:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
শুভ নীল

কবি, গদ্যকার

‘মীনগন্ধের তারা’ ও অন্যান্য আলাপ

‘মীনগন্ধের তারা’ ও অন্যান্য আলাপ

“প্রতিদিন দীর্ঘ গোরস্থানে কে যেন খুঁটে খুঁটে পড়ে নেয় এপিটাফ,
সন্তানের নাম রাখবে বলে—”

একটা পথ দিয়েই শুরু হয় মানুষের জীবন। পথ, অর্থাৎ নির্ধারিত কোনো যাত্রাকেই পরিচিত করে যে পথ শুরু হয়, তাই নিয়ে আলাপ শুরু করা যেতে পারে। কবি হাসান রোবায়েতের কাব্যগ্রন্থ ‘মীনগন্ধের তারা’ থেকে ‘পথ’ কবিতাটি পড়ছিলাম। ‘মীনগন্ধের তারা’ দেখতে যেয়ে যতবার বইয়ের পৃষ্টা উল্টিয়েছি, দ্বিধার মতো কিছু একটা বেশ হতাশ করছিল। এও জানি দ্বিধা মানুষের আদিম সংকেত। কিন্তু পড়ার পর যখনই কিছু লিখতে যাবো, দেখি সবগুলো কবিতাই আমার মাথার ভিতর স্ক্রলের মতো ঘুরছে। বেশ হাঁপিয়ে উঠি তখন। যেহেতু লিখতে যেয়ে সব কবিতাই আমি তুলে ধরতে পারব না। তবে ‘মূকাভিনয়ের পাতা’ কবিতাটি পড়ার পর মনে হচ্ছিল দ্বিধা বোধ হয় কেটে যাচ্ছে। কেন এমন হচ্ছিল তা বলার আগে এই কবিতাটির অংশবিশেষ পড়ে নেয়া যেতে পারে-

‘একদিন যুগপৎ ঈর্ষা ও হীনমন্যতা নিয়ে আমিও গোপন করি কূট
সব প্রতারণা- বীজ- কোথায় খুঁজে পাওয়া যাবে পুরনো সন্ধার
ট্রেন- লেখার অনহকটুকু দেখা যাবে অন্যের ট্রপিজে হেঁটে অনেক
ভরছে হাততালি—

এসব খুঁজে খুঁজে যখন নিজের ঋতুতে ফিরি, দেখি সুদূর পোলের
কাছে কোনো এক নীল তিমির গ্লোব চুরি করা পাতা এখনো
প্রকান্ড শাদা যেন আমারই গানের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে সাবলীল
পেরেক—’

‘মূকাভিনয়ের পাতা’ থেকে লাইনগুলো পড়তে যেয়ে মনে হচ্ছিল আমি আয়নার মুখোমুখি বসে আছি। কিছু ঘটনা খুব সংক্ষেপে দেখতে পাই তখন। আর ভাবি একটা কবিতা মানুষ ভেদে কত বহুরূপী রঙ ছড়াতে পারে! বইয়ের পৃষ্ঠার সাথে এই যে সংযোগ গেঁথে আছে তার মানে বুঝে নিতে কবিতাটির আরও কিছু অংশ পাঠ করা যেতে পারে-

‘যে বইগুলো কোনোদিন খুলে দেখি নি চলে গেলে খুব ছায়া দেয়
সেসব—তবু অন্য কোথাও, কোনো এক কাঠ থেকে ভেসে
আসে অনুপস্থিতির ধ্বনি

তোমার ফিরে আসা মেহেদি ফুলের পাশে শাদা—পাপড়িতে
লেগে আছে সৌম্যতার সৌরভ’

‘মীনগন্ধের তারা’ দেখতে যেয়ে যতবার বইয়ের পৃষ্টা উল্টিয়েছি, দ্বিধার মতো কিছু একটা বেশ হতাশ করছিল। এও জানি দ্বিধা মানুষের আদিম সংকেত। কিন্তু পড়ার পর যখনই কিছু লিখতে যাবো, দেখি সবগুলো কবিতাই আমার মাথার ভিতর স্ক্রলের মতো ঘুরছে। বেশ হাঁপিয়ে উঠি তখন। যেহেতু লিখতে যেয়ে সব কবিতাই আমি তুলে ধরতে পারব না। তবে ‘মূকাভিনয়ের পাতা’ কবিতাটি পড়ার পর মনে হচ্ছিল দ্বিধা বোধ হয় কেটে যাচ্ছে।

মূকাভিনয়ের পাতা’ থেকে যে ঘোর শুরু হয়, তাই নিয়ে মনের ভিতরে কোথাও একটা কলরব শুরু হয়। বেশ বুঝতে পারি এটা কিসের কলরব। যদিও ‘অনুপস্থিতির ধ্বনি’ শব্দদ্বয়ের দিকে যতবার চোখ গেছে, ভেবেছি ঠিক কী বুঝাতে চাইলেন হাসান রোবায়েত! এমন আকর্ষণে বেশিক্ষণ বুদ হয়ে থাকলে কিছুটা উন্নাসিকতার প্রয়োজন হয়। আর এই সুযোগে থেমে যাই ‘চিত্রার্পিত হাওয়ার’র দিকে। বলছিলাম ‘মীনগন্ধের তারা’ কাব্যগ্রন্থের কবিতা চিত্রার্পিত হাওয়া’ নিয়ে। তো পাঠ করা যেতে পারে ‘চিত্রার্পিত হাওয়া’কে-

‘শুনেছি বিস্তীর্ণ এক দ্রাঘিমার বন-

ঘাম, সে-ও অবলীন—চিত্রাক্ষীর দিকে চেয়ে
সমুদ্র- তিমির এক খাদ-
বাতাসে পায়ের ছাপ যাত্রীরা ফেলছে হিংসায়
ক্রিস্টালের পিছে পিছে
অশোকের গাঙে শুধু নুয়ে আছে অজস্র সাঁতার—’

ঠিক হাওয়ার মতন এই কবিতাটিও কোনো একটা ইন্দ্রিয় ছুঁয়ে যায়। ভাবি এমনও কি হয়! ভাবতে ভাবতে নিজেই কখন ডূবে থাকি বনে, ভুলে যাই। আর সেসব ভাবনার কথা ভাবতে গেলেই কবিতাটির আরও কিছু অংশ পড়তে ইচ্ছে করে-

‘প্রবল বনের ভেতর
কী এক রাবারের হাওয়া ছুড়ে দেয় শান্ত এক
নিস্পত্রের দিন
যেন সূর্যজন্মের আগে সমুদ্রপথ
ফুটে ছিল মৃত্যু-চূড়ায়- হা হা অন্ধকার
অতন্ত খর্বিত হীরায় ছিল আলেয়াসহ
আমার মুমূর্ষু ঘাম, প্রতিধ্বনির তীরে
কে আজ
পরিবৃত হয়ে আছে ফাঁকায়!’

আর এমনই করে যতই মিশেছি গহীনে, কবিতার পরতে পরতে মিশে যেয়ে যতবার ভেবেছি, ‘চিত্রার্পিত হাওয়া’ ঠিক ততবার তার সুরে অনুযোগ রেখে আমাকে জটিল করে দিয়েছে। কিন্তু শব্দও যে সুন্দর হতে পারে, বা শব্দে শব্দে যে টোন রচনা হয়, তাই ভেবে আন্দোলিত হয়েছি অসংখ্যবার। আর এখানেই হাসান রোবায়েত সার্থক। তবু এমন বোধের কাছে ডুবে গেলে তিনি নিজেই মনে করিয়ে দেন,

‘দূরত্বে সবকিছু ভালো লাগেঃ মেহেদি ফুলের উজ্জ্বল
পানির গভীরে ছেঁড়া পাতা, হলুদ পাখির ডাক—

প্রশ্নের অলক্ষ্যে কেবলই পড়ে থাকে উত্তর—’

‘চিত্রার্পিত হাওয়া’ থেকে শেষতক এই লাইনগুলি যেন আরও উজ্জ্বল করে দিয়েছে ‘মীনগন্ধের তারা’। আর এইসব উজ্জ্বলতায় একটা নির্মল দৈনন্দিনতা টের পাই। তবু চক্রের কাছে এই বোধ কতটুকুই বা শান্তি দিতে পারে! শরীরই বা কী বলে! তবু জিজ্ঞাসার ফাঁদে আটকে গেলে চোখ অন্য কোনো পৃষ্ঠায় ঠিকই নিয়ে যায়। দেখি ‘চাকা’ কবিতাটি আমার শরীর বেয়ে কোথায় যেন মিশে যাচ্ছে।

‘আমার শরীর বেয়ে
সন্ধ্যা নামছে প্রতিদিন—

দূরের আড়তে কয়েকটি মাছ ভেবে যাচ্ছে জলজীবনের কথা’

মীনগন্ধের তারা । হাসান রোবায়েত
প্রচ্ছদ: রাজীব দত্ত । প্রকাশক: জেব্রাক্রসিং । বইমেলা: ২০১৮ । মূল্য: ১৬০ টাকা।
আলোকচিত্র: ইলিয়াস কমল।

‘চাকা’ পড়ার পর কোথায় যেন নিজের সাথে খুব মিল পাই আমি। হয়তো খুঁজলে সকলেই যার যার চাকার সাথে কোনো না কোনো মিল পাবেন। এমনই তো হয়! সন্ধ্যাকে এভাবেই চোখের কাছে রুটিন হতে দেখে কেন জানি অসহায় মনে হয়। আর অসহায়ত্বের প্রশ্নে কোনো উত্তর আছে কিনা তাই ভাবতে ভাবতে থেমে যাই ‘বাতাসে নীল প্রলেপ’ কবিতাটির কাছে। আমার কাছে কবিতাটি দৃশ্যের সেরা উপহার মনে হয়। শব্দও এত সুন্দর হতে পারে! তো একবার কবিতাটি পাঠ করা যেতে পারে,

‘সূর্য হেলে পড়লে আজো নৌকাগুলি ধীরে
বাতাসে নীল প্রলেপ রেখে কোথায় চলে যায়
নূপুর ছিঁড়ে গড়িয়ে পড়ে পানিতে খাঁ খাঁ ধ্বনি
নদীর ঋতু অসুখ-দিনে উছলে ওঠে প্রায়’

এভাবেই যত গহীনে যাই, থরে থরে কিছু শব্দ বিছিয়ে দেয় পথ। এমন পথের কাছে হেঁটে গেলে মন ভালো হয়ে যায়। আবার পরক্ষণেই হাহাকার জাগে মনে। যদিও ‘হলুদ পাখির ডাক’ এর কাছে গেলে কিছুটা বিভ্রমণ পেয়ে বসে। ‘মীনগন্ধের তারা’য় দারুণ একটি কবিতা ‘হলুদ পাখির ডাক’। যে ডাকে আরও কিছু শব্দ উছলিয়ে ওঠে। ভিতরে কোথায় সুযোগ বুঝে উঁকি দেয় একটা না দেখা মুখ। যে মুখ নিমিষেই শান্ত করে দিতে পারে চোখ। তো ‘হলুদ পাখির ডাক’ এ সাড়া দেয়াই যায়-

‘তোমাকে নিকটে পেয়ে বুঝি—
বহু আগেই জিপসিরা ঢুকে গেছে বনে
যেভাবে পানি, খানিকভরসা ছিল মহিষের
প্রতিটি উনুন থেকে যেটুকু গেরস্থালি
পড়ে থাকে ভাঙা রশ্মির কাছে—

হাতপাখা স্তব্ধ আজ—
এখনো জুঁইয়ের ঘ্রাণ ভেসে আছে টিলার উপর—’

একটা মিহি স্নিগ্ধতায় শান্ত হয়ে যায় মন, যখন ‘হলুদ পাখির ডাক’ কবিতাটি পড়তে বসি। আচমকা বুকের ভিতর কোথাও কারও জন্য মায়া হতে থাকে। কেন এমন হয় তা ভাবতে ভাবতে কোথায় যেন হারিয়ে যাই। তারপর ধ্যান ফিরে এলে বুঝি মানুষের অবস্থান মূলত এমনই হয়ে থাকে। আশা কিংবা নিরাশায় কোনো দাগ এঁকে গেলে মানুষের কাছে তাই হয়ে ওঠে সীমানা। যার ভিতরে সবাই নিজের কাছেই হার মেনে নেয়।

‘প্রতিটা দাবার চাল কত নিঃসঙ্গ এইখানে!
তুমি চলে গেছো ঘুঘুভরা নক্ষত্রের দিকে—

আবার লটকন ফলার আগেই ফিরে এসো—’

‘হলুদ পাখির ডাক’ কবিতাটির আরও কিছু অংশ পড়ছিলাম। এভাবে অংশবিশেষ পাঠ করতে যেয়ে কোথায় জানি কী একটা মোহভঙ্গ কাজ করে। কিন্তু মোহভঙ্গের পরও এই লাইনগুলিই তো বারবার থামিয়েছে চোখ। এবং বারবার ‘হলুদ পাখির ডাক’ এ স্তব্ধ করে দিয়েছে চারপাশ। আর স্তব্ধতা পেয়ে বসলে মনে পড়ে যায়-

‘মানুষ ট্রেনের অপেক্ষায় কেবল হারিয়ে ফেলে জংশন’

এভাবেই যত গহীনে যাই, থরে থরে কিছু শব্দ বিছিয়ে দেয় পথ। এমন পথের কাছে হেঁটে গেলে মন ভালো হয়ে যায়। আবার পরক্ষণেই হাহাকার জাগে মনে। যদিও ‘হলুদ পাখির ডাক’ এর কাছে গেলে কিছুটা বিভ্রমণ পেয়ে বসে। ‘মীনগন্ধের তারা’য় দারুণ একটি কবিতা ‘হলুদ পাখির ডাক’। যে ডাকে আরও কিছু শব্দ উছলিয়ে ওঠে। ভিতরে কোথায় সুযোগ বুঝে উঁকি দেয় একটা না দেখা মুখ। যে মুখ নিমিষেই শান্ত করে দিতে পারে চোখ।

সত্যিই ‘হলুদ পাখির ডাক’ উন্নাসিক করে তুলছে। ভিতরে কোথাও কোন এক বিচিত্র সুখ আন্দোলন করে যায়। ভাবি এমন কী কারণ থাকতে পারে মানুষের, যে হারিয়ে ফেলে জংশন! তারপর নিজের দিকে যখন তাকাই, বুঝতে পারি ঠিক কেন হারিয়ে ফেলে মানুষ। আর এভাবেই মানুষের কাছে পৌঁছে যায় ‘হলুদ পাখির ডাক’। যদিও কবিতাটির শেষ লাইনটিতে আমার চোখ অনেকটা সময় স্থির হয়ে ছিল।

‘মানুষের কান্নার পাশে একটি ডাহুক উড়ে যায় নিভৃতে’

যতবার এই কবিতার শেষলাইন পড়েছি, ঠিক ততবার একটা দীর্ঘশ্বাস আমাকে শূন্য করে দিয়ে গেছে। কেন যে এমনতর বোধের কাছে সঁপে দেই বিশ্বাস, কে জানে! আর এমনই ঘোরে যখন ‘রাত্রি’ নামের কবিতায় এসে থামি, দেখি একেকটা শব্দ মিলেমিশে সিম্ফোনি তুলছে। এমন সিম্ফোনি ভালো লাগে আমার। আবার কখনো কখনো শব্দের আতিশয্যে মনোযোগ বিচ্ছিন্নও হয়েছে। যদিও এই বিচ্ছিন্নতায় কবিতার কোনো দায় নেই। কেননা বিরতির মতো কিছু সময় তো সব মানুষের জীবনেই দরকার হয়। তাছাড়া ভাবের বিস্তারে কখনো কখনো কবিতায় ব্যবহৃত শব্দগুলো ফাঁকা মাঠে ছুড়ে দেয়া গুলির মতো মনে হয়েছে। যদিও ঘোরের প্রশ্নে সবকিছুই হেরে যায়। অন্তত আমার তাই মনে হয়। তো চলুন ‘রাত্রি’ কবিতাটির শেষের কিছু অংশ পড়ে নেই-

‘সমস্ত হিংসার শেষে সূর্যের ওপারে নদী-
অনন্তর কারমান রেখা
স্রোতের উন্মীলনে ক্ষয়ে গেল বালিয়াড়ি
যেন
গোধূলি ভেসে যাচ্ছে কেরোসিন তেলের উপর

তখন, বুদ্‌বুদের পাশে প্রতিটি তারাই ভাষাহীন ইস্পাত—’

‘মীনগন্ধের তারা’ থেকে ‘রাত্রি’ কবিতাটির শেষের কিছু অংশ পড়ছিলাম। তখন শব্দের কথা বলছিলাম। আর শব্দ নিয়ে ভাবতে ভাবতে ‘তামার হাইফেন’ কবিতারই একটা লাইন চোখে পড়ে গেল-

‘সমস্ত ভাষার মধ্যে কিলবিল করছে অর্থ—’

এই লাইনটি এক্ষেত্রে কিছুটা হলেও শব্দ নিয়ে যা বলছিলাম তার সমাধানের কথাই বলে দেয়। এখানে অর্থের মানে বুঝে নিতে নিঃসন্দেহে শব্দের কাছেই সঁপে দিতে হয় চোখ। ‘তামার হাইফেন’ কবিতাটিও আমার খুব প্রিয় কবিতা। তাছাড়া অর্থের প্রশ্নে আটকে গেলে সৌন্দর্যের কী উত্তর দাঁড়ায়, তা ভাবতে গিয়ে দেখি পৃষ্ঠা তার নিয়মে উল্টেপাল্টে চলে গেছে ‘পারাবত কার কথা ভাবে’ কবিতাটির কাছে। এই কবিতাটিও বিচিত্র কোনো কারণে আমার খুব ভালো লাগে। অন্তত পড়তে যেয়ে শান্তি লাগে মনে। বিশেষ করে শেষের লাইনটিকে উপযুক্ত একটা লাইন মনে হয়েছে। মনে হয়েছে এই লাইনটির কোনো পরিপূরক লাইন আর কিছুই হতে পারে না। এমন একটা লাইন অন্তত একবার পাঠ করা যেতেই পারে-

‘বাতাস কাঁদে না ফুলের অমঙ্গল হবে বলে’

এমন একটা লাইন পড়ার পর আমিও ভাবতে বসি ‘পারাবত কার কথা ভাবে’! আর এভাবেই হাসান রোবায়েতের কবিতা পড়তে পড়তে, ভাবতে ভাবতে কিংবা না ভেবেও ঠিকই কোনো স্নিগ্নতায় আটকে যেতে হয়। আর আটকে গেলে ঠিকই কোনো না কোনো পৃষ্ঠায় এসে বদলে যায় ঘোর। তেমনি এক ঘোরের কবিতা ‘ঝরাপাতা নিজের শব্দে বন’। কবিতাটির কিছু অংশ সেক্ষেত্রে পাঠ করে নেয়া অনিবার্য। তো চলুন ঘুরে আসি ‘ঝরাপাতা নিজের শব্দে বন’ কবিতায়-

‘তুমিও সংকেত ফেলে রাখো দূরে, পুরনো পেশায়
যেন সন্ততির ব্যপকতা অপূর্ণ মসৃণ ক্ষারে
রেখে দেয় মুখ-
লিভারের হাতলে করে এই রাত উড়ে যায়
স্তিতি- ব্রোঞ্জের দিকে
তবু পিতার স্বভাব থেকে ফুল, কেন প্রতিফলনেই
বসন্ত হও বারবার!

মানুষ এখনো যেতে চায় ফাঁকা সেই ঘরটির কাছে—’

এই ইচ্ছে এই বোধে ঠিক কতখানি বিভোর হয়ে থাকতে হয়, জানা নেই। কিন্তু ঠিকই শব্দ বনে মানুষের জন্য একটা সংকেত দূর থেকে ভেসে ওঠে। আর সংকেতের দিকে চোখ যেতেই হৃদয়াঙ্গনে বাতাস বইতে থাকে। এমন বাতাস আর যাইহোক মন্দ লাগে না আমার। তবু যখনই ‘মীনগন্ধের তারা’ থেকে ‘সংকেত’ কবিতাটির দিকে চোখ গেঁথে রাখি, আমার মনে হয় ঠিক এমন একটি লাইনই মানুষের জন্য আবহবান কোনো বার্তা দিয়ে গেল। লাইনটি পড়তে পড়তে চলে যেতে চাই। তবু চোখে কিংবা দূরে কোথাও ঠিকই ভেসে ওঠে ‘মীনগন্ধের তারা।

‘চিরকাল বসন্তের বাইরেও কিছু ফুল ফোটে’

১৭ মে, ২০১৮

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.