:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
আহমদ সায়েম

কবি

সেলিম মোরশেদকে লেখা আহমদ সায়েমের পত্রনিবন্ধ
শিল্পকর্ম: নির্ঝর নৈঃশব্দ্য

সেলিম মোরশেদকে লেখা আহমদ সায়েমের পত্রনিবন্ধ

মুখভাষ্য

শুভেচ্ছা নেবেন। আপনার শারীরিক অবস্থা কি এখন আরোগ্যের দিকে? আশা করি আপনি খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন। একটি বিশেষ প্রয়োজনে এই পত্রের সূচনা। ছোটকাগজের পুরনো যোদ্ধা হিসেবে আপনার ভাবাদর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গির সাথে আমাদের পরিচয় অনেকদিনের। নব্বইয়ের গোড়ার দিকে ‘কাটা সাপের মুণ্ডু’ গল্পের লেখক সেলিম মোরশেদের নামের সাথে যেসব বিশেষণ যুক্ত হতে দেখেছি, এতদিন পরে তা ম্লান হয়েছে বলে মনে হয় না। যদিও ছোটকাগজের পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা ভাবাদর্শের জায়গা-জমিতে অনেক রদবদল ঘটছে, কিন্তু সেলিম মোরশেদকে তাঁর নিজস্ব ঘরানায় গল্প-আখ্যান ও প্রকাশনায় সক্রিয় দেখি বলে ‘সূনৃত সম্পাদনা পর্ষদ’-এর পক্ষ থেকে যোগাযোগের তাড়া বোধ করেছি। বিগত কয়েক বছর ধরে কতিপয় লেখক-পাঠক মিলে সিলেট থেকে ‘সূনৃত’ নামক একটি ছোটকাগজ বের করছি। কাগজটি আপনি দেখে থাকবেন নিশ্চয়। আপনার কেমন লাগে জানি না। আজকাল কাগজ বের করার পর লেখক-পাঠকের মন্তব্য-মতামতের প্রচল ধারায় ভাটার টান লেগেছে বলে পাঠকের সঙ্গে ছোটকাগজ-সম্পাদকের মেলবন্ধন আগের মতো দৃঢ় নয় আর। পরিবর্তিত সময় ও পরিস্থিতি ছোটকাগজ প্রকাশনের ক্ষেত্রে নতুন মেরুকরণের জন্ম দিয়েছে। পাঠস্পৃহার অভাব ও ছোটকাগজ সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে লেখক-পাঠকের সাড়া প্রদান সম্পর্কিত বিবিধ অনিশ্চয়তার মাঝে থিতু হয়ে আজকের সম্পাদক তাঁর কাগজটি বের করেন। বিশেষ করে লেখক-পাঠকের সজাগ অনুভবের কলরব এই বঙ্গে এত ক্ষীণ শোনায় যে বৃষ্টিধারার মতো নতুন ছোটকাগজের জন্ম হলেও চেতনাধারায় তার বরিষণ বোধহয় আদৌ কোনো প্রাণের কল্লোল হয়ে বইছে না।

দেশ-কাল পরিধির এসব সংকট নিয়ে যখন ভাবার চেষ্টা করি কিংবা বন্ধুরা মিলে কথার খৈ ফোটাই তখন এটা ভেবে শূন্য লাগে যে মানব-সভ্যতার ইতিহাসে আকাঙ্ক্ষা ও প্রাপ্তির মধ্যে অমােচনীয় সব ফাঁকি রয়েই গেলা। অপ্রাপ্তির জায়গা থেকে পরিপার্শ্বকে বিচার করলে দেখি রক্তঝরা একাত্তর আমাদের স্বাধীন করেছে বটে কিন্তু কার্যত আমরা আজো পরাধীন রয়ে গেছি। এই গ্রহের আরাে অনেক জাতিসত্তার মতো অশেষ সম্ভাবনায় দীপ্ত হবার পরেও আমাদের অর্জনের খাতায় তাই উল্লেখ করার মতাে যােগফল অতি সামান্য। প্রকৃতি যেহেতু শূন্যতা পছন্দ করে না তাই আমাদের সিংহাসন খালি থাকেনি। সিংহাসন জারি রাখার শর্তে আমরা কখনােই হারিনি কিন্তু মেধা-মননে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আস্বাদ কি সেভাবে পেয়েছি?

অপ্রাপ্তবয়স্কতা যেসব কৌতুক ও বিষাদের জন্ম দিতে পারে বা দিয়ে থাকে আমাদের ললাটে এখন সেই তিলক। শুধু আমাদেরই কেন, বিশ্বমঞ্চে যাঁরা মানবজীবনের মহড়া দিয়ে আসছেন অথবা এখনাে যারা ‘খেলা দেখে যান, বাবু’ বলে সবাইকে প্রলুব্ধ করতে ব্যাকুল, তাঁরা কি স্বস্তিদায়ক গণ্য হতে পেরেছেন? সবখানে সার্কাস চলছে! সার্কাসের ক্লাউন তার দড়াবাজির চেষ্টায় প্রাণ ওষ্ঠাগত করে তুলছে সবার, কিন্তু বিনিময়ে কোনাে হাততালি নেই। সার্কাসের দর্শক থুতু অথবা করতালি দুটোই ভুলে গেছে। ক্লাউনের দড়াবাজির সমুখে থুতু বা করতালি দিতে অনিচ্ছুক নির্শিত দর্শক— এই দৃশ্যটিকে কবি বা আঁকিয়েরা কী সম্ভাষণে শিরােনামবন্দি করবেন জানি না, তবে রকম-সকম দেখে মনে হয় ‘ইচ্ছামৃত্যু’র মহড়া চলছে। ক্রমশ বােবা ও বধির হয়ে পড়ছি সবাই!

কুরু ও পাণ্ডবকুলের গােষ্ঠীদ্বন্দ্বের জের টানতে-টানতে ক্লান্ত মহামতি ভীষ্ম কুরুক্ষেত্রের ময়দানে শরশয্যায় শুয়ে ‘ইচ্ছামৃত্যু’র ডাক দিয়েছিলেন, সার্কাসের ক্লাউন আসলে ‘ভাঁড় না ভিলেন’ সে-মীমাংসায় অক্ষম হয়ে আমরাও ইদানিং ‘ইচ্ছামৃত্যু’র মহড়াই দিচ্ছি। স্থবিরজাতকের ইতিহাস যে মানবপ্রজাতির রক্তের অন্তর্গত! বােধহয় অন্তর্গত সেই টানে আমরা জেনে গেছি যে ‘ফুটবার আকাঙ্ক্ষায় ব্যাকুল পুষ্পরা কেন আর ফোটে না?’ প্রাসঙ্গিকভাবে এই প্রশ্নও অনিবার্য হয় বৈকি– ‘সভ্যতার আবিক্রিয়া কি আমাদের জন্য সত্যিকার কোনাে প্রগতি সম্ভব করেছে? আদৌ কি কোনাে ‘জ্যোতির্ময়কাল’-এর অভিজ্ঞতা আমরা লভেছি? নাকি দিনখরচার টানে করছি দিনগত পাপক্ষয়!’ পাঠকের জিজ্ঞাসার উত্তরে একদা ইমানুয়েল কান্ট ব্যাখ্যা করে বুঝিয়েছিলেন যে ‘জ্যোতি বা জ্যোতির্ময়কাল’ হল মানবজাতির ‘নাবালগ’ থেকে ‘বালেগ বা সাবালক’ হয়ে ওঠার এক ধারাবাহিক উন্মােচন। কান্টের এমত সংজ্ঞায়নের যােগ্য সমর্থন অথবা প্রত্যুত্তর কি আমরা হতে পেরেছি? নাকি “সাবালক’ অথবা ‘নাবালক’ শব্দ দুটির মধ্যে ফারাক করে উঠতে না-পারাটাই আজকের মানবপ্রগতি”,-প্রত্যেকের ভুরুর খাঁজে লেপ্টে থাকা এমত বিস্ময়-চিহ্নই আমাদের আত্মপরিচয়।

এই বিস্ময়-ভ্রুকুটির সংকট আসলে দু’দিক থেকে আসে। বৈশ্বিকতা ও স্থানিকতার দু’ধারী খাঁড়ার নিচে মানুষ প্রজাতি অতীতে মাথা পেতে দিয়েছে এবং এখনাে দিচ্ছে। আমরা যেমন বরাবর দিয়ে এসেছি ও বারবার জবাই হয়েছি। যে স্থানিকতায় স্বকীয়তা ও দেশিকতার মৌচাকটি গড়ে ওঠে, একদিন সেই মৌচাকে পরদেশির ঢিলটিও এসে পড়ে। স্থানিকতাকে তখন মিশে যেতে হয় বৈশ্বিকতায়, দেশিকতায় জন্ম নেয় জাতীয়তা, আর জাতীয়তার আঙিনা ছাপিয়ে অভ্যুদয় ঘটে আবিশ্ব প্রবহমান মানবধারা। বিশ্ব মানবসলিলে এই অবগাহনের অর্থ অবশ্য এই নয় যে স্থানিকতা-আঞ্চলিকতা বা স্বাদেশিকতার বিলােপ ঘটল। সবই যে-যার নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে একটি মানুষের হৃদয়ে ক্রিয়া করে, তরঙ্গ বা বুদবুদ ওঠায়। আর এতে করে ওই নির্দিষ্ট ও স্থানিক মানুষটি হয়ে ওঠে আরাে জটিল। যেন তাকে শুধু ব্যক্তি বা সমাজ হিসেবে বুঝলে আর চলছে না, ব্যক্তির বাইরে তরঙ্গিত সকল অভিজ্ঞানের আলােয় তার বিচার করা চাই। যে-কারণে মানবপ্রজাতির ইতিহাস একাধারে ব্যক্তি ও স্থানবিজড়িত হয়েও অবিরত ওই পরিধিকে অতিক্রমকারী বৃহৎ কিছু। যেখান থেকে জন্ম নেয় ইতিহাসের ভাষ্য ও সাহিত্যের বিবিধ ভাষান্তর।

পৃথিবীর অসংখ্য মনুষ্যপ্রাণের অংশীদার বলে ওইসব ভাষ্য বা বয়ানে আমরাও যুগে-যুগে কান পেতেছি। তারা বলে নদীমেখলা এই দেশ মরুভূমি ছিল না কখনাে। ব্রহ্মাণ্ডের সকল আদি কারণের কারণ হয়ে যিনি বিরাজ করেন তাঁর পরিকল্পনায় যতরকম খেয়ালখুশির রাজত্বই থাকুক, বঙ্গকে তিনি নদী ও শস্যের অফুরন্ত কৃপাসলিলে ভরে উঠতে দিয়েছিলেন। হয়ত তাঁর আকারণ খেলার আনন্দে কখন-কীভাবে যেন বিরাট মহাবিশ্বের এক কোণে নিতান্ত অযতনে বেড়ে ওঠা চারাগাছটির মতাে এই দেশ রৌদ্র ও মেঘের কৃপায় জলভারানত হয়ে উঠেছিল। সেটা ছিল আদুল গায়ে অকারণ আনন্দ আর অকথিত বিষাদে গান করে ওঠার দিন। সেটা ছিল বানরসুলভ লক্ষণ থেকে নিজেকে পৃথক করে ওঠার দিন, সভ্যতা সৃষ্টির দিন। কার্ল সাগানের উক্তি ধার করে বলা যায়— ‘সভ্যতা সেরেব্রাল কর্টেক্সের সৃষ্টি’। ইতিহাস চষলে তাই দেখি আদুল গায়ে অকারণ আনন্দের প্রয়ােজন একদা সর্বব্যাপী ছিল বটে কিন্তু তার রেশ কোথাও স্থায়ী হতে পারেনি। সেরেব্রাল কর্টেক্সের মাশুল এই মানব-সভ্যতা পৃথিবীর স্থানিকতার চরিত্রটিকে আজো অব্দি বজায় রেখে রাখলেও তা আর পরিশ্রুত ঝর্ণাধারার মতাে নির্মল নয়। সেখানে সৃষ্টি বা নির্মাণের নব প্রণালীর জয়ভেরী যেমন শুনি, ক্ষয়-প্রবঞ্চনা ও আত্মবিনাশের নটনৃত্যও সমানে চলতে দেখি। তার সঙ্গে চলছে মুদ্রারাক্ষসের অযুত প্যাঁচ-পয়জারের সাথে যুধ্যমান এক দুনিয়ার কাহিনি, যেথায় মানুষ অবশেষে ঘুমায় কবরে কিন্তু টাকশাল কদাপি চোখ বুজে না, প্রতিটি মানবজন্মের রক্তস্নানে সে জেগে ওঠে ‘সভ্যতা’ ফলাবে বলে!

সদাজাগরূক টাকশালের নিচে বসে যে-মানুষ নিজ দেশ ও পরদেশকে যুগপৎ তার ভেতরে লীলা করতে দেখে সে স্থানিক হয়েও বিশ্ব-সংসারের ক্রীড়নক। এই গ্রহণ এড়িয়ে যাবার সাধ্য তার আর নেই। লোবান ও আতরের গন্ধের মাঝে সার্কাসের ভাঁড়েদের অদ্ভুত ভাঁড়ামি দেখে তার হয়তাে মনে পড়ে কবিপঙক্তি, ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলছে স্বদেশ’। এই উটের সওয়ারি কারা, তাদের গন্তব্যই-বা কোথায় তা নিয়ে অযথা কথার কচকচানি নাই-বা হল। আমরা শুধু দেখছি সওয়ারির দীর্ঘ মিছিলে জাঁদরেল রাষ্ট্রপ্রধান থেকে আজকের ধীমান কবি-লেখক-বুদ্ধিজীবী সকলেই শামিল। সাদা-কালাে-ধূসর-বাদামি যত রঙ সম্ভব মানুষের, সব রঙমিছিল উঠে পড়েছে একটিই বৃহৎ তরীর পাটাতনে; জীবিত থাকলে কার্ল মার্কস যাকে কাব্য করে বলতেন, ‘টাকার জঙ্গমতা’। মানুষ টাকার দাস কিন্তু টাকা কারো ক্রীতদাস নয়— মহাভারতের যুগে মহামতি ভীষ্মের মনে এই বােধ জন্ম নিয়েছিল। আজকের সীমার মাঝে অসীম মানুষটি তার জন্মবিদ্ধ ভূমিতে দাঁড়িয়ে উদাস চোখে দেখে মানুষের পরিণামহীন এক মিছিল বয়ে চলেছে সর্বত্র, সকলের ললাটে মুদ্রানামী নাগিনীর স্বস্তিকাচিহ্ন আর সিঁথি বেয়ে নামছে একেকটি স্বদেশ।

এই স্বাদেশিকতা ও বৈশ্বিকতার টানাপড়েন নিয়ে আপনার যদি কিছু বলার থাকে এখনাে, আপনার নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে যদি এখনাে থেকে থাকে কোনাে উচ্চারণ, যদি ভেবে থাকেন যে গল্প, কবিতা কিংবা অনুবাদ করে হলেও বলার আছে কিছু–তাহলে বলুন। আমরা আপনার উচ্চারণ শুনবার জন্যে কান পেতে আছি।

জনাব সেলিম মােরশেদ,

অসুস্থ শরীর নিয়ে এই দীর্ঘ ভাষ্য পাঠ করতে গিয়ে এরিমধ্যে আপনি ক্লান্ত বােধ করছেন হয়তাে। কিন্তু আমরা নিরুপায়, কারণ, নয়া শতকের প্রথম দশকের অন্তিমলগ্নে দাঁড়িয়ে এই অনুভব ক্রমাগত পীড়া দিচ্ছে যে সংলাপ ও যোগাযােগের হাজারাে সহজ উপকরণের মধ্যে বসবাস করলেও বাকচর্চার ক্ষেত্রে পরস্পরকে আমরা ঠিকঠাক সংযােগ করে উঠতে পারছি না। সংযােগহীনতার নেপথ্যে জীবনবাস্তবতার হরেকরকম ব্যক্তিগত ও মানসিক চোরাটান হয়তাে রয়েছে, কিন্তু এসব ছাপিয়ে উদ্ভট এক নির্লিপ্তি ও অবসাদ সেখানে আরাে বেশি প্রকট। আমরা কেউ দেশ-কাল বিচ্ছিন্ন নই বলে ব্যক্তিক অনুভবের সঙ্গে সামাজিক প্রথাচারের সন্ধি-সংঘাত ঘটবেই। প্রতিদিনের ঘরকন্না থেকে শুরু করে অন্তর্গত কোনাে বিষাদ বা ক্রন্দন… তার সব-ই এখন স্বপ্নাচ্ছন্ন ও কিছুটা অবাস্তব। এরকম একটি পরিবেশে বসে মানবজীবনের সত্য অভিজ্ঞতা বুঝে নিতে চাইছি আজ। বুঝে নেওয়ার সে-চেষ্টা থেকে এই ব্যক্তিগত প্রলাপ ও প্ররোচন।

স্বপ্নাচ্ছন্নতা যে বিভ্রম অমােঘ করে তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে লেখক-পাঠকের সেতুবন্ধ তৈরির প্রয়াস থেকে ‘সূনৃত’-এর জন্ম। বলাবাহুল্য এখনাে সেই কাজে আমাদের সাফল্য ব্যাপক বা প্রশ্নাতীত নয়। তবে আমরা বিশ্বাস করি প্রয়াস জারি রাখলে সাফল্য একদিন ধরা দেবেই। আর এজন্য লেখালেখি মাধ্যমের সকল নিবিষ্ট ও মনােযোগী কর্মীর অনুকূল সান্নিধ্য বা সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা মনে করি তাদের শ্রম-ঘামের ফসল লেখাটি ‘সূনৃত’-এ প্রকাশের অনুমতি দিয়ে কবি-লেখক-অনুবাদকেরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত সে-লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবেন।

বাংলাদেশের একজন ছােটকাগজ-কর্মী হিসেবে আপনার স্বকীয় ভাবনা ও অনুভবের সাথে আমাদের পূর্ব-পরিচয়কে আরো নিবিড় করার স্বার্থে এই ব্যক্তিগত পত্র-যােগাযােগ। গল্প বা আখ্যান রচনার পাশাপাশি ছোটকাগজ বিষয়ক আপনার নিজস্ব ধারণা এবং এর সপক্ষে দাঁড়িয়ে আপনার যে লড়াই তার প্রতি আমরা সচেতন আছি। সেই নব্বই দশক থেকে এখন অব্দি গদ্যাঙ্গনে সজাগ-সক্রিয় পদচারণা আপনাকে আমাদের কাছের মানুষ করে তুলেছে। আজকের যুগমানসে বিশ্বসাহিত্যের গল্পকার ও ঔপন্যাসিকেরা মিলে যে তরঙ্গ তুলছেন, তাঁদের বয়ানশৈলী ভাষার নবীন অনুসন্ধান ও নবতর নির্মাণের দিকে আমাদের যেভাবে উৎসাহী করে এবং ভাষাশিল্পের অলিগলি হাতড়ে পুরনাে ভাষ্যকে নয়া চোখে দেখার আকুলতা জাগ্রত করে,— আপনার কাছ থেকে এরকম একটি গল্প কিংবা গল্পবিষয়ক গদ্যভাবনা পেলে ‘সূনৃত’-এর উপকার হয়। আশা করি নিরাশ করবেন না।

আবারো বলি, পৃথিবী নামক গ্রহের যাবতীয় সৃষ্টিমুখর তৎপরতার সাক্ষী হওয়ার যে জন্মগত ক্ষুধা নিয়ে ছোটকাগজ পাঠকের ‘মনকে জাগাতে চায়’,—সেই নির্মাণযজ্ঞে আমরা আপনাকে পাশে পেতে চাইছি। আশা করি ‘সূনৃত’-এর জন্য মনোসংযোগ-নিবিড় গল্প/গল্প-ভাবনা চাওয়াটা আপনাকে বিব্রত করছে না। জানি এই ব্যস্ত নাগরিক জীবনের চাপ সামাল দিয়ে মনোসংযোগ-নিবিড় কাজ করা দুরূহ। কিন্তু বিশ্বপ্রাণের সঙ্গে যোগাযােগের সেতুবন্ধন এছাড়া আর কীভাবে সম্ভব? প্রশ্নটি নিয়ে যদি আপনারা ভাবেন তাহলে আমাদের দাঁড়াবার মাটি আরেকটু শক্তি পায়।

হালের বলদ টানার মতাে এই অমানুষিক পরিশ্রমের জন্য ন্যূনতম যে সময় প্রয়োজন তা দিতে আমাদের কোনাে কার্পণ্য হবে না আশা করি। অসুস্থ শরীর নিয়ে এই বেগারখাটা শ্রমের দৌলতে আপনার ভাণ্ডারে বিশেষ যা নতুন কিছু যোগ হবে না হয়তো, কিন্তু নিজের ভাষায় তারিয়ে-তারিয়ে একটি উত্তম গল্প না গল্প-ভাবনা পাঠের জন্য আমাদের যে হাপিত্যেশ, সেই ক্ষুধাটুকু অন্তত কিছুটা হলেও মিটবে। আশা করি নিরাশ হব না। আমরা আপনার উত্তরের প্রতীক্ষায় রইলাম। আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন এই কামনাই করি।

আমাদের সাথে যোগাযোগের ঠিকানা:

পত্র যোগাযোগ: আহমদ সায়েম, সম্পাদক- ‘সূনৃত’, উত্তরণ-১৬, বারুতখানা, সিলেট- ৩১০০।
ইমেইল: [email protected]/[email protected]

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.

error: Content is protected !!