

সেলিম মোরশেদকে নিয়ে কয়েকটি চিঠি
কার্তিক লাহিড়ীর চিঠি
মারুফুল আলম
প্রিয়বরেষু
সেলিম মোরশেদ প্রণীত ‘সাপলুডু খেলা’ উপন্যাসটি আমি সন্দীপ দত্ত-র মাধ্যমে পেয়ে যাই, আর আপনি মনে করে ঐ বইটি আমাকে দিয়েছেন এজন্য ধন্যবাদ জানাবার ভাষা আমার নেই।
উপন্যাসটি পড়ে ফেলেছি। সেলিম-কে জানাবেন উপন্যাসটি আমার ভালো লেগেছে। মনে হয়েছে আধুনিক এক সমস্যাকে তিনি আধুনিক ভাষায় এবং করণ-কৌশলে উপস্থাপিত করেছেন— ধর্ম থেকে শুরু করে সমাজ, রাজনীতি এমনকি বিজ্ঞান-অপবিজ্ঞানও নায়ককে আলোড়িত করেছে নানা ভাবে, এবং সব কিছুর মধ্যে জড়িয়ে থেকেও সে আশ্চর্য নির্লিপ্ত ও নৈর্ব্যক্তিক থেকেছে। এ এক আধুনিক মানুষের গল্প যে মন ও মননে শুধু নয় শরীরী যন্ত্রণাকেও নির্বিকার মোহহীনভাবে গ্রহণ করে। এ রকম একটি উপন্যাস রচনার জন্য লেখককে বাহবা দিতেই হয়।
তবে বয়েসের জন্যেই বোধ হয় ছাপা খুদে অক্ষরগুলো মাঝে মধ্যে চোখ-কে পীড়া দিয়েছে, কিংবা টানা লেখাটিকে মধ্যে মধ্যে ভেঙে দেয়া গেলে তবে বোধ হয় চোখের কিছু আরাম মিলতো। এহ বাহ্য… বইটি পড়ানোর জন্য আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ। সেলিম-কে জানাবেন আমার ভালো লাগার কথা— চিঠি লিখবেন, সেলিমকে লিখতে বলবেন। ভালো থাকবেন।
শুভেচ্ছান্তে
কার্তিক লাহিড়ী
কলকাতা – ৮
২৭.০২.২০০২
মলয় রায়চৌধুরীর চিঠি
জনাব সেলিম মোরশেদ
প্রিয়বরেষু
আপনার ‘সাপলুডু খেলা’ বইটি শুভঙ্কর দাশ দিয়েছিলেন জানুয়ারি ২০০২-তে। এতকাল পড়া হয়নি, ছোটহরফের ভীতির কারণে। মুম্বাইতে ছেলের কাছে গিয়ে হাতে প্রচুর সময় থাকায় পড়ে ফেললুম। আকর্ষিত হলুম সময়ের যাযাবরত্বে টেক্সটকে ডিন্যারেটিভাইজ করার প্রয়াসে। ইউরোপের ক্যানন থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টাও তারিফযোগ্য।
আমার বইপত্র আর ‘হাওয়া ৪৯’ পত্রিকা সম্ভবত পাঠক সমাবেশ-এ পাওয়া যায়। বাংলাদেশ থেকে কেউ কলকাতায় এলে আমার অথবা দাদা সমীর রায়চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁর হাতে বইপত্র পাঠাতে পারি।
ভালো আছেন নিশ্চয়।
শুভেচ্ছাসহ
মলয় রায়চৌধুরী
কলকাতা
৮ই শ্রাবণ ১৪০৯
কামরুল হুদা পথিকের চিঠি
২২-০৪-০৩
সেলিম মোরশেদ শ্রদ্ধাস্পদেষু,
শুভেচ্ছা জানবেন। আপনার পাঠানো ‘পাল্টা কথার সূত্রমুখ অথবা বুনো শুয়োরের গোঁ’ পেয়েছি। এবং পেয়েই পড়া শেষ করেছি। অনেকগুলো লেখার সাথে আগেই পরিচয় ছিল। তবে নতুন কিছুও ছিল। ভালো লেগেছে। আমাকে মনে করেছেন বলে ধন্যবাদ।
আপনার সাথে পরিচয় হয়েছে অনেকদিন পূর্বে। আলোচনাও হয়েছে। আপনার প্রতি আমার আগ্রহও অনেক। লেখাও চেয়েছি বার কয়েকবার। ‘দ্রষ্টব্য’ বেরোচ্ছে না অনেকদিন। বগুড়া ছেড়ে আসার পর সুবিমল মিশ্র সংখ্যাটাই শেষ, তার পর অনেকদিন বন্ধ। বিভিন্ন প্রতিকূলতা।
অতঃপর আবার ‘দ্রষ্টব্য’ বের হচ্ছে। জুলাই-আগস্টে বের করার চূড়ান্ত ইচ্ছে। ‘দ্রষ্টব্যে’ তো কখনো লেখেননি। এবার কি একটা লেখা আশা করতে পারি? একটা গল্প তো অবশ্যই, প্রবন্ধ হলেও চলে। অর্থাৎ আপনার ইচ্ছে। শুধু মে মাসের মধ্যে লেখাটা পেতে চাই। লেখা প্রাপ্তির জন্য কি অনুরোধ করব না দাবি করব। যেটাই হোক অপেক্ষায় থাকলাম।
শুভ কামনায়—
কামরুল হুদা পথিক
সাভার।
বি. দ্র. আমার বইটা কি পেয়েছেন? এককপি পাঠালাম।
রওশন আরা লীনার চিঠি
সেলিম মোরশেদ
Heart of darkness উপন্যাসে মৃত্যুর ঠিক আগে কুৎজ উচ্চারণ করলেন, horror! horror!… কুৎজ সত্যকে দেখেছিলেন কঙ্গোয়। মৃত্যুকালে কি নিজের ক্রোধ, মোহ, উচ্চাকাঙ্ক্ষা, নিষ্ঠুরতার মুখোমুখি হয়েছিলেন? আমরা জানতে পারি না। মৃত্যুকালে গান্ধী বলেছিলেন, হে রাম! এই রাম তো বাহুবলী রাম নয়। আবার কবি টমাস ডিলান মৃত্যু সম্পর্কে লিখছেন,
Rage, rage against the dying of the light”
যাঁরা জীবনের সত্য কিছুমাত্র খুঁজে পেয়েছেন, বার বার জীবনের মুখোমুখি হয়েছেন, তাঁরা মৃত্যুর সময় আলোর কথা বলেগেছেন। এই আলোই জীবন।মেনে নেওয়া নয়, অর্জন করা জীবন।
রোজ কিছু-না-কিছু শিখছি। কিছু-না-কিছু পড়ছি। ‘অমায়িক খচ্চর’ পড়তে গিয়ে আবার এই লাইনগুলোই মনে পড়ল। ভবিষ্যতের মানুষের জন্য এই লেখাটা একটা আলো। স্বাদেশিকতার আলোয় হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করলে মানুষের জন্য এ অমূল্য অর্জন।
খুব ভালো থাকো।
ঈদ মোবারক।