এর্নেস্তো কার্দেনাল-এর কবিতা
মেরিলিন মনরোর জন্য প্রার্থনা
প্রভু,
এই মেয়েটিকে গ্রহণ কর, দুনিয়ায় যে মেরিলিন মনরো নামে পরিচিত ছিল,
যদিও তার আসল নাম এটা নয়
(আসল নামটি তুমি জানো ওই এতিম মেয়েটার যে ছয় বছর বয়সে ধর্ষিতা হয়েছিল, আর যে ষোল বছর বয়সে— যখন সে দোকানের বিক্রয়-বালিকা— আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল)।
সে এখন তোমার সামনে এসেছে কোনো প্রসাধন ছাড়াই,
নাই কোনো সংবাদ-প্রতিনিধি,
নাই চিত্রগ্রাহক, নাই স্বাক্ষর দেবার ব্যস্ততা,
যেনবা সে এক নভোচারী, মহাশূন্যে রাত্রির মুখোমুখি, একা।
যখন সে ছোট ছিল স্বপ্ন দেখেছে সে, এক গির্জায় হাঁটছে সে নগ্ন শরীরে (টাইম পত্রিকার বিবরণ এমনই)
প্রণত বিপুল জনতার সামনে দিয়ে; তাদের মাথা ছিল মাটিতে নত, আর পা টিপে টিপে হাঁটছিল সে যেন তাদের মাথা মাড়িয়ে না যায়।
আমাদের স্বপ্ন তুমি ভালো বোঝো মনোসমীক্ষকের চেয়ে।
গির্জা, গৃহ, গুহা এইসবকিছু তো মাতৃগর্ভের নিরাপত্তারই প্রতীক
কিন্তু আরও বেশি কিছু…
মাথাগুলো ছিল তার ভক্ত-অনুরাগীদের,
আলোকরশ্মির নিচে গাঢ় অন্ধকারে।
কিন্তু উপাসনালয় তো টুয়েন্টিথ সেঞ্চুরি ফক্সের স্টুডিও নয়,
এই উপাসনালয় — মার্বেল পাথরে ও স্বর্ণে নির্মিত — আসলে তার শরীরের মন্দির
যেখানে মানবপু্ুত্র চাবুক হাতে দাঁড়িয়ে
টুয়েন্টিথ সেঞ্চুরি ফক্সের স্টুডিও-কর্তাদের তাড়াচ্ছে
যারা তোমার প্রার্থানাগারকে চোরের আস্তানা বানিয়েছে।
প্রভু,
পাপ ও তেজস্ক্রিয়তায় দূষিত এই দুনিয়ায়
যে-বিক্রয়-বালিকা, অন্যসব বিক্রয়-বালিকার মতোই, তারকা হবার স্বপ্ন দেখেছিল তাকে দোষারোপ করো না।
তার স্বপ্ন বাস্তব হয়েছিল (কিন্তু তা টেকনোকালার বাস্তবতা)।
সে তেমন অভিনয় করেছে যেমন চিত্রনাট্য আমরা তাকে দিয়েছিলাম — আমাদের জীবনের গল্প। আর এটা ছিল অসম্ভব এক চিত্রনাট্য।
ক্ষমা কর তাকে, প্রভু, আর ক্ষমা কর আমাদেরকে আমাদের বিশ শতকের জন্য
আর বিশালকায় প্রযোজনার জন্য যেইসবে আমরাও নিয়োজিত ছিলাম।
তার আকুতি ছিল ভালোবাসার জন্য আর আমরা তাকে দিয়েছিলাম ঘুমের ট্যাবলেট।
আমরা সাধু-সন্ত ছিলাম না, আর তার মনোবেদনায় তাকে মনোবিশ্লেষণের পরামর্শ দিয়েছিলাম।
মনে করে দেখ, প্রভু, বেড়ে উঠছিল তার ক্যামেরাভীতি, প্রসাধনে জাগছিল ঘৃণা—
প্রতিটা দৃশ্যের আগে নতুন করে মেকাপ নেবার জন্য পীড়াপীড়ি — আর তার মধ্যে তৈরি হচ্ছিল আতঙ্ক, স্টুডিওতে যেতে দেরি হয়ে যাচ্ছিল ক্রমে।
যে-কোনো দোকানি মেয়ের মতো সে তারকা হবার স্বপ্ন দেখেছিল।
আর তার জীবন ছিল অবাস্তব, স্বপ্নের মতন, যা মনোচিকিৎসক ব্যাখ্যা ও ফাইলবন্দি করেন।
তার রোমান্স ছিল চোখ মুদে চুমু খাওয়া,
চোখ খুলে সে দেখতে পেত সে আছে ফ্লাড লাইটের নিচে, তারপর ওরা নিভিয়ে দিত ওই আলো,
আর তারা কক্ষের দুই দেয়াল তুলে নিয়ে যেত (যেই কক্ষ ছিল সিনেমার সেট),
যখন পরিচালক চিত্রনাট্য নিয়ে চলে যেতেন, কারণ দৃশ্যটি ক্যামেরায় ধারণ করা হয়ে গেছে।
অথবা কোনো জলযানে প্রমোদভ্রমণ, সিঙ্গাপুরে একটি চুমু, রিয়োতে একটা নাচ, উইনসরের ডিউক ও ডাচেসের প্রাসাদে অভ্যর্থনা, সবকিছুই দৃশ্যায়িত হলো একটি গরিব অ্যাপার্টমেন্টের ছোট্ট বাসকক্ষে।
শেষের চুমুটি ছাড়াই সিনেমাটি শেষ হয়েছিল।
তাকে তার বিছানায় মৃত পাওয়া গেল, তার হাত রাখা ছিল টেলিফোনের উপরে।
গোয়েন্দারা কখনও জানতে পারে নাই, কাকে সে ফোন করতে চেয়েছিল।
সে যেন অমন কারো মতো ছিল যে তার একমাত্র বন্ধুর নম্বরে ফোন করেছিল আর শুনতে পেয়েছিল রেকর্ড করা যান্ত্রিক স্বর : রং নাম্বার।
অথবা সে যেন ছিল এমন কারো মতো যে গুণ্ডাদের আক্রমণে আহত হয়ে হাত বাড়িয়েছিল সংযোগবিচ্ছিন্ন ফোনের দিকে।
প্রভু,
সে যে-ই হোক, যাকে সে ফোন করতে চেয়েছিল, কিন্তু করতে পারে নাই (হয়তো-বা সে কেউ নয়, বা এমন কেউ যার নম্বর লস এঞ্জেলসের ফোনবুকে নাই)
তুমি মেয়েটির ফোনের জবাব দিও।