দুনিয়া মিখাইলের সাতটি কবিতা
শত বছরের ঘুম ও অন্যান্য
শাদা ও কালো
শাদা প্রথম এবং পরে কালোর খেলা;
পালা করে দুই খেলোয়াড় খেলেন দাবা।
সমস্যাটা যখন হাজির হয়—
হত্যা তখন একমাত্র সহজ সমাধান।
লড়াই চলে শেয়ান শেয়ান —
বাক্সে ভরেন খেয়ে ঘুঁটি তারা।
সবাই যখন পড়ল মরা, শেষে
থাকল বেঁচে শাদা-কালো রাজা।
চতুর্কোণা ঘরকে ভাবেন দুর্গসম,
এ-ওর দেখান হারিয়ে দেয়ার ভয়।
চেক ছাড়া কি আছে সমাধান?
অবশেষে এই ভাবনায় ভালোবাসার জিৎ,
বাতলে দিল সহজ সরল পথ।
মৃত্যু হলো খেলার আইন
মৃত্যু থাকে দুজনেরই সমান বর্গঘরে।
দেখ, জীবনের শেষভাগে
রঙিন পানির বুদ্বুদগুলো
কেমন সহজ সরল,
ছুঁয়েই দেখ; না আছে ভয়,
না আছে ডর কোনো।
শত বছরের ঘুম
আমার কোনো ইচ্ছে নেই প্রিন্সেস হতে;
শতবছর শুধু নির্বিঘ্নে ঘুমাতে চাই।
তবে ইচ্ছে- একুশ শতকে কাঁটাগুলো অপসৃত হোক।
পানিদূষণ,
পরমাণুযুদ্ধ,
বাসভূম থেকে পালাতে গিয়ে—
উল্টে যাওয়া নৌকোর খবর,
সম্ভবত মিস করব নতুন নতুন আবিস্কার;
নতুন গান এবং
সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুদের সুসমাচার।
হপ্তান্তে আমাকে মিস করবেন আপনারা,
অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরুতেই মনে পড়বে আমাকে
দেখবেন আকাশে উঠেছে চাঁদ সুনিপুণ।
মুহূর্তের জন্য চোখ খুলে লুটে নিতে পারতাম
পৃথিবীর অপার সৌন্দর্যলীলা;
তারপর বুজিয়ে নিতাম পাতাদুটি।
তবে হ্যাঁ, যদি আমার স্বজনেরা ঘুরে দাঁড়ায়
এক এক করে ফিস্ফিসিয়ে কানে কানে বলে;
তখন আমি জেগে উঠবই, উঠব।
অ্যাকুরিয়ামে
একটি মাছের সাথে আরেকটি মাছ
মিলিত হয় ও ডিম পাড়ে।
পাখনার সঙ্কেতে মাছ শৈবালে
ছড়িয়ে দেয় একটার পর একটা রঙ।
তাহাদের বুদ্বুদগুলির মর্মার্থ বোঝে না কেউ।
পৃথিবীও একটি মাছের চোখ দিয়ে
জাগরিত ও কুহকে পতিত হয় প্রতিদিন।
ভিনগ্রহ
আমার বিশেষ টিকেট আছে
পৃথিবী ছেড়ে আরেকটা গ্রহে যাওয়ার
একটি আরামদায়ক গ্রহ সেটা—
এত এত ধোঁয়া নেই,
গরম অতটা না;
আর ঠাণ্ডাও না।
প্রাণীরা বড় শান্ত,
গোপন কোনো সরকার নেই;
নেই পুলিশ।
কারো কোনো সমস্যা নেই,
নেই হাঙ্গামা।
স্কুলগুলো ছাত্রদের কাছে বিরক্তিকর নয়,
ইতিহাসের পাতিহাস নেই, ভূগোলের গোলও নেই্
আছে আনন্দে আনন্দে পাঠ।
অন্য কোনো ভাষা নেই
এবং সবচে’ মজার হলো
যুদ্ধ পরিণত হয়েছে শান্তি ও প্রেমে।
ধুলার নিচে সমস্ত উইপেন
শেল নিক্ষেপ ছাড়াই শহরের মাথার ওপর দিয়ে
উড়ে যাচ্ছে বিমানের সারি
পানিতে নৌকা স্থির।
শান্ত-থির দয়ার্দ্র সে পৃথিবীতে সবাই।
সেই দুনিয়ায় তবু আমি
একা যেতে সংশয়ে।
কঠোর পরিশ্রম করে যুদ্ধ
যুদ্ধ কী মহৎ!
কী নিবেদিত, কী দক্ষ!
সকাল হলেই ঘুম ভাঙায় সাইরেনের
ছোটায় অ্যাম্বুলেন্স দিগ্বিদিক
হাওয়ায় দোলায় লাশ
আহতদের কাছে নেয় অগণন স্ট্রেচার
মায়ের চোখে ঝরায় অশ্রুবৃষ্টি
খুঁড়ে ফেলে মাটি
ধ্বংসস্তুপে চাপা দেয় অনেক কিছুই
করে নিষ্প্রাণ, করে ফ্যাকাশে
কারো বা করে অচঞ্চল
প্রশ্ন জাগায় শিশুমনে
আকাশে ঈশ্বরকে আপ্যায়ন করে—
আগ্নেয়াস্ত্রের গুলি আর মিসাইলে
ভূমিতে মাইন পোতে,
ছিদ্র করে বিস্ফোরণ ঘটায়
অনেক পরিবারকে করে অভিবাসী—
এভাবেই যুদ্ধ দিনরাত কাজ করে
সে দাঁড়ায় পুরোহিতদের পাশে
শয়তানকে অভিশাপ দেন তারা
(অসহায় শয়তান-
একহাত নিয়ে সে জ্বলে আগুনে)
যুদ্ধ উৎসাহ দেয়—
অত্যাচারির লম্বা গলাবাজিতে
জেনারেলকে দেয় মেডেল অ্যাওয়ার্ড
কবিকে থিম দেয়
শিল্পকারখানায় কৃত্রিমঅঙ্গ তৈরিতে অবদান রাখে
মাছিদের জোগান দেয় খাদ্য
ইতিহাস বইয়ে যুক্ত করে আরো কিছু পাতা
সমতা করে খুনি আর নিহতের মধ্যে
প্রেমিককে চিঠি লিখতে শেখায়
তরূণীকে অভ্যস্ত করে অপেক্ষা করতে
পত্রিকার পাতা ভরে দেয় ছবি—
আর অনেক অনেক নিবন্ধে
এতিমদের জন্য তৈরি করে নতুন ঘর
কফিন কারিগরদের শক্তি জোগায়
কবর খোদকের জন্য রাখে স্তুতি-গাথা
নেতাদের মুখে আঁকে স্মিত হাসি
সবকিছু সম্পাদন করে অনবদ্য অধ্যবসয়ে
এতকিছু করে তবু একটিও শব্দে
কেউ তার মহিমাকীর্তন করে না।
যুদ্ধের রঙ
দেয়ালে একটি ডিজিটাল মানচিত্র
নানা রঙে প্রদর্শন করছে
আমেরিকার যুদ্ধ-
বেগুনি বর্ণে ইরাক
সিরিয়া হচ্ছে হলুদ
কুয়েত নীল
আফগানিস্তান লাল
ভিয়েতনাম সবুজ।
মানচিত্রে যুদ্ধটা-
সুন্দর
স্মার্ট
এবং বর্ণিল।
ইরাকি রজনি
ইরাকে-
এক হাজার এক রাত্রি পর
একজন আরেকজনের সাথে কথা বলবে।
নিয়মিত খরিদ্দারের জন্য
খুলে যাবে মার্কেটগুলো।
দজলার দৈত্যকে সুড়সুড়ি
দেবে শিশুরা।
শঙ্খচিল মেলবে ডানা আকাশে —
গুলি করবে না কেউ তাদের।
নির্ভয়ে পেছন না ফিরেই
মেয়েরা হেঁটে যাবে রাস্তা ধরে।
পুরষেরা ফিরিয়ে দেবে তাদের মর্যাদা।
স্কুলে যাবে শিশুরা-
আবার আসবে ঘরে ফিরে।
গাঁয়ের মুরগীগুলো ঘাসের পরে
মানুষের মাংসে দেবে না ঠোকর
বোমাতঙ্ক ছাড়াই স্বস্তিতে
বাস করবে বাড়িতে।
একখন্ড মেঘ উড়ে যাবে
গাড়ির উপর দিয়ে স্বাভাবিক নিয়মে।
যাওয়া কিংবা ফিরে আসায়
প্রত্যেকে প্রত্যেকের কাছে থাকবে নিরাপদ।
কারোর ঘুম ভাঙুক, আর না ভাঙুক
সূর্য উঠবে একইভাবে।
প্রতিটি মুহূর্ত পার হবে
সূর্যের সাধারণ নিয়মে।