:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
শাহনাজ নাসরীন

গল্পকার, প্রাবন্ধিক

সাপলুডু খেলার খেলুড়েরা
প্রচ্ছদ: নির্ঝর নৈঃশব্দ্য

সাপলুডু খেলার খেলুড়েরা

শীর্ণকায় একটি উপন্যাস। বড়জোর বিশ, পঁচিশ হাজার শব্দের। এ-রকম আয়তনকে নভেলা বলার রেওয়াজ হলেও এটি এক নিশ্বাসে শেষ করার মতো বাজার মাত করা কোনো একরৈখিক উপন্যাস নয় বরং ভাষার নির্মিতি এবং বিষয়ের বহুরৈখিক বিস্তৃতি, বৈচিত্র্য আর দার্শনিকতায় এটি এক আকরগ্রন্থের মর্যাদা লাভ করেছে। সেলিম মোরশেদের সব গ্রন্থই আসলে তা-ই। সচেতনভাবে শুধুমাত্র নিবিষ্ট পাঠকের জন্যই লেখেন তিনি। সাহিত্যের বাজারকে সক্রোধে বয়কট করেছেন চর্চার শুরুতেই। তাই বিদ্বৎ মেহফিলের এই গ্রন্থ পাঠ করা ব্রাত্যজনের জন্য দুর্ঘটনাই বটে, তবে ভিন্ন আঙ্গিক ও বিষয়বস্তুর নিরিখে দুরূহ কিন্তু স্বাদু উপন্যাসটির পাঠোত্তর প্রতিক্রিয়া ছিল একাধারে বিস্ময় ও আনন্দের।

বইটি হাতে নিয়ে একটি ভাবনা মনের মধ্যে কাজ করে। যেন সাপলুডুর খেলুড়েদের সম্পর্কে আমাদের একরকমের ধারণা আছে, তাদের আমরা চিনি কম-বেশি। কিন্তু পড়তে শুরু করলে সেলিম মোরশেদ তাঁর চিত্রকল্পময় জাদুকরী গদ্যে পূর্বধারণার সমস্ত কাঠামো তছনছ করে দিয়ে এক মায়ার জগতে নিয়ে যান। এই মায়াবাস্তবের স্রষ্টা তিনি। এখানের মানুষেরা সেলিম মোরশেদের নিজস্ব নির্মাণ। রূপকধর্মী এই উপন্যাস খেলুড়ে আর গুটির চিরাচরিত দ্বন্দ্বের উপাখ্যান নয় বরং একটি নির্দিষ্ট সময় ও সমাজকে সাপলুডুর ফাঁদপাতা ছকে রেখে ব্যক্তিমানুষের অনুসন্ধিৎসু পরিভ্রমণ, নির্দিষ্ট কোনো গন্তব্যসন্ধান নয় বরং সাফল্যের এক বিন্দু থেকে নবতর বিন্দুতে উত্তরণের অদম্য পিপাসা।

সলোমান: পয়গম্বরের নামে তার নাম। সে নিজেও ঐশ্বরিক ক্ষমতা রাখে কিনা সেই কৌতূহল জাগে যখন সে সংখ্যার সাথে সংখ্যা যোগ করে ভবিষ্যৎবাণী করতে থাকে। তার আছে একটি কেউকেটা জীবন, যে জীবনে বস্তুগত চাওয়ার সাথে পাওয়ার অসঙ্গতি নেই। সলোমানের ফিরিস্তি মোতাবেক দামি যন্ত্রপাতিসমেত তার চার-চারটি অফিস, ফ্ল্যাট, গাড়ি, বিদেশি তৈজসের খোঁজ পাই আমরা। যা কিনা সমাজের উচ্ছিষ্টভোগীদের শুভকামনায় প্রাপ্ত। অথচ সলোমানকে তাদের সেবায় নিয়োজিত হতে দেখা যায় না। তাকে অর্থগৃধনু বা সম্পদমুখী চেতনায় নয় বরং বেশ নিরুদ্বেগ, নির্বিকার আর গভীর পর্যবেক্ষক হিসেবে দেখা যায়। এই সম্পদমুখীনতা যতটা সলোমানের তারচেয়ে তার বাবা-মা-স্ত্রী বা কন্যার। সলোমান কি শৃঙ্খলিত নিজের স্বভাবের কাছে? সাফল্য তাকে তৃপ্তি দেয়, গতিহীন সে থাকতে পারে না, ফলে ছোটে; একটির পর একটি নতুন সাফল্যের জন্য তার অনুসন্ধিৎসা চলমান থাকে। নিজের কাছে তার সৎ স্বীকারোক্তি উপন্যাসের প্রায় শুরুতেই— ‘এ তো সত্য, প্রয়োজনীয় প্রতিবাদের শুরুর স্তরের লোক কখনোই সে হবে না। প্রতিবাদের যথাসময়ের গতিতে যুক্ত হবার নৈতিক ক্ষমতা আত্মগতভাবেই হারিয়েছে। আজীবনের লক্ষ্যে তার ব্যক্তিত্বে নির্ধারিত হবে অযাচিত বিনয় আর শ্রদ্ধেয় হবার এক নিস্তেজপূর্ণ ভাববাদী ভঙ্গিমা। ধারাবাহিক সত্যে গণবিচ্ছিন্ন।‘

সলোমানকে কি জুবায়েরের শিক্ষক ইবনে আজিজের শূন্যতার ধারণা বেশি আকৃষ্ট করে?

— ‘আমি মানুষ আমার শূন্যতা সত্য। মানুষের সত্য এইটুকুই, কোন ডিক্রি জারি করে কোন যূথবদ্ধতা বা মহান কর্তব্যের দোহাই দিয়ে তার শূন্যতা পূরণের অবকাশ নেই। এই শূন্য মানুষ যার লক্ষ্য, যার বাসনা কেবল চির অসীমতার সঙ্গে যুক্ত হওয়া। হেগেল বা ডুরিং এর ভাবসত্তা-পরমসত্তার ভেতর না, ফয়েরবাখের নরনারীর প্রেমে না, লাসেলের স্বতঃস্ফূর্ত কাজে না, এমনকি সার্ত্রের ব্যক্তিগত সত্যেও না, কেবল শূন্যতার স্বতোৎসারিত গতি আর এক ধারাবাহিকতা যা প্রশ্ন ও উত্তরের যাবতীয় লক্ষণ একাকার করে এমন এক শাশ্বত অনুভূতি, যার ওপর দাঁড়ানো চিরায়ত মানবসত্তার সব সত্য’।

সলোমান নিজেও যেন এক নিস্পৃহ যাযাবর। শূন্যতার যে বয়ান ইবনে আজিজ করেন তা বুঝি সলোমানও আত্মস্থ করে নেয় আর তার সাথে মিল রেখেই পথে নামে। পরবর্তীতে আমরা সলোমানকে এমন একটি শূন্যতার ভেতরই পরিভ্রমণ করতে দেখি। এখানে সংযুক্তি আছে সম্পৃক্ততা নেই, ভোগ আছে উপভোগ নেই।

হয়তো এই সত্য জেনে গিয়েছে বলেই সলোমানকে কোনো আবেগীয়, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াতে দেখা যায় না, কোথাও কোনোরকম তীব্র প্রতিক্রিয়াও সে করে না। যেমনটা তার সহকারী বেন করে। সেক্যুলারিজম নিয়ে রাষ্ট্রের অস্পষ্টতায় বেন ক্ষুব্ধ থাকে এবং এর একটা স্পষ্ট পরিণতি চায় সে। পাঠক দেখে, এ নিয়ে বেন তার নিজের যে ক্ষমতা সেই লেখালেখিকে কাজে লাগানোর জন্য সলোমানকে তাগিদ দেয়। অথচ বেন যখন খুব গুরুত্ব দিয়ে এসব আলোচনা করছে সলোমানের মনোযোগ তখন ফোনবুথের দিকে। বেনের কথায় সায় দিলেও স্পষ্টতই সে নিরুত্তেজ বরং সে জুবায়েরের ধর্মবিশ্বাসের প্রেক্ষিত টেনে আনে। জুবায়ের, যে কিনা প্রথমে নিজেকে তৈরি করেছিল নাস্তিক হিসেবে কিন্তু পরে তার বক্তব্য ‘আমি ধর্ম বিশ্বাস করেছি শূন্যে’।

আমরা অবশ্য জানি সেলিম মোরশেদের কাহিনির মায়াময় জগতের প্রান্তজনেরা প্রত্যেকেই ভূয়োদর্শী। প্রত্যেকেই নিজস্ব বিচার-বিশ্লেষণ আর দার্শনিকতায় চমকে দেয়। সলোমানের বয়ানে এর ব্যাখ্যাও তিনি দেন দক্ষিণের বিশেষ ভূমিকে সম্পৃক্ত করে ‘যেখানে বিপ্লবী ও ধার্মিক একই সমান্তরালে সহজাত অর্থে শিক্ষাপ্রাপ্ত’। জেদি মাটি, তপ্ত হাওয়া, নদী, শুকিয়ে যাওয়া মানবহৃদয়, প্রজন্ম-পরম্পরায় বিচরণরত ভাবুক অস্তিত্ব আর তীব্র-তীক্ষ্ণ মমতা-ক্ষোভে নিয়ত ক্রিয়াশীল কৃষিমনের ব্যাখ্যা হাজির করে তিনি প্রান্তজনের প্রতি সলোমানের আগ্রহ ও মুগ্ধতার ইঙ্গিত দেন।

সলোমান কি তাহলে প্রতিক্রিয়াশীল? কিন্তু সে-রকম লক্ষণও কোথাও প্রতিফলিত হয় না। বরং খুব যুক্তিনিষ্ঠ, সহনশীল। মাদরাসার ছোট হুজুর মোহাদ্দেস আলীর সাথে পড়ুয়া এবং রাজনৈতিকভাবে সচেতন তিনজন যুবকের বিতর্কিত বা বলা চলে মুক্ত আলোচনার জন্য নিষিদ্ধ বিভিন্ন বিষয়— আদম-হাওয়া, রাম-রাবণ-সীতা, বাবরের সমকামিতা আর মসজিদ-নির্মাণ নিয়ে বেশ খোলামেলা আলোচনা সে দীর্ঘক্ষণ শান্তভাবে পর্যবেক্ষণ করে। মসজিদ নির্মাণ তর্কে ছোট হুজুরের অধৈর্য দেখা গেলেও সার্বিকভাবে ছোট হুজুরকে তার স্বশিক্ষিত ও প্রজ্ঞাবান মনে হয়। বিশেষত ছোট হুজুর উপমহাদেশে নবাবের পরাজয় ও ইংরেজের শাসনকে ইসলামের অস্তিত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে ইতিবাচক বলে একটি ভিন্নতর ব্যাখ্যা দিলে সলোমান কৌতূহলী হয়ে ওঠে। স্বভাবগত নিস্পৃহ সলোমান তাই তাদের আলোচনায় এমনিই মজে যায় যে ট্রেন মিস করার পরিস্থিতি তৈরি হয়।

আমরা অবশ্য জানি সেলিম মোরশেদের কাহিনির মায়াময় জগতের প্রান্তজনেরা প্রত্যেকেই ভূয়োদর্শী। প্রত্যেকেই নিজস্ব বিচার-বিশ্লেষণ আর দার্শনিকতায় চমকে দেয়। সলোমানের বয়ানে এর ব্যাখ্যাও তিনি দেন দক্ষিণের বিশেষ ভূমিকে সম্পৃক্ত করে ‘যেখানে বিপ্লবী ও ধার্মিক একই সমান্তরালে সহজাত অর্থে শিক্ষাপ্রাপ্ত’। জেদি মাটি, তপ্ত হাওয়া, নদী, শুকিয়ে যাওয়া মানবহৃদয়, প্রজন্ম-পরম্পরায় বিচরণরত ভাবুক অস্তিত্ব আর তীব্র-তীক্ষ্ণ মমতা-ক্ষোভে নিয়ত ক্রিয়াশীল কৃষিমনের ব্যাখ্যা হাজির করে তিনি প্রান্তজনের প্রতি সলোমানের আগ্রহ ও মুগ্ধতার ইঙ্গিত দেন। যে আগ্রহ-শ্রদ্ধা-মুগ্ধতা সেলিম মোরশেদেরও। যা তাঁকে দিয়ে হেমাঙ্গিনী, সখিচান, বিশু এমত সব চরিত্র নির্মাণ করায়। উল্টোদিকে আছে দুই রাজনৈতিক নেতার আয়রনি। নানামুখী চরিত্র তাদের কালোটাকা, মিথ্যাচার, খুন-খারাবি, পরনে মাড় দেয়া সফেদ পোশাক আর মুখে অশ্রাব্য খিস্তি-খেউড়, আছে সুনামলোভ, আছে রুচিবান ভদ্রলোক নামে সুবিধাভোগের চাতুর্য। মোবাইলের শ্রেণিভেদ-এর সূত্র ধরে কন্যার শ্রেণিচেতনা কোনদিকে যাচ্ছে এমন ভাবনায়ও অন্ত্যজশ্রেণির প্রতি পক্ষপাতের সুর স্পষ্ট।

আপাত শান্ত, নিঃসংশয়, পর্যবেক্ষক সলোমান ট্রেনের কামরায় বাস্তব আর স্মৃতির সমান্তরাল প্রবল মানসিক ক্রিয়ায় পাঠককে প্রায় পর্যুদস্ত করে তোলে। প্লাটফর্মের মেয়েটির কাছ থেকে মালা কিনবে কি কিনবে না, সময়ে কুলাবে কিনা বা মালার গাঁথুনি নিয়ে দ্বন্দ্ব, আবার ট্রেন চলতে শুরু করলে জানালা দিয়ে দেখা গ্রাম-বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে বিধায় চেন টেনে ট্রেন থামিয়ে দেয়ার পাগলামি ভাবনা, একই সময়ে কামরার ভেতরের যাত্রীদের খুঁটিনাটি লক্ষ করা, ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমীর বয়ানে রাজনৈতিক জিজ্ঞাসা, আবার চলে যাওয়া শুধুমাত্র পর্যবেক্ষণের লোভে চোরাপথে পাশ্ববর্তী দেশ ভ্রমণের স্মৃতিতে। সেখানে সীমান্তবর্তী দুর্দান্ত ক্ষমতাবান রহস্যময়তা, আধাসামরিক জওয়ানদের বিশেষ ব্যবস্থার কূটাভাষ, অপর দেশের সাম্প্রদায়িকতা আর বিভিন্ন ঐতিহাসিক সত্যকে চ্যালেঞ্জ করে তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে যুক্তিনিষ্ঠ ব্যাখ্যা করে পাঠকের মনোজগৎ এলোমেলো করে দেয়।

স্মৃতির সলোমান  নিষ্কামও নয়, শোভাবাজারের বেশ্যালয় ঘুরে আসে সে। অথচ বর্তমানের সলোমান লাবণ্যময়ী, নেহেরি বা গবেষক মেয়েটির প্রতি আকর্ষিত হয় না। বিদ্বান, সুন্দরী, শিল্পী নারীনের প্রতি তার মনোভাব কী? একটা বুদ্ধিদীপ্ত আলোচনা তার সাথে চলতে দেখা যায়। সলোমানের জীবনের অনেকটা অংশ দখল করে রাখা শৈশবের মুক্তিযুদ্ধ, মা, বয়ঃসন্ধিকালের সঙ্গী নীতা এদের সবার কথা নারীনের সাথে অকপটে বন্ধুর মতো বলে। সমান্তরালে দুটি লাইটের একসাথে না জ্বলা আর নারীনের বিভিন্ন ফোনালাপ, তাকে ঘিরে সলোমানের সংশয় চাপ তৈরি করতে থাকে। ফলত যে যার পথে ফেরত যায়।

সলোমনের নিরুদ্দেশযাত্রার নাগরদোলায় পাঠক যখন থই খুঁজছে, সেলিম মোরশেদ হুট করে ঢুকে যান বন্ধুবান্ধবসমেত। শুরু হয় সাপলুডুর ব্যবচ্ছেদ। বন্ধুরা সেলিম মোরশেদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বেন, জুবায়ের, নারীন, লাবণ্যময়ী, গবেষক বিশেষত সলোমানের পরিণতি নিয়ে। বেরিয়ে আসে উপমহাদেশের রাজনীতির অকথিত অনেক অধ্যায়, দেশভাগ, শ্রেণিচেতনা, হিন্দু-মুসলমানের মন ও মনন। সমান্তরালে হাঁটে সলোমান। সলোমান অনীশ্বর নয়, ধর্মবোধ তার আছে। তবু শিশুর সাথে ঈশ্বরের চমৎকার যুক্তিনিষ্ঠ তুলনা করতে পারে সে। একইসাথে চেন টেনে ট্রেন থামিয়ে সৌন্দর্য উপভোগের পাগলামি চিন্তা করে আবার কাজটি করলে কী কী ঘটবে, কে কী বলবে তার ফটোগ্রাফিক বিবরণ দিতে পারে। ঘোরগ্রস্ততার মাঝেও বাস্তবে বেন চাকরি ছেড়ে দেয়ার কথা বললে তার জায়গায় কাকে ফিট করা যায় ভাবতে পারে। রাজনীতিসচেতন সলোমান উপমহাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির অতীত-বর্তমান, সংখ্যালঘুর হীনমন্যতা, বন্ধুকৃত্য, পিতৃত্বসহ আরও অনেক ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাজাত বিষয়গুলো সাপ আর ঘরলুডুর ছকে ফেলে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করতে থাকে। একই সময়ে ভিন্ন ভিন্ন বাস্তবতায় সলোমানের সাপ মই ঘরলুডুর অনিবার্যতায় জড়িয়ে পড়া ভবিতব্য’র নানামুখী পরিভ্রমণে মাঝে মাঝে পাঠক যেন খেই হারিয়ে ফেলে। আবার এটাই সেলিম মোরশেদের বিশেষত্ব যে মায়াবী এই ভ্রমণ থেকে পাঠক নিজেকে দূরে রাখতেও পারে না। বরং আবারো ফিরতে থাকে সলোমানের কাছে।

তারা প্রত্যক্ষ করে স্ববিরোধী সলোমানকে। দীর্ঘকালের সহকারী বেনকে খুনের মামলায় গ্রেপ্তার হতে শুনে ধাক্কা খায় সলোমান। বিশ্বাস করে, বেন অপরাধী না। তবু তার যুক্তিনিষ্ঠ মন বলে কোনো না কোনোভাবে এটা বেনের প্রাপ্য ছিল যদিও সে এই ভাবনার পেছনে স্পষ্ট যুক্তিও খুঁজে পায় না। সলোমান এমনকি পলায়নপর। নইলে এই সময় কেন তার মনে হয় উত্তর রাজ্যের পশ্চিম পাহাড়গুলো তাকে ‘জীবন, স্বাস্থ্য, শক্তি’র জরুরি বার্তা পাঠিয়েছে? কেন কিঞ্চি দেমা’র স্মৃতিচারণে ডুবে যায়? তাহলে কি দীর্ঘ পরিভ্রমণ পর্যবেক্ষণ আর বয়ান এভাবেই নিষ্ক্রিয়, নিরাসক্ত থেকে সলোমান তার যাত্রার গন্তব্যহীন পরিসমাপ্তি টানবে? কিন্তু লেখক তা হতে দেন না। তিনি রূপক হিসেবে নিয়ে আসেন সলোমন’স রিং-এর উপমা। যেভাবে পয়গম্বর সলোমন জ্ঞান-বুদ্ধির জন্য বিশ্বসম্রাট উপাধিপ্রাপ্ত হয়েছিলেন তেমনি সলোমানের ‘জানা বুঝার ভার’ তাকে দিয়ে প্রয়োজনীয় কর্তব্যটি করিয়ে নেয়। তাই নষ্ট ফোনবুথে কনফেস তাকে করতেই হয়। তিনশত ঊনপঞ্চাশটি লোভী সলোমানের বিপরীতে দাঁড়াতেই হয় এবং তাদের সবাইকে পর্যুদস্ত করে রক্ত ঝরাতে ঝরাতে সকল দেনা শোধ করার অভিপ্রায়েই হয়তো সলোমানের ফিরতি যাত্রা শুরু হয়।

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.

error: Content is protected !!