:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
মোশতাক আহমদ

কবি, গদ্যকার

আজকে আমায় জেতাও তোমার হৃদয় হারিয়ে
প্রচ্ছদ: রাজিব রায়

অনূদিত সংগীত

আজকে আমায় জেতাও তোমার হৃদয় হারিয়ে

ইবন-ই-ইনশা

ইবন –ই – ইনশা (১৯২৭–১৯৭৮) । পাকিস্তানী কবি, রম্য রচয়িতা, কলামিস্ট। কবিতায় আমীর খসরুর ঘরানা অনুসরণ করেছেন। ‘কাল চৌদভি রাত থি’ গজলটি খামোশি ছবিতে জগজিৎ সিং গেয়েছেন। গুলাম আলী কিংবা আবিদা পারভিনের কন্ঠেও এই গান জনপ্রিয় হয়েছে। সত্তর দশকের শুরুতে টেলিভিশনে গেয়েছিলেন পাকিস্তানী শিল্পী নিঘাত আখতার।

কাল চাঁদনী রাত ছিল

কাল চাঁদনী রাত ছিল
তোমার কথা চলতে চলতে ছলকে গেল মদ।

কেউ বলছিল আকশে চাঁদই উঠেছে বটে,
কেউ বলছিল ভাসছে তোমার মুখ!

সেই মজলিশে মজুদ ছিলাম বলে
জানতে চাইল আমার মতামত;
মৃদু হেসে চুপটি করে থাকি
চাঁদ বা তোমায় ছদ্মবেশেই মানায়।

এই শহরে কার কাছে যাই বলো
ছাড়তে হল সকল আড্ডাবাজি;
সবার মুখেই ফিরছে তোমার নাম
সবাই দেখি তোমার প্রেমিক পুরুষ!

ভরা পূর্ণিমা রাত ছিল কাল
তোমার প্রেমে হৃদয় উছ‌লে যায়!
বলছে সবাই কবিতা লিখছে ভাল–
যে তোমার প্রেম, তোমার প্রত্যাখ্যান
যে তোমার কবি, তোমার প্রতিশ্রুত!

শুনুন- ‘কাল চৌদভি রাত থি’

 

কায়ফি আজমি

কায়ফি আজমি (১৯১৯-২০০২)। আসল নাম সাইয়িদ আখতার হুসেইন রিজভি। স্বনামধন্য ভারতীয় উর্দু কবি। ভারতীয় ছায়াছবিতে উর্দু সাহিত্যের প্রবেশ ঘটিয়েছেন। ‘তুম ইতনা যো মুসকুরা রাহে’ গজলটি তুমুল নাটকীয় ও গীতিময় চলচিত্র আর্থ (১৯৮২)-এ জগজিৎ সিং গেয়েছিলেন।

তুমি যে এত হাসো সারা দিন

তুমি যে এত হাসো সারা দিন
কোন বিষাদ রাখো চুপি লুকিয়ে!

চোখের কোণে চিকচিকে জল, ঠোটে লাবণ্যের হাসি
ভেতরে কী বইছে ঝড়, বাইরে শান্ত অভিনয়!

লাগামছাড়া মদিরাও বিষ হয়ে যায় জেনো–
দু চোখের অশ্রুজল কবে থেকেই করছ পান।

যে আঘাতে নিরাময়- প্রলেপ দিয়েছে সময়- ভেষজ
আজ কেন খুলতে গেলে সেই পুরনো ক্ষত!

নিয়তি তো কয়টা মোটে রেখার পরিহাস–
তুচ্ছ রেখার গুচ্ছ এ সব, হারবে কেন সহজে!

শুনুন- তুম ইতনা যো মুসকুরা রাহে’

https://www.youtube.com/watch?v=Ju6kNKaBOQ8

 

সুদার্শান ফাকির

সুদার্শান ফাকির (১৯৩৪-২০০৮)। ভারতীয় কবি ও গীতিকার। জগজিৎ সিং বিখ্যাত ‘কাগাজ কি কাশতি’ গানটি ১৯৮০ তে গেয়েছিলেন।

ও কাগজের নৌকা, বরষার জল

এই ধন মান যৌবনের বদলে
ফিরিয়ে দাও শৈশবের বর্ষাকাল,
সেই কাগজের নৌকা, বৃষ্টির জল…
মহল্লার সেই চিরচেনা নানীবুড়ির রূপকথা
আর তার মুখের স্নেহভরা বলিরেখা–
ভুলতে চাইলেও ভোলা যায় না
নিমেষে রাত ভোর করে দেয়া পরীর গল্পগুলো।
ভোর না হতেই প্রজাপতি আর ফড়িং ধরা,
পুতুলের বিয়ে নিয়ে খুনসুটি,
দোল খেতে খেতে পড়ে গিয়ে আবার নতুন দুষ্টুমি,
পিতলের ভাঙা চুড়িভর্তি বাক্সো–
আর সেই কাগজের নৌকা, বৃষ্টির জল…
বালুর পাহাড়ে যাওয়া কখনোবা–
যত্নে গড়া বালুর প্রাসাদ ভেঙে ফেলা,
স্বপ্ন আর খেলনার জগতভরা
চেনা চেনা নিষ্পাপ মুখের মিছিল,
আহা, দুঃখ ছোঁয়নি যখন- বন্ধনও না, বিচ্ছেদও না-
আহা! কী সুন্দর দিন কাটাতাম!

শুনুন- ‘কাগাজ কি কাশতি’

 

ইন্দিভার

ভারতীয় সিনেমার বিখ্যাত গীতিকার ইন্দিভারের (১৯২৪ -১৯৯৭) আসল নাম শ্যামালাল বাবু রাই। ১৯৮১ সালের সুপারহিট হিন্দি চলচিত্র প্রেমগীত ছবিতে জগজিৎ সিং ‘হোটো সে ছুলো তুম’ গজলটি গেয়েছিলেন।

ঠোঁটে ছোঁয়াও এ গান

এ গান তোমার ঠোঁটে নিয়ে অমর করে দাও
ভালবেসে আমার এ প্রেম অমর করে দাও
অসম বয়স প্রশ্ন নয়, নয়কো বাধা জীবনযাপন
সত্যিকারের ভালবাসায় প্রধান চাওয়া মন
তোমার আমার প্রেম হোক অমর উদাহরণ
হৃদয়কে নীলাভ করেছে আকাশের নিঃসঙ্গ রঙ
এই জীবনে বাজুক তোমার নূপুরের নিক্কন
সুরগুলো সব অমর হোক তোমার কণ্ঠে, শ্বাসে
সুরকে কর চিরায়ত, এ গান অমর হোক
পৃথিবী নিয়েছে ছিনিয়ে যা কিছু প্রিয়
নিঃস্ব আমি আজ, সুদিন নিরুদ্দেশ
আজকে আমায় জেতাও তোমার হৃদয় হারিয়ে

শুনুন- ‘হোটো সে ছুলো তুম’

 

আমীর মিনাই

আমীর মিনাই (১৮২৯-১৯০০) ছিলেন ভারতীয় উর্দু কবি। তাঁর তাখাল্লুস ছিল আমির বা আমের। মির্জা গালিবের স্নেহধন্য ও উত্তরসূরি এবং আল্লামা ইকবালের সমীহ আদায়কারী এই কবি লখনৌবাসী ছিলেন। সমান দক্ষ ছিলেন পার্সি ও আরবিতে কবিতা রচনায়। নাত লিখে কবিতাকে জনপ্রিয়তা দিয়েছিলেন। জগজিৎ সিং ১৯৮০ সালে গানটিকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা দেন।

ধীরে যাচ্ছে সরে নেকাব

ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে নেকাব
যেনবা ধীরে ধীরে উঠছে চাঁদ।
যৌবন নিয়ে আসে অনিবার্য নেকাব
চঞ্চলাকে ধীরে ধীরে দখল করে লাজ।
বলতেও চায় শুনতেও চায়, লোকলজ্জার ভয় আছে তায়
দিচ্ছে জবাব অস্ফুটে তাই ধীরে, অতি ধীরে।
তোমার আমার প্রেমে এইটুকুই তো ফারাক বন্ধু
আমার সয় না দেরি আর তোমার চলা ধীরে।
রাতজাগা বিরহী পাখি শোনে মরণপাখির ঘুমপাড়ানি
সময় হলে ধীরে ধীরে চুকিয়ে নিও লেনাদেনা।
খুন করেছ রানি আহা, নিরাসক্ত কন্ঠে বলি–
মহারানি! ধীরে, আরো ধীরে…!

শুনুন- ‘আহিস্তা আহিস্তা’

https://www.youtube.com/watch?v=HfvlmynrZ8s

 

ফায়ায হাশমি
‘আজ যানে কি জিদ না কারো’ একটি নাজাম। হাবিব ওয়ালি মোহাম্মদ ১৯৭৩ সালে বাদল আওর বিজলি ছবিতে গেয়েছেন, এরপর প্রসিদ্ধ গজলগায়ক ফরিদা খানুম টেলিভিশনে ও কনসার্টে গাইতে থাকেন। নাজামটি রাগ ইমন কল্যাণে গাওয়া হয়।

চলে যেতে চেয়ো না এই রাতে

চলে যেতে চেয়ো নাকো এই রাতে,
আগের মতই বসে থাকো পাশটিতে নিরিবিলি
আজ রাতে, চলে যেতে চেয়ো না।
তুমিহীনতায় মরেই যাব বুঝি, আত্মহারা হব;
বোলো নাকো এই কথা আর!
ভেবে দেখ, যখন তুমি চলে যেতে চাও
আমার হৃদয়ও সহগামী হতে চায় দেহ ছেড়ে!
এই আকুতিটুকু রাখো, দিব্যি রইল তোমার!
সময়ের কারাগারে বন্দী এ জীবন
সান্নিধ্যের মুহূর্তেরাই স্বাধীন কেবল,
এই অমূল্য সময় হারালে জীবন যাবে মনস্তাপে!
চেয়ে দেখ কী নির্মল রঙিন চারপাশ
আজ তো তুঙ্গস্পর্শী সুন্দর, প্রণয়ের দিন আজ আমাদের–
কাল হয়ত ভেঙে যাবে মেলা, থেকে যাও আজ রাতে;
চলে যেতে চেয়ো নাকো এই রাতে
তুমিহীনতায় মরেই যাব বুঝি, আত্মহারা হব;
চলে যেতে চেয়ো নাকো এই রাতে।

শুনুন- ‘আজ যানে কি জিদ না কারো’

https://www.youtube.com/watch?v=hBvdIsBmQ6g

 

মদন পাল
জনপ্রিয় ভারতীয় গীতিকার। জগজিৎ সিং ‘পেয়ার কা পেহলা খাত লিখনা’ গানটি সওদা ছায়াছবির জন্য গেয়েছিলেন।

প্রেমের প্রথম চিঠি

প্রেমের প্রথম চিঠি লিখতে সময় তো লাগবেই
প্রথম উড়াল শিখতে পাখির সময় লাগবেই

শরীর তো ছাড়, আমি গেছি তাঁর হৃদয়-গহীনে
দূরের পথিক দূরের যাত্রা সময় তো লাগবেই

সম্পর্কের সুতোয় জটিলতার গিঁট লাগলে
লক্ষ উপায় হাতড়ে ফিরব ফিরে আসবার

জখম হওয়া হৃদয়ের একটাই নিরাময় পেয়েছি
আঘাত যতই গভীর হোক, সময় এলাজ তার

শুনুন- ‘পেয়ার কা পেহলা খাত লিখনা’

 

প্রসূন যোশি
প্রসূন যোশি (১৯৭১) ভারতীয় কবি, গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী। চলচিত্র উন্নয়ন সংস্থার সাথেও জড়িত ছিলেন। হৃদয়গ্রাহী ‘লুকাছুপি বহুত হুয়ি’ গানটি রাং দে বাসান্তি ছবিতে এ আর রাহমানের সুরে লতা মুঙ্গেশকর ও এ আর রাহমান গেয়েছিলেন।

লুকোচুরির গান

– অনেক হল লুকোচুরি, এবার সামনে আয়–
তিন ভূবনে খুঁজেছি তোকে আমি,
সন্ধ্যে হল ক্লান্ত আমি, বাজান –
ঝাপসা চোখে দেখতে না পাই ভাল,
ঘরে ফিরে ভাবনা আমার তাড়া ।

– মাগো আমি বেশ আছি এই নতুন দেশে
আকাশের মত স্বাধীন চরাচরে,
তোমার বলা রূপকথার মত
স্বপ্নের এই অপাপবিদ্ধ দেশ;
চিন্তাবিহীন ঘুড়ির মতো উড়ছি আকাশজুড়ে
কেউ এ দেশে ঘুড়ির সুতো কাটতে আসে না!

– চোখের দুয়ার তোর অপেক্ষাতেই খোলা
বুকের ভেতর পাষাণ তোরই ভার,
ছায়া ঘনায় উঠানজুড়ে, কোথায় আমার ছেলে!
অস্তগামী সূর্য ভাবে – উঠ‌বে কখন চাঁদ!
কোথায় আছিস, কোথায় বাবাসোনা?

– কী কোরে দেখাই তোমায় মাগো–
কত ভাল আছি ঝর্নার জলে, নানা ফলে- ফুলে
স্বপ্নে দেখা দিগন্তকে ছুঁয়ে এসেছি
হাতের মুঠোয় ধরেছি রংধনুটা
এ এক সব পেয়েছির দেশ, মাগো!
নহর ঘেঁষে বইছে চির বসন্তের হাওয়া;
শুধু তোমায় ছাড়া মা‌ঝে মা‌ঝে বড্ড একা লাগে!

শুনুন- ‘লুকাছুপি বহুত হুয়ি’

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.