:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
শাহাদুজ্জামান

কথাসাহিত্যিক

শাহাদুজ্জামানের গল্প : সাইপ্রাস

শাহাদুজ্জামানের গল্প : সাইপ্রাস

[ শাহাদুজ্জামানের ‘মৌলিক‘ ও ‘সাইপ্রাস’ গল্প দুটির চিত্রনাট্যে তৈরি হয়েছে নূর ইমরান মিঠুর চলচ্চিত্র ‘কমলা রকেট’। মাওলা ব্রাদার্স থেকে ২০১৪ সালে প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ ‘অন্য এক গল্পকারের গল্প নিয়ে গল্প’ এর থেকে ‘সাইপ্রাস’। পড়ুন ‘কমলা রকেট’ এর গল্প ‘সাইপ্রাস’। -স. ]


বাস দাঁড়িয়ে আছে বাসস্ট্যান্ডে বেশ কিছুক্ষণ। আমার পাশে জানালার দিকে যে লোকটা বসেছেন তিনি আমাকে বলেন, ‘ভাই উপরে আমার ব্যাগটা আছে একটু নামায়ে দিবেন, এইখান থেকে নামানি একটু সমস্যা ?’

আমি সিটের উপর লাগেজের যে র‍্যাকটা আছে সেখান থেকে তার নীল রঙের ব্যাগটা নামিয়ে দেই। লোকটা ব্যাগটা নিয়ে তার চেইন খোলেন এবং খুব মনোযোগ দিয়ে ব্যাগে রাখা কাপড়- চোপড়ের ভেতর হাত ঢুকিয়ে কি যেন খুঁজতে থাকেন। মাঝ বয়সী লোক। ক’দিনের না কামানো কাঁচাপাকা দাড়ি। সস্তা দরের শার্ট, প্যান্ট। আমি লক্ষ করি তাকে। ভাবি খুব জরুরি কিছু খুঁজছেন হয়তো। দেখা গেল বেশ অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে তিনি ব্যাগের ভেতর থেকে বের করেন একটা পেয়ারা। বিরাট আকারের পেয়ারা, কাজির পেয়ারা। পুরো মুঠ ভরে তিনি পেয়ারাটা ধরেন এবং তারপর আমাকে আবার অনুরোধ করেন ব্যাগটাকে আগের জায়গায় রেখে দিতে। আমি ব্যাগটাকে আবার উপরে রেখে দেই। লোকটা আর কোন কথা বলেন না। জানালার দিকে তাকিয়ে বিরাট হা করে পেয়ারায় কামড় বসান।

আমি বাস ছাড়বার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। এ সময় বোরকাপড়া একজন মহিলা জানালা দিয়ে কতগুলি লিফলেট ভেতরে ছুঁড়ে দেন। আমার পাশের লোকটা পেয়ারা কামড় দিতে দিতে লিফলেটটা হাতে নিয়ে পড়েন এবং তারপর আবার তা ছুঁড়ে ফেলে দেন জানালার বাইরে। আমার কোলের উপরও একটা লিফলেট এসে পড়ে। লিফলেটটা হাতে নিই আমি। বাসে এই ধরনের লিফলেট বিলানো বহুবার দেখেছি আমি, এই বিষয়বস্তু সম্পর্কেও মোটামুটি ধারণা আছে। তবে বোরকাপড়া মহিলাদের দিয়ে এই লিফলেট বিতরণ ব্যাপারটা নতুন মনে হয়। লিফলেটগুলি পড়বার ফুসরৎ হয় নাই আগে। আজকে লিফলেটটা হাতে নিয়ে মনোযোগ দিয়ে পড়ি;

‘যাহাদের পুরুষাঙ্গ নিস্তেজ হইয়াছে, ইন্দ্রিয় শৈথল্য, রগ ঢিলা ও নরম হইয়া আগা মোটা গোড়া চিকন হইয়াছে, স্বপ্নদোষ, হস্তমৈথুনে যৌবনে নানা অত্যাচারে ধাতু বিকৃত হয়ে তরল হইয়াছে, কোঠা বিগড়াইয়া গিয়াছে, তাহাদের মতো জটিল রোগীদের জন্য বোর্ড বসাইয়া গ্রান্টির সহিত ঔষধ তৈরি করে দেয়া হয়। ধাতু, উপধাতু, অভ্র, প্রবাল, মুক্তা ও ভেষজের সংমিশ্রণে তৈরি আমাদের এই বীর্য সাগর মহৌষধ নির্দিষ্ট সময় ব্যবহারে অশ্ব শক্তি সম্পন্ন হওয়া যায়। এই মহৌষধ ১৫ দিন পুরুষাঙ্গে মালিশ করিলে পুরুষাঙ্গের রগ সতেজ হইয়া লৌহ দন্ডের ন্যায় শক্ত মোটা ও লম্বা হইবে। ১ শিশি মালিশ করিলে রতিশক্তি এইরূপ বৃদ্ধি পাইবে যে প্রত্যহ স্ত্রী সহবাস ব্যতীত থাকা মুস্কিল হইয়া পড়িবে। এক ঘন্টা স্ত্রী সহবাসেও ধাতু ক্ষয় হইবে না এবং লিঙ্গ টলিবে না ।
দোকানে আসিবার রাস্তা- যে কোন জায়গা হইতে বাস, রিক্সা, টেম্পু যোগে আসিয়া হোসেনগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ি নামিয়া রাস্তার পশ্চিম পার্শ্বে হাজীর গলিতে ঢুকিয়া ১০/১২ খানা দোকান পাস করিয়া আপনার বাম পার্শ্বের মসজিদের গলিতে ঢুকিলেই দোকানের সাইনবোর্ড দেখিতে পাইবেন ।’

লিফলেটটা আমার বাসে অপেক্ষার বিরক্তি এবং ক্লান্তি দূর করে দেয়। এর ভাষা বিন্যাস, ঠিকানা উপস্থাপন ইত্যাদির ব্যাপক সৃজনশীলতা দেখে আমি যারপরনাই পুলকিত হই। আর এই যে একজন বোরকা পরা নারী পুরুষাঙ্গ সতেজ করার একটা মহৌষধের বিলি করছেন এর ভেতরের মনস্তাত্বিক যৌন সুড়সসুড়িটাও আমি টের পাই।

এইসব যখন ভাবছি তখন আমার পাশের লোকটা হাতের পেয়ারায় একতা বড় কামড় বসিয়ে পেয়ারা চিবাতে চিবাতে, বিশাল পেয়ারাটার দিকে তাকিয়েই বলেন- এইসব চিটিং।
লোকটা এতক্ষণ কোন কথা বলেননি। তার হঠাৎ এমন মন্তব্যে আমি একটু সচকিত হয়ে উঠি। আমি তার দিকে তাকিয়ে বলি- তাই?
লোকটা পেয়ারার দিকে তাকিয়েই বলেন- বিয়া করছেন?
আমি বলি- না।
লোকটা: তাইলে আপনেরে এইসব বইলা লাভ নাই।
আমি: তা অবশ্য ঠিক।

লোকটা পেয়ারায় আরেকটা কামড় বসিয়ে এবার আমার দিকে ঘুরে বলেন- না, কথাটা আসলে ঠিক না। বিয়া করা না করার সাথে এই মালিশ লাগানোর কোন সম্পর্ক নাই। আছে?
আমি তাকে সায় দিয়ে বলি- সেটাও অবশ্য ঠিকই বলেছেন, তেমন কোন সম্পর্ক নাই ।
লোকটা: বিয়া করেনাই বইলা একজন এই মালিশ লাগাইব না এমন তো কোন কথা নাই। তাই না?
আমি বলি- হ্যাঁ, ঠিকই।
লোকটা: যাক, এত কথা বইলা তো লাভ নাই। খালি এইটুকু মনে রাইখেন যে এইগুলি চিটিংবাজি।
আমি: মানে এই ওষুধটা সম্পর্কে আপনের তাহলে ধারণা আছে? (আসলে আমি জানতে চেয়েছিলাম তিনি নিজেই এই ওষুধটা ব্যবহার করেছেন কি না কিন্তু সেটা তো ঠিক সরাসরি জিজ্ঞাসা করা যায় না)
লোকটা: আপনে ওষুধ বলেন কোনটারে? এইটা আবার কীসের ওষুধ? শুনেন, এত ভাঙ্গাইয়া আমি বলব না। ঐ যে লিখছে না অশ্বশক্তি, এইগুলি বোগাস। মানুষ মানুষই, ঘোড়ার কাম মানুষকে দিয়া হয় না। আল্লাহ তাইলে মানুষরে ঘোড়া আর ঘোড়ারে মানুষ বানাইত।

আপনে ওষুধ বলেন কোনটারে? এইটা আবার কীসের ওষুধ? শুনেন, এত ভাঙ্গাইয়া আমি বলব না। ঐ যে লিখছে না অশ্বশক্তি, এইগুলি বোগাস। মানুষ মানুষই, ঘোড়ার কাম মানুষকে দিয়া হয় না। আল্লাহ তাইলে মানুষরে ঘোড়া আর ঘোড়ারে মানুষ বানাইত।

লোকটা এরপর তার পেয়ারায় মনোযোগ দেন। মুঠো ভরে বিশাল আকারের পেয়ারা কচ কচ করে খেতে থাকেন ।
তার যুক্তি অকাট্য, মানুষ আর ঘোড়া তো দুটো দু ধরনের জীব, একটাকে দিয়ে আরেকটার কাজ হবে কেন? এই সময় বাসটা ছাড়ে। চারিদিকে একটা চাঞ্চল্য দেখা দেয়। ঢাকার পথে আন্তঃজেলা বাস। বাসস্ট্যান্ডের ভিড় ঠেলে বাস মূল রাস্তায় এসে নামে।
ছুটে যাওয়া বাসের জানালা দিয়ে আমি গাছ, গরু ইত্যাদি দেখি। লোকটা চুপচাপ মনোযোগ দিয়ে পেয়ারা খেতে থাকেন। আমিও চুপচাপ থাকি।
কিছুক্ষণ পর তিনি আবার কথা বলতে শুরু করেন। তিনি আমাকে বলেন- শুনেন, বিয়া যখন করবেন। শাস্ত্রমতে দেইখা ভালো মেয়ে আনবেন। শাস্ত্রমতো মেয়ে আনলে ঘরে এমনিতেই শান্তি থাকবে। এইসব তেল মালিশ কইরা ঘরে শান্তি আনা যায় না।

লোকটা আমাকে কৌতুহলী করে তোলে। আমি তার সঙ্গে আলাপ জমাবার ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে উঠি। আমি বলি- তাই? তো শাস্ত্রমতো মেয়ে ব্যাপারটা কীরকম?
লোকটা: আছে না? কোন মেয়ে কীরকম এইসব নিয়া শাস্ত্র আছে না? বিয়া করেন নাই বুঝলাম, পছন্দের কোন মেয়ে আছে?
আমি বললাম- না, এখনো নাই। (মিতির সঙ্গে আমার সম্পর্কের ব্যাপারটা চেপে গেলাম। খামোখা এই লোককে বলে দরকার কী? তা ছাড়া মিতির সাথে ব্যাপারটা তেমন কিছু দাঁড়ায়নি এখনো)
লোকটা: তাইলে তো ভালোই। খেয়াল- খবর কইরা মেয়ে পছন্দ করবেন।
আমি: আপনি তো শাস্ত্র বললেন না। শাস্ত্র দুই-একটা জানা থাকলে তো পছন্দ করতে সুবিধা হবে।

আমাদের বাস এ সময় আরেকটা বাসকে ওভারটেক করবার সময় খুব জোরে জোরে হর্ন দিতে থাকে। লোকটা কিছু একটা বলে কিন্তু আমি শুনতে পাই না ।
আমি বেশ উদগ্রীব হয়ে থাকি তার শাস্ত্র শুনবার জন্য। বাস হর্ন দেয়া থামালে লোকটা বলেন- একটা তাইলে কই আপনেরে। এই যেমন ধরেন শাস্ত্রে বলে:

বাম স্তনে যে নারীর তিল চিহ্ন আছে
চিরদিন সোহাগিনী থাকে স্বামীর কাছে

আমি বেশ একটু নড়েচড়ে বসি। আকর্ষণীয় শাস্ত্র সন্দেহ নাই। আমি মিতির কথা ভাবার চেষ্টা করি। কিন্তু মিতির স্তনের তিলবিষয়ক কোন জ্ঞানার্জনের সুযোগ এখনো আমার ঘটে নাই।
আমি বলি- খুবই ভালো শাস্ত্র। কিন্তু ধরেন কোন মেয়ের কোথায় তিল চিহ্ন আছে সেটা আগে থেকে জানা একটু সমস্যা না? বিশেষ করে আপনি যে জায়গার তিলের কথা বলছেন?
লোকটা: সেইটা একটা কোনো ব্যাপার হইল? মেয়ে একজন পছন্দ হইলে বাড়ির লোকজনের কাছে খোঁজ-খবর করলে মেয়ের নারী-নক্ষত্র বাইর করা কোনো কঠিন কাজ না।

বাস এমনিতে খুব শব্দ করে চলছে, তবে আমরা দুজন পাশাপাশি সিটে বসে কথা বলছি বলে কথা শুনতে অসুবিধা হচ্ছে না আর আমাদের আলাপ অন্যদের কানে যাবারও কোনো উপায় নাই।
আমি ভাবি মন্দ না। এ লোকের শাস্ত্র শুনতে পারলে জার্নিটা তো ভালোই কাটবে। জিজ্ঞাসা করি- আর কী শাস্ত্র আপনার জানা আছে ভাই?
লোকটা: জানা তো আছে শত শত। আপনাকে কোনটা রাইখা কোনটা বলব? ধরেন আছে:

কপালে শিরা ভাসে হইলে নারীর রাগ
অসতীর সম্ভাবনা অষ্টানব্বই ভাগ

আমি বলি- তার মানে রাগ করলে কোন মেয়ের কপালে যদি শিরা দেখা যায় তা হলে তার অসতী হওয়ার চান্স আটানব্বই ভাগ?
লোকটা: হ্যাঁ, ঠিক। এইজন্য যে মেয়েরে ঘরে আনবেন, পারলে দেইখা নিতে হবে রাগ করলে তার কপালে শিরা দেখা যায় কি না?
মিতি মাঝে মধ্যে আমার উপর রাগ করে ঠিক কিন্তু রাগ করলে তো ও একেবারে চুপচাপ হয়ে যায়। কপালে যে শিরা এমনিতে দেখা যেত রাগ করলে সেগুলি তো আরও অদৃশ্য হয়ে যায়। তা হলে মিতি এই পরীক্ষায় পাশ।
বলিঃ আচ্ছা। বেশ মজার শাস্ত্র তো। এসব তো কখনো শুনি নাই।
লোকটা: শুনবেন কেমনে ? আজকাল কেউ কি শাস্ত্রের কথা শুনে নাকি?
আমি: তা তো ঠিকই। আজকাল আর মানুষের শাস্ত্র শোনার সময় কই। তা আপনি আরও দু- একটা বলেন না শুনি।
লোকটা পেয়ারায় আরেকটা কামর দিয়ে বলে- যেমন ধরেন:

কাঁচা চাউল খাওয়া যে নারীর স্বভাব
স্বামীর সংসারে তার ছাড়ে না অভাব

আমি: সেটা কীরকম ?
লোকটা: কিছু মেয়ে দেখবেন চান্স পাইলে বইসা বইসা কাঁচা চাল চিবায়। এরা সংসারে অভাব ডাইকা আনে ।

আমার মনে পড়ে, বেইলী রোডে একটা লোক পেঁইয়াজ মরিচ চানাচুর দিয়ে চাল ভাজা বিক্রি করে, মিতিকে নিয়ে যে ক’বার নাটক দেখতে গেছি, বিরতির সময় মিতি ঐ চাল ভাজাটা খেতে চাইত। কিন্তু ওটা তো চাল ভাজা, কাঁচা চাল না। আমি একটু আশ্বস্ত হই।
লোকটা বলতে থাকেন- কিংবা ধরেন-

যে নারী তিল ধরে কর্ণ লতিকায়
তার মত কুলবতী খুঁজে পাওয়া দায়

আমি: তার মানে কানে যদি তিল থাকে তা হলে সেই মেয়ে ভালো?
লোকটা: হ্যাঁ সে খুবই ভালো।

মিতির স্তন দেখবার সুযোগ না পেলেও ওর কান এবং কানের লতা দেখবার সুযোগ পেয়েছি। একদিন খুব চমৎকার একটা কানের দুল পড়েছিল ও। নীল পাথরের। আমি হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখেছিলাম। ওর কানও ছুঁয়েছিলাম সেই সুবাদে। ওখানে কোন তিল দেখেছি বলে মনে পড়ে না। তা হলে মিতি এইখানে ডিসকোয়ালিফাইড।
লোকটা আবার বলেন- শাস্ত্রে আছেঃ

দুই ভুরুর মাঝখানে আছে ক্ষুদ্র তিল
রাজার রানির সাথে ভাগ্য তার মিল

আমি বলি- দু ভুরুর মাঝখানে তিলসহ মেয়ে পাওয়া তো খুব কঠিন হবে ভাই। আমি কোনোদিন এমন মেয়ে দেখেছি বলে মনে পড়ে না।
লোকটা: যা কিছু ভালো তা তো  পথে- ঘাটে থাকে না, খুঁইজা নিতে হয় ।
কিছুক্ষণ নীরব থেকে লোকটা আমাকে বলেন- আপনে পেয়ারা খাইবেন? আমার ব্যাগে আছে আরেকটা।
আমি বলি- না না পেয়ারা খাব না। (মনে মনে অবশ্য ভাবি, অনেকক্ষণ ধরে কচ কচ করে খেয়ে চলেছে লোকটা আর সাধলো কি না এতক্ষণ পর?)
যাহোক আমি তাকে বলি- আপনার শাস্ত্রগুলি তো বেশ শিক্ষণীয়। কিন্তু একটা ব্যাপার। শাস্ত্রগুলি সব শরীরের নানা চিহ্ন নিয়ে। তো শুধু শরীরের চিহ্ন দেখলে একটা মেয়ের স্বভাব- চরিত্র, মন সব কি জানা যায়?

লোকটা পেয়ারায় আরেকটু কামড় দিয়ে, পেয়ারা চিবাতে চিবাতে বলেন- শুনেন, দেখা তো যায় মানুষের শরীরটাই। মন দেখা যায়? একজন মেয়ের সঙ্গে বিশ বছর থাকলেও তো তার মন আপনি দেখতে পাবেন না। দেখবেন ঐ শরীরটাই। শরীরের ভিতরেই মন, স্বভাব সব লেখা আছে। সেই লেখা পড়তে শাস্ত্র জানতে হয়।
খুবই দার্শনিক মাত্রার কথা। আমি বেশ মুগ্ধ হই। বলি- আপনার কথাটা অবশ্য ভেবে দেখার মতো। তা এই শাস্ত্রগুলি কি শুধু মেয়েদের শরীর নিয়েই? পুরুষদের ব্যাপারে কিছু নাই?
লোকটা: থাকবে না ক্যান? শাস্ত্র দুই দিকেই আছে। পুরুষ মানুষ চেনারও শাস্ত্র আছে।
আমি: কীরকম ?
লোকটা বলেন- যেমন ধরেন:

ক্ষুদ্র কপাল আর খাটো গর্দান
হার্মাদের চিহ্ন ইহা শাস্ত্রের প্রমাণ

আমি: হার্মাদ কীরকম ?
লোকটা: শয়তান টাইপের লোক আর কী। কপাল আর ঘাড় খাটো হইলে এই লোক সুবিধার না। আপনের ভিতরে যে কোন শয়তানী নাই সেটা আপনার ঘাড় দেইখাই আমি বুঝছি। এমনি এমনি কি আর এত কথা বলতেছি আপনের সাথে, এত শাস্ত্র শুনাইতেছি?
আমি: যাক, একটু নিশ্চিন্ত হলাম। আরও দু-একটা বলেন শুনি।

লোকটা পেয়ারায় আরেকটু কামড় দিয়ে, পেয়ারা চিবাতে চিবাতে বলেন- শুনেন, দেখা তো যায় মানুষের শরীরটাই। মন দেখা যায়? একজন মেয়ের সঙ্গে বিশ বছর থাকলেও তো তার মন আপনি দেখতে পাবেন না। দেখবেন ঐ শরীরটাই। শরীরের ভিতরেই মন, স্বভাব সব লেখা আছে। সেই লেখা পড়তে শাস্ত্র জানতে হয়।

লোকটা: যেমন ধরেন-

আঙ্গুলের অগ্রভাগ গদার আকার
নিঃসন্দেহে ঐ লোক জানিও গোঁয়ার

আমি আড়চোখে আমার আঙ্গুলগুলি দেখে নেই। না কোনটাকে ঠিক গদার আকার বলে মনে হচ্ছে না ।
লোকটা বলতে থাকেন- আবার ধরেন:

লিঙ্গমুণ্ডে কালো তিল যে ব্যক্তির রয়
ঐ ব্যক্তি নির্লজ্জ হয় অতিশয়।

আমি দেখলাম লোকটা মোটামুটি তিল বিশারদ। এবার বাড়ি গিয়ে আমার কোথায় কোথায় তিল আছে সেটা আরেকটু ভালোভাবে দেখব ঠিক করলাম।

বাস ভীষণ স্পীডে চলছে। বাস একটা কাঁচা-পাকা ডাইভার্সন রডে উঠলে জানালা দিয়ে প্রচুর ধুলা ঢুকতে থাকে। আমি লোকটাকে জানালা বন্ধ করে দিতে অনুরোধ করি। লোকটা জানালাটা বন্ধ করে দেন। তার হাতের কাজির পেয়ারা তখনো শেষ হয় নাই।
আমি বলি- আচ্ছা আপনার স্ত্রীকে কি আপনি শাস্ত্র দেখেই বিয়ে করেছিলেন?
লোকটা: শাস্ত্র দেইখাই করছি কিন্তু আমি জানতাম আমার কপালে সুখ আসবে না।
আমি: কেন ?
লোকটা: সব দোষ এই আঁচিলের।

লোকটা তার নাকের পাশে একতা ছোট্ট আঁচিলের দিকে আমার মনোযোগ আকর্ষণ করেন। আমি তার দিকে একটু ঝুঁকে আঁচিলটা দেখি।
লোকটা বলেন-

নাকের পাঁচিলে আঁচিল ধরে যেই লোক
ঘর স্ত্রীর হাতে সে কষ্ট পায় ভয়ানক।

আমার নাকের পাতায় যেইদিন থাইকা এই আঁচিল আমি দেখছি, তখন থাইকাই বুচ্ছি আমার কপালে শান্তি নাই। তারপরও যতটুকু সম্ভব আমি শাস্ত্র মিলায়াই মেয়ে ঘরে আনছি। কিন্তু সেইসময় একটা শাস্ত্র আমি জানতাম না, যে কারণে আবারো ভুল করছি।
আমি: কোন শাস্ত্রটা জানতেন না?
লোকটা:

অঙ্গুলি তুলিয়া খায় যে নারী খানা
ঐ নারীর সঙ্গে কিন্তু ভাব করা মানা।

এই শাস্ত্রটা আমি জানছি বিয়া করার পর। জানার পর দেখলাম আমার বউ ভাতের নলা যখন তুলে তখন তার পয়লা আঙ্গুলটা সব সময় খাড়া কইরা রাখে। তো বুঝলাম আমার কপালে আর সুখ হইল না। কিন্তু আমার কথা আলাদা। আমার কাম- কাজ আলাদা, আমার জীবনে দুঃখ থাকবই।

এ সময় বাসের কন্ডাক্টার আসে টিকিট চেক করতে। আমি টিকিট দেখাই, লোকটাও।
আমি তাকে জিজ্ঞাস করি- আপনি কী করেন?
লোকটা বলেন- আমি লেখক।

আমি আবার নড়েচড়ে বসি। ঘটনা বেশ জটিল বলে মনে হয়। কৌতুহলে জানতে চাই- আচ্ছা, তো কী লেখেন আপনি?
লোকটা: আমি কী করিলে কী হয় সেগুলি নিয়া বই লিখি। আর এই যে শাস্ত্রগুলি বললাম এইগুলি লেইখাও ছাপাই।
আমি: আমিও মনে মনে ভাবছিলাম যে আপনাকে বলব আপনি এত শাস্ত্র জানেন এগুলি ছাপালে পারেন। ভালোই যে আপনি এগুলি ছাপিয়েছেন। তা এই শাস্ত্রগুলি কোথায় পান ?
লোকটা: ঐটাই তো আমার কাজ। আমি গ্রামে গ্রামে ঘুইরা এইগুলি জোগাড় করছি। লেখাপড়া কিছু জানি। মানুষের কাছে শুইনা শুইনা এইগুলি লিখা রাখছি। এইগুলি যোগাড় করাই এরপর আমার নেশা হইয়া গেছে। ‘কী করিলে কী হয়’ তাও আমি গ্রামের বুড়া মানুষ, নানি দাদি এগোর কাছ থেইকা যোগাড় করছি।
আমি: কী করিলে কী হয় ব্যাপারটা তো বুঝলাম না। একটু বুঝায় বলবেন?
লোকটা: সেইগুলিও একরকম শাস্ত্র আর কী। জীবনে চলায়-ফিরায় কী করলে কী হয় তার বয়ান। এইগুলি আগে থেইকা জানা থাকলে বিপদে পড়বেন না।
আমি: যেমন?
লোকটা: যেমন আপনাকে জানতে হবে ‘কোন কাজ করিলে দিনে দিনে আপনার ধন- সম্পত্তি ক্ষয় হইতে থাকবে’।
আমি: কী করলে?
লোকটা: হাটিয়া হাটিয়া দাঁত মেসওয়াক করিলে।
আমি বেশ অবাক হই এবং কৌতুক বোধ করি (কিন্তু মুখে একটা গম্ভীর ভাব ফুটিয়ে রাখি) বলি- মানে কেউ যদি হেঁটে হেঁটে দাঁত মেসওয়াক করে তা হলে তার ধন- সম্পত্তি ক্ষয় হতে থাকবে?
লোকটা: হ্যাঁ।
আমি: কিন্তু ধরেন এখন তো মানুষ খুব একটা বেশি মেসওয়াক করে না, ব্রাশ করে।
লোকটা: ঐ একই কথা, হাইটা হাইটা ব্রাশ করা যাবে না। এক জায়গায় দাঁড়াইয়া করতে হবে।

লোকটা: ‘কপালে হাত রাখিয়া ঘুমাইলে।‘ মানে ঘুমানোর সময় আপনে যদি কপালে হাত রাইখা ঘুমান তাইলে আপনার মাথার সব বুদ্ধি নষ্ট হইয়া যাইতে পারে। যারা বোকা কিসিমের লোক, তাদের খোঁজ নিয়া দেখেন, সব কপালে হাত রাইখা ঘুমায়। আবার ধরেন আপনেরে জানতে হবে কোন সময় স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হইলে সেই মিলনে যে সন্তান হবে সে হবে চোর।

বাস পেট্রোল পাম্পে দাঁড়ায় ডিজেল নেয়ার জন্য। লোকটা বলেন- পাম্পে বাথরুম আছে, আমি বাথরুমে যাব, আপনি যাবেন? আমি যাব না জানিয়ে দেই। লোকটা বাস থেকে নেমে বাথরুমে যান। তার হাতের অসমাপ্ত পেয়ারাটা তিনি একটা খবরের কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে রেখে যান সিটের উপর। এ সময় চিপসের প্যাকেট নিয়ে বাসে ওঠে এক হকার। আমি দুই প্যাকেট চিপস কিনি। কিছুক্ষণ পর ঘুরে আসেন লোকটা। আমি তাকে চিপসের প্যাকেট সাধি। লোকটা তার সিটের উপর থেকে কাগজে মোড়ানো পেয়ারাটা হাতে তুলে নেন, বলেন- না, আমার পেয়ারা এখনো শেষ হয় নাই। দেখেন না কত বড় সাইজের পেয়ারা। আগে পেয়ারাটাই শেষ করি।

বাস পট্রোল পাম্প থেকে ডিজেল নিয়ে রওনা দেয় আবার।
আমি বলি: আপনার কী করিলে কী হয়, আরও কিছু জানতে চাই।
তিনি: দাঁড়ান, পেয়ারায় একটা কামড় দিয়া নেই।

লোকটা পেয়ারায় কামড় দিয়ে বলে- আপনি কি জানেন ‘কোন কাজ করিলে বংশ ধ্বংশ হয়ে যায় ?’
আমি: না।
লোকটা: ‘জামার বোতাম না লাগাইয়া ঘুরিলে ।‘
আমি আমার হাসি সামলে বলি- তার মানে আমি যদি শার্টের বোতাম না লাগিয়ে বাইরে যাই তা হলে আমার বংশ ধ্বংস হয়ে যাবে?
লোকটা: একদম ঠিক কথা।
আমি: কিন্তু জামার বোতামের সাথে বংশের সম্পর্কটা তো ঠিক বুঝলাম না।
লোকটা: সম্পর্ক বুঝলে তো আপনেই বুঝতেন শাস্ত্র। ময়- মুরুব্বিরা শত শত বছর ধইরা এইসব দেইখা দেইখা তার পর ঠিক করছেন কী করিলে কী হয়। আপনার আমার তো সম্পর্ক বুঝার দরকার নাই। দুনিয়ায় কীসের সঙ্গে কীসের সম্পর্ক সেই কথা জানে শুধু একজন। আপনার আমার কাম হইল দেইখা দেইখা শিখা। ময়-মুরুব্বীরা এইসব শিখছেন, মুখে মুখে রাখছেন। সেইগুলি আমি যোগাড় কইরা ছাপাইছি।
আমি বলি- একদম ঠিক বলছেন। কীসের সাথে কীসের সম্পর্ক এটা বোঝা তো খুব কঠিন কাজ।
লোকটা: আবার ধরেন আপনে কি জানেন, কোন কাজ করিলে বুদ্ধি নষ্ট হইয়া যায়?
আমি: কোন কাজ?
লোকটা: ‘কপালে হাত রাখিয়া ঘুমাইলে।‘ মানে ঘুমানোর সময় আপনে যদি কপালে হাত রাইখা ঘুমান তাইলে আপনার মাথার সব বুদ্ধি নষ্ট হইয়া যাইতে পারে। যারা বোকা কিসিমের লোক, তাদের খোঁজ নিয়া দেখেন, সব কপালে হাত রাইখা ঘুমায়। আবার ধরেন আপনেরে জানতে হবে কোন সময় স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হইলে সেই মিলনে যে সন্তান হবে সে হবে চোর।
আমি: আচ্ছা? কোন সময়?
লোকটা: এইটা হইল কৃষ্ণপক্ষের তেরো রাত্রিতে।
আমি: এরকম কী করিলে কী হয় কত আছে?
লোকটা: শত শত। সব ব্যাপারেই এইরকম নিয়ম-কানুন আছে। যেমন ধরেন এই যে আমি এমন শক্ত পেয়ারাটা খাইতেছি, খুবই আরামে খাইতেছি কারণ আমার দাঁত খুব শক্ত, আমার দাঁত সহজে পড়বে না, কারণ আমি জানি ‘কোন কাজ করিলে অকালে সব দাঁত পড়িয়া যায়।‘
আমি: কোন কাজ?
লোকটা: ‘পায়খানায় বসিয়া ঘন ঘন থুতু ফেলিলে।‘ আমি পায়খানায় বইসা কখনো থুতু ফেলি না।

আমি টের পাই এই অল্প সময়ে আমি বহু জ্ঞানের অধিকারী হলাম। (এই ভাবনার ভিতর কোন খাদ নাই)

বললাম: তো আপনার ছাপা এই বইগুলি কোথায় পাওা যাবে? আপনার কাছে কি আছে, থাকলে একটা নিতাম?
লোকটা: না, না। আমি তো আমার বই নিয়া ঘুরি না। আমি তো লেখক। আমি কেন আমার বই নিয়া ঘুরব। ক্যানভাসাররা বাসে বাসে আমার বই বিক্রি করে। কোনদিন বাসে পাইয়াও যাইতে পারেন। আর আমাদের হুলাবাড়ি হাটের দিন গেলে সেই হাটেও পাবেন। অবশ্য আজকাল আমার এই বইয়ের বাজার খুব মন্দা। লোকে আর বেশি কিনে না।

সাইপ্রাস। এই দেশ কোথায়, কী বিষয়- আসয় আমি জানি না। কিন্তু নামটা আমার পছন্দ হইছে। সাইপ্রাস। একটু জ্ঞানী ধরনের নাম। সে বলছে সেখানে গিয়া বাগান থিকা আপেল পাড়ার কাম করতে হবে। কামটাও পছন্দ হইছে আমার। ভিসা লাগানির কিছু কাগজপত্র বাকি আছে, এইবার গিয়া সব ঠিকঠাক কইরা ফেলব।

আমি জানতে চাই- তো এই লেখাটাই কি আপনার পেশা ?
লোকটা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন- তাই তো ভাই চাইছিলাম সারা জীবন। লেখাটারেই তো পেশা করতে চাইছিলাম। কিন্তু এই দেশে লেইখা কি পেট চলে বলেন? লেখকের জীবনে কোন সুখ আছে? গ্রামে ঘুইরা ঘুইরা শাস্ত্রের কথা যোগাড় করতাম, কী করিলে কী হয় এইসব জ্ঞানের কথা যোগাড় করতাম কিন্তু এখন এইসব জ্ঞানের কথা কওনের লোকও নাই, শোনার লোকও নাই। হাটে, বাসে, লঞ্চে আগে আমার বই কিছু বিক্রি হইত। এখন আর পাবলিকে এইসব কিনে না। এখন বাসের ভিতরে, লঞ্চের ভিতরে টিভি ছাইড়া রাখে। লোকের বইপত্র পড়নের আর উপায় আছে? এখন বাসের ভিতরে পাইবেন ঐ বীর্য সাগর মহৌষধের লিফলেট।

লোকটার কথায় বেদনা এবং ক্ষোভ দুটাই ফুটে ওঠে। আমি জানতে চাই- তো এখন আর লিখতেছেন না তা হলে?
লোকটা: না লেইখা আর পোষাইতেছে না। এইসব লেইখা কিছু পয়সা পাইতাম আর এক কানি জমি ছিল ঐ দিয়া চইলা যাইত। এখন লেইখা কোন পয়সা আসে না। ভালো লেখার কোন দাম নাই এখন আর। জমি থিকা যা একটু আসে তাই দিয়া চলি টুকটাক। কিন্তু আমি তো চাইছিলাম লেখক হইয়া বাঁইচা থাকতে। সেইটা তো আর হইতেছে না।
আমি: তা হলে কী করবেন এখন?
লোকটা: অন্য ধান্দা করতেছি।
আমি: কীরকম?
লোকটা: লিখতেই যদি না পারি তাইলে আর এই দ্যাশে থাইকা লাভ কী?
আমি: বিদেশে চলে যাবেন তা হলে?
লোকটা: হ্যাঁ সেই ধান্দাই ধরছি। আমার জমিটা বেইচা ফেলছি। একটা দালালরে ধরছি। সে সব ব্যবস্থা করতেছে। ঢাকায় তার লগেই দেখা করতে যাইতেছি।
আমি: দেশে আর কোন কাজের চেষ্টা না করে একবারে বিদেশ চলে যাওয়ার চিন্তা করছেন?
লোকটা: আপনারে বললাম না, আমার লেখারই যদি দাম না থাকে, আমারে যদি অন্য কাম কইরা খাইতে হয় তাইলে আর দেশে থাইকা লাভ কী? দুনিয়ার যে-কোন জায়গায় গিয়া অন্য কাম করমু।
আমি: তো এখন যাচ্ছেন আপনি ঢাকায়? সামনে তো হরতাল। আপনার কাজ-কর্ম তো কিছু হবে না।
লোকটা: হরতাল নাকি? আমি এগুলির খোঁজ-খবর রাখি না। কে হরতাল ডাকে, কে প্রেসিডেন্ট হয় এইগুলি দিয়া আমার কাম নাই। এইগুলি পাবলিকের কাম, আমি তো পাবলিক না। আমার কাম পাবলিকের জ্ঞানের কথা পৌঁছাইয়া দেওয়া। এই দেশে আর জ্ঞান-বিজ্ঞানের কোন দাম নাই। খালি কামড়া- কামড়ি, হরতাল। সেই জন্যই তো কইলাম, এদেশে আর থাকব না, বিদেশ যাব গিয়া। আমার ব্যবস্থা মোটামুটি ঠিকঠাক। হরতালে দু-একদিন দেরি হইলে অসুবিধা নাই।
আমি: তা কোথায় যাবেন? দুবাই?
লোকটা- না না এইসব দুবাই, আবুধাবি, কাতার, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব আমি যাব না। আমি দালালরে বলছি আমি লেখক মানুষ, আমার একটা মর্যাদা আছে, আমি যেই-সেই জায়গায় যাইতে পারি না, আমি একটা অন্যরকম দেশে যাব। তুমি আমারে নতুন কোন একটা দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা কর। সে একটা দেশের নাম বলছে, নামটা আমার পছন্দ হইছে। আমি বলছি ঠিক আছে আমি ঐ দেশেই যাব।
আমি: কোন দেশ?
লোকটা: সাইপ্রাস। এই দেশ কোথায়, কী বিষয়- আসয় আমি জানি না। কিন্তু নামটা আমার পছন্দ হইছে। সাইপ্রাস। একটু জ্ঞানী ধরনের নাম। সে বলছে সেখানে গিয়া বাগান থিকা আপেল পাড়ার কাম করতে হবে। কামটাও পছন্দ হইছে আমার। ভিসা লাগানির কিছু কাগজপত্র বাকি আছে, এইবার গিয়া সব ঠিকঠাক কইরা ফেলব।

কথা বলতে বলতে লোকটা তার কাজীর পেয়ারাটেতে শেষ কামড় দেন এবং পেয়ারার শেষ অংশটা ফেলবার জন্য বাসের জানালাটা খোলেন। জানালা খুলতেই দমকা বাতাসে প্রচুর ধূলা ঢুকে পড়ে বাসের ভেতর। আমি চোখ বন্ধ করে কাশতে থাকি।

 


প্রচ্ছদ : রাজিব রায়

 

আরও পড়ুন-
মৌলিক
কমলা রকেট: নূর ইমরান মিঠুর ক্যানভাসে বাংলাদেশ
কমলা রকেট: গল্পগুলো আমাদের

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.