শরীরের পোস্টমর্টেম : নান্দনিক ছুরির বয়ান
মহ্সীন চৌধুরী জয়ের প্রথম গল্পগ্রন্থ অদৃশ্য আলোর চোখ গত বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছিল। বইটা পড়ে আমি যারপরনাই চমৎকৃত হয়েছি। কী অদ্ভুত শব্দচয়ন, গদ্যশৈলী, গল্প-ভাবনা কিংবা গল্পজীবন! এবারের বইমেলায় তার ২য় গল্পগ্রন্থ শরীর প্রকাশিত হলো। শরীর গল্পগ্রন্থে লেখকের মোট ৬টি গল্প স্থান পেয়েছে। ছয়টি গল্পই ছয় ধরনের জীবনযাপনের ধরন নিয়ে লিখিত। কিছু গল্প পড়ে আমরা শৈশবে কিংবা কৈশোরে ফিরে যাই কিন্তু এই বইয়ের প্রথম গল্প ‘শরীর’ পড়ে নিজেকে সফিক সাহেবের মতোই মনে হলো। হয়তো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে নয়, তবু ওনার বাস্তবতাকে দেখে এক অজানা আতঙ্ক মনে বিরাজ করে। আসলেই তো মৃত্যুর আগে, জীবন সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে মানুষ কতটাই-না অসহায় হয়ে পড়ে।
গল্পের মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে আপনাদের জানিয়ে দেওয়া দরকার। ‘শরীর’ গল্পে আসলে শরীরই প্রধান চরিত্র। গল্পের প্রধান দুই পুরুষ-চরিত্রই শরীরের মোহে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। পিতা অন্ধ-বোধে সেই নষ্ট জীবন থেকে সময় থাকতে আর ফিরে আসতে পারে নি। সারা জীবন শরীরের উন্মাদনায় জীবন পার করেছে, শরীর থেকে শরীরে ভ্রমণে কত বেলা যে কাটিয়েছে তার হিশেব নেই কিন্তু সেই শরীরই একদিন তাকে নিয়তির অদ্ভুত গোলকধাঁধায় ফেলে দেয়।
গল্প থেকে :
বার্ধক্য এত কঠিন যৌবন আমাকে বলে নি কখনো। যৌবন শুধু বর্তমানের হিশেব কষেছে। ভবিষ্যৎ এক নিষ্ঠুর পৃথিবী এ উপলব্ধি এখন আমাকে যন্ত্রণা দেয় প্রতিনিয়ত।
কঠিন বাস্তবতায় শেখা যায় জীবনের উপলব্ধি আর সেটা যদি আসে জীবনের শেষ সময়ে তখন মৃত্যুকেই পরম আশীর্বাদ মনে হয়। সফিক সাহেবও একদিন উপলব্ধি করলেন, জন্ম দিলে জন্মদাতার খাতায় নাম উঠানো সহজ, কিন্তু পিতার আসনে বসা খুবই কঠিন। ‘পিত্রস্নেহ স্বর্গীয়, যদি-না স্বর্গীয় হুর পথ আগলে দাঁড়ায়।’ ঠিক তেমনি সফিক সাহেবও দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলেন। গল্পে দেখতে পাই শ্যালিকার শরীরের মোহ তাকে নেশাতুর করে ফেলে। দিন যতই যায় সংসারের প্রতি মায়া ততই ছায়া হতে থাকে, যা ক্রমশই দীর্ঘকায় হয়ে পড়ে।
তবে ছেলে ফিরে আসতে পেরেছিল অবৈধ নারী শরীরের মোহ থেকে। পিতার দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ, স্বৈরাচারি মনোভাব, মায়ের নির্মম মৃত্যু, সন্তানস্নেহ এবং পিতার শেষ সময়ের পরিণতি সৌরভকে ফিরে আসতে সাহায্য করে।
শেষ দিকে পিতা-পুত্রের সাক্ষাতের অধ্যায় করুণ আর হৃদয়-বিদারক ছিল। রক্তের টান সৌরভ উপেক্ষা করতে পারে নি কিন্তু পেরেছে রক্তের সম্পর্ক নামমাত্র বজায় রেখে আত্মার সম্পর্ক পুরোপুরি ছিঁড়ে ফেলতে।
আদতে মানুষগুলোর সম্পর্ক কালচক্রে এভাবেই চলতে থাকে। জীবনানন্দ বলেছিলেন : ‘জীবনের স্বাদ লয়ে জেগে আছো—তবুও মৃত্যুর ব্যথা দিতে পার তুমি।’
‘শরীর’ গল্পে আসলে শরীরই প্রধান চরিত্র। গল্পের প্রধান দুই পুরুষ-চরিত্রই শরীরের মোহে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। পিতা অন্ধ-বোধে সেই নষ্ট জীবন থেকে সময় থাকতে আর ফিরে আসতে পারে নি। সারা জীবন শরীরের উন্মাদনায় জীবন পার করেছে, শরীর থেকে শরীরে ভ্রমণে কত বেলা যে কাটিয়েছে তার হিশেব নেই কিন্তু সেই শরীরই একদিন তাকে নিয়তির অদ্ভুত গোলকধাঁধায় ফেলে দেয়।
লেখকের প্রথম বইয়ে ‘অনুরণন’ গল্পটি ছিল মনস্তাত্ত্বিক চিন্তার বহিঃপ্রকাশ। কিছু শব্দ মিলে বাক্য হয় কিন্তু উনি শব্দ মিলিয়ে মিলিয়ে লিখেছেন একটি গল্প। যে গল্পে ‘শব্দ’-ই প্রধান চরিত্র। শব্দ খুঁজেছে জীবনকে আর জীবন খুঁজেছে শব্দের পেছনের মর্মস্পর্শী আয়োজনগুলোকে।
‘অনুরণন : ২’ ঠিক হৃদয়স্পর্শী আয়োজনগুলোর দ্বিতীয় অধ্যায়। শব্দের পেছনে জীবন চলতে থাকে কিন্তু জীবনের পিছনের শব্দ একদিন ঠিকই থেমে যায়। সংসার একটি অদৃশ্য মায়াজালের প্রলেপ মাখানো চাদর। আস্তে আস্তে সেই চাদর থেকে বেরিয়ে যায় বাবা-মা, অথচ চাদরের ভার বয়ে বেরাতে হয় সন্তানকে।
আগেই বলেছি, ‘অনুরণন : দুই’ গল্পটা মূলত শব্দকে কেন্দ্র করেই লেখা। শব্দ একটা জীবনকে কতভাবে প্রভাব ফেলে তারই প্রকৃষ্ট বয়ান এই গল্প। শব্দ কখনো কখনো জীবনের গান হয়ে যায়। জীবন অন্বেষণে কামারের হাতুড়ি পেটার ছন্দও সুর হয়ে খেলা করে জীবনে। সেই মুহূর্তে শব্দের পতনে জীবন এক ঘোর শূন্যতায় ঢাকা পড়ে। লেখকের বর্ণনায় :
বাবাও একদিন চলে গেল অবেলায়। শব্দের মৃত্যু হলো। কী অদ্ভুত! মৃত্যুর কিছুটা সময় পরেই নৈঃশব্দ্যের গাঢ় রূপ বাবার শরীরে ফুটে উঠল।
তবে কখনো কখনো শব্দ কোনো কোনো সন্তানের জন্য সেই ‘শব্দ’ নির্মম আওয়াজ হয়ে বুকে জমা হয়। মেয়ে শুনে দূর হতে বাবার মৃত্যুর নির্মম শব্দ। বাবাকে উদ্দেশ্য করে দেওয়া অশ্রাব্য গালি, ট্রিগার টানা এবং বুলেটের শব্দ। তখন সমাজ কতটা নিষ্ঠুর হয়ে যায়। কতটা ফ্যাকাশে হয়ে যায় সামাজিক মন। বীভৎস চেহারা মুখে ভেসে ওঠে ।
তখন ব্যাপারটা দ্বারায় জয় গোস্বামীর কবিতার মতন :
“জানাও কতো শাস্তি জানো
ছন্দেশব্দে
ক্রুদ্ধ পরী”
এই পরী যেন পৃথিবী। গোলকধাঁধার অদ্ভুত আস্তরণে ঢাকা। যেটা কাল্পনিকভাবে খুবই সুন্দর, অপরূপ, মোহময় কিন্তু বাস্তবে ধরা দেয় না। জীবন থেমে থাকে না। একটা সময় বিয়ে করে সংসারী হতে হয় গল্পের নায়ককে। মেয়ের মুখে বাবা শব্দটা যেন বহুদিনের অন্ধকারাচ্ছান্ন হৃদয়ের গভীরে আকাঙ্ক্ষিত অমূল্য রত্নের উত্থান। মেয়েকে নিয়ে চলতে থাকে বাবার ভেতরে মায়ার জগৎ। আবার শব্দের ভেতর দিয়েই ভয় জেগে ওঠে বাবার মনে।
গল্প থেকে :
বাহিরে গেলে আমার মা চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘বাবা, তুমি কখন আসবে?’ আমার মেয়েও কি পিতা হন্তারকের প্রলয়–শব্দ শুনবে একদিন!
লেখকের তৃতীয় গল্প ‘একজন পা আর শূন্য জীবনের শরীর’-এ লেখক দেখিয়েছেন অয়নের জীবনের ছেদন পরিস্থিতি। একটা জীবন সুস্থ থাকার পর পঙ্গুত্ব বয়ে বেরানো গল্পের মাধ্যমে সংসার জীবন আর ভালোবাসার টানাপোড়ন ফুটে উঠেছে গল্পে নান্দনিকভাবে। সুস্থ মানুষ মানেই সমাজের সম্পদ আর একজন পঙ্গু বা বিকলাঙ্গ মানেই সমাজের বোঝা। নিজে পঙ্গু হওয়া মানেই সমাজ ও পরিবারের সাথে সম্পর্কের পঙ্গুত্বের সূত্রপাত। অয়নের জীবনটা যেন ঠিক তেমনি মোড় নিয়েছে জীবনের গলিতে। হিংসা ক্রোধের শিকার হয়ে অয়ন পঙ্গু হয়ে পরিবার, সমাজ, ভালোবাসার মানুষ, বন্ধু সবার কাছে করুনার পাত্র হয়ে যায়। শুধু শিশুদের সাথে সম্পর্কটা আগের মতোই, সাবলীল, সুন্দর। অথচ এই সুন্দরের ভেতরেও একটা ভয় কাজ করে। লেখকের ভাষায় :
তবু শিশুদের সঙ্গ কিছুটা স্বস্তিদায়ক। অয়নের মন এখনও বিশ্বাস করে, শিশুরা প্রকৃতির মতো—অথচ বড় হলে ওরা মানুষ হয়ে যায়।
সমাজ মুখ ফিরিয়ে নিলে, নিজের মুখ প্রশ্নবিদ্ধ হয় বিবেকের কাছে। কামাল অয়নকে তাচ্ছিল্য করে শরীরে আঘাত করে ওর অস্তিত্বকে নাড়িয়ে দিয়ে যায়। অয়ন যেন সিজারের মতোই বলেছিল “ব্রুটাস তুমিও”। তবে অয়নের ঘটনা থেকে শিক্ষা না নেয়ায় নিজের জীবনের করুন পরিণতি ডেকে আনে কামাল। যা গল্পের কাহিনিকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যায়। গল্পের শেষটায় লেখক অন্ধকার জীবনের একটা ক্রোধের প্রকাশ খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন। মৃত্যুমুখে পতিত কামালের বাঁচার আর্তচিৎকার অরণ্যে রোদন মনে হয় অয়নের কাছে। খাদের কিনারে একটা শূন্য শরীরের ঝুলে থাকা। যেন মানুষ নয় একটা পরগাছা, শুধুই মাংসপিণ্ড যেন, বোধ নেই, বাঁচার ক্ষমতা নেই। অথচ কামালকে বাঁচাতে পারে সেই বিকলাঙ্গ পায়ের অয়ন। বিকলাঙ্গ পায়ের সহযোদ্ধা আরেক পা।
গল্প থেকে :
কামাল বারবার বলে যাচ্ছে, অয়ন, বাঁচা, বাঁচা। কামালের শূন্য শরীরের সামনে অয়নের ডান পা–টা আজ পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে উঠছে।
‘ধর্ষিত তাজুল’ গল্পটি আমাদের এই সমাজের নির্মম-বাস্তবতা নিয়ে লিখিত। হয়তো কোনো এক গলির অজানা কোনো ঘটনা গল্পকার পরম মমতায় তুলে এনে কলমের আলতো ছোঁয়ায় ফুটিয়ে তুলেছেন জীবনের অদ্ভুত কষ্টগাঁথায়। ধর্ষণ সামাজিক বিকারগ্রস্ত লোকের কার্যকলাপ। কিন্তু এর কর্মফল কতটা নিদারুণ কষ্টের হতে পারে তা এই গল্পটা পড়লে অনেকটা বুঝতে পারি। তাইজুলের মা ধর্ষিতা নারী। একজন বীরাঙ্গনা। দুই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতার পেছনে আছে তাইজুলের মায়েরও অবদান। অথচ সমাজে সে দানের পাত্র হয়ে উঠল তার আসল পরিচয়ের শুধুমাত্র একটা অধ্যায় জানার পর।
গল্প থেকে :
মাকে মা বলার আশা ওর পূরণ হয় নি। মেয়েকে সঠিকভাবে মানুষ করার স্বপ্নও ওর চোখে ধূসর হয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে। এ আতঙ্কিত মন নিয়ে মানুষ কতদিন বাঁচবে? এর নাম কি বেঁচে থাকা? তাজুল কি বেঁচে ছিল এতদিন? তাজুলকে কি ধর্ষণ করা হয় নি? তাজুল ভ্রূণ অবস্থাতেই ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ওর মায়ের ভেতর দিয়ে ওকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তাজুলের মনকে ধর্ষণ করেছে তামান্না, তামান্নার মা। ওর মানসিক–বলকে ধর্ষণ করেছে অন্ধসমাজ।
ভাগ্যকে মেনে নিয়ে তাজুল বিয়ে করল এক ধর্ষিত মেয়েকে। সমাজের চোখে একজনের কলঙ্কিত ইতিহাস আর অন্যজন কলঙ্কিনী। নতুন জীবনের পথচলা শুরু হলো আবার। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়—
‘নিন্দা! আর নাহি ডরি,
নিন্দারে করিব ধ্বংস কণ্ঠরুদ্ধ করি।’
‘আবছায়া’ গল্পটি ‘শরীর’ গল্পগ্রন্থের পঞ্চম গল্প। একজন সদ্য অন্ধ হওয়া মানুষের জীবন নিয়ে গল্পটির আখ্যান। সদ্য বিধবা বা এতিম হওয়ার গল্প আমরা সচরাচর পড়ে থাকি। কিন্তু আলো দেখতে অভ্যস্ত একজন মানুষের জন্য অন্ধ হওয়া যে কী পরিমাণ কষ্টের তা বোঝানো কষ্টকর। পুরো পৃথিবী একদিকে থাকলেও সুস্থ শরীর নিয়ে অন্যদিকে হাঁটা যায়। কিন্তু অন্ধ শরীর নিয়ে শুধুমাত্র উদ্দীপনা, সাহসই সঞ্চার করা যায়—এর বাইরে আর কিছুই করার থাকে না। কারণ ততদিনে অপ্রতিম বুঝে গেছে চিরন্তন সত্যটা। লেখকের ভাষায় :
অতঃপর অপ্রতিম জেনেছে চোখের ভেতরেই যাবতীয় অন্ধকার।
‘শরীর’ গল্পগন্থের মূল গল্প ‘শরীর’ গল্পটি। ‘শরীর’ গল্পের মূল চরিত্রও আবার ‘শরীর’। লেখক শরীরের পোস্টমর্টেম করেছেন, অথচ কেটেছেন নান্দনিক ছুরিতে। লেখক বোঝাতে চান, শরীরকে উপেক্ষা করে আমরা মন নিয়ে মনোযোগী হতে পারি না। শরীর আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মন নিয়ে প্রস্ফুটিত হতেও শরীরকে কাছে টেনে নেয়।
একটি দুর্ঘটনা অপ্রতিমকে অন্ধ করে দেয়। জীবন অন্ধত্ব বরণ করল ঠিকই কিন্তু আলো ফুটে উঠল সম্পর্কের আসল রূপের উপর। কাছের সব মানুষের বিচিত্র ভাবনাগুলোর কষ্ট তরঙ্গের মতন হৃদয়ের এন্টেনায় বারি খেয়ে যায়। পদে পদে আঘাত পেয়ে অনেকটা মুষড়ে পড়ে অপ্রতিম।
গল্প থেকে :
গতকাল রাতের অস্থিরতায় মুষড়ে পড়েছিল অপ্রতিম। সৌরভকে খবর পাঠিয়েছিল সঙ্গ’র প্রত্যাশায়। সবার সঙ্গ তো আর সব মন সায় দেয় না। কথায় কথায় মনে জেগেছিল জন্মান্ধদের জীবনরহস্য, জীবনভাবনা সম্পর্কে। জন্মান্ধরা কি স্বপ্ন দেখে? জন্মান্ধদের স্বপ্নের রং কী?
যখন কোনো কিছুতেই হিশেব মেলে না, তখন পাঠকের মনে সুকান্তের কবিতার দুটি লাইন মনে এসে চোখে জল এনে দেয়।
‘আমার গোপন সূর্য হলো অস্তগামী
এপারে মর্মরধ্বনি শুনি,
নিস্পন্দ শবের রাজ্য হতে
ক্লান্ত চোখে তাকাল শকুনি।’
আঁধার শেষে আলো যেমনি আসে ঠিক তেমনিভাবে ফিরে আসে ভালোবাসা। অপরাজিতা নিজের নামের অসম্মান করতে দেন নি। সম্মানিত করেছেন নিজের ভালোবাসাকেও আর এভাবেই লেখক দেখিয়েছেন সব চরাই-উতরাই পার করে জিতে যায় ভালোবাসা।
গল্প থেকে :
আজ তোমাকে আমি নিয়ে যাব আগামীর পথে। এই হাত ছাড়তে বলো না। অনেক যুদ্ধ করে এই হাত ধরেছি।
‘ডায়েরি, গল্পের ভেতর জীবন’ শরীর গল্পগ্রন্থের শেষ গল্প। ব্যতিক্রমী এই গল্পটি পড়ে খুব ভালো লেগেছে। কিছু প্রচলিত চিরন্তন সত্যগুলো আমরা যদি একটু ভিন্নভাবে উপস্থাপন করি তবে উপলব্ধি করা যায় যে আমরা আসলে কোন পরিস্থিতিতে আছি। মানুষের অন্তর্জগত, ভাবনা-চিন্তার পরিধি, ন্যায়-অন্যায় বোধ, মানসিক দৃষ্টিকোণ, সর্বোপরি মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কগুলোই মূলত ফুটে উঠেছে এই গল্পে। গল্পকার বলেছেন এভাবে :
ঘুমন্ত অবস্থাতেই আমরা প্রকৃত মানুষ। জেগে উঠলে কখনো মানুষ, কখনো অমানুষ।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন “বিরক্ত আমরা নিজেদের নিজেরাই করব। আমরা মানুষ যে।”
গল্পকার বলেন :
আমরা যখন খুব বড় ধরনের পাপে লিপ্ত হই তখন আমাদের ছায়া কখনো কখনো মানুষ হয়ে ওঠে।
‘শরীর’ গল্পগন্থের মূল গল্প ‘শরীর’ গল্পটি। ‘শরীর’ গল্পের মূল চরিত্রও আবার ‘শরীর’। লেখক শরীরের পোস্টমর্টেম করেছেন, অথচ কেটেছেন নান্দনিক ছুরিতে। লেখক বোঝাতে চান, শরীরকে উপেক্ষা করে আমরা মন নিয়ে মনোযোগী হতে পারি না। শরীর আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মন নিয়ে প্রস্ফুটিত হতেও শরীরকে কাছে টেনে নেয়।
জয় ভাই, আপনি শরীর নিয়ে ছুটে যান। কাঙ্ক্ষিত পথ খুব বেশি দূরে নয়। পথ বিজয়ে মুখ্য ভূমিকা রাখুক ‘শরীর’। শুভ কামনা আপনার জন্য।