:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
মোশতাক আহমদ

কবি, গদ্যকার

আমার গানগুলো নিয়ে যাক রাত্রিচর ডানাভাঙা পাখি
প্রচ্ছদ: রাজিব রায়

আমার গানগুলো নিয়ে যাক রাত্রিচর ডানাভাঙা পাখি

পুরনো বলের খেলা

চতুর্থ ইনিংসে
মধ্য মাঠে নেমে দেখি
পুরনো বলের খেলা।

দাপিয়ে ফেরা মাঠ
অঘ্রাণ প্রান্তরের খড়কুটো,
ফেরানো মুখ।

নীলসিয়া মেহফিল :
সূর্যের ঘুঙুরে
ঘুর্ণি বলের ছন্দ।

দশকে দশকে
মরচে ধরা অন্ধিসন্ধি;
কাণ্ডারী হুঁশিয়ার!

ঘুর্ণি জমেছে পথে –
পুরনো বলের ৬৪ ডানায়
লুব্ধক ছলনা।

 

তেঁতুলপাতার গল্প

তারপর বিভিন্ন তরঙ্গ পথে
তেঁতুলপাতায় জুটলাম তিনজন,
জলাশয় থেকে ভাসতে ভাসতে
তিন মহাসাগরে তিনটি নোঙ্গর
দীর্ঘতম শীতে জবুথবু
দলছুট সুজনেরা-
কার পাশে থাকলাম প্লাবনের মাঠে!

কোন আশ্লেষের ছোবলে কেবা নীলকন্ঠ
কে আগলায় সমুদ্রযক্ষের বৈভব
অকুলে কে ভেসে যায় পাতাল তরঙ্গে
অর্ফিউসের সহোদর!

তেঁতুলপাতার ফসিল
ডুবে থাকল
শাদা বরফের সাহারায়।

 

নকটার্ন

গাঢ় বেদনার হেডলাইট :
বৃষ্টিভেজা নকটার্নে আলো –
লতিয়ে উঠছে সারেগামাপা
বুক মোচড়ানো মান্নাদে।

কিছুই থাকে না শেষাবধি –
ঘনায়মান মেঘ, শঙ্খচিল,
জীবনদাশের ধুসর জগত –
স্মৃতিস্থ সুগন্ধার লক্ষীপ্যাঁচা।

বৃষ্টি নামল ঘাসের পাপড়িতে,
চুম্বনের আবহগান জানালায় ;
জোছনাভাঙ্গা গানের পাখি
সুখের কীবোর্ডে রাখে হাত।

আকাশগুলো সব কিনে নিল
ভ্যানগগের তারায় ভরা রাত,
আমার গানগুলো নিয়ে যাক
রাত্রিচর ডানাভাঙা পাখি।

 

উপেক্ষা ও আর্তি

একটি উপেক্ষা নাম্নী বর্ণিল প্রজাপতি,
তার পিছু নিয়েছিল এক ফালি আর্তি – রোদে পোড়া তৃষ্ণার্ত কুকুর;

পাখি-ডাকা রমনার পথ পেরিয়ে
দৌড়ুতে দৌড়ুতে
গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে
আর্ত সেই কুকুর
রাজপথ ক্রিসেন্ট লেক তারামণ্ডল হয়ে
আর্ত সেই কুকুর
গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে
দৌড়ুতে দৌড়ুতে
কাচ-ঘেরা জাদুঘরের সদর দরোজায়

ভংগ দিয়েছিল বাসনার!

 

তারাপদবাবুর কাণ্ড 

তারপর একদিন
তারাপদ রায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা হাতে
ট্রেন থেকে নামলে –
আলপথ খাল পেরিয়ে
সেতুর মুখে দাঁড়ালে
পোষা পুকুরটির হাত ধরে
বাঁশঝাড়ের পটভূমিতে
হতভম্ব দেশগেরামের বাড়ি।

প্রগাঢ় পগার থেকে
ভেসে আসবে সোঁদা গন্ধ,
পটকা মাছ সুতোয় বেঁধে
দৌড়ে আসবে দু একটা ন্যাংটো ছেলে;

মান্দা সেঁচতে সেঁচতে
উঠে আসে জ্যাঠাতুতো ভাইবেরাদার,
‘অনেকদিন পরে এলে
ভুলেই গেছ আমাদের!’

বৌ-কথা-কও পাখির ডাকে
দুপুর উদাস হলে মাটির চুলায়
লাউয়ের সালুন, মাসকলাইয়ের ডাল
গন্ধ ছড়ায় –
স্মৃতির কলাপাতায়
ছোট কাকার বিয়ের ভোজ,

আবদুল আলীম বেজে চলেছেন
সরষে খেতের বাতাসে-
উঠোনে উঠোনে
হলুদিয়া পাখিদের খুদকুঁড়া,
খড়ের গাঁদায়
আলিফ লায়লা, শাহনামা।

সন্ধ্যায় ঝিঁঝিঁদের ডানায়
কুপির আলো ছড়িয়ে পড়লে
বাহির বাড়িতে ভিড় করে শুনব
ভুলি মণ্ডলের রূপকথা,
অনেক রাতে মাফলার জড়িয়ে
বাড়ি ফেরা ট্রানজিস্টার
কুয়াশা হটিয়ে বাজায়
অনুরোধের আসর।

ফিরতি ট্রেনে
ভুলিয়ে ভালিয়ে
আরেক বিভ্রান্তির দেশে নিয়ে যান
তারাপদবাবু।

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.