:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
মোহাম্মদ জসিম

কবি, গল্পকার

জানালা হয়ে যাচ্ছে বুক
প্রচ্ছদ: মাইদুল রুবেলের চিত্রকর্ম অবলম্বনে

'কোলাহল চিহ্নিত' থেকে কবিতা

জানালা হয়ে যাচ্ছে বুক

প্রেসক্রিপশন

আমার শুধু ঝরে যেতে ইচ্ছে হয়, পড়ে যেতে ইচ্ছে হয়—গলে যেতে ইচ্ছে হয়…
একবার ফুলের মতোবকুলের মতো ঝরঝর, একবার বৃষ্টির মতো ঝমঝম, বহুবার রক্তের মতো গলগল!
সিগনালে দাঁড়ালে ওই যে অলৌকিক লাল রশ্মিটি রেটিনা ভেদ করে যাচ্ছে তাকে থামাতে না থামাতেই জানালা হয়ে যাচ্ছে বুক, হু হু করে বাতাস ঢুকছে—আমিও দাখিলা নিচ্ছি উড়ে যাবার ক্লাসে। রোল নং—৩৭, তৃতীয় শ্রেণি। থার্টি টু আউট অব হান্ড্রেড, অতএব অকৃতকার্য, আগামী একবছর শ্রেণীকক্ষ বদলাচ্ছে না আর, আগের ক্লাসেই ঘুমঘুম প্রেম নিয়ে বাঁচো।

 

Rx/
বিরহনির্যাস, ১ ফোটা করে ৩ বার
খাবার আগে
রাণীগোলাপের ঘ্রাণ, এক মুঠো করে ৩ বার
কাকতালীয় দেখা সাক্ষাত (প্রেমিকা অথবা যে কোন নারী)
যতবার সম্ভব
চুম্বন, (নিঃস্ব নারীকে)
অনধিক দশবার

নিয়ম করে কামসূত্র পড়ুন, মেঘ ছোঁবেন না, শিশিরে হাঁটুন, গায়ে মাখুন পারসী আতর।

৩ সপ্তাহ পরে আবার আসবেন।

 

বিহাইন্ড দ্য সিন

[ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা—আপনাকে হত্যা করার পর পৃথিবীকে নরকের মাঠ মনে হয়]

জীবন থেকে তিন হরফ দূরত্বে—মৃত পথ, নির্জন গাছ আর সটিবনের মধ্যে আমি কি কুড়িয়ে পেয়েছি বলবো না…

যেখানে—আঙুলের সাথে হাতের সম্পর্ক বিয়োগান্তক, সেখানে—আংটি একটি উপহাস।

পেছনের মাঠে ঘাস খায় দর্শনশাস্ত্র একা!

যেখানে—পা তার মোজাকে স্ত্রী মানতে নারাজ, সেখানে—তালাক শব্দটি ফেমিনিস্ট।

পেছনের মাঠে ঘাস খায় আইনশাস্ত্র একা!

জোর হলো, জবরদস্তি হলো—অথচ বীর্যফোঁটা শরীরের বাইরে যেতে চাইছে না। এটুকু দূর্যোগ বলে চিহ্নিত হলেও আদতে বাড়িঅলা ও ভাড়াটিয়ার সম্পর্ক কোনদিনই মধুর ছিলো না।

পেছনের মাঠে ঘাস খায় সামাজিক বিজ্ঞান একা।

প্রথামতো, বিজিতের সংবিধান ক্রোধ ও করুণায় পরিপূর্ণ। এখন—হৃদয়সূত্রে তুমি আমি নবদম্পতি হলে—প্রথম সাতদিন কনফেশনের, বাদবাকি কম্প্রোমাইজ। সঙ্গমে আপত্তি নেই।

পেছনের মাঠে একা ঘাষ খায় কামশাস্ত্রের নারী।

পেছনের মাঠে আমি বহুবার একা গেছি—ওখানে ঘাস ও ফড়িং কেউ কারো মুখ দেখে না। বাতাস কিছুটা হরর, আকাশ হলুদ…

বাদবাকি কিছুই বলবো না।

 

ইনসোমনিয়াক

মাত্রই সেলাইমেশিন থেকে নেমে এলাম; সন্তাপ জানুন, আর জানুন সুঁইয়েরা এখন ঘুমোবে…

ছেঁড়া ফাটা মন নিয়ে ঘুম-টুম হয় না আমাদের।

দুইশত বাইশটি পয়সা আছে আমার, পরদাদা দিয়েছিলেন। যে রাতে চাঁদের বিরাম থাকে, জুনিপোকা বিশ্রামে যায়, শ্রমিকের স্ত্রীরা পোষণ করে আহ্লাদ ও সঙ্গমেচ্ছো—সে রাতে আমি পয়সাগুলো লুকানো আস্তিন থেকে বের করে আনি। একবার গুনি—তারপর নামকরন করি।

নামের মোকামে এসো…
পরথমে আসিলো পয়সা নাম বাবুলাল
পিছে পিছে আসে পয়সা শ্রীমতি মাকাল!
তাহাদের পিছে আসে কেরানী হরিপদ
তুখলক লইয়াছে নাম হাতে ধরা মদ!
তার পরে আসিলো যিনি ভৈরবী গায়
আসিলো সুন্দরী পয়সা আলতা মাখা পায়।
আসিলো সরলা নারী চোখে মুখে শোক
নিমরাজি হইয়া আসে পয়সা প্রতারক!

প্রত্যেক পয়সা তার রূপালী হাতে একটি করে নাম বুঝে নেয়, বিড়বিড় করে কিছু একটা বলে। চলে যায় না। থমথমে রাত্রির শীত শীত অন্ধকারে একা এক পুঁথিপুত্র পাঠ করে পূর্বপুরুষের মুণ্ডু ও ধর। ক্লান্ত পয়সারা ঘুমোবার আর্জি পেশ করে।

পুঁথিপুত্র অপেক্ষা করে, পৃথিবীর সমস্ত সেলাইমেশিন জেগে উঠবার অপেক্ষা।

 

আ ন্যাকেড ট্রাভেলার

নিদ্রিত (মৃত নয়) শহরের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে আমাকে ধন্য করে ভোরপাখির অভ্যর্থনা, আর অসহ্য দুর্গন্ধ—দুর্গন্ধটি হালকা হলুদ, কুয়াশামিশ্রিত।

কাছেপিঠে কোথাও একটি ডাস্টবিন রয়েছে!

ডাস্টবিনই যে কোন শহরের প্রথম মেহমানখানা—যেখানে ইতিহাস কুকুরের সঙ্গে একসাথে উবু হয়ে স্বপ্ন দেখে।

সম্মানিত অতিথি, আপনার নীলাভ কালচে গাত্রবর্ণ আমাদের পছন্দ হইয়াছে, নিশ্চয় দীর্ঘ যাত্রার ক্লান্তি আপনাকে ক্ষুধার্ত করিয়াছে, হস্ত প্রসারিত করুন— স্বীকার করুন যৎসামান্য আতিথ্য…

আমার রেখাহীন শূন্য হাতটিতে উঠে এলো এক ফালি মৃত তরমুজ!
তারপর একে একে…
—গালিগালাজ
—নষ্ট ডোরবেল
—ভাঙা ছুরি
—অর্ধেক ব্রা (অথবা বুকের ডান পাশ)
—ব্যবহৃত কনডোম
—যৌতুকের দাবী
—মৃতজন্মা প্রেম
—বৈকুণ্ঠের ঠিকানা লেখা চিরকুট (অস্পষ্ট হস্তাক্ষরে)
আমার হাত উপচে পড়ছে, আহ্লাদঘন আঙুলেরা ভাসছে অক্লেশ হাসিতে। বাসি খাবারের সমগ্র উত্তেজনা হাতে আটছে না বলে দুঃখের সীমা নেই।

উল্লেখ করা যেতে পারে, এ শহর ক্রমশ হলু্দ হয়ে যাচ্ছে, ক্লোরোফিল হারানো মুখগুলো হতাশা ঢাকতে আবিষ্কার করছে সুগন্ধি ও প্রসাধন।

কসম বলছি, ডাস্টবিন জুড়ে দু’টো লাল কুকুরকে দেখেছি জোড়া লেগে আছে, একটাও মানুষ দেখিনি।

 

লেসবিয়ান ড্রিমস

পঞ্চম ইন্দ্রিয় খুলে আঙুলেরা রাত ও রাশিফল সংক্রান্ত নিথর পৃষ্ঠায় উবু হলো; সর্ব-নাম মুছে দিয়ে বহুদিন বাদে নিজ নিজ নামে উদিত হচ্ছে তারা…

অনামিকা তেতো খেতে ভালবাসে!
কনিষ্ঠা তৃতীয় প্রেমিকের নামে ধুলো ওড়ায়!
বৃদ্ধাঙ্গুলি মেনোপেজ পেরিয়ে গেলে একরঙা রঙধনু কেনে!
রঙটি—নীল নামে পরিচিত…

রাশিফলে রাত আছে, অন্ধকার নেই! প্রেমের যোগ, যাত্রা শুভ—বাড়তি আয়ের সম্ভাবনা…

ভগিনিগণ, পৃথিবীর প্রতিটি আঙুলের সুস্বাস্থ্য কামনায় পান করো… হল্লা করো—প্রেম ও অর্থযোগ একসাথে একযুগে একবারই আসে। বলো কার কোন রাশি…

হাল ফ্যাশনে আঙুলেরা আংটির স্বপ্ন দেখে না। বারবার চোখ ধুতে ভালবাসে তারা, আর রাশিফল ব্যর্থ হলে—কন্যা রাশির জাতিকাটি অন্য এক কন্যা রাশির জাতিকাকে চুম্বনের খোয়াবে একা ডুবে ডুবে জল খায়।

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.