:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
প্রদীপ কর

কবি

শৈশবগাছ ও অন্যান্য
প্রচ্ছদ: রাজিব রায়

শৈশবগাছ ও অন্যান্য

শৈশবগাছ

কী গাছ তার নাম জানিনা। শুধু ওই বুনোফুলের আলতো আলোয়
উদ্ভিদ হয়ে রয়েছে আমার অসমাপ্ত চঞ্চলদিন। এই জলরঙের
তীব্র পিপাসায় মিশে আছে আমার শৈশবের অর্ধশত রূপ।

গাছটির নাম জানিনা। শুধু তার বীরুৎ ছায়ার ভিতর
ছড়িয়ে রয়েছে অদ্ভুত নিঃসঙ্গ এক হাহাকারের দুপুর।
চিত্রার্পিত ঐশ্বর্যে ভিজে যাওয়া আশ্চর্য বিকেল, গাছটির
প্রশাখায়, এখনো কাঁপছে।
ভিন্নপত্রের শিরাউপশিরায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ছায়া,
কাণ্ড ও শীর্ষপত্র ছুঁয়ে ধীরে নেমে আসছে সন্ধ্যা।
পুরোনো অভিমান আর কষ্টের মতো তার রঙ।
ক্ষয়ে যাওয়া আলোর স্বভাবে অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে শৈশব প্রহর!

বড় নয়, ছোটোও নয়, এরকম গাছটির সমগ্র শরীরে মিলেমিশে আছে
নিভৃত আলো আর অহং আঁধার।
নিগূঢ় অশ্রুর অন্তর্লীন মমতায় শিকড় বেয়ে উপরে উঠছে প্রপিতামহের জল
তর্পণে, শান্তিতে, অন্ধ আকাঙ্ক্ষায়।

এখন এই গাছটির কাছে, মাঝেমাঝে নিশ্চুপ দাঁড়াই…

 

ভোরবেলা, মনে হলো

আশ্বিনের ভোরবেলা, নিশ্চল মূর্তির মতো, বাইরে এসেই
অকস্মাৎ মনে হলো, সকলেই আমার বান্ধব।
চা দোকানের উনুনে ধোঁয়া দেওয়া অপূর্ণ কিশোর, আমারই
আত্মার অংশ, ঐ হাওয়া, আমারই প্রশ্বাস।…
ক্লান্ত পায়ে বাড়ি ফিরছে যে দুজন অচেনা বিহারী
তারাই আমার ক্লান্তি সারারাত ঠেলে ঠেলে এ শহরে বহন করেছে।
ফুটপাতে পড়ে থাকা সিনেমাপোস্টার, আমারই
আত্মার অংশ… ছেঁড়াখোঁড়া হয়ে পড়ে আছে।
ভোরবেলা, শীর্ণবৃদ্ধ, পেতেছে আমার কাছেই আমারই জীর্ণ কাঁপা হাত
আর ঐ মুখ কুঁচকে ফিরিয়ে নেওয়া অহং-চিবুক…আমারই..আমারই..

চা দোকানে, ফুটপাতে, জল দিয়ে ধুয়ে ফেলা সকল রাস্তায়
আমারই আত্মার অংশ, অদৃশ্যের গোপন ভিতরে
অকারণ দৃশ্যগুলি
রচনা করে যায়।…

 

রাজকুমারীর গল্প

বহুদিন বাইরে বেরোওনি তুমি
ঘরভর্তি বই, সিনেমা, গান ও ছবির ভিতর
নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছো
আলাপে, বিস্তারে।
বাইরে অঝোর বৃষ্টিতে যখন ঝাপসা চারপাশ
রবিঠাকুরের বর্ষার গানে, তখন, খোলাপোশাকে দাঁড়িয়ে রয়েছো
তুমি!
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সব চিত্রকরদের ডেকে নিয়ে এসে
ঘরের ভিতরেই আঁকিয়েছো দীর্ঘশ্বাসে তৈরি একটা নদী
মাঝেমাঝেই আকুল হয়ে ঝাঁপ দাও। সাঁতার জানোনা
নদীটিই তোমাকে বইয়ে দেয় একটি ভাঙন থেকে সহস্র ভাঙনে

শুধু আশ্বিনের অদ্ভুত সকালে, আয়নার মতো, যখন ঝকঝক করে
সানাই আকাশ
ছন্দপতনের মতো ভেঙে পড়ো কাঁচের স্বভাবে

আমি সে তীক্ষ্ণতা শুনে ছুটে যাই, দেখি
লক্ষ্মীপ্রতিমার মতো কোমল সোনার অঙ্গে ছোপছোপ শিল্পঅঙ্গার
বিষাদপোড়া ছাই।অক্ষিকোটর গনগনে। শূন্য। চুলে
এলোমেলা হয়ে আছে হাসির চিৎকার

এমন উন্মাদিনীর ভরাকোটাল ভয়ে, দৌড়ে বাইরে আসি। দেখি
মধুপূর্ণিমার রাত। বায়ু বহন করছে মধু। বৃক্ষের ভাস্কর্য বেয়ে
গড়িয়ে নামছে চন্দ্রের অসবর্ণ স্নান। ভুবনমৃত্যুর ক্ষতেও ঝরে পড়ছে
মধু মধু মধু…

ভীষণ সুখী ও সামগ্রিক হয়ে রয়েছে এই নিহিত পৃথিবী।…

 

সবজি বিক্রেতা

বহুদূর থেকে সে এখানে এসেছে
তার মুখের আলো এখনো এমন সবুজ, যে
দূরত্ব বোঝাই যায় না।
শুধু তার তাকানো, বলে দেয়, বহুদূরের পথ সে পেরিয়ে এসেছে

আশা আকাঙ্ক্ষা, ব্যাগভর্তি টাটকা সবুজ আর
রুগ্ন মেয়ের আরো কিছুদিনের আয়ু সঙ্গে করে
শহরে এসেছে।
বাজারে, শহরের লোক, যারা খুব চালাক ও চতুর, তারা
লোভের আঙুল দিয়ে নেড়ে ঘেঁটে দেখছে
অসামান্য শ্রমে ফলানো নিহত ফসল
অবশেষে
জটিল শহর, ঠকাচ্ছে ভাঙাচোরা গ্রামের হাসিকে

সূর্য, মাথা থেকে খানিক ওদিক হলেই, সে
খুঁজতে শুরু করে নিজস্ব গন্ধের মতো মাটি
সবুজ সব্জির পয়সায় খুচরো কিছু ওষুধ কিনে বাড়ি ফিরবে চাষী

সেই ওষুধ খেয়েই আরো বেশি নিস্তেজ হয়ে পড়বে প্রকৃতিকন্যাটি।…

 

দান

ভ্রাম্যমাণ ভিক্ষুক এসে দাঁড়িয়েছে মহাজাগতিক এই চেতনাদুয়ারে
বিশুষ্ক অবান্ধব হাতের উপরে অনায়াস খেলা করছে রোদ
হাওয়া অদৃশ্য অগ্নির মতো কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠছে উপরে

প্রসারিত হাতের দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবি,
কী ভিক্ষা দেবো আজ আমি তাকে?
ভাবতে ভাবতেই মধ্যাহ্ন গোলার্ধ পেরোলো।

অন্তঃসারশূন্য এক আবর্তনে আমি খুব সাজিয়ে গুছিয়ে আছি। জানি
কিছুই সঞ্চয় নেই, দুর্ভেদ্য তার হাতে দেবার!

আত্মবিদ্রুপে আমি একটি ঘরের থেকে আরো এক ঘরের ভিতরে ঢুকে
তমিস্রার স্তব্ধতায় একা বসে থাকি…
মাংসল শ্রবণযন্ত্রটিকে অতিক্রম করে তবু আসে ভিক্ষুকের যাঞ্চার গান

নশ্বর চাঞ্চল্য থেকে উঠে যাই, তবে তাকে, দিয়ে আসি
অতিচেতনার অপমান।…

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.