয়ে রাখো শোক।

 

উত্তর চল্লিশের দাম্পত্য প্রেম

মধ্য                                    বয়সী
দম্পতি                                খেলছে
লন                                     টেনিস
খেলা                                   শেষে
বাড়ি                                   ফিরবে
ওরা                                    যখন
টেনিস                                 মাঠের
নেট                                    খানা
বয়ে                                    বেড়াবে
মাঝ                                    খানে

 

প্রেমের কবিতা

মগজের ভেতর- পকেটে
তোর একটা ফোটোগ্রাফ
ঝাপসা ফটোতে
দুটি মুখ মনে হয়
ছবিতে একটি মেয়ে নাকি দুই?
কার ছবি তার নাকি সেটা তুই?
তারারামপাম তারারামপাম
তারারামপাম তারারামপাম

Brian Patten [1946]  Image Source theacornpenzance.com
ব্রায়ান প্যাটেনের কবিতা

আমি এক কবিকে চিনি

আমি এক কবিকে চিনি, যার কবিতা
চোপরাও বলে বসিয়ে রাখত আমাকে।
সেগুলো নেহায়েতই অসহিষ্ণু কবিতা।

আমি এক কবিকে চিনি, যার কবিতা
কেবল ঘৃণার মেঘ ছড়িয়ে দিত চারপাশে।
সেগুলো নেহায়েতই নিঃসংগ কবিতা।

আমি এক কবিকে চিনি, যার কবিতা
শুধুই ছিল রক্তপাতে ভরা।
সেগুলো নেহায়েতই ক্রুদ্ধ কবিতা।

আমি এক কবিকে চিনি, যার কবিতা
ঘুমিয়ে থাকত বাতাসের ঘরে।
সেগুলো নেহায়েতই শূন্যতার কবিতা।

আমি এক কবিকে চিনি, যার কবিতা
ঠাসা ছিল পৃথিবীর সেরা কৌতুকে।
সেগুলো নেহায়েতই জনপ্রিয় কবিতা।

আমি এক কবিকে চিনি, যার কবিতা
হাসি আর সুর্যের আলোয় ভরা ছিল।
সেগুলো নেহায়েতই উজ্জ্বল কবিতা।

আমি এক কবিকে চিনি, যার কবিতা
পৃথিবীর সবচেয়ে ঋদ্ধ কবিতা।
ছেঁড়া পকেটের ছিদ্র দিয়ে সেগুলো ঝরে যাচ্ছে।

 

বাঘের ছায়া

আমি যদি হতাম সুন্দরবনের বাঘ
জঙ্গল হতো গুরু আমার, শিষ্য হতাম তার!

পাঠশালা নয়
বিশাল রাতের আকাশ পেতাম তারা ছিটানো ব্ল্যাকবোর্ড
আমি যদি হতাম সুন্দরবনের বাঘ!

কৌতূহলী বিড়াল এলে ছুটে
তাড়িয়ে দিতাম ফ্রাইং প্যানের হাতার মতো থপথপিয়ে হেঁটে!
(আহা তাড়িয়ে দিতাম তারে!)

মাথার উপর গাছে গাছে শাখামৃগের কিচকিচানি
বন্ধ করে দিতাম তাও
জংলী বাতাস হ্যাচ্চো মেরে শিক্ষা দিতাম বেশ
নাম না জানা রঙিন ফুলের মুকুট মাথায় দিয়ে
(আহা শিক্ষা দিতাম বেশ!)

আমি যদি হতাম সুন্দরবনের বাঘ
গাঢ় সবুজ পাতার ফাঁকে জ্বলত আমার চোখ
সাপের মতো সপাং করে দুলত আমার লেজ!
(আহা দুলত বাঘের লেজ!)

পেতাম খুঁজে হারিয়ে যাওয়া গাও গেরামের খোঁজ
মানুষ যেথায় পা ফেলেনি একশ বছরেও,
সম্রাট বনে যেতাম হারানো সভ্যতার
লাফিয়ে যেতাম লতায় ছাওয়া ধংস নগরী!
(আহা লাফিয়ে যেতাম দেশ!)

আমি যদি হতাম সুন্দরবনের বাঘ
সন্ধ্যা হলে নাচত জোনাক ব্যাঘ্রগীতির তালে,
চোখে ভাসত জ্বলজ্বলে লাল সূর্যমামার ছবি
তার ছায়ায় বোনা জালটি নিয়েই ধরতে যেতাম মাছ!
(আহা ব্যাঘ্রগীতির তালে)

শিকারীদের দেখতে পেয়ে মাইলখানেক দূরে
সঙ্গোপনে কাত হতাম নিজের বিবরে
লালচে আলোর সেই আভাতে দিবানিদ্রার ফাঁকে
কিংবা সোনা রঙের ডোরা কাটা গাছের ছায়ায় শুয়ে
ব্যাঘ্রসুলভ স্বপ্ন দেখে জিরিয়ে নিতাম বেশ!
(আমি যদি হতাম সুন্দরবনের বাঘ!)

 

পথে আজ কোনো ট্যাক্সি নেই

গন্তব্য জানো না এ এক অ্যাবসার্ড কথা।
রাস্তাগুলোকেই গায়ে জড়িয়েছ ওভারকোটের মতো।
ওই বাড়িগুলো বন্ধুদের, আর কিছু বাড়ির সাথে তিক্ততা
.                    আর হবে না যাওয়া।

পুরনো প্রেম দরজার পাশে লুকিয়ে, জানালার ওপাশে
তরুণীরা মহিলা হয়ে উঠল। অবহেলার পুষ্প ফোটে!

কত না আমন্ত্রণ করেছ প্রত্যাখ্যান,
উপেক্ষা করেছ কত টেলিফোন, ফিরিয়েছ
অসহায় মানুষ।
নিজস্ব দ্বীপের কিনারে এসে আজ
ছুঁড়ে মারছ বোতলবার্তা, কিছু হাহাকার।

কোথায় যেতে চাও আজ সে কথা অবান্তর
কোথাও নেই ভরসার মাটি
এই রেলগাড়ি তোমাকে নিয়ে যাবে না সেখানে,
লাল বাসগুলো ফিরে যাবে কেবল অতীতের স্টেশনেই নিরন্তর,

পথে আজ কোনো ট্যাক্সি নেই।

 

সঠিক মাস্ক

এক রাতে কবির কাছে এল একটি কবিতা; বলল, এখন থেকে অবশ্যই মাস্ক পরবে।
– কেমন মুখোশ? জানতে চাইল কবি; আরো জানাল, ব্যবহার করিনি তা নয়, মুখোশটা ফেলে দিয়েছি আমি।
– তাহলে কোকিলের গান থেকে বানানো মাস্কটা পরে নাও এখন!
কবি বলল, নাহ, ওটা বড্ড সেকেলে মুখোশ, সেটাও ব্যবহার করেছি এক কালে।
কবিতা বলল, বাজে বোকো না, এটাই পারফেক্ট মাস্ক। আচ্ছা না হয় ঈশ্বরের প্রতীক খচিত মাস্কটা পরো এবার – স্বর্গের আলো ছড়ায় এটা থেকে!
কবি বলল, কিন্তু এই মুখোশটা বড় ক্লান্ত, তারাগুলো কেমন পিঁপড়ার মতো ছেকে ধরেছে ওটা।
– তাহলে ত্রবাদুরদের মাস্ক পরো, কিংবা গায়কদের; বেশ পপুলার এগুলো!
– আমার কাছে আছে তাও, কিন্তু মুখে ভাল ফিট করে না, কুচ্ছিত লাগে!
অধৈর্য হয়ে উঠল কবিতা এবার; শিশুর মতো কতক্ষণ পা ঠুকল মেঝেতে। চিৎকার করে বলতে লাগল, তাহলে তোমার নিজের মুখটাকেই মাস্ক বানাও না কেন- এত বুঝো তুমি! – তেমনটাই পরো না কেন যে মাস্কে তোমাকে দেখলে আঁতকে উঠবে লোকে, যে মাস্ক হবে শুধুই তোমার!
এ কথা বলতে বলতেই কবিতা এসে ছিঁড়ে রক্তাক্ত করে ফেলল কবির মুখ!
কবি জিগ্যেস করল, এই মুখোশ? এই মুখোশ পরি তাই চাইছ তুমি?
কবিতা বলল, কেন নয়? এটাই পরো।
কিন্তু কবি এই মুখোশটি নিয়েও বেশ ক্লান্ত ছিল।
এটি পরে সে কাটিয়েছে দীর্ঘ কাল।
এই মুখোশটি থেকে নিজেকে পৃথক করতে চেয়েছে কতদিন।
এই মুখোশের চিৎকারগুলো চাপা পরে গেছে, কেঁদেছে নীরবে কত!
মুখোশটা চেয়েছিল যাকে বলে কাব্যিক হয়ে উঠতে।
কবির চোখে মুখে অস্বস্তির কারণ ঘটিয়েছে, এমনকি বিপন্ন ঢেউ তুলেছে রক্তস্রোতেও!
পরদিন কবির বন্ধুরা তাকে আর চিনতে পারল না, মুখোশটা এতই স্বচ্ছ ছিল।
কবিতা খুশি হল; বলল, এটাই সঠিক মাস্ক।
মুখোশটা খুব ভাল ফিট করে গেল। জীবনে আর দ্বিতীয় কোনো মুখোশের দরকার হয়নি।

 

ছোট্ট জনির জবানবন্দি

আজ সকালে
বোকার মতো এই অর্বাচীন
যুদ্ধ ফেরতা বাবার নিভৃতে রাখা
মেশিনগান হাতে বের হল,
খতম করা গেল ছোটখাটো কিছু শত্তুর
তারপর ঘরছাড়া।

আজ সকালে
ট্র‍্যাকার কুকুর সাথে নিয়ে পুলিশের ঝাঁক
নগর ঢুঁড়ে মরছে
আমার চেহারার নিখুঁত বর্ণনা মুখস্ত:
‘এই ছেলেটিকে দেখেছেন কেউ?
বয়স সাত বছর
মিকি মাউসের হলুদ কুকুর প্লুটোর ভক্ত
পছন্দ করে স্পাইডার ম্যানও,
দেখেছেন কোথাও তাকে?’

আজ সকালে
অদ্ভুত এক নির্জন খেলার মাঠে বসে
ঘোরতর অন্যায় হয়ে গেছে, নিজের কাছেই
বারবার জপ করতে করতে
ঠিক করে ফেলি পরের লক্ষ্য
কিন্তু বেরুচ্ছি না ভয়ে –
কুকুরগুলো আমার ঘ্রাণ পেয়ে যাবে;
ওদের জিম্মায় এখন আমার ললিপপগুলো!

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.