:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
সাম্য রাইয়ান

কবি, সম্পাদক

সেলিম মোরশেদ, তাঁর সম্পর্কিত সমাচার
প্রচ্ছদ: রাজীব দত্ত

সেলিম মোরশেদ, তাঁর সম্পর্কিত সমাচার

লেখকজীবনে লেখাটিই প্রধান কথা, বাকি সব আনুষঙ্গিক। যেমন: কেন লিখেন বা কোথায় লিখেন ইত্যাদি। লেখকের লেখাটি যদি গুরুত্বপূর্ণ হয় তবেই-না পরবর্তী প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হবে। হওয়া উচিত। আমাদের এই দেশে হয় ঠিক উল্টো। এদেশে শিক্ষকেরা যেমন শিক্ষকতা বাদ দিয়ে, চিকিৎসকেরা যেমন চিকিৎসা বাদ দিয়ে ক্ষমতাসীনদের দালালি করে টিকে থাকতে চায়, এদেশের সাহিত্যক্ষেত্রেও হয়েছে একই অবস্থা! অধিকাংশ লেখকের ক্ষেত্রেই দেখা যায় লেখা তার দ্বিতীয় সারির কাজ। প্রথম বা প্রধানতম কাজ হল ক্ষমতাসীন-প্রতিষ্ঠানের দালালির মাধ্যমে টিকে থাকার ব্যর্থ চেষ্টা করা। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, দালালি করাটা আমাদের জাতীয় চরিত্র হিসেবে আজ প্রতিষ্ঠিত! তো এই-ই যখন অবস্থা, তখন এই দেশে ক্ষমতার পদলেহন না করে বিপ্রতীপ অবস্থানে থাকা ‘প্রতিষ্ঠানবিরোধী লেখক’-এর সন্ধান পেতে পাঠক আপনাকে কী ধরনের কাঠখড় পোড়াতে হবে তা সহজেই অনুমেয়। সে-রকম একজন আপোসহীন লেখক হিসেবে আমরা সেলিম মোরশেদকে চিহ্নিত করতে পারি কি? তিনি কি সেই লেখক, যিনি জীবনের এতগুলো বছর পেরিয়েও নিজের ‘নো কম্প্রোমাইজ’ মানসিকতা অটুট রাখতে পেরেছেন? তিনি কি লিটল ম্যাগাজিনের সেই শক্তিমান কথাশিল্পী, যিনি আজ পর্যন্ত লেখা নিয়ে কোনরূপ আপোস করেননি? এই প্রশ্নগুলোই ভাবছি। ভাবতে ভাবতে যাচ্ছি। দেখতে চাই, এই ভাবনাযান কোথায় গিয়ে পৌঁছে দেয়!

১.
সেলিম মোরশেদ কে?

এই গদ্য যখন লিখছি, তখন স্বাভাবিকভাবেই অনেকে জেনে যাচ্ছেন লেখার কথা, বিশেষত ‘মেঘচিল’ প্রদত্ত বিজ্ঞাপনের কারণে। যারা বইপুস্তক পড়েন বেশ, তাঁরাও জানতে চাইছেন, সেলিম মোরশেদ কে? প্রত্যেককে দুই-এক কথায় ধারণা দিতে চেষ্টা করেছি। আমার অবাক লাগে। চল্লিশ বছর থেকে যিনি লিটল ম্যাগাজিনের লেখক হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা রেখে চলেছেন, তাঁকে এদেশের অধিকাংশ সিরিয়াস পাঠকও চেনে না! তাঁর নামই শোনেনি! অথচ তিনি এমন একজন লেখক, যিনি বাঙলা ভাষায় নতুন ধরনের গল্প লিখতে শুরু করেছেন ১৯৮০-র দশকে। তাঁর গল্প মজার নয়; শুয়ে শুয়ে ঘুমোবার আগে একটু পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে নেবার টনিক কিংবা দুপুরে ভাতঘুমের আগে সে বই নিয়ে গড়াগড়িও করবার উপায় নেই। এ এমনই গল্প, যা আপনাকে জাগিয়ে রাখবে, তাড়া করবে। এমনও হতে পারে, ‘সুব্রত সেনগুপ্ত’ পড়বার পরে আপনিও আমার মতো মধ্যরাতে অন্ধকার ঘরে মোমবাতি জ্বালিয়ে আয়নায় নিজের মুখখানা পরীক্ষা করে নিতে চাইবেন। বলছি-না এমনই হবে। কিন্তু মশাই, বলা যায় না; হতেও তো পারে! অথবা ‘কাটা সাপের মুণ্ডু’ আপনার শরীরে কাঁটা দিয়ে গেল! যখন তিনি বলে ওঠেন, ‘অনেকদিন পর হেমাঙ্গিনী জেনেছিলো তার মা সে-সময় গোপনে শরীর বেচতো, বেচতে বেচতে মা যখন লোম-ওঠা বয়সী কুকুর হলো—মাদী কুকুরের মতো মায়ের উরুসন্ধিতে টকটকে লাল জরায়ু বেরিয়ে পড়ে যোনিমুখে ঝুলে গেল তামাম দুনিয়ার মতো; —তখন ক্ষুধা, কী ক্ষুধা!’

অথবা যদি ভাবি, ‘অম্লানদের গল্প’ শুরু হচ্ছে কীভাবে! শুরুতে, গল্পের প্লটে প্রবেশের মুখেই দেখা যায় গল্পের লেখক, গল্পটি লিখবার সময় লেখকের পাশে বসে থাকা চরিত্র, সামাজিক সেন্সরশিপ, সকল কিছু একাকার হয়ে যাচ্ছে। এরপর গল্পের তিন চরিত্রের একজনের নাম পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গল্পটি শুরু হচ্ছে। এরকম ভঙ্গিতে কোনও গল্প, আমি অন্তত বাঙলা ভাষায় পড়িনি। গল্পটির শুরু থেকে সামান্য অংশ উদ্ধৃত করছি:

“দাদন, মদন, চোদন—তিনজন।
দাদন সুদের ব্যবসা করে। যারা টাকা দিতে অক্ষম— দাদন তাদের ক্ষেত থেকে কাঁচামাল নিয়ে নেয়। মদন তা দিয়ে মোদক বানায়। চোদন তা কেনা-বেচা করে পূর্ণতায় চোদে।
এদের আন্তঃসম্পর্ক নিগূঢ়। এভাবে এদের নিয়ে লিখলে আবার সমস্যাও।
‘শব্দটা ভীষণ ভালগার, আমাদের ছেলেটা বড়ো হচ্ছে’—মৌসুমী বললো; কম্পিউটারের মাউস নাড়াতে নাড়াতে আড়-চোখে লেখার প্যাডের দিকে তাকিয়ে, ‘বলো কী শিখবে ও, লিটারেচার বলতে কি এখন এগুলোই বুঝবে? প্লিজ সেমো শব্দটা পাল্টাবে, আই রিপিট।’

দাদন, মদন, চোদন। তিনজন। পারস্পরিক সম্পর্ক অতীব নিগূঢ়। যথার্থ কোনো প্রতিশ্রæতি নেই, চলমান প্রথায় প্রক্রিয়ার ভেতর। ওদের নিয়ে লিখতে হলে এইমুহূর্তে মৌসুমীর অনুরোধে চোদনের অন্য নাম দিতে হবে। চোদন নিজের নৈমিত্তিক কাজ শাশ্বত পর্যায়ে নিয়ে এসেছে— যেহেতু ও টিকে থাকছে অনন্ত আয়ুষ্কাল নিয়ে। ওর নাম কী হতে পারে? অম্লান! হ্যাঁ, অম্লানই।”

কিংবা ‘বদ্ধ’ ছোটগল্পে— “‘জানতাম এক হোটেলের গল্প’: যেখানে মানুষের মাংসে উদরপূর্তি হতো বহুলোকের; …একদিন নাকি ধরা পড়েছিল হোটেলের মালিক। মাংসে নখ পাওয়া গিয়েছিল।”
প্রত্যক্ষ বাস্তবতার এই উপস্থাপনা— জীবনজর্জর ঘটনা বা দুর্ঘটনার এমনতর বর্ণনার কারণ জানতে চাইলে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি জীবনের দুঃসহ বাস্তবতা এবং অমানবিক মূল্যবোধগুলোকে পাঠকের সামনে ছুঁড়ে দিতে চাই—দেখুক তারা তাদের নিজেদের অবয়ব দেখুক।’

তিনি কি সেই লেখক, যিনি জীবনের এতগুলো বছর পেরিয়েও নিজের ‘নো কম্প্রোমাইজ’ মানসিকতা অটুট রাখতে পেরেছেন? তিনি কি লিটল ম্যাগাজিনের সেই শক্তিমান কথাশিল্পী, যিনি আজ পর্যন্ত লেখা নিয়ে কোনরূপ আপোস করেননি? এই প্রশ্নগুলোই ভাবছি। ভাবতে ভাবতে যাচ্ছি। দেখতে চাই, এই ভাবনাযান কোথায় গিয়ে পৌঁছে দেয়!

২.
বাঙলাদেশে বয়স্ক লিটল ম্যাগাজিনগুলোর অধিকাংশই এখন বছর বছর নিজেদের শব বহন করে জীবিত থাকার অভিনয় করে চলেছে, এ বড় দুঃখের কথা। আমি দীর্ঘজীবী হতে ভয় পাই, পাছে যদি মরে গিয়েও বেঁচে থাকবার অভিনয় করতে হয়! কবি নবারুণও আমার সাথে একমত। ওঁর ওই বাক্যটায় অনুপ্রাণিত হই; কবির দীর্ঘজীবী হতে নেই। আমার মনে হয়, লিটল ম্যাগাজিনও দীর্ঘজীবী হতে নেই। পরে তা নিজেই আগ্রাসী চরিত্র ধারণ করতে পারে, যদি যথাসময়ে না হয় তার অন্যরূপ রূপান্তর! প্রকৃষ্টরূপে গতিশীলতা যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সে অতিক্ষুদ্র মৌলবাদী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়ে সাহিত্যের পরিবেশ কলুষিত করতে থাকে। বর্তমান বাঙলাদেশে কতিপয় বুড়ো লিটল ম্যাগাজিনের প্রধানতম কাজ হয়ে পড়েছে তরুণদের মধ্যে প্রকৃত-সাচ্চা লিটল ম্যাগাজিনের সনদপত্র বিতরণ করা! এরা মনে করে, এদের সনদ যে সকল লিটল ম্যাগাজিনের নেই, লেখকের নেই; তারা লিটল ম্যাগাজিন নয়, তারা লেখক নয়। এই মর্মে তারা কুৎসা রটনায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। বছর বছর এই সকল অপকর্মের ফলাফল কী? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হয় কী, অতি ক্ষুদ্র গ্রুপ মেইনটেইন করে দলবাজি, স্ট্যান্ডবাজি আর পরস্পর পিঠচাপড়ানি! এতসব করার পরে বাঙলা সাহিত্যের অর্জন হিসেবে থাকে সিগ্রেটের উচ্ছ্বিষ্টাংশ। এই প্রসঙ্গে সেলিম মোরশেদের অবস্থান উল্লেখযোগ্য, ‘এ্যান্টি-এস্টাবলিশমেন্টের ইনটেলিজেন্স থেকে আমি যতটুকু জানি, বুঝি— বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় যে ছোটো কাগজ বের হচ্ছে, অধিকাংশ কাগজই কোনো-না-কোনোভাবে নৈতিক। দুই/তিন জন ছোটো কাগজের উল্লেখযোগ্য কবি কিংবা লেখক সম্পাদকের সঙ্গে অন্য ছোটো কাগজগুলোর যোগাযোগ বা ব্যক্তিগত সম্পর্ক না হলেই যে সেগুলো ছোটো কাগজ হচ্ছে না কিংবা তারা ছদ্মবেশ নিয়েছে— এভাবে আমি দেখি না। একটি জায়গা থেকে একটি ছোটো কাগজ যে যে পরিস্থিতি এবং পরিপ্রেক্ষিতের মুখোমুখি হয়ে বের হয়— লেখক সমস্যা, বিজ্ঞাপন সমস্যা, দার্শনিক ঐক্য, সমমনস্কদের মধ্যেও যে পারস্পরিক ব্যক্তিগত অহমের সংঘর্ষ— এসব কিছু কাটিয়ে উঠে যতটুকু ঝাঁঝ নিয়ে কাগজটা বের হয়- প্রতিষ্ঠানের বিপক্ষে এটাও বড় প্রতিবাদ হিশেবে আমাদের মনে করতে হবে।’

যতটা মনে পড়ে, সেলিম মোরশেদ প্রসঙ্গে প্রথম জানতে পারি মারুফুল আলম সম্পাদিত লিটল ম্যাগাজিন ‘প্রতিশিল্প’র মাধ্যমে। প্রতিশিল্পের যে কয়টি সংখ্যা আমি পড়বার সুযোগ পেয়েছি, প্রায় প্রতিটি সংখ্যায়ই সেলিম মেরশেদকে বোল্ডভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল। তার পর চারবাক, গাণ্ডীব, অনিন্দ্য এবং শিরদাঁড়ায় তাঁর লেখা পড়েছিলাম। তিনি যেহেতু এরকম গুটিকয় লিটল ম্যাগাজিন ব্যতীত কোথাও লেখা প্রকাশ করেননি এতদিন, তাই এই কয়টিতেই তাঁকে যতটা পড়েছিলাম, পরে ‘উলুখড়’ প্রকাশিত ‘রচনাসংগ্রহ-১’ কিনলাম। সম্ভবত এভাবেই তাঁর লেখার সাথে পরিচয় ঘটে আমার। সরাসরি তাঁকে দেখেছি দুইবার, বইমেলায়। প্রথমবার, বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের যে অংশে সিগারেট খায় অনেকে, সেখানে দাঁড়িয়ে কবি সৈয়দ সাখাওয়াৎ-এর সাথে কথা বলছিলাম। এমন সময় হাজির হলেন আরেক কবি সাখাওয়াত টিপু। তাঁর সাথে আগে কখনো দেখা হয়নি আমার। সাখাওয়াৎ ভাই পরিচয় করিয়ে দিতেই টিপু ভাই বললেন, ‘আরে সাম্য রাইয়ানের আবার পরিচয় দেয়া লাগে না কি! নামেই যথেষ্ট।’ এই রসিকতায় আমরা হাসছিলাম। তখনই, টিপু ভাইয়ের মুখে আমার নাম শুনে তিনি এলেন, সৈয়দ সাখাওয়াৎ-এর পাশে দাঁড়িয়ে নিঃসংকোচে আন্তরিক ভঙ্গিতে বললেন, ‘আমি সেলিম মোরশেদ। আপনিই তো সাম্য রাইয়ান?’ সাখাওয়াৎ ভাই হেসে নিজের নাম বলে আমাকে দেখিয়ে দিলেন। আমি সামনে এগিয়ে হাত বাড়িয়ে পরিচিত হলাম। সে-ই আমাদের প্রথম সাক্ষাৎ। বাংলা একাডেমি যে বছর বইমেলাকে প্রথমবারের মতো উদ্যানে সম্প্রসারণ করলো, সম্ভবত সেই বছরের ঘটনা এটি।

দ্বিতীয়বার তাঁর সাথে দেখা হয় বইমেলার বাংলা একাডেমি অংশে লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে, কারও সাথে টঙে বসে ছিলেন। আমি দ্রুতপদে তাঁর কাছে গিয়ে আমাদের লিটল ম্যাগাজিন ‘বিন্দু’র একটি সৌজন্য সংখ্যা হাতে দিয়ে ‘কী দিলাম’ তা বলেই চলে যাই; আমার তখন ট্রেন ধরবার তাড়া…

তার আগে, কবি নাভিল মানদারের কাছে জেনেছিলাম, লিটল ম্যাগাজিন ‘জঙশন’-এ আমার দীর্ঘকবিতা ‘জীবনপুরাণ’ পাঠ করে তিনি অত্যন্ত প্রশংসা করেছিলেন। সম্ভবত বলেছিলেন, ‘অনেকদিন পর কোনও তরুণের দারুণ এক দীর্ঘকবিতা পড়লাম। এটা মনে থাকবে।’

আরেকবার ‘জঙশন’-এ আমার একটি প্রবন্ধ (বাঙলাদেশের লিটল ম্যাগাজিন: পাঠক বেড়েছে, পাঠক কমেছে) স্টলের সামনে দাঁড়িয়েই পড়ে ফেলেছিলেন এবং শুনেছি এরকম বলেছিলেন যে, ‘ছেলেটা এতো ভালো লেখে— লিটল ম্যাগাজিন সম্পর্কে বোঝেও চমৎকার— কিন্তু ‘লোক’-এ প্রবন্ধ লিখলো কেন!’ প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি, উনি যে লেখাটির দিকে ইঙ্গিত করে মন্তব্য করেছিলেন, তা ‘লোক’-এ প্রকাশিত নয়। ওইটি ছিলো ‘লোক’-এর সম্পাদক অনিকেত শামীমের পঞ্চাশতম জন্মদিন উপলক্ষে তার বন্ধুদের দ্বারা ‘অনিকেত’ নামে প্রকাশিত বিরাটাকার সংকলন। তিনি ওই লেখাটি পড়লেই বুঝতে পারতেন, কোন দায় থেকে স্মৃতিকথাধর্মী গদ্যটি আমি লিখেছিলাম। যাই হোক, কিছুদিন আগে তো সেলিম মোরশেদ নিজেই ‘লোক’ পত্রিকা থেকে পুরস্কারপ্রাপ্ত হলেন। এবার ‘লোক’ তাঁকে নিয়ে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে যথারীতি। এখন সত্যিকার অর্থে যে আমি কোনোদিন ‘লোক’-এ লিখিনি, সেই আমিও প্রথমবারের মতো ‘লোক’-এ গদ্য লিখবো তাঁর জন্য, মানে তাঁকে নিয়ে আর কি! পুরস্কারের প্রসঙ্গ যখন এলই তখন এক কাজ করা যাক। ‘পুরস্কার’ বিষয়টি নিয়ে সেলিম মোরশেদের ভাবনা পড়ে নেয়া যাক। যা তিনি দুই হাজার খ্রিস্টাব্দে ‘ব্যক্তিগত ইশতেহার’ নামক রচনার পনের নম্বর অনুচ্ছেদে লিখেছিলেন। ‘পুরস্কার সম্পর্কিত: প্রাতিষ্ঠানিক পুরস্কার অবশ্যই আমরা বর্জন করবো। পুরস্কার বহু রকমের আছে— আমরা সেগুলো বলছি না। একজন মানুষ তার বন্ধুদের দ্বারা তার পরিপার্শ্ব দ্বারা তার পাঠকদের দ্বারা নানারকম ভালোবাসা মর্যাদা নিতে পারে। সেটা ভিন্ন। যদিও সেটাও এক অর্থে পুরস্কার। কিন্তু যে পুরস্কার প্রাতিষ্ঠানিক সংজ্ঞায় পড়ে অর্থাৎ পুরস্কার যেখান থেকে দেয়া হয় সেটা— প্রথাসম্বলিত প্রতিষ্ঠান। যারা বিচারক তারা চলমান মূল্যবোধের ওপর দাঁড়িয়েই বিচার করে। মোটা অংকের টাকা এবং সম্মান দেয়া হয়— যা দিয়ে লেখক একটা শ্রেণিতে ওঠেন এবং সামাজিক সুযোগ সুবিধার প্রচুর সুযোগ পান। রাষ্ট্রের গণ্যমান্য মানুষ হিশেবে স্বীকৃত হন। প্রাতিষ্ঠানিক পুরস্কার কেবল সেটাই।
অনেকেই বলে সে- তো কোনো লবিং করেনি। একাডেমি তার বইটা পড়ে মূল্যায়ন করেছে। হ্যাঁ এই ক্ষেত্রে আমরা ভাবি, লেখক ধরা যাক তা না জানেন, তার শুভাকাঙ্ক্ষীরাও যদি না-ও জানেন, ঘরে বা বাইরে যদি মদের পার্টি না-ও হয়ে থাকে-তারপরেও লেখক যদি পুরস্কার পান তবুও বলবো লেখক এই সিস্টেমের এগেনেস্টে তথাকথিত শিল্প ছাড়া আর কিছু করেনি। তিনি রাইটিং-এ কম্প্রোমাইজ করেছেন।’

আমার অবাক লাগে। চল্লিশ বছর থেকে যিনি লিটল ম্যাগাজিনের লেখক হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা রেখে চলেছেন, তাঁকে এদেশের অধিকাংশ সিরিয়াস পাঠকও চেনে না! তাঁর নামই শোনেনি! অথচ তিনি এমন একজন লেখক, যিনি বাঙলা ভাষায় নতুন ধরনের গল্প লিখতে শুরু করেছেন ১৯৮০-র দশকে।

৩.
‘ব্যক্তিগত ইশতেহার’-এর চৌদ্দ নম্বর অনুচ্ছেদে তিনি লিখেছেন, ‘পুরস্কারগুলো খ্যাতিমান হিশেবে লেখককে সামাজিক স্বীকৃতি এনে দেয়। এই পুরস্কারের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য এরা প্রথাবিরোধী কোনো লেখককে সচরাচর সম্মানিত করে না। মনোরঞ্জনকারী আর ম্যাড়া লেখকদের ডেকে এনে পুরস্কৃত করে— উদ্দেশ্য— জনগণের সামনে একটা আইডিয়াল হিশেবে ওই ম্যাড়া লেখককে রাখা। বেশ কয়েকবার এই রকম চলার পর গুঞ্জন উঠলে প্রতিষ্ঠান তখন একজন সম্ভাবনাময় লেখককে হঠাৎ রাজি করিয়ে পুরস্কার দিয়ে দেয়, যাতে সবার মুখ বন্ধ থাকে।’

কী দারুণ বক্তব্য না? মনে হয়, এ তো আমারই কথা— আমাদের কথা!

৪.
বাঙলাদেশের লেখকদের মধ্যে আছে ভূ-কেন্দ্রিক হীনমন্যতা। এমন ধারণা এখানে প্রতিষ্ঠিত যে, কবি বা লেখক হবার জন্য চাই পশ্চিমবঙ্গের স্বীকৃতিপত্র। এখনও লোকে মনে করে, কবি বা লেখক হতে হলে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বই ছেপে এনে বাঙলাদেশে বিক্রি করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের সিলমোহর থাকলে এদেশে মূল্যায়ন পাওয়া যাবে। আর যদি ওদিক থেকে পুরস্কার-টুরস্কার পাওয়া যায়, তাহলে তো কথাই নেই; হোক তা পাড়ার ক্লাব কিংবা বাজার সমিতি প্রদত্ত। আর এই সব না-হলে নিদেনপক্ষে পশ্চিমবঙ্গ থেকে লেখা ছাপিয়ে এনে দেখাতে না পারলে ঠিক জাতে ওঠা যায় না। এর ফলাফল পড়–ন ‘অমায়িক খচ্চরে’ সেলিম মোরশেদের লেখায়, “একটা বিষয় ভিতরে রাখি, যদিও বন্ধুত্বে কোনো চিড় ধরেনি, ভালোবাসা কমেনি— কিন্তু আমাকে সতর্ক রাখে। ছোটো কাগজ বড়ো কাগজ মেজো কাগজ নিয়ে এতো ফাটাফাটি, নানামুখি বিস্ময়কর ডিসকোর্সের আর ঐক্যের ভেতরেও একটা পয়েন্ট সংগুপ্ত অর্থে সবাই যেন লালন করেন, কলকাতার কৃপা ছাড়া বাংলা সাহিত্যে দাঁড়ানো মুশকিল। গোটা বাংলা সাহিত্যের একক উত্তরাধিকার তারা ধারণ করেন। এরকম ভাবনাটা কেন মনে হয় জানি না।”

এই প্রসঙ্গে তিনি অনেক আগে থেকেই সচেতন। ‘বাংলাদেশের লেখক ও পশ্চিম বাংলার দাদারা…’ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রশ্ন করা হলে তাঁর যে উত্তর তিনি দিয়েছিলেন, সেখানে তাঁর সচেতনতা চোখে পড়ে: ‘বাংলা আলাদা হলেও এ বাংলার কিছু বুদ্ধিজীবীদের চিন্তাপ্রক্রিয়া ও’বাংলার ওপর নির্ভরশীল, তাছাড়া অর্ধশিক্ষা, নিম্নমধ্যবিত্তের হীনমন্যতা ইত্যাদি এই দাদাগিরির কার্যকর সূত্র। পশ্চিম বাংলার সফিস্টিকেশন ঢেকে দেওয়া যাবে না। সে কারণে পুরস্কার-পাওয়া একজন লেখক কী করে প্রগতিশীল বা প্রয়োজনীয় লেখক হয়?’

৫.
‘প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা’ প্রসঙ্গে কথা বলতে গেলে অনিবার্যভাবে উঠে আসে একটি নাম, সুবিমল মিশ্র। যিনি তাঁর লেখা নির্মাণ থেকে শুরু করে তা প্রকাশ, প্রচার, বিপণনে প্রতিষ্ঠানবিরোধী অ্যাটিটিউড বজায় রাখেন সর্বদা। আর তাই বাঙলা সাহিত্যে এক আপোসহীন ‘ক্যারেক্টার’ হিসেবে হাজির রয়েছেন তিনি।

বাঙলাদেশের স্ব-ঘোষিত প্রতিষ্ঠানবিরোধী লেখক সেলিম মোরশেদও কি লেখা নিয়ে প্রতিটি পয়েন্টে সেই ‘আপোসহীন’ মনোভাব বজায় রাখতে পেরেছেন? আমি পূর্ব থেকেই কো্নো সিদ্ধান্ত দিতে চাই না। বরং, পাঠক— আপনি আর আমি যৌথভাবে মোটাদাগে এক ছোট্ট অনুসন্ধান পরিচালনা করতে চাই। তার আগে বলে রাখি, যদি সেলিম মোরশেদ নিজেকে ‘প্রতিষ্ঠানবিরোধী’ বলে ঘোষণা না করতেন, তাহলে তাঁকে নিয়ে এতসব কথা বলবার কোনো প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু যেহেতু তিনি তা করেছেন, ফলে এই সকল আলাপের প্রয়োজনীয়তা থাকছে। এই প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে তিনি নিজেই ‘ব্যক্তিগত ইশতেহার’-এর উনিশ নম্বর অনুচ্ছেদে লিখেছেন, ‘প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা পুরো জীবন দেখার আর জীবনপ্রক্রিয়া বোঝার এক মনোভঙ্গি। একটা নিরন্তর প্রশ্ন আর অনুসন্ধান। দুর্বৃত্ত পুঁজির যে কোনো কার্যক্রমের বিরুদ্ধে লড়া।’

‘প্রতিশিল্প’ আয়োজিত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে ‘নির্বাচিত গল্পের’ অনুষ্ঠানে সেলিম মোরশেদ প্রদত্ত বক্তব্য, যা তাঁর ‘রচনাসংগ্রহ-১’ এ ‘স্ব-কথন’ শিরোনামে মুদ্রিত, তা থেকে কয়েকটি বাক্য পড়ে নেয়া যাক: ‘ছোটকাগজ যে একটা আদর্শ, একটা জীবনপ্রক্রিয়া, যার লক্ষ্য সামষ্টিক স্বার্থের প্রশ্নে রাষ্ট্রকাঠামো পাল্টানো, আর তৈরি করা উদ্বৃত্ত পুঁজিহীন প্রতিষ্ঠানবিরোধী কাঠামো, এসবের ধারে কাছে এখনকার লেখকরা নেই। ফলে আমার সঙ্গে অন্যান্য লেখকদের নান্দনিক বিশ্বাসের ঐক্য নেই বরং আছে ব্যাপক ফারাক এবং বিরোধ। আমি প্রতিষ্ঠান বিরোধী একজন লেখক হবার চেষ্টা করি। অনেকাংশে যেটা আমার মেধা-মননে গাঁথা। এক দুর্বিনীত গতি আমাকে সচল করে। প্রকৃত প্রতিষ্ঠানবিরোধী সেই যে যন্ত্র এবং প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত মানুষ হয়েও নিজের বেনিয়াবৃত্তিকে আক্রমণ করে। এক্সপ্লয়েটেশনের বিরোধী হয়— এই সিস্টেমকে সে ঘৃণা করে।’

সেলিম মোরশেদ প্রসঙ্গে লিখতে বসে আমি সুবিমল মিশ্রকে টানছি কেন? এই প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে ‘বাঘের বাচ্চা’ লিটল ম্যাগাজিনে সুবিমল মিশ্র প্রসঙ্গে সেলিম মোরশেদ প্রদত্ত সাক্ষাৎকার থেকে। সেখানে প্রথম প্রশ্নের উত্তরে তিনি সুবিমল প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা একই পথের পথিক হলেও তিনি আমার পূর্ববর্তী, যদিও তাঁর লেখা সাম্প্রতিক। সেই অর্থে তিনি অনেক আগে থেকে হাঁটছেন। সমাজবাস্তবতাকে মোকাবেলা করার যে সক্ষমতা তিনি অর্জন করেছেন সেটা আমার কাছে শিক্ষণীয়। সেই অর্থে তাঁর কাছে আমার ঋণ বেশি।’

সুবিমল মিশ্র এমন এক বুনো ষাঁড়, যাঁর টোটাল অ্যাটিটিউড অপ্রাতিষ্ঠানিক। লেখাকে তিনি এমন রূপে নির্মাণ করেন, যা প্রচলিত সাহিত্যকাঠামোকেই আঘাত করে। তাঁর ভাষা, ভাষার আঙ্গিক, লেখার স্টাইল, সব মিলিয়ে…। এমনকি তাঁর বইয়ের বিজ্ঞাপনের দিকে নজর দিলে সেখানেও যেন সুবিমল মিশ্রকেই দেখতে পাওয়া যায়। বাণিজ্যিক মিডিয়ার রঙ-মাখানো বিজ্ঞাপনের মতো নয়, যা কি না মিথ্যার বেসাতি হিসেবে পরিচিত। আপাতদৃষ্টিতে ক্ষুদ্র কিন্তু প্রয়োজনীয় এই বিষয়েও রয়েছে সেলিম মোরশেদের সুস্পষ্ট বক্তব্য। ‘ব্যক্তিগত ইশতেহারের’ উনিশ নম্বর অনুচ্ছেদে ‘প্রসঙ্গ জানানো এবং প্রচার’ নামক অনুচ্ছেদে প্রতিষ্ঠানবিরোধী লেখকের বিজ্ঞাপন কেমন হওয়া উচিত মর্মে লিখেছিলেন, ‘আমরা আমাদের সম্পর্কে, আমাদের কার্যক্রম সম্পর্কে জানাতে চাই তথ্য অর্থে, সংবাদ অর্থে আর অবগতি অর্থে— সেই জানানো মানে কেবল বলা, প্রচার কিম্বা পণ্য বেচার অর্থে নয়—ওই জানানোটুকু এ জন্যই যে, আমরা যেন কখনই এন্টি-পিপল না হই—তাই সংবাদপত্রে প্রজ্ঞাপিত অর্থে নিজেদের বই পত্রিকা নিয়ে ঘোষণা দেয়া বা বক্তব্য দেয়া ইশতেহারভুক্ত।’

৬.
বাঙলাদেশে প্রচলিত সাহিত্য সম্মেলন বা সাহিত্য-সম্পর্কিত যে কোনো বৃহত্তর আয়োজনের ক্ষেত্রে উদ্বোধক বা প্রধান অতিথি হতে দেখা যায় বুর্জোয়া দলের রাজনৈতিক নেতা কিংবা প্রশাসনিক কর্মকর্তা। কোন স্তরের নেতা কিংবা কর্মকর্তা উপস্থিত হবে সেটা নির্ভর করে আয়োজকের সাথে ক্ষমতাকাঠামোর সম্পর্কের ওপর। দেখা যায় সেই নেতা কিংবা কর্মকর্তা, সাহিত্যে হয়তো তার কোনো পাঠই নেই, সে হয়তো তার বক্তব্যে বলছে, ‘সাহিত্য কেমন হওয়া উচিত এবং বিবিধ—’, আর উপস্থিত লেখকেরা দু’ পায়ের ফাঁকে মাথা গুঁজে ‘জ্বি স্যার’ ভঙ্গিতে সেই বক্তব্য শুনছে এবং হাততালি দিতেও ভুলছে না। এই পরিস্থিতি জাতি হিসেবে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক দৈন্যদশাকেই নির্দেশ করে। কিন্তু সেলিম মোরশেদের মতো আমরা যারা মনে করি, ‘প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা পুরো জীবন দেখার আর জীবনপ্রক্রিয়া বোঝার এক মনোভঙ্গি।’ সেই আমরা যদি কখনও সাহিত্যের অনুষ্ঠান আয়োজন করি, তখন সেখানে কি প্রচলিত পদ্ধতির নির্মম বলি হব? না কি প্রতিষ্ঠানবিরোধী চরিত্র পরিস্ফুটনের চেষ্টা করবো? আমি মনে করি, সে আয়োজন যত ক্ষুদ্র কিংবা বৃহৎই হোক-না কেন, প্রচলিত কাঠামোর কাছে মাথা নত করবার প্রশ্নই আসে না। যেহেতু আমরা ‘দুর্বৃত্ত পুঁজি’, ‘রাষ্ট্রব্যবস্থা’, ‘প্রচলিত কাঠামো’ প্রভৃতি প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে সোচ্চার। কিন্তু সেলিম মোরশেদ নিজেই যদি এমন ঘটনা ঘটান, তখন তা আমাদের সামনে কী রূপে হাজির হতে পারে? উলুখড় প্রকাশনী থেকে ২০১১-এ প্রকাশিত হয় ‘সেলিম মোরশেদ রচনাসংগ্রহ-১’। এরপর অনুষ্ঠিত হয় প্রকাশনা উৎসব। সেখানে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন বুর্জোয়া রাজনৈতিক দলের একজন নেতা। এর কারণ আমার জানা নেই। আমি ফেসবুকে এই ছবি এবং ক্যাপশন পড়েছি সেলিম মোরশেদের পোস্ট থেকে। এসব কেমনতর প্রতিষ্ঠানবিরোধী কর্মকাণ্ড তা হয়তো তিনিই বলতে পারবেন।

৭.
১৯৮০, ১৯৯০ দশকে বাঙলাদেশে লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনে তাঁর অগ্রগামী ভূমিকা অনস্বীকার্য। সুবিমল মিশ্রের দ্বারা এদেশে অনেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁকে অনুকরণ করে ছোটগল্প লিখলেও সেলিম মোরশেদ তা করেননি। তিনি ছোটগল্পে নিজস্ব স্টাইল নির্মাণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি নিজেও বলেন, ‘আমার ওপর প্রভাব পড়লো সুবিমল মিশ্রের মলয় রায়চৌধুরীর বাসুদেব দাসগুপ্ত’র ও অমিয়ভূষণ মজুমদারের। শিল্পের চেয়ে বেশি বিশ্বাসী হলাম তাদের দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে।’ সেলিম মোরশেদ নিঃসন্দেহে বাঙলা ভাষার গুরুত্বপূর্ণ ছোটগল্পকার। যেহেতু তিনি স্ব-ঘোষিত প্রতিষ্ঠানবিরোধী লেখক, তাই তাঁর প্রতিষ্ঠানবিরোধী অ্যাটিটিউড-এ স্খলন দেখলে তা নিয়েও কথা বলতে হয়। এইসব বিষয় বাদ দিলে, তার লেখা এবং যে লড়াই— দীর্ঘদিনের, যা তিনি করে চলেছেন, তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা অপরিসীম।

যেসকল রচনা থেকে অনিবার্য অংশ ঢুকে পড়েছে তার তালিকা:

  • কাটা সাপের মুণ্ডু (ছোটগল্প)
  • সুব্রত সেনগুপ্ত (ছোটগল্প)
  • অম্লানদের গল্প (ছোটগল্প)
  • বদ্ধ (ছোটগল্প)
  • সাক্ষাৎকার। প্রতিশিল্প। সংখ্যা ১। মার্চ ১৯৯৪
  • সাক্ষাৎকার। প্রতিশিল্প। সংখ্যা ৩। সেপ্টেম্বর ১৯৯৫
  • অমায়িক খচ্চর (ট্রাভেলগ)
  • ব্যক্তিগত ইশতেহার যা সামষ্টিকও হতে পারে
  • স্ব-কথন (বক্তৃতা)
  • মাই নেম ইজ রেড। সাক্ষাৎকার। বাঘের বাচ্চা (কলকাতা)। সুবিমল মিশ্র সংখ্যা। ২০১৫

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.

error: Content is protected !!