পত্র নিবন্ধ
আবার হয়তো কোনো অলঙ্ঘ্য বেলায়
প্রিয় অচ্যুত, অনেকদিন আপনার সাথে দেখা হয় না। আমাদের প্রাত্যহিক আলাপ আড্ডা বিপ্লবের স্বপ্নদেখার বিকেলগুলো ফুরিয়ে গেল গোধূলির আলোর সাথে সাথে। প্রাগৈতিহাসিক যুগের প্রেক্ষাপটে পরিবেশ ও জীবনের স্থায়িত্ব এবং আশংকা বিষয়ে আমার কবিতাগুলো এরমধ্যে আপনি পাঠ করেছেন নিশ্চয়। অনেকেই আমাকে হতাশাবাদী লোক হিসেবে ভর্ৎসনাও করেছেন। সে তাঁদের কৃপা। তবে বিজ্ঞানের ছাত্র এবং ভক্ত হিসেবে আপনিও বিশ্বাস করেন যে একদিন যেসব প্রজাতি পৃথিবীতে ছিল, তা যেমন আজ নেই, তেমনি লক্ষ কোটি বছর পরে একদিন মানুষও আর থাকবে না। কিন্তু মানুষ এমনই এক অদ্ভুত ধরনের প্রাণী, যে ৭০/৮০ বছরের বেশিদিন বাঁচবে না জেনেও অর্থহীন অর্থ, ধনসম্পদ এবং জমিজমা বাগানোর কাজে আজীবন নিজেকে ব্যাপৃত রাখে এবং অধিকাংশ সময়েই এসব ভোগ বা উপভোগ করার আগেই পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চ ত্যাগ করে যায়। অথচ এই নিয়ে কতো অত্যাচার নিপীড়ন হানাহানি এই মর্ত্য জুড়ে চলমান তা আপনার চেয়ে আর বেশি কেইবা জানে। আমি এই অনর্থক জীবনবাজি করে সম্পদ আহরণের অর্থ যেমন খুঁজে পাই না, এই মানবজীবন ও মানবজাতির ক্ষণস্থায়িত্বের ব্যাপারেও তেমনি নিশ্চিত। তবু যতদিন মানুষ থাকবে, মানুষের সমান মর্যাদা নিয়ে সমান অধিকার নিয়ে থাকুক, এই আশাটুকুই আশৈশব লালন করে এসেছি। আমি জানি এবং অস্থিমজ্জাসহ মানি যে, মানুষের এই সংগ্রাম বহু বহুকাল ধরে চলমান, তার দার্শনিক ব্যাখ্যা বা সংগঠিত রূপ অনেক পরে আবির্ভূত হলেও। সেই সংগঠিত চেতনার আরেক নামান্তর বিপ্লব, কিংবা আরও যথার্থ বিচারে শ্রেণী সংগ্রাম।
প্রিয় অচ্যুত, আমি জানি আমার মতো আপনার বুকের ভেতরেও এক অত্যুজ্জ্বল দীপ প্রজ্জ্বলিত আছে। বিপ্লবের স্বপ্নে আপনার হৃৎপিণ্ডও আমার মতোই আন্দোলিত হয়, মস্তিষ্ক উদ্দীপিত হয়। এখনও আমরা বিশ্বাস করি ‘দিন আসবেই, দিন সমাগত’। এই দীপে প্রথম সলতে পরানো হয়েছিল আমাদের জন্মের অনেক অনেকদিন আগে। দার্শনিক হেগেলের শিষ্য কার্ল মার্কস থেকে আমাদের এই পৃথিবী দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ নামক এক অত্যুজ্জ্বল দর্শনের দেখা পেয়েছিল। সেই বস্তুবাদী চিন্তার সাথে এঙ্গেলসের ঐতিহাসিক বস্তুবাদী চেতনা আমাদের স্বপ্নকে বহুদূর বিস্তৃত করেছিল। আর আমরা তো জেনেছি সেই ‘দুনিয়া কাঁপানো দশদিনে’ কিভাবে শ্রেণীসংগ্রামের প্রথম চূড়ান্ত বিজয় এসেছিল লেনিনের হাত ধরে আমাদের প্রিয় অক্টোবর বিপ্লবের মাধ্যমে। এই সেই শ্রেণী সংগ্রাম আমাদের ভারতবর্ষেও নতুন আশা ও স্বপ্নের বীজ বুনে দিয়েছিল। কমরেড মোজাফফর আহমদ, এম এন রায়দের হাত ধরে যে উজ্জ্বল আলো এখানেও জ্বলে উঠেছিল এমনকি আমাদের প্রিয় কবি নজরুল, সুকান্ত, সমর সেন, বিষ্ণু দে, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পর্যন্ত এই পিদিমের আলোকমালাকে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর করে গিয়েছেন। কিন্তু আমাদের কী নির্মম দুর্ভাগ্য দেখুন, স্বাধীনতা চাইতে গিয়ে কেমন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় চিরস্থায়ীভাবে নিমজ্জমান হয়ে গেলাম। আমাদের কমরেড মোজাফফরের লাল টাই আর আমাদের লাল ঝান্ডা হিন্দু মুসলমানের লাল রক্তে ভেসে গেল। তারপর তো আপনার ইতিহাস আমার ইতিহাস থেকে আলাদাই হয়ে গেল।
যতদিন মানুষ থাকবে, মানুষের সমান মর্যাদা নিয়ে সমান অধিকার নিয়ে থাকুক, এই আশাটুকুই আশৈশব লালন করে এসেছি। আমি জানি এবং অস্থিমজ্জাসহ মানি যে, মানুষের এই সংগ্রাম বহু বহুকাল ধরে চলমান, তার দার্শনিক ব্যাখ্যা বা সংগঠিত রূপ অনেক পরে আবির্ভূত হলেও। সেই সংগঠিত চেতনার আরেক নামান্তর বিপ্লব, কিংবা আরও যথার্থ বিচারে শ্রেণী সংগ্রাম।
হে প্রিয় বন্ধু, আপনার নিশ্চয় যোগেন মণ্ডলের কথা মনে আছে। নমশুদ্রদের নেতা। তিনি সেদিন তাঁর জ্ঞাতিদের বুঝিয়েছিলেন বর্ণ হিন্দুরা নমশুদ্রদের কখনোই ভাল মর্যাদা দেবে না। কথাটি মিথ্যাও নয়। কিন্তু যোগেন তার জ্ঞাতিদের নিয়ে মুসলিম লীগের হাত শক্তিশালী করে পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিলেন। হায়, পাকিস্তানি সরকার যোগেনকে মন্ত্রী বানালো, আর নমশুদ্রদের হিন্দুবিচারে অত্যাচার নিপীড়ন চালিয়ে গেল। কারণ মুসলিম লীগের নেতারা তো পূর্ববাংলার মুসলিম চাষীমজুর নয় — বর্ণহিন্দুদের মতো জমিদার বা রাজার গোত্রীয়। তাই মজলুম শ্রেণীর উপর অত্যাচার তেমনিই চলতে লাগলো ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে। সেই সাম্প্রদায়িকতার ঠ্যালা এখনও সামলাচ্ছেন আপনারা আদভানি বা অমিত শাহ্-এর মতোন কিছু উটকো মানুষের কল্যাণে। আমরাও এদিকে নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে চলেছি। একদিন বলেছিলাম ‘বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক’, আর এখন বিপ্লবের দেখাই মিলছে না।
প্রিয় বন্ধু, আপনি তো আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের চিলেকোঠার সেপাই পড়েছেন। সেখানে ফুটে উঠেছে এই ভূখণ্ডের সেকালের চলমান কৃষক মজুরদের আন্দোলনের কথা। তবে, এরই পাশাপাশি আমাদের জাতীয়তাবাদী স্বাধীনতা স্বাধীকার আন্দোলনও চলমান ছিল। আর, তার পরেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। স্বাধীনতার পরে স্বয়ং বঙ্গবন্ধুই সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামো তৈরির মাধ্যমে অর্থনৈতিক মুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের মধ্যদিয়ে সেনাশাসনে নিমজ্জিত হয়ে পড়ি আমরা। প্রতিবিপ্লবীর হাত ধরে মৌলবাদের দিকে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ। বহুবছর পরে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি আমাদের নেতৃত্বে এসেছে বটে, তবে পিছিয়ে যাওয়া বিপ্লবের চিহ্নরেখা এখনো অনেক দূরে কোন্ অন্ধকারে আমরা তা জানতে পারছি না।
এদিকে যে সোভিয়েতের দিকে চেয়ে আমরাও স্থির নিশ্চিত ছিলাম, সাম্যের বিপ্লবের দিন সমাগত, একদিন অকস্মাৎ দেখতে পেলাম মহামতি লেনিন ভূপাতিত, গ্লাসনস্ত পেরস্ত্রৈকার খপ্পরে পড়ে দুর্বিসহ অর্থনীতির শিকার রাশিয়ার সাধারণ মানুষ। সেই ঝড় আমাদের অনেকের আশৈশব লালিত বিশ্বাস আর স্বপ্নকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছিলো। আর আমরা ধীরে ধীরে কতো কথাই না শুনতে পেলাম; জানতে পেলাম সোভিয়েত নামের স্বপ্নখণ্ডের ভূমিতে কতোটা শ্রমিকের একনায়কত্ব ছিল? না কি সেখানে চক্র বিশেষের একনায়কত্ব কায়েম ছিল? আমার মনে হয়, আমাদের হেগেলকে আরও গভীরভাবে উপলব্ধির প্রয়োজন রয়েছে। হেগেলই তো আমাদের প্রথম দ্বান্দ্বিক মতবাদের কথা শুনিয়েছিলেন। আমার যতোটুকু মনে পড়ে, তিনি বলেছিলেন যখন কোনো একটি ব্যবস্থা কার্যকর ও চলমান থাকে তখন অনেকেই সেই ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট থাকলেও কোনো একটি ছোট্ট কোণে অসন্তোষ দানা বেঁধে ওঠে। আর এই ছোট্ট ছোট্ট অসন্তোষ থেকেই নতুন করে আন্দোলন জন্ম নেয়। আর আমরা তো দেখতেই পাচ্ছি, যে কোন ব্যবস্থা কিছুটা দীর্ঘস্থায়ী হলে তার পরিচালকগণ সেই ব্যবস্থার ফোঁকর দিয়ে স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষকে জর্জরিত করে তোলে। সোভিয়েতও কি সেই একই গড্ডালিকায় গা ভাসিয়ে দিয়েছিলো? পঞ্চাশ বছর ক্ষমতায় থাকায় সম্রাট আকবর তো ধর্মই প্রবর্তন করে ফেলেন। তাই আমরা একদিন দেখি — ‘সত্তুর বয়সী বট কী অদ্ভুত থুবড়ে পড়ে রয়’। আমি যেদিন প্রথম ‘অ্যানিমেল ফার্ম’ পড়েছিলাম, এমন ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলাম ওই জর্জ অরওয়েল ব্যাটার ওপর, যে আমাদের আজন্ম লালিত স্বপ্নকে ব্যাঙ্গ করে! আজ কেন যেন মনে পড়ে সেই প্রাচীন প্রবাদ, ‘যে যায় লঙ্কায় সে হয় রাবণ’। আজ যেন পৃথিবীর প্রতিটি জনপদে তার হাজার নিদর্শন ছড়িয়ে পড়ে আছে। তাই আমাদের সেই একরৈখিক স্বপ্ন ভেঙেছে যে, পূঁজিবাদের পরে সমাজতন্ত্রের অবশ্যম্ভাবিতা এবং তার পরেই চূড়ান্ত সাম্যবাদ আজ যেন সুদূর পরাহত। আজ পূঁজির বাজারে মার্কস থেকে চে গে’ভারা সব কিছু পণ্যে পরিণত। যুবকেরা টি-শার্টের বুকে তাদের ছবি লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আর আমরা বলি, বেশ! একবার ভেবে দেখেছেন প্রিয় বন্ধু, কতোভাবে তার মোড় ফিরিয়েছে পূঁজিবাদী সমাজ এবং তার অর্থনীতি? আমাদের স্বপ্ন যদিও সেই একই, আমাদের অভিষ্ট যদিও সেই একই, আমাদের এই শ্রেণি সংগ্রামের রণনীতি নিশ্চয় পালটে পালটে নিতে হবে?
মনে আছে? আমাদের প্রিয় কবি অমিতাভ গুপ্ত বলতেন, আমাদের ‘একটু শুধু ঝরনা ছিল। সেই ঝরনার নাম কবিতা। তারই উৎসে ক্ষতরেখায় ঝরিয়ে দিয়েছি আমাদের সত্তর দশকের সব কষ্ট, সব ব্যর্থতা, সব হেরে যাওয়া’। আর আপনি তো জানেন কবিতাই সেই প্রবহমান ক্ষরস্রোতা নদী যা মহাকালের বার্তা বয়ে নিয়ে চলে ভাবীকালের তরুণের কাছে। তাই লেনিনের ভাঙা মূর্তির টুকরোগুলো থেকে হাজার লেনিন জন্ম নিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে প্রতি ঘরে প্রতি মনে —
এর মধ্যে অবশ্য আমরা দু’জনেই পঞ্চাশ উত্তীর্ণ হয়েছি, এর মধ্যে আমাদেরও বেড়েছে সংসার। জীবন আর জীবিকার কোলাহলের অবসরে তবু বিপ্লবের সলতেটুকু ধরে রাখি বুকের গভীরে। সেই ‘শ্লোগান মন্দ্রিত দিনে রাতে’ আমাদের বুক চিরে বেরিয়ে আসা আর্তস্বর এখনও আমাদের মস্তিষ্কে ব্যঞ্জনা ছড়ায়। তাই স্বপ্নগুলো সামনের পথে আলোক বর্তিকার মতো উচ্চারিত হয় —
সব নদিগুলো হারিয়ে ফেলনা এখুনি / অনেকটা পথ যেতে হবে এক সাথে /
অনেকটা পথ বাতাসের সাথে মেশা / ফুলের গন্ধ ভাগ করে নিতে হবে। (শ্লোগান)
আমি একথা পষ্ট জানি যে, আজ আমরা দু’ভাগে বিভক্ত বাংলার দু’পারে দু’জন দু’রকম রাজনৈতিক সামাজিক পরিবেশে জীবন কাটাচ্ছি বটে, তবে নিপীড়িত মানুষেরা পৃথিবীর সকল ভূখণ্ডেই একই বিপন্ন সঙ্গীতের মূর্ছনায় মূহ্যমান। আপনার তো মনে আছেই, সেই তেলেঙ্গানা কী তেভাগা আন্দোলনের কথা; মনে তো থাকবেই নকশালবাড়ি আন্দোলনের ইতিবৃত্ত। ‘লাঙ্গল যার জমি তার’ — এমন আপ্তবাক্য আজ অনেকেই বলে বটে, তবে সেদিন এই বাক্যটি মানুষের বুকের ভেতরে ঢুকিয়ে দেবার জন্যে শত শত কৃষক মজুর শরীরের রক্ত ঝরিয়েছে। নকশালবাড়ি একটি গ্রাম থেকে একটি চেতনায় রূপান্তরিত হয়েছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণে। জোতদার জমিদারগণ শহরে পালিয়ে বেঁচেছিল বটে, তবে সমস্ত অঞ্চল জুড়ে কৃষক ও শ্রমিকেরই যে অবস্থান তা আর চাপা থাকেনি। তখন কবিতাও পেলবতা হারিয়ে কর্কশ কঠোর স্বরে উচ্চারিত হয় বাংলার বাতাসে প্রান্তরে। দেখুন, সে মহাস্বরের যুগে ক্ষমতা কাঠামো আঁকড়ে থাকার লক্ষ্যে সরকারের সাথে সাথে প্রধান বাম দলও মানুষের বিপক্ষে চলে যায়। সরকারী পেটোয়া বাহিনী কৃষক মজুরের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিতে ধ্বংসযজ্ঞ চালায় সেদিন। তবু তো নকশালবাড়ি আন্দোলন আজীবন নক্ষত্র হয়ে মানুষকে প্রেরণা জোগাবে। আর প্রতিটি তরুণ মন বলে উঠবে ‘বিপ্লব স্পন্দিত বুকে মনে হয় আমিই লেনিন’। তাই তো আপনার মস্তিষ্ক থেকে কিছুতেই মুছে যায় না ২৫শে মে তারিখটা। এই দিনে তাই আপনার কণ্ঠে উচ্চারিত হয় ‘প্রবল ও তীব্র স্বরে গেয়ে উঠি বিপ্লবের গান’। আর আমরা তো জানি, মাত্র বিশ সহস্র বছর আগেও মানুষ শ্রেণিহীন সমাজে বাস করতো। আর মহাকালের আশ্রয়ে এতো অতি সামান্য সময়। তাই ‘কালের নিয়ম মেনে আমাদের অনিবার্য তরী ভেসে চলে বিপ্লবের দিকে – অমোঘ বিপ্লব’।
বিপ্লবের গান তো আমাদেরই গাইতে হবে কবি। যুগে যুগে বিভিন্ন জনপদে বিপ্লব বিপ্লব বলে জেগে উঠেছে মানুষ, প্রতিবাদে হয়েছে মুখর আর সংগঠিত হয়েছে আন্দোলন। আমরা কি ধরে রাখতে পেরেছি সেইসব আন্দোলন সংগ্রামের অর্জন? জাতির পতাকা বারবার খামচে ধরে সেই পুরনো শকুন। মনে আছে? আমাদের প্রিয় কবি অমিতাভ গুপ্ত বলতেন, আমাদের ‘একটু শুধু ঝরনা ছিল। সেই ঝরনার নাম কবিতা। তারই উৎসে ক্ষতরেখায় ঝরিয়ে দিয়েছি আমাদের সত্তর দশকের সব কষ্ট, সব ব্যর্থতা, সব হেরে যাওয়া’। আর আপনি তো জানেন কবিতাই সেই প্রবহমান ক্ষরস্রোতা নদী যা মহাকালের বার্তা বয়ে নিয়ে চলে ভাবীকালের তরুণের কাছে। তাই লেনিনের ভাঙা মূর্তির টুকরোগুলো থেকে হাজার লেনিন জন্ম নিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে প্রতি ঘরে প্রতি মনে —
“পুঁজির আগুনে ধর্ম-ছায়ায় / যারা বিভেদের মন্ত্রে – /
ইতিহাস সব মুছে দিতে চায় / সুনিপুন ষড়যন্ত্রে //
তারা শোনো, গান সমস্ত দিন / আকাশে আকাশে জাগে – /
দাঁড়াবেন উঠে অনেক লেনিন / শত আঘাতের আগে –”
জিললুর রহমান
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০; ১১-০৮ পূর্বাহ্ণ