

সেলিম মোরশেদকে নিবেদিত কবিতাগুচ্ছ
সেলিম মোরশেদ
আশিক আকবর
নীল মেঘ থেকে নামা মোরশেদ
হুন্ডাই চালান গভীর রাতেই
ছড়াতে
টুইনচা পাখি যখন উড়ে
সুব্রত সেনগুপ্তদের তখন ম্লান ম্লান লাগে
মদন চোদন হি হি হাসে
মিডিআ বৃক্ষ বন্ধুরা বারবার পিছন তাকায়
আড় তুলে
ঠাড় তুলে
সেমো পাখিটা কেন আসে না এখনো
বুনো শুয়োরের সাথে তার এতো কি আলাপ
সিলভানার চাঁদে একজন খসরুর হাতে ট্যাবলেট
সুবিমল মিশ্রদের অহেতু লাল চুলকানি
পাল্টা প্রতিষ্ঠানে পাখি ডানা তুলে তার
উ
. ড়ে
. উ
. ড়ে
নিরন্তর এই উড়নে ছোট্ট এক স্বপ্নময় আলোক মহল
লক্ষ্যবিন্দুতে যার সুচ ফোটা রক্ত লাল
সাকুরা’র সামনে মধ্যরাত খুব ঋজু
পুত্রশোক কুয়াশা
দুই পাখির গানের স্বল্প স্বল্প স্বস্তি প্রেম
বিরাম নেই তবু
পাহাড়ে উঠতে থাকা এক বিশুদ্ধ চৈতন্য
উঠো
. উঠো
পা রেখে লাফ দেবার পাটাতন হও
আ ছি আ ছি
৮.৭.২০২০
সঞ্চয় প্রথম-এর তিনটি কবিতা
পুনরুত্থান
বহুযুগ প্রতীক্ষার পর মুখ দেখি আমার বাবার।
অরুন্ধতী আড়ি পেতে শোনে আমাদের কথা
কী নিপুণ সুঁই সুতো খেলা,
ঝরে পড়ে স্নেহাশিস বুকের অতলে।
সহজ কথার বলি ভালোবাসি তারে আমি
শূন্যের মতো।
শৈশব কেটে গেলে বেড়ে ওঠা নিজের শরীরে,
খুঁজে ফিরি তারই রূপ মূর্ত প্রতিম।
জননীকে দেখে ভীষণ ঈর্ষা হয়,
প্রেমমুগ্ধ আমি তার স্মৃতির অমিয়।
স্বনামধন্য কোনো লেখক বোঝেনি
একুশের দায়ভার কতটা গ্নানিময়।
সংকোচে সংকোচে বড় হয়ে ওঠে তাঁর বুক
সামাজিক ক্লান্তির ঋণ
রাত্রি শুধায়।
আমার অগ্রজ ছিল স্বপ্নকুমার
তার বুকে পিঠে তিনটি ডানার ফুল
নিজের ছিল না শুধু বড়ই অপ্রতুল।
সিংহভাগ জুড়ে আছি আমি তার বুকের জমিনে
কর্ষিত হয়নি কখনও যে আবাসভূমি
অবনত মাদকতা শান্তি কুসুম।
আজ নিদ্রা ভাঙার পর দু’হাতে
আঁকড়ে আছি লোহার চাবুক
কী ভীষণ নির্বাক মুখ তার
বিরল প্রান্তরে।
২৫.০৫.২০০২
বাবার বহু কাছে
[এ প্রলাপধ্বনি অর্ধনিমজ্জিত পুষ্পের কানে
তুলে দিল সুধাজল ধূসর শহরদিন
আস্তিনে লুকানো কবিতা সশরীরে ভর করে
রাতে রাতে শরীরী পতন হারানোর কিছু নেই শুধু
তবু দূরগতি প্রাহ্ন এঁকে দেয় পৃথিবীর কোণে
শীতল সিঁদুরের মতো সিঁথির শুরুতে।]
তোমার নৈকট্যখানি হারিয়ে ফেলেছি নিদারুণ জলে।
স্রোতস্বিনী বুক পেতে মেপে রাখ উদিতের কথা,
অনন্ত তমসার দিনে শীতের কাঁপনে
সময় গড়িয়ে চলে গহীনের পথে।
অমরাত্রির প্রগাঢ় দীর্ঘায়িত মেঘ,
মনষা তোরণের মতো সরল সজ্ঞান।
অবেলায় দূরছবি ভাসে তার চুরির চূড়ায়।
হিমায়িত নিদ্রা কুসুম, প্রসবিত পূর্ণ চাঁদ;
প্রেরণার অভিযানে জীবন গাঁথা
স্রোতহারা প্রলাপের ঢল।
অভিজ্ঞান ধীর পায়ে চাতক ছন্দের মতো
অবশ প্রাণহীন শরৎ সান্ধ্যতারা।
অবিরাম গতি যার তুমি সেই নক্ষত্র তপসী।
বুকে নিয়ে নির্বাণ ক্ষুধা পিচঢালা পথের আকর
আকাশ বিদীর্ণ করে মই বেয়ে নেমে আসে দেবী।
প্রতিবার চিৎকার তোলে যেতে যেতে বহুদূর
. মনন বিলাসী।
০৯.১১.২০০১
মায়ের মৃত্যুদিনে
অবরুদ্ধ নিদারুণ রাত সহেলি প্রকৃতির গায়ে মাগো তুমি
বড়ই হেঁয়ালি। বিন্দু বিন্দু জমে ওঠা রক্তের স্রোত
ও কম্পিত আকাশ আসমান তোমাকে ঘিরে নৃত্যরত
মাটির বুনন
আমি একা হাত রেখে হাতে অন্ধ চোখে চলি
বৃষ্টির আনাগোনা ফের নতুন দিনের মতো।
রাত্রি বিভীষণ দেয় সূর্য মর্গের।
শেষমেষ পথহারা পদ্মকুসুম
তোমার আঁচল ধরে হিমায়িত মাগো তুমি বড়ই মলিন
তোমার শবাধার জুড়ে হলুদের ঢল
বাবার রক্তজবা আমার দৃষ্টি দ্যুতি নিঃস্ব নিষ্প্রাণ
সারা রাত দুটি লাশ নেমে যায় সীমায় সীমায়
অনুচ্চ বাসনার বেগ শোনায় কুলীনের কথা
হাত ছিল স্পর্ধিত ক্রাচের ভরে
আমার অন্ধ চোখ আমার বাঁকানো দাঁত ছিল অবরুদ্ধ
নিদারুণ রাত্রি শ্লোক
তোমার ডেরায় ডেরায় নিশুতির ডাক
বাবার রক্তজবা যেন বড়ই মলিন।
৩০.০৭.২০০১
রক্ত
আহমদ সায়েম
দেখতে পাই অনেক কিছুই কিন্তু তা পড়ে ওঠতে-ওঠতে
সময়ের দোয়ারে চলে আসে সূর্যের শেষ ছায়াটা
তড়িঘড়ি করে কেউ সুই সুতা খোঁজতে বেরুন
কেউ সেলাই করে নিন দিনের ভাঙ্গা বোতল আর
. চশমার গ্লাসটা
কেউ দেয়ালের চিত্রটা ঠিক-ঠাক বসিয়ে বেরিয়ে পড়েন…
ফুলশয্যায় যে কথাগুলো বলা হয়নি বা যে গদ্যের দাঁড়ি কমার
জন্য ভুল পড়তে পারে পাঠক সেই ভয়ে
আরেকটা গদ্যের শুরু টানা হয়…
এবার প্রভাবিত করে ফেলব অর্জনের সব কয়টি দোয়ার, তাই
ঢিলটা ছুঁড়ে মারা হয় সূর্যের সমান… কিন্তু হাতের ব্যথায় আর
যেনো দেখা হল না রক্তে যতো চিহ্ন…
রক্তের ছায়ায় যেনো ধরা থাকে অর্জনের সবকয়টি ফুল…
০৭.২৮.২০২০
আলো
তিথি আফরোজ
গহিনে আলো থাকলে প্রদীপ জ্বলবেই।
যেখানেই থাকেন প্রিয় প্রজ্ঞাবান, প্রস্ফুটিত হয়েছেন
আলোকিত হচ্ছি, ছুটে যাচ্ছি পতঙ্গ: আলো স্বাদ, ঘ্রাণ
শুষে নিচ্ছি।
অসংখ্য প্রদীপ জ্বালালে এতটুকু কমবে না যে রশ্মির আলো
তার আশীর্বাদ অতি ইন্দ্রিয় প্রজ্ঞায় দিয়ে যাচ্ছে
এইসব গুরুহীন অন্ধ শহরে…
ঝুলি নিয়ে ঘুরে বেড়ায় আমরা যারা পরিব্রাজক, কাটা সাপের মুণ্ডু হাতে
কুড়োচ্ছি মৃত পাতা মিলবে বলে নির্বাণ
হেরম্যান হেসের পিপাসিত সিদ্ধার্থের
থলেতে আপনি যেন এক জ্বলন্ত আলো
অতি অন্ধকারের আলো
জেগে ওঠা প্রাজ্ঞ প্রাণ
ধাঁধা
হিজল জোবায়ের
মদের বোতলে ভরা বিষ-পিপাসাই পানীয়।
পান করে নাও।
ঘুমাও অন্ধকারে। আলো থেকে দূরে।
তুমি তিনটি শহরে থাকো।
তুমি একজন।
একইসাথে তবু তিনটি বাড়িতে থাকো।
তিনটি বাড়ির ময়ূর তোমাকে চেনে।
তিন তিনটি বাড়ি শীতের শহরে।
তিন তিনটি ঘর শীতের শহরে।
ঘর ভর্তি কাটা সাপের মুণ্ডু।
সিন্দুক ভরা কাটা সাপের মুণ্ডু।
গর্জন কাঠের সিন্দুক। রক্ত পড়ছে।
ড্রয়ারে লুকানো চিঠিগুলো চুপিসারে প’ড়ো।
মনে রেখো, তুমি বোবা।
আর মদে বিষ মাখা আছে।
তবু, চিৎকার তোমাকেই করতে হবে।
বলতেই হবে কথা।
উত্তর তোমাকেই খুঁজে পেতে হবে
একা একা।
আবার লাগছে জোড়া কাটা সাপের মুণ্ডু।